মানুষের তৈরি মহাকাশ ভিত্তিক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন যান হলো স্যাটেলাইট (Satellite)। পৃথিবীব্যাপী বহু দেশ থেকে নানারকম কর্মকাণ্ডকে ঘীরে বিভিন্ন প্রকার স্যাটেলাইট মহাকাশে প্রেরন করা হয়েছে যুগে যুগে। ২০১৮ সালের ১১ মে, বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে, বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ মহাকাশে স্থাপন করা হয়েছে।
১৯৫৭ সালে মানুষের তৈরি প্রথম স্যাটেলাইট রাশিয়ার ‘স্পুটনিক (Sputnik)’ মহাকাশে পাড়ি জমানোর পর থেকে বর্তমান সময় অবধি ছোট-বড় প্রায় ৭,৯৪১ টি স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হয়েছে। লাল-সবুজ রঙের পতাকা অঙ্কিত বাহু বিশিষ্ট এই স্যাটেলাইট টি মহাকাশেও জানান দিচ্ছে বাংলাদেশের অবস্থান। বাংলাদেশের অন্যতম আধুনিক এই প্রকল্প – বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ইতিহাস, গবেষণা, নির্মাণ, নির্মাণ ব্যয়, কিভাবে কাজ করে, কি কাজের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে, কোথায় অবস্থিত ইত্যাদি সামগ্রিক সকল তথ্য ও সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য রয়েছে এই লেখাতে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট (Bangabandhu Satellite)
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বাংলাদেশের সর্বপ্রথম জিও-স্টেশনারি স্যাটেলাইট বা ভূ-স্থির কৃত্রিম উপগ্রহ। বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নততর করতে এবং সম্প্রচারভিত্তিক কার্যক্রম নিশ্চিত করতে এটি নির্মান করা হয়েছে।
স্যাটেলাইট মহাকাশের একটি আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বস্তু। পৃথিবীর অভিকর্ষ বল ও পৃথিবী থেকে বিপরীতমুখী বলের সম্মিলিত প্রয়োগে এটি চাঁদের মতো মহাকাশে স্থির হয়ে থাকতে পারে এবং পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে না। পৃথিবীর কক্ষপথে বাংলাদেশের স্যাটেলাইটটি সর্বদাই নির্দিষ্ট গতিতে ঘুরছে এবং বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশকে বানিজ্যিকভাবে তথ্য সেবা দিয়ে সহযোগীতা করছে।
বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি দেশের টিভি চ্যানেল গুলোএই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার করার ফলে দেশের অর্থ বিদেশি স্যাটেলাইট প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে না। অপরদিকে, বানিজ্যিকভাবে বিদেশি মিডিয়া গুলোকে সার্ভিস দিয়ে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। বর্তমানে ২০২৪ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট মহাকাশে প্রেরনের জন্য নির্মানকাজ চলছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এর কাজ কি
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মূলত একটি যোগাযোগ ও সম্প্রচার স্যাটেলাইট। বাংলাদেশসহ স্যাটেলাইটের সংশ্লিষ্ট অঞ্চল গুলোতে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল সম্প্রচার, ভিস্যাট ও ডিটিএইচ এর স্যাটেলাইট সেবা নিশ্চিত করতেই এটি কাজ করে থাকে। এছাড়াও এই স্যাটেলাইটটি প্রায় ৪০ প্রকার সেবা দিতে সক্ষম।
স্যাটেলাইটটি নির্মাণকারী ‘থ্যালিস এলেনিয়া স্পেস’ কোম্পানিটি বঙ্গবন্ধু-১ এর কার্যক্ষমতা এবং এবং প্রান্তিকভাবে যে সকল সেবাগুলো দিতে পারবে তার ধারণা প্রকাশ করেছিল। In Orbit Test – IoT এর স্পেসভিত্তিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর, সেই ফলাফলের উপর ভিত্তি করে বঙ্গবন্ধু-১ এর কাজ সম্পর্কে তথ্য দিয়েছিল। ‘থ্যালিস এলেনিয়া স্পেস’ এর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের এই স্যাটেলাইটটি নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে পারবে:
ভিডিও সম্প্রচার: এটি রেডিও, ডিজিটাল টেলিভিশন এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য ডাটা ট্রান্সফার করতে পারবে। এক্ষেত্রে মধ্যমান রেডিও এন্টেনা গুলোও বিশ্বব্যাপী সিগন্যাল প্রেরণ করতে সক্ষম হবে।
ব্রডব্যান্ড সংযোগ: আধুনিক যেকোনো ডিভাইস এবং ইলেকট্রনিক যন্ত্রগুলোর ক্ষেত্রে একটি ডিভাইস এবং রিমোটের মধ্যে উচ্চগতির ইন্টারনেট বা নেটওয়ার্ক সংযোগ সুবিধা নিশ্চিত করবে।
