পৃথিবীতে মানব সভ্যতার আজকের এই অবস্থা একদিনে গড়ে ওঠেনি। বরং হাজার হাজার বছর পেরিয়ে সভ্যতার অগ্রগতির মাধ্যমে আমরা আজকের সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠেছি। প্রাচীনকালে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মানুষের ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে বিভিন্ন নগর, সভ্যতা ও দেশের উদ্ভব হয়েছিল। ঐতিহাসিকদের বিভিন্ন গবেষণায় পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের দেশগুলোতে প্রাচীন সভ্যতা নিদর্শন পাওয়া গেছে। সভ্যতার আলোকে গড়ে ওঠা সেই প্রাচীন দেশগুলোই আমাদের আজকের ভিত্তিস্তম্ভ ছিল। তাই ঐতিহাসিক কৌতূহল দূর করতে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ১০টি দেশ সম্পর্কে তুলে ধরা হলো এই লেখাতে।
(১) সিরিয়া (Syria)
সিরিয়াকে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো সার্বভৌম দেশ হিসেবে ধারণা প্রকাশ করা হয়। প্রাচীনকাল থেকেই সিরিয়ায় ছিল ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সিরিয়াতে বহু প্রাচীন সভ্যতা বিদ্যমান ছিল। যেমন: আক্কাদিয়ান, সুমেরিয়ান, ব্যাবিলনীয়, আসিরিয়ান এবং রোমান সভ্যতা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ইতিহাসবিদদের ধারণা অনুযায়ী, সিরিয়ার ইতিহাস প্রায় ১০ হাজার বছরের পুরোনো।
প্রাচীন এই দেশটিতে বিশ্বের প্রাচীনতম শহরগুলোর মধ্যে একটি দামোস্কো অবস্থিত। বর্তমানে সিরিয়া দীর্ঘদিন ধরে গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হলেও, সিরিয়া তার সমৃদ্ধ ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত।
(২) ইথিওপিয়া (Ethiopia)
বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো দেশগুলোর মধ্যে একটি হলো ইথিওপিয়া। এই দেশের ইতিহাস প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছরের বেশি পুরনো। ইথিওপিয়া আফ্রিকার প্রাচীনতম দেশগুলোর মধ্যে একটি। ইথিওপিয়া সম্পর্কে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো, এই দেশটি কখনও কোনও বিদেশী শক্তি দ্বারা উপনিবেশিত হয়নি। এই দেশটি সাম্প্রতিককালে ৪০০০ বছর পূর্বে খুঁজে পাওয়া গেলেও এর ইতিহাস বেশ পুরনো। এই দেশে প্রায় ১০ হাজার বছর আগের মানব সভ্যতার ঐতিহাসিক নিদর্শনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ইথিওপিয়ায় ঐতিহাসিকভাবে অনেকগুলো শক্তিশালী সভ্যতা ছিল। হাজার বছরের প্রমানস্বরূপ গিজ স্ক্রিপ্ট, লালিবেলার প্রাচীন রক-কাটা গির্জা এবং আকসুমাইট সাম্রাজ্য ইত্যাদি নিদর্শন রয়েছে। তবে এখানে সভ্যতার প্রাথমিক বিকাশ ঘটেছিল খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ সালে। সংস্কৃতি, ধর্ম এবং ইতিহাসের গভীরে নিহিত একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্যও রয়েছে এই দেশের। এখনো ইথিওপিয়ায় বহু প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে। প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক পর্যটক সেই প্রাচীন স্থাপত্যগুলো দেখতে ভিড় জমায়।
(৩) ইরান (Iran)
প্রাচীনকালের পারস্য দেশটি বর্তমানে ইরান নামে পরিচিত। এটি মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার মধ্যে অবস্থিত, ইরাক, তুরস্ক, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের মতো বিশিষ্ট দেশগুলোর সীমান্তবর্তী। ইরানের প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস প্রায় চার হাজার বছরেরও বেশি পুরনো। তবে মানব সভ্যতার প্রাচীন রাজ্য হিসেবে এই ইরান আনুমানিক ২,৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। প্রাচীন ইরানি সভ্যতা খ্রিস্টপূর্ব ২,০০০ থেকে ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে বিকাশ লাভ করলেও এই অঞ্চলে মানব বসতি ছিল প্রায় ৭,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দেরও আগে থেকে।
