রংপুর বিভাগ বাংলাদেশের আটটি প্রশাসনিক বিভাগের একটি হলো। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের আটটি জেলা নিয়ে ২০১০ সালের ২৫ জানুয়ারিতে দেশের সপ্তম বিভাগ হিসেবে রংপুর বিভাগ স্থান করে নিয়েছে। উত্তরাঞ্চলের ভারতীয় সীমান্তবর্তী এই বিভাগটির প্রতিটি জেলাতেই রয়েছে নৈপুণ্য, বিচিত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, আধুনিক স্থাপনা, পার্ক, বিনোদন কেন্দ্র, রিসোর্ট, পিকনিক স্পট, লেক, দীঘি ইত্যাদি। বিভাগের প্রতিটি দর্শনীয় স্থানেরই রয়েছে আলাদা আলাদা সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য। ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য তাই, রংপুর বিভাগের সকল জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ সম্পর্কে পরিচয়বাচক তথ্যসমূহ তুলে ধরা হলো এই লেখাতে।
রংপুর জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ
রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আম (Haribhanga Mango of Rangpur)
রংপুরের আশঁবিহীন সুস্বাদু হাড়িভাঙ্গা আম সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে অত্যন্ত জনপ্রিয়। মূলত এই জনপ্রিয় আমের উৎস ছিল রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছের তেকানি গ্রামটি। বহুকাল পূর্বে নফল উদ্দিন পাইকার নামের এক বৃক্ষ বিলাসী প্রথম এই জাতের আমের গোড়াপত্তন করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে এই আমের নাম ‘মালদিয়া’ থাকলেও, পরবর্তীতে আম গাছের মালিক তা হাড়িভাঙ্গা নামকরণ করেন।
সেই বিখ্যাত আমের গোড়াপত্তনকারী নফল উদ্দিনের লাগানো প্রথম গাছটি আজও রংপুরের মিঠাপুকুরের খোঁড়াগাছের তেকানি গ্রামে ৬৩ বছর বয়সে টিকে রয়েছে। বলতো এই গাছ থেকেই হাজার হাজার চারা গাছের কলম তৈরি করে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিখ্যাত সেই গাছটি দেখতে এবং মৌসুমে সেই গাছের ফল খেতে অনেকেই যায় তেকানি গ্রামে।
লালদীঘি নয় গম্বুজ মসজিদ (Laldighi Nine Dome Mosque)
লালদীঘি নয় গম্বুজ মসজিদ রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পশ্চিম দিকে গোপীনাথপুর ইউনিয়নের লালদীঘি এলাকায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে ব্রিটিশ শাসনামলে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে মোঘল শাসনামলের সাথে এই মসজিদের স্থাপত্যশৈলীর মিল থাকায় অনেকেই মনে করেন এই মসজিদটি ১২১২ সালে নির্মিত। ঐতিহাসিক এই মসজিদটি প্রাচীনত্তের প্রতীক হওয়ায় অনেকেই এখানে পরিদর্শন করতে এবং মসজিদে সালাত আদায় করতে আসেন।
ভিন্নজগত পার্ক (Vinnojogot Park)
ভিন্নজগৎ পার্ক রংপুর জেলার গংগাচড়া উপজেলার খলেয়া গুঞ্জিপুর এলাকায় স্থাপিত একটি বিনোদন কেন্দ্র। ২০০১ সালে প্রায় ১০০ একর জায়গাজুড়ে দেশে-বিদেশি হাজারো বৃক্ষের সমন্বয়ে এই পার্কটি স্থাপিত হয়েছে। বৃহদাকৃতির এই পার্কটিতে রয়েছে রোবট স্কিল জোন, স্পেস জার্নি, আজব গুহা, সি প্যারাডাইস, নৌকা ভ্রমণ, ওয়াকওয়ে, স্পিনিং হেড, শাপলা চত্বর, প্লানেটোরিয়াম, জল তরঙ্গ, থ্রিডি মুভি, মেরি গো রাউন্ড, হেলিকপ্টার, সুইমিংপুল ও মাছ ধরার ব্যবস্থা। এছাড়াও এখানে প্রায় ৫০০ জনের বিভিন্ন পৃথক দলের আলাদা আলাদা পিকনিক করার পর্যাপ্ত জায়গা, ৯০০ গাড়ির পার্কিং, ৭টি কটেজ এবং থ্রি স্টার ড্রিম প্যালেস রয়েছে।
তাজহাট জমিদার বাড়ি (Tajhat Zamindar House)