কমিউনিকেশন ট্রাংক: স্যাটেলাইটের আওতাধীন সংশ্লিষ্ট এলাকারজুড়ে বিস্তৃত পরিধিতে উচ্চ ক্ষমতার এবং গতির Point-to-point ডাটা স্থানান্তর সার্ভিস দিতে পারবে।
দেশব্যাপী সর্বত্র ইন্টারনেট সংযোগ: বাংলাদেশের বহু স্থানে এখনো অপটিক ক্যাবল বা সাবমেরিন ক্যাবল পৌঁছায়নি। তাই সেখানে ইন্টারনেট সংযোগ কিংবা টেলিকমিউনিকেশন তেমন আশানুরূপ নয়। সেই এলাকাগুলোতে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের ইন্টারনেট সংযোগ ও টেলিকমিউনিকেশন সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
দুর্যোগ পরিস্থিতিতে নেটওয়ার্ক সেবা: এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কিত পূর্বাভাস দিতে পারবে। এবং ভূমিকম্প, সুনামি, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা কিংবা প্রলয়ংকরী ঝড়ের সময় বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন স্থান থেকে সংযোগ স্থাপনে কার্যকরী প্রভাব ফেলবে।
ভিস্যাট প্রাইভেট নেটওয়ার্ক: Visat Private Network মূলত বিভিন্ন প্রাইভেট নেটওয়ার্ক, যেমন- ভয়েস ট্রান্সফার, ডেটা ট্রান্সফার, ইন্টারনেট সার্ভিস ইত্যাদি নেটওয়ার্কিং সেবা প্রদান করে। বঙ্গবন্ধু-১ এর মাধ্যমে গ্যাস স্টেশন, ব্যাংক ইত্যাদিতে থাকা টাওয়ার বা রেডিও অ্যানটেনার মাধ্যমে ভিস্যাট প্রাইভেট নেটওয়ার্ক সেবা দিতে পারে।
ডিটিএইচ পরিষেবা: DTH পরিষেবা মূলত ভিডিও সম্প্রচার ভিত্তিক স্যাটেলাইট কার্যক্রম। এই পরিষেবার আওতায় বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি ডিজিটাল টেলিভিশন, রেডিও এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ডাটা ট্রান্সফার সেবা দিয়ে থাকে। এটি স্যাটেলাইট থেকে সরাসরি অত্যন্ত ছোট রেডিও এন্টেনা গুলোতেও ডাটা স্থানান্তর করতে পারে। ফলে আধুনিক LED টেলিভিশন গুরুতে ডিস কানেকশন ছাড়াই টেলিভিশন চ্যানেল দেখা যায়।
এছাড়াও সম্প্রচারার স্যাটেলাইট ভিত্তিক কার্যক্রমের অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করতে পারে এই বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট এর গঠন
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কিলোমিটার উপরে অবস্থান করছে। এত উচ্চতায় উত্তোলনের জন্য এটিকে উপযুক্ত মাপে, আকৃতিতে ও গঠনে নির্মাণ করা হয়েছিল এবং এর ওজনও নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছিল। এই উচ্চতার অন্যান্য সম্প্রচার ভিত্তিক স্যাটেলাইটের মতোই বঙ্গবন্ধু-১ এর কাঠামোর ওজন ছিল প্রায় ৩,৬০০ কেজি। এই স্যাটেলাইটে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকার রঙিন নকশা করা হয়েছে এবং স্যাটেলাইটের বাহুতে ইংরেজি অক্ষরে লেখা ‘বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু ১’ লিখিত রয়েছে।
স্যাটেলাইটের সাথে নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য মোট ৪০ টি ট্রান্সপন্ডার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০টি বাংলাদেশের নিজস্ব যোগাযোগে ব্যবহারের জন্য এবং ২০টি ট্রান্সপন্ডার বিভিন্ন বৈদেশিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দেওয়ার জন্য নির্মিত। এই স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডার গুলোর মধ্যে ২৬টি কে-ইউ ব্যান্ড এবং ১৪টি সি ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার। এটি ১৬০০ মেগাহার্টজ (MHz) ক্ষমতাসম্পন্ন।
স্যাটেলাইটের মৌলিক অংশগুলো সহ আরো বেশকিছু যন্ত্রাংশ নিয়ে এটিই গঠন করা হয়েছে। সেগুলো হলো:
- স্যাটেলাইটের কাঠামো বা স্যাটেলাইট বাস
- উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ডেটা ট্রান্সমিটিং অ্যান্টেনা ও রিসিভার অ্যান্টেনা
- ব্যান্ডপাস ফিল্টার (ইলেকট্রনিক সার্কিট ডিভাইস)
- পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার
- ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড
- সোলার সেল এবং ব্যাটারি
- হাই রেজুলেশন বিশিষ্ট ক্যামেরা
- ডাটা ট্রান্সমিটার ও রেসপন্ডার (ট্রান্সপন্ডার)
- হাই ক্লক স্পিড প্রসেসর
- স্যাটেলাইটের ‘স্টিয়ারিং (Steering) এর উপর দিকনির্দেশনা দিতে জিএনসি (GNC- Guidance Navigation and Control)।
এছাড়াও আরো বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যন্ত্রের সমন্বয়ে বঙ্গবন্ধু-১ গঠন করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কিভাবে কাজ করে?