মূলত আর্য জাতির বিভিন্ন গোত্রের মানুষজন খ্রিস্টপূর্ব ২,০০০ অব্দের দিকে ইরানীয় মালভূমিতে বসতি স্থাপন শুরু করেছিল। সেখানে এখনও পারস্য, আরবি, তুর্কি এবং আরও অনেক জাতির সংস্কৃতির মিশ্রণ রয়েছে। তাই প্রাচীনকাল থেকেই ইরান দেশটি মানব সভ্যতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং শক্তিশালী একটি দেশ হয়ে উঠেছিল। খ্রিস্টপূর্ব ১৩তম শতাব্দীতে শিলখাক-ইন-শুশিনাকের অধীনে পশ্চিমে টাইগ্রিস নদী এবং দক্ষিণে পার্সেপোলিস পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল ইরান।
এখানে খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০ অব্দের ঐতিহাসিক ও নগর বসতির সন্ধান পাওয়া যায়। এই দেশের উচ্চভূমির দক্ষিণ পশ্চিম ও পশ্চিম ভাগ প্রাচীন নিকট প্রাচ্য, প্রারম্ভিক ব্রোঞ্জ যুগের এলাম ও পরবর্তীকালে বিভিন্ন জাতি, যেমন কাসিতে, মানায়েন ও গুতিয়ানদের সাথে মিলিত হয়েছে। প্রাচীনকালে পারস্যের/ ইরানীয় রাজধানী ছিল সুসা। বর্তমানে সুসা ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের সুনাম অর্জন করেছে। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
(৪) মিশর (Egypt)
বর্তমানে বিশ্বের প্রাচীনতম দেশ মিশরকে ধারণা করে থাকেন অনেকেই। হতে পারে এটি বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো সার্বভৌম দেশ। মিশরের ইতিহাস প্রায় ৬,৫০০ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো হতে পারে। ধারণা করা হয়, মিশরের প্রাচীন সভ্যতা ৪৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দেরও আগে শুরু হয়েছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৩,১৫০ সালে মিশরের প্রথম রাজবংশের প্রথম রাজা নারমারের রাজত্বের আনুমানিক শুরু এবং তখন পূর্ববংশীয় বা প্রাচীন মিশর হিসাবে বিবেচিত সময়ের শেষ।
নারমার প্যালেট ঘোষণা করেছিলেন যে, ঊর্ধ্ব ও নিম্ন মিশরকে একীভূত করা হয়েছে। তখন একদিকে নারমারকে উচ্চ মিশরের সাদা মুকুট পরা চিত্রিত করা হয়েছে, অন্যদিকে তিনি নিম্ন মিশরের লাল মুকুট পরেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। মিশরের প্রাচীন এই সভ্যতাটি নীল নদের অববাহিকায় গড়ে উঠেছিল। প্রাচীন মিশরীয়রা স্থাপত্যে, শিল্পে, সাহিত্যে এবং বিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। তারা পিরামিড, স্ফিংস এবং অন্যান্য বিশাল স্থাপত্য তৈরি করেছিল যা আজও পৃথিবীর আশ্চর্যকর স্থাপত্য হয়ে মানুষকে বিস্মিত করে। ইতিহাসবিদ রবার্ট জে. ওয়েঙ্কে- “দ্য অক্সফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ অ্যানসিয়েন্ট ইজিপ্ট” -এ মিশরের প্রাচীনত্বের ঐতিহাসিক তথ্যগুলো তুলে ধরেছেন।
(৫) লেবানন (Lebanon)
লেবানন বিশ্বের প্রাচীনতম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দেশ। ধারণা করা হয়, লেবাননের সভ্যতা অত্যন্ত প্রাচীন এবং এর ইতিহাস প্রায় ৭ হাজার বছরের পুরনো। প্রাথমিকভাবে, লেবাননের অধিবাসী ছিলেন ফিনিশিয়ানরা। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫০০০ সালের দিকে ফিনিশিয়ানরা সেখানে বসতি স্থাপন করেছিল বলে ধারণা করা হয়। প্রাচীন ফিনিশিয়ানরা লেবাননে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণ করেছিল। যার মধ্যে রাস্তা, সেতু, দুর্গ এবং শহর রয়েছে। বৈরুত আজও ফিনিশীয়, গ্রীক হেলেনিয়, রোমান, আরব, ওসমানীয় আমলের সাক্ষী হয়ে বেঁচে আছে।
লেবাননে অনেকগুলো প্রাচীন শহর এবং এর ধ্বংসাবশেষ রয়েছে, যা এই দেশের সমৃদ্ধ ইতিহাসের প্রমান। লেবাননের রাজধানী এবং দেশের বৃহত্তম শহর বৈরুত। এই শহরে প্রায় ৫০০০ বছরের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। প্রায় ১৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ফেরাউনের চিঠিতে উল্লেখ্য পাওয়া যায় বৈরুত শহরের নাম। ২০১৫ সালে বৈরুতকে সাতটি New 7 Wonders Cities এর একটি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এছাড়াও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও ছিল এবং এখানে অনেক বিখ্যাত দার্শনিক, কবি, এবং লেখকের জন্মস্থান ছিল। লেবাননের প্রাচীন ফিনিশিও সভ্যতার আরও একটি নিদর্শন বাইব্লস শহর, যার আরবী নাম জুবাইল। পৃথিবীর ২য় প্রাচীন এই নগরের ইতিহাস প্রায় ৭০০০ বছরের পুরনো। গ্রিকরা বাইব্লোস থেকে প্যাপিরাস আমদানি করতো। বর্তমানে শহরটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত।