তাজহাট জমিদার বাড়ি রংপুর বিভাগীয় শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে মাহিগঞ্জের তাজহাট গ্রামে অবস্থিত অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে নির্মিত একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। তৎকালীন রত্ন ব্যবসায়ী মান্না লাল ব্যবসায়িক কারণে মাহিগঞ্জে এসে বসবাস শুরু করে এবং পরবর্তীতে তাজহাট জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০ শতকের শুরুর দিকে প্রায় ২০০০ রাজমিস্ত্রির নিরলস পরিশ্রমের বিনিময়ে তাজহাট জমিদার বাড়ির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ১৯১৭ সালে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হওয়ার পর এই বাড়িটির নির্মাণ ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় দেড় কোটি টাকা।
লাল ইট, শ্বেত ও চুনাপাথর দ্বারা নির্মিত এই ৪ তলা ভবন এবং চারপাশের সারি সারি গাছ, বিশাল মাঠ ও দুই পাশে দুটি পুকুর জমিদার বাড়িটিকে দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক (Prayas Sena Amusement Park)
প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ একটি বিনোদন পার্ক। ২০১৩ সালে প্রায় ১,১০০ একর জায়গাজুড়ে ঘাগট নদীর দুই পাড়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক গড়ে তোলা হয়। এখানে বিভিন্ন প্রতিকৃতি, কৃত্রিম সমুদ্র সৈকত, শিশুদের বিনোদনের আয়োজন, ছেড়া দ্বীপ, ফুলের বাগান, নৌ ভ্রমণের ব্যবস্থা ইত্যাদি রয়েছে। পিকনিকের জন্য যমুনা, তিস্তা ও করতোয়া নামে গড়ে তোলা হয়েছে ৩টি পিকনিক স্পট। এছাড়াও পার্কের বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে হাজারো ঔষধি, বনজ ও ফলজ বৃক্ষ।
গাইবান্ধা জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ
ড্রিমল্যান্ড এডুকেশনাল পার্ক (Dreamland Educational Park)
ড্রিমল্যান্ড এডুকেশনাল পার্ক গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার হরিণমারী গ্রামে অবস্থিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এই পার্কে রয়েছে ফুলের বাগান, দেশি-বিদেশী নানা প্রজাতির গাছ, ভাস্কর্য ও বিভিন্ন স্থাপনা। ১৯৯৫ সালে প্রায় ১৭ একর জমিতে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রশিদ উন নবী চাঁদ ব্যক্তি উদ্যোগে এই পার্কটি স্থাপন করেছিলেন। ড্রিমল্যান্ড পার্কের প্রধান ফটকের সামনে সরু রাস্তার দুই পাশে নানা দেশি-বিদেশি ফুলের গাছ, নির্দিষ্ট দূরত্বে বেঞ্চ ও শেড, বাংলাদেশের বিশাল মানচিত্র পলাশীর যুদ্ধক্ষেত্রের মানচিত্র এবং নানা রকম খেলাধুলার ব্যবস্থা খুবই আকর্ষণীয়।
বালাসী ঘাট (Balasi Ghat)
বালাসী ঘাট হলো গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ফুলছড়ি উপজেলার যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত একটি নৌবন্দর। নৌবন্দরের নির্মল বাতাস এবং নদীর উত্তাল ঢেউ দর্শনার্থীদের আকর্ষন করে। বর্ষাকালে যদিও এখানে পানি থৈ থৈ থাকেন তবে শীতকালে এখানে বালুরচর ভেসে উঠে। তাই ঘোড়ায় চড়া, নৌকা ভ্রমণ, কিংবা রেলওয়ের ফেরি থেকে নদীর বুকে সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করা যায় এই নৌবন্দর থেকে।
গাইবান্ধা পৌর পার্ক (Gaibandha Municipal Park)