প্রায় প্রতিটি স্যাটেলাইটের মৌলিক কাজ নেটওয়ার্কিং কার্যক্রম পরিচালনা বা ডাটা স্থানান্তর। বঙ্গবন্ধু-১ একটি সম্প্রচার ভিত্তিক স্যাটেলাইট হওয়ায় এটিও নেটওয়ার্কিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। বাংলাদেশের এই স্যাটেলাইটটি মূলত ‘ট্রান্সপন্ডার (Transponder)’ -এর মাধ্যমে ডাটা স্থানান্তর করে।
ট্রান্সপন্ডার হলো ডাটা ট্রান্সমিটার এবং রেসপন্ডার বা ডাটা রিসিভার এর সমন্বয়ে গঠিত একটি নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা। ট্রান্সপন্ডারের মাধ্যমে একসাথে বহু উৎসে, অর্থাৎ বহু টিভি কিংবা রেডিও চ্যানেল সম্প্রচার করা যায়। মূলত এটি একটি টিভি বা রেডিওর রিলে স্টেশন (Relay station)- এর মতো সম্প্রচার করে থাকে।
একটি ট্রান্সপন্ডার স্যাটেলাইটের সাথে নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য পৃথিবী থেকে স্যাটেলাইট পর্যন্ত কিছু তরঙ্গপথ অনুসরণ করে। অপরদিকে, স্যাটেলাইট থেকে সরাসরি পৃথিবীর দিকে কিছু বিপরীতমুখী তরঙ্গপথ ব্যবহার করে। পৃথিবীর দিকে মুখ করা তরঙ্গ পথগুলোর মাধ্যমেই বিবর্ধিত করা ডাটা ফ্রিকোয়েন্সি গুচ্ছ সম্প্রচার করা হয়। স্যাটেলাইট এর কাজের ধরনের উপর ভিত্তি করে একটি ট্রান্সফর্মন্ডারের বিভিন্ন তরঙ্গপথ থাকতে পারে।
আরো পড়ুন: অপটিক্যাল ফাইবার কাকে বলে? অপটিক্যাল ফাইবার কিভাবে কাজ করে?