(৬) গ্রীস (Greece)
গ্রীসকে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো দেশগুলির মধ্যে একটি বলে মনে করা হয়। ১৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের শুরুতে, মাইসেনিয়ান সভ্যতা থিবস এবং এথেন্স সহ একাধিক রাজ্য নিয়ে ক্রমাগত সভ্যতার শিখরে পৌঁছতে চলেছিল এটি। খ্রিস্টপূর্ব দ্বাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত গ্রীসে মাইসেনিয়ান সভ্যতা উন্নতি লাভ করে। বিশ্বের প্রাচীনতম ক্রমাগত বাসযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে কয়েকটি প্রাচীন সভ্যতার জন্মস্থান এই গ্রীস। এছাড়াও গ্রীক সভ্যতা পশ্চিমা সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করেছিল। এটি শিল্প, সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান এবং স্থাপত্যে সমৃদ্ধ। ঐতিহাসিকদের তথ্য মতে, গ্রীসের ইতিহাস প্রায় ৫ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো। গ্রীসে এমন অনেক প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে, যেগুলো প্রায় ৫০০০ বছরের পুরনো।
তবে কিছু দার্শনিকদের মতে, গ্রীক সভ্যতা খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৩,০০০ বছর পূর্বে শুরু হয়েছিল। ধারণ করা হয়, এই সভ্যতাতেই প্রথম গণতন্ত্রের ধারণা প্রচলিত হয়েছিল। প্রাচীন গ্রীসের ঐতিহাসিক নিদর্শন ও সৌন্দর্য নিয়ে, ঐতিহাসিক ড. ক্যারল জি. থমাস তার ‘অক্সফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ প্রাচীন গ্রীস এন্ড রোম’ গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে- “আঁকা বা ভাস্কর্যের উপস্থাপনায় সামরিক ক্রিয়াকলাপের শক্তিশালী উপস্থিতি, সেইসাথে প্রকৃত অস্ত্র এবং বর্মে, মাইসেনিয়ান নিয়ন্ত্রণের নিদর্শন। বর্তমানে, Mycenae এবং Tiryns এর Mycenaean ধ্বংসাবশেষ গুলো ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা পেয়েছে।
(৭) চীন (China)
পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীন বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ঐতিহ্যবাহী সভ্যতাগুলোর মধ্যে একটি বলেও মনে করা হয়। প্রাচীন এই দেশটির ইতিহাস প্রায় ৪ হাজার বছরের পুরনো। এখানে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন লিখিত ইতিহাস গুলোর নিদর্শন রয়েছে। ধারণা করা হয় চীনের সর্ব প্রাচীন সাম্রাজ্য হলো শিয়া সাম্রাজ্য। এটি আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২০৭০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে চীনের ইতিহাসে বহু সাম্রাজ্য এবং রাজবংশের আবির্ভাব ও নিষ্পত্তি হয়েছিল। তবে চীন সবসময় একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বিদ্যমান ছিল। চীনের প্রাচীন রাজবংশের মধ্যে শ্যাং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাকে সর্বপ্রাচীন বলে বিবেচনা করা হয়।
তৎকালীন চীনের সরকার, আনুমানিক ১৬০০ খ্রিস্টপূর্বে এই অপ্রসিদ্ধ চীনা রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই শ্যাং রাজবংশ বর্তমান চীনের উত্তর-পূর্ব অংশকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল। এটি হেবেই প্রদেশ পর্যন্ত উত্তরে এবং হেনান প্রদেশ পর্যন্ত পশ্চিমে বিস্তৃত ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ১৬০০- খ্রিস্টপূর্ব ১০৪৬ পর্যন্ত সময়কালে চীনারা ১২ মাসে ১ বছর এবং ৩৬০ দিনের ক্যালেন্ডার তৈরি করেছিল এবং লেখার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিল। আনুমানিক ১,৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই রাজ্যের রাজধানী ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ইয়িন জু। বর্তমানে এটি একটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট।
এছাড়াও চীনের অন্যান্য প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শনগুলো হলো: The Great Wall of China, The Tower of Blue Dragon এবং The Pagoda of Five Pillars.