গাইবান্ধা পৌর পার্ক গাইবান্ধা জেলা শহরে বসবাসকারীদের চিত্ত বিনোদনের জন্য পৌরসভার নিয়ন্ত্রণাধীন একটি সামাজিক বিনোদনকেন্দ্র। ১৯২৭ সালে জমিদার গোবিন্দ লাল রায়ের দান করা ১ একর ৭ শতক জায়গায় এই পৌর পার্কটির যাত্রা শুরু হয়। এখানে রয়েছে বিভিন্ন রকমের ফুল, ফল ও বনজ গাছ। পার্কের কেন্দ্রে পুকুরের মাঝখানে পানির ফোয়ার এবং একপাশে সান বাঁধানো ঘাট, রঙিন মাছ, সারি সারি বেঞ্চ, ক্যান্টিন, গ্যালারি, বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি ইত্যাদি বিষয়বস্তুগুলো সকল বয়সী দর্শনার্থীদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে।
ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার (Friendship Centre)
ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার মূলত একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয়। এটি গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনের পাড়া গ্রামে অবস্থিত। এটি প্রায় ৮ বিঘা জমি নিয়ে সম্পূর্ণ মাটির নিচে অবস্থিত একটি নান্দনিক নির্মাণশৈলী। এখানে দাপ্তরিক কাজ সম্পন্ন করার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে সুবিধা বঞ্চিতদের জীবনমান উন্নয়ন, খেলাধুলা, লাইব্রেরী এবং থাকা-খাওয়ার আয়োজন রয়েছে।
জামালপুর শাহী মসজিদ (Jamalpur Shahi Mosque)
জামালপুর শাহী মসজিদ গাইবান্ধা জেলা সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার পশ্চিমে সাদুল্লাপুর উপজেলার জামালপুর গ্রামে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। কথিত আছে প্রায় ৬০০ বছর পূর্বে ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে ইরাক থেকে ৩৬০ জন আউলিয়া পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েন। তন্মধ্যে গাইবান্ধা শহরে আগমনকারী সুফি হযরত শাহ জামাল (রঃ) তত্ত্বাবধানে এই ঐতিহাসিক মসজিদটি নির্মিত হয়। এই মসজিদটি দীর্ঘদিন মাটির নিচে চাপা পড়ে ছিল। পরবর্তীতে, আনুমানিক ৬০ এর দশকের পর হঠাৎ প্রচন্ড ঝড়ে মসজিদের স্থানে গজিয়ে ওঠা বটগাছ ভেঙে পড়লে স্থানীয় লোকজন মসজিদটির সন্ধান পায়।
দিনাজপুর জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ
নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যান (Nawabganj National Park)
নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যান দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। এটি প্রায় ৫১৭.৬১ হেক্টর সংরক্ষিত বনাঞ্চল নিয়ে গঠিত। এই বিশালাকৃতির উদ্যানটি বড় জালালপুর, আলোকধুতি, তর্পনঘাট, রসুলপুর, খটখটিয়া কৃষ্টপুর, বনবিটের জগন্নাথপুর, হরিল্যাখুর এলাকা নিয়ে গঠিত। এখানে সেগুন, গামার, কড়ই, জামসহ প্রায় ২০-৩০ প্রজাতির গাছ রয়েছে। বন্য প্রাণীর মধ্যে রয়েছে খেকশিয়াল, মেছোবাঘ, বনবিড়াল, বিভিন্ন জাতের পাখি, সাপ ইত্যাদি।
দ্বীপশিখা বিদ্যালয় (Dwip Shikha School)
দ্বীপশিখা বিদ্যালয় দিনাজপুর জেলা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে বিরল উপজেলার রুদ্রপুরে অবস্থিত। এটি দর্শনীয় স্থান হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ হলো এটি একটি মাটির তৈরি একটি ভিন্নধর্মী বিদ্যানিকেতন। ২০০৬ সালে স্থানীয় মানুষের ঐতিহ্য ও পরিচয় তুলে ধরে এই বিদ্যালয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল। পরিবেশবান্ধব প্রায় ৮,০০০ বর্গফুটের এই দোতলা স্কুলটি স্থানীয় কাঁচামাল, বাঁশ ও কাদামাটি দিয়ে নির্মিত।
রামসাগর দীঘি (Ramsagor Dighi)
রামসাগর দীঘিটি মানুষের খনন করা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দীঘি। এটি দিনাজপুর জেলার তেজপুর গ্রামে অবস্থিত। এই দীঘির আয়তন প্রায় ৪,৩৭,৪৯২ বর্গমিটার এর গড় গভীরতা প্রায় ১০ মিটার। ঐতিহাসিক তথ্য মতে, পলাশীর যুদ্ধের কিছুকাল পূর্বে রাজা রামনাথ পার্শ্ববর্তী গ্রাম গুলোর পানির চাহিদা পূরণের জন্য এই দীঘি খনন করেছিলেন। এই দিঘী থেকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিক রেস্ট হাউস, মিনি চিড়িয়াখানা, শিশু পার্ক, পিকনিক স্পট ইত্যাদি।
স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পট (Swapnapuri picnic spot)
স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পট দিনাজপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৫২ কিলোমিটার দূরে নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জে অবস্থিত। এই বিনোদন কেন্দ্রটি প্রায় ৪০০ একর জায়গার উপর গড়ে তোলা হয়েছে। চিত্তবিনোদনের জন্য এখানে রয়েছে পাহাড়, উদ্যান, কৃত্রিম লেক, বাহারি রকমের গাছপালা, চিড়িয়াখানা, শিশু পার্ক, ফুলের বাগান, কৃত্রিম ঝর্না, ঘোড়ার রথ, শালবাগান, মাটির কুটির, নামাজের জায়গা, ৫টি কটেজ এবং কর্তৃপক্ষের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ঠাকুরগাঁও জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ
ফানসিটি শিশু পার্ক (Funcity Children’s Park)
ফানসিটি শিশু পার্ক ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে প্রায় ১০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা একটি দৃষ্টিনন্দন পার্ক। শিশু পার্ক নামে খ্যাত হলেও এটি সকল বয়সী মানুষের জন্যই চিত্তবিনোদনের অন্যতম কেন্দ্রস্থল। এখানে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর নিদর্শন, টয় ট্রেন, দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ, সাম্পান নৌকা, মিউজিক চেয়ার, মোটরকার, ভিডিও গেমস, দোলনা, আম ও লিচুর বাগান রয়েছে।
বালিয়াডাঙ্গী সূর্য্যপূরী আমগাছ (Baliadangi Suryapuri Mango Tree)
বালিয়াডাঙ্গী সূর্য্যপূরী আমগাছটি মূলত ঠাকুরগাঁও জেলার বলিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভারতের সীমান্তবর্তী হরিণমারির মন্ডুমালা গ্রামে অবস্থিত একটি প্রাচীন ও ব্যতিক্রমধর্মী গাছ। এটি প্রায় ২০০ বছরের পুরনো। বর্তমানে এটি প্রায় ২.৫ বিঘা জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এবং ৮০-৯০ ফুট উঁচু। তাই এটি এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় আম গাছের স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রাচীন এই গাছটিতে প্রতিবছর বহু আম হয় এবং প্রতিটি আমের ওজন হয় প্রায় ২০০-২৫০ গ্রাম। বর্তমানে এই গাছের মালিক নুর ইসলাম ও সাইদুর ইসলাম। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ এই গাছটি দেখতে এবং মৌসুমে এর আম খেতে আসেন।
জামালপুর জমিদার বাড়ি জামে মসজিদ (Jamalpur Zamindar Bari Jame Masjid)
জামালপুর জমিদার বাড়ি জামে মসজিদটি ঠাকুরগাঁও জেলার জামালপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। জামালপুর জমিদার বাড়ির নির্মাণ কাজ চলা অবস্থায়, ১৮৬৭ সালে জমিদার বাড়ির সাথে এই ব্যয়বহুল মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। এই মসজিদে একসাথে প্রায় ৩০০-৬০০ জন মুসল্লি নামাজ পড়তে পারে। এই মসজিদে ৩৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ৮০টি মিনার ৩টি কারুকার্যমন্ডিত গম্বুজ রয়েছে। সব মিলিয়ে আকর্ষণীয় ডিজাইনকৃত এবং ঐতিহাসিক এই মসজিদে দেখতে বহু দর্শনার্থীর আগমন হয়।