(৮) ইরাক (Iraq)
প্রাচীন মেসোপটেমিয়া (বর্তমান ইরাক) মানবসভ্যতাকে দোলনা বলা হয়। আনুমানিক ২৩৩৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সারগনের শাসনের শুরু হয়। সারগন আক্কাদিয়ান সাম্রাজ্যের অধীনে এই অঞ্চলের শহর-রাষ্ট্রগুলিকে একত্রিত করেছিল এবং প্রথম সেমেটিক রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করে। সারগন রাজধানী শহর আক্কাদ থেকে শাসন করেছিলেন। এই শহরটি ইউফ্রেটিস নদীর তীরে ছিল বলে ধারনা করা হয়।
ইরাকের আরেকটি প্রাচীনতম শহর হলো শুশ। প্রাচীন হিব্রু বাইবেলেও উল্লেখ্য পাওয়া যায় এর নাম। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহ থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে শুশ শহরের বয়স অন্তত সাড়ে ৬ হাজার বছর। বর্তমানে প্রায় এক লক্ষ লোকের বাস এই শহরে। মেসোপটেমিও এবং পারস্য সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত।
(৯) আর্মেনিয়া (Armenia)
হারমোনিয়াম পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন একটি দেশ। ২০১৬ সালের গবেষণার পর নেচার জার্নালে প্রকাশিত একটি একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩,০০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ২,০০০ এর মধ্যবর্তী সময়ে আর্মেনিয়া দেশের জেনেটিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। ইতিহাসবিদ হোভান সিমোনিয়ান নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, “আমিনিয়ানদের এই ডিএনএ গবেষণাটি সাধারণভাবে আর্মেনীয় ইতিহাস সম্পর্কে আমরা যা জানি তার বেশিরভাগ রূপরেখা নিশ্চিত করেছে।”
অন্যদিকে, আর্মেনিয়ান ইতিহাসবিদ মোভসেস খোরেনাতসির বিবরণে ২,৪৯২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আর্মেনিয়ার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। ইতিহাসবিদদের মতে, যখন পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় বিশ্বে ব্রোঞ্জ যুগের সভ্যতাগুলো হঠাৎ ভেঙে পড়েছিল, তখন ১,২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে আর্মেনিয়ানদের জিনগত ইতিহাসের সদৃশ্যতা হঠাৎ করে কমে যায়। খোরেনাতসির এই গবেষণায় প্রায় ৫০০ বছর আগের জেনেটিক গঠনের পরিবর্তনও দেখানো হয়েছে। তখন অটোমান-পার্সিয়ান যুদ্ধ আর্মেনিয়াকে ২ ভাগে বিভক্ত করেছিল। খোরেনাতসির বিবরণ যদি সত্য হয়, আর্মেনিয়া হতে পারে বিশ্বের প্রাচীনতম দেশগুলোর একটি।
(১০) ভারত (India)
বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো দেশগুলোর মধ্যে ভারত অন্যতম। ধারণা করা হয়, ভারতের ইতিহাস প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো। ২০২৩ সালে, জাতিসংঘ বর্তমান ভারতকে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পাশাপাশি এটি বিশ্বের প্রাচীনতম দেশগুলোর মধ্যে একটি। সামগ্রিকভাবে এখানে ভারত বলতে মূলত সম্পূর্ন ভারতবর্ষকে বুঝানো হয়েছে (ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান)।
আরও পড়ুন: মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস ও মুঘল সম্রাটদের বংশ তালিকা
ভারতে বহু প্রাচীন সভ্যতার উত্থান ঘটেছিল। তন্মধ্যে, সিন্ধু নদীর তীরে গড়ে উঠা সিন্ধু সভ্যতা অন্যতম। এই সভ্যতা মূলত ভারতীয় উপমহাদেশে খ্রিস্টপূর্ব ৩৩০০ থেকে বিকাশ লাভ করেছিল। এবং আনুমানিক ১,৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে বৈদিক সভ্যতা দ্বারা প্রতিস্থাপিত না হওয়া পর্যন্ত এটি ছিল বিশ্বের তিনটি প্রধান প্রাথমিক সভ্যতার মধ্যে সবচেয়ে বিস্তৃত। তৎকালীন সময়ে সিন্ধু সভ্যতা আরব সাগরের কাছে সুতকাগান ডোর পর্যন্ত পশ্চিমে এবং ভারতের বর্তমান রাজধানী শহর নয়াদিল্লির কাছে আলমগীরপুর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
সিন্ধু সভ্যতার পরেও ভারতে আরো বহু সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছিল। তন্মধ্যে, মৌর্য সাম্রাজ্য, গুপ্ত সাম্রাজ্য এবং মুঘল সাম্রাজ্য উল্লেখযোগ্য। এই সভ্যতাগুলো ভারতকে একটি সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এনে দিয়েছে।
শেষকথা
প্রাচীনকালের ইতিহাস সম্পর্কে আমরা শুধু ধারণা পোষণ করতে পারি। তবে প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর সর্বপ্রথম দেশ কোনটি ছিল তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তবে উপরোক্ত বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ১০টি পৃথিবীর প্রাচীনতম দেশ সভ্যতার নিদর্শন বহন করে।