শালবাড়ি মসজিদ ও ইমামবাড়া (Shalbari Mosque and Imambara)
শালবাড়ি মসজিদ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা থেকে ২০ কিলোমিটার পশ্চিমে ভাউলারহাটের কাছে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। এই মসজিদ থেকে কিছুটা দূরে কিছুটা ভাঙ্গা অবস্থায় থাকা একটি ইমামবাড়া রয়েছে। এই মসজিদ ও ইমামবাড়ার স্থাপনাকে সমসাময়িক বলে ধারণা করা হয়। মসজিদ থেকে প্রাপ্ত শিলালিপির তথ্যানুসারে, ১২১৫ বঙ্গাব্দে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়।
পঞ্চগড় জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ
মির্জাপুর শাহী মসজিদ (Mirzapur Shahi Mosque)
মির্জাপুর শাহী মসজিদটি পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে অবস্থিত প্রায় ৩৫০ বছরের পুরনো একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। আয়তাকার এই মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট এবং প্রস্থ ২৪ ফুট। মসজিদের ছাদে পাশাপাশি ৩টি গম্বুজ এবং চারকোণে ৪টি চিকন মিনার রয়েছে। মসজিদের ফরাসি ভাষায় লেখা একটি শিলালিপি দেখে মনে করা হয় এটি মোঘল সম্রাট শাহ্ আলমের রাজত্বকালে তৈরি।
পঞ্চগড়ের চা বাগান (Panchagarh Tea Gardens)
বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের সমতল ভূমিতেও বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ করা হয়। ১৯৯৮ সালে পঞ্চগড়ে প্রথম চা চাষ শুরু হয়। বর্তমানে পঞ্চগড়ের দুই শতাধিক চা বাগান রয়েছে এবং চা চাষের মোট জমির পরিমাণ ২২৫৫.৫৪ একর। পঞ্চগড় জেলা থেকে তেঁতুলিয়ায় যাবার পথে রাস্তার দুপাশে বিস্তীর্ণ চা বাগান দেখতে পাওয়া যায়।
তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা (Tentulia to Kanchenjunga)
বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া থেকে পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়। কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা প্রায় ৮,৫৮৬ মিটার। তেতুলিয়া উপজেলা সদরে জেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় থাকা ডাকবাংলোর কাছেই উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে পিকনিক স্পট নির্মাণ করা হয়েছে। মহানন্দা নদীর তীরে ভারতের সীমান্ত ঘাসা এই পিকনিক স্পট ও ডাকবাংলা থেকে হেমন্ত ও শীতকালে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
মহারাজার দীঘি (Maharaja Dighi)
মহারাজার দীঘিটি হলো পঞ্চগড় জেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ওমর খানা ইউনিয়নে অবস্থিত প্রায় ১৫০০ বছরের পুরনো ৎএকটি ঐতিহাসিক পুকুর। ভিতরনগর নামের প্রাচীন ঐতিহাসিক এক রাজ্যে মহারাজা পৃথু রাজত্বকালে এই দীঘিটি খনন করেন। পাড়সহ জলাশয়ের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০০ গজ এবং প্রস্থ প্রায় ৪০০ গজ। এখানে পানির গভীরতা প্রায় ৪৫ ফুট। দীঘির চারপাশে প্রায় ১০টি ঘাট রয়েছে। প্রতিবছর এখানে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে এক বিশাল মেলার আয়োজন করা হয়।
কুড়িগ্রাম জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ
চান্দামারী মসজিদ (Chandamari Mosque)
চান্দামারী মসজিদ কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে মন্ডলপাড়ায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। ধারণা করা হয়, ১৫৮৪ থেকে ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। মসজিদটি সুলতানি ও মোঘল স্থাপত্যের সমন্বয়ে তৈরি।
ভেতরবন্দ জমিদার বাড়ি (Vetorbondo Zamindar House)
ভেতরবন্দ জমিদার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলা সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে নাগেশ্বরী উপজেলায় অবস্থিত। এই জমিদার বাড়িতে কাঠ দিয়ে নির্মিত হয়েছিল। অতীতে নাগেশ্বরী উপজেলার ভেতরবন্দ গ্রামে এই পরগনার সদর দপ্তর ছিল। বর্তমানে জমিদার বাড়িটির প্রায় অর্ধেক অংশ কালের গর্ভে হারিয়ে গেলেও, বাকি অংশটি ভেতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
উলিপুর মুন্সিবাড়ী (Ulipur Munsibari)
উলিপুর মুন্সিবাড়ী কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার ধরনীবাড়ি ইউনিয়নে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক বিশালাকৃতির অট্টালিকা। এই মুন্সি বাড়িটি প্রায় ৩৯ একর জায়গার উপর স্থাপিত। তৎকালীন স্থাপত্যশৈলীর নানান নিদর্শন এর পাশাপাশি এই মুন্সিবাড়ির মূল ফটকের পাশে রয়েছে কাঁঠালি চাঁপা ফুলের গাছ এবং শান বাঁধানো পুকুর ঘাট।
টুপামারী পুকুর ও পিকনিক স্পট (Tupamari Pond and Picnic Spot)
টুপামারী পুকুর কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নে অবস্থিত শহরের একমাত্র পিকনিক স্পট। টুপামারী পুকুরকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে প্রায় ২৫ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত একটি পিকনিক স্পট। পিকনিক স্পটে সময় কাটানোর পাশাপাশি কুড়িগ্রাম ও আশেপাশের জেলা থেকে সৌখিন মৎস্য শিকারীরা এই পুকুরে মাছ শিকার করতে আসেন।
নীলফামারী জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ
চিনি মসজিদ (Chini Masjid)
চিনি মসজিদটি হলো নীলফামারী সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সৈয়দপুরে অবস্থিত প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী একটি স্থাপত্য নিদর্শন। প্রাথমিকভাবে এই মসজিদটি বাঁশ ও ছন দিয়ে নির্মাণ করা হলেও, এলাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে পরবর্তীতে ভিন্নভাবে নির্মাণ করা হয়। মসজিদটি নির্মাণে চিনামাটির থালা ও কাঁচের ভাঙ্গা অংশ, মার্বেল পাথর ও ইট-সুরকি ব্যবহার করা হয়েছিল। এই মসজিদের ব্যবহৃত চিনামাটির তৈরির পত্র কলকাতা থেকে আনা হয়েছিল।
তিস্তা ব্যারেজ (Teesta Barrage)
তিস্তা ব্যারেজ হলো তিস্তা নদীর উপর নির্মিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহত্তম সেচ প্রকল্প। এই ব্যারেজের একপাশে লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলা এবং অন্নপ্রাশে নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার গ্রামগুলো অবস্থিত। রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারি ও বগুড়া জেলার অনাবাদি জমিতে সেচ সুবিধা প্রদানের জন্য ১৯৭৯ সালে এর কাজ শুরু হয়ে ১৯৯০ সালে শেষ হয়। এটি ৬১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ৪৪ রেডিয়াল গেট বিশিষ্ট।
নদীর দুইপাশে গড়ে তোলা সবুজ বেষ্টনী, বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পট, চারপাশের পরিবেশের মন ভুলানো সৌন্দর্য এবং ব্যারেজের কালো পিচের রাস্তা বহু দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে।
নীলসাগর (Nillsagor)
নীলসাগর হলো নীলফামারী জেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে গোড়গ্রাম ইউনিয়নে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক দিঘী। নীলসাগরের জল ভাগের মোট আয়তন ৩২.৭০ একর এবং দিঘির পাড়ের ২১ একর জমিসহ। ভ্রমণপ্রেমী মানুষদের চিত্তবিনোদনের জন্য এখানে বহু সংস্কার করে যুগোপযোগী করা হয়েছে। এখানে বনবাবুল, নারকেল, মেহগনি, শিশু গাছসহ বিভিন্ন ফুল ও ফল গাছের সারি রয়েছে। শীতকালে এখানে অসংখ্য অতিথি পাখির আগমন হয় বলে, ১৯৯৮ সালে নীলসাগরকে পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
রেলওয়ে কারখানা (Railway Factory)
নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর ‘রেলের শহর’ হিসেবে পরিচিত। ১৮৭০ সালে সৈয়দপুরের প্রায় ১১০ একর জমির উপর বাংলাদেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা নির্মাণ করা হয়েছিল। এখানে নাট বল্টু থেকে শুরু করে রেলওয়ের ব্রডগেজ ও মিটারগেজ লাইনের বগি মেরামতসহ সব ধরনের কাজ করা হয়। শিক্ষা সফরের বাস্তব জ্ঞান অর্জনের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বহু মানুষের আগমন হয়।
লালমনিরহাট জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ
কাকিনা জমিদার বাড়ি (Kakina Zamindar’s House)
কাকিনা জমিদার বাড়ি লালমনিরহাট জেলায় অবস্থিত। ঐতিহাসিক তথ্য মতে, ১৬৮৭ খ্রিস্টাব্দে এই কাকিনা জমিদারির যাত্রা শুরু হয়েছিল। পরবর্তীতে এখানে বিভিন্ন জমিদারদের নিয়োজিত করা হয়েছিল। এই জমিদার বাড়িটি কবে নির্মিত হয়েছিল তার সঠিক তথ্য জানা না গেলেও, এর পেছনে যে ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে তা সন্দেহাতীত।
তিন বিঘা করিডোর (Teen Bigha Corridor)
তিন বিঘা করিডোর বাংলাদেশের লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেঘলীগঞ্জ জেলা সীমান্তে অবস্থিত একটি স্বতন্ত্র ভূমি। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইজারার মাধ্যমে তিন বিঘা করিডোর বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছিল। চারপাশে ভারতের ভূখণ্ড দিয়ে ঘেরা তিন বিঘা করিডোরের অবস্থান স্থানীয়ভাবে বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৭৮ মিটার এবং প্রস্থ প্রায় ৮৫ মিটার। ব্যবহারিক বিস্তৃতির কারণে বর্তমানে এটি বাংলাদেশের একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন: বরিশাল বিভাগের সকল জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ
নিদাড়িয়া মসজিদ (Nidaria Mosque)
নিদাড়িয়া মসজিদটি লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের বড় বাড়িতে অবস্থিত প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো একটি প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্য নিদর্শন। মুঘল স্থাপত্যশৈলীর প্রভাবে নির্মিত এই মসজিদে ইট, চুন ও সুরকি ব্যবহৃত হয়েছে। এই মসজিদের দৈর্ঘ্য ৪২ ফুট এবং প্রস্থ ১৬ ফুট। কথিত আছে যে, সুবেদার মনসুর খাঁর মুখে দাড়ি না থাকায় তিনি প্রার্থনা করেছিলেন তার মুখে দাড়ি গজালে একটি মসজিদ নির্মাণ করবেন। পরবর্তীতে মুখে দাড়ি উঠলে তিনি এই মসজিদে নির্মাণ করেন।
শেষকথা
উপরোক্ত রংপুর বিভাগের সকল জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ থেকে আপনার পছন্দের গন্তব্যটি বেছে নিতে পারেন। তবে অবশ্যই ভ্রমণের পূর্বে সেই স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।