টিভি চ্যানেল সম্প্রচারের জন্য, প্রথমত একটি ট্রান্সপন্ডার বিভিন্ন উৎস থেকে সিগন্যাল বা ডাটা গ্রহণ করে। তারপর এর নিজস্ব প্রসেসরের মাধ্যমে গ্রহণ করা ডাটা সিগন্যালকে নিরীক্ষণের জন্য অ্যাম্পলিফাই (Amplify) বা বিবর্ধন করে। সর্বশেষ ফাইবার অপটিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কে পুনরায় একটি প্রি-প্রোগ্রাম সিগন্যাল ফেরত পাঠায়, যা একসাথে অসংখ্য গ্রাহক গ্রহণ করতে পারে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ইতিহাস
২০১৮ সালের ১১ মে, বিশ্বের ৫৭ তম স্যাটেলাইট ক্ষমতাধর দেশ হিসেবে মহাকাশে নিজের স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। তবে এটি নির্মাণ করতে পার করতে হয়েছে বহু বাধা-বিপত্তি। বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এর ইতিহাস খুবই বিস্তৃত, যার প্রাথমিক ধারণা শুরু হয়েছিল প্রায় অর্ধশত বছর পূর্বে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের নভেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়ে সাইক্লোনের রূপ নেয়। এরপরে দেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল এবং দেশব্যাপী সকল মানুষের মানে আতঙ্ক জাগ্রত হয়েছিল। কিন্তু বৈদেশিক এক স্যাটেলাইট মহাকাশ থেকে একটি ফুটেজ পাঠালে তা একে জানা যায় সাইক্লোনটি তার দিক পরিবর্তন করেছে। ফলে দেশব্যাপী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা দূর হয়েছিল।
সেই সময় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গুরুত্ব ও উপকারিতা উপলব্ধি করে বাংলাদেশে মহাকাশ ও বায়ুমণ্ডল কেন্দ্র (SARC) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়ায় প্রায় ১২৮ একর এলাকা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের সর্বপ্রথম ‘উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র’ উদ্বোধন করেন।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের উদ্ভাবনী গবেষণা
বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট নিয়ে গবেষণার কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালে। তখন International Telecommunication Union -এর কাছে মহাকাশের ১০২° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে একটি কক্ষপথ চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু সেই আবেদনের উপর বিশ্বের ২০টি দেশ আপত্তি জানালে তা স্থগিত করে দেওয়া হয়।
২০০৮ সালে, কৃত্রিম উপগ্রহ নির্মাণ গবেষণার জন্য একটি কমিটি গঠন করে – বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বিটিআরসি (BTRC)। পরবর্তীতে কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের বিষয়টি জোরদার করার জন্য ২০০৯ সালে বিষয়টি জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালায় যুক্ত করা হয়। তখন ITU -এর কাছে পুনরায় বাংলাদেশে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য আবেদন করা হলে, আবেদনটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এর পর থেকেই শুরু হয় বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের নির্মাণ যাত্রা।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মাণ ও নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট টি নির্মাণ করতে প্রায় সাড়ে ৫ বছর সময় লেগেছিল। স্যাটেলাইটটির নকশা করা থেকে শুরু করে মহাকাশের কক্ষপথে স্থাপন করা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত ছিল। ITU থেকে মহাকাশে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট স্থাপনের অনুমোদন পাওয়ার পর, ২০১২ সালের মার্চ মাসে স্যাটেলাইট টির নকশা তৈরির জন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল (Space Partnership International) -কে নিয়োগ করা হয়।
তারপর স্যাটেলাইটের কাঠামো নির্মাণের জন্য BTRC সংস্থাটি ফ্রান্সের ‘থ্যালিস এলেনিয়া স্পেস (Thales Alenia Space)’ কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। চুক্তিপত্রে কাঠামো নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৯৫১ কোটি ৭৫ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেই চুক্তি অনুযায়ী, স্যাটেলাইটের কাঠামো নির্মাণ, ভূ-স্তরে ২টি স্টেশন পরিচালনা, উৎক্ষেপণ এবং ভূমি ও মহাকাশ প্রাথমিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিয়েছিল ফ্রান্সের কোম্পানিটি।
মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্থাপন করার জন্য প্রয়োজন ছিল একটি নিজস্ব কক্ষপথ। তাই ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে রাশিয়ার সংস্থা ইন্টারস্পুটনিক (Intersputnik)- এর কাছ থেকে মহাকাশের কক্ষপথ (Orbital Slot) ক্রয় করে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করা হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী স্যাটেলাইটের কক্ষপথের আর্থিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৫ বছরের জন্য ২১৮ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা।
পরবর্তীতে, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বঙ্গবন্ধু-১ এর নির্মাণ ব্যয় হিসেবে ‘একনেক’ সভায় ২,৯৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে কৃত্রিম উপগ্রহের সার্বিক ব্যবস্থাপনা করার জন্য ‘বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানী লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থা গঠন করা হয়। ব্যাপক ধারাবাহিকতা পেরিয়ে, অবশেষে ২০১৭ সালের শেষের দিকে স্যাটেলাইটটি নির্মাণ কাজ শেষ হয়। তারপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উৎক্ষেপণের উপযোগী কি-না তা যাচাই করে, বেশ কয়েকবার বাধা-বিপত্তির পর ২০১৮ সালের ১১ মে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করা হয়।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পের অর্থায়ন
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বঙ্গবন্ধু-১ এর প্রকল্প ব্যয় হিসেবে ‘একনেক’ সভায় ২,৯৬৭ কোটি ৯৫ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
সরকারি তহবিল থেকে এই প্রকল্পের সম্পূর্ণ অর্থায়ন করা তখন সম্ভব ছিল না। তাই প্রকল্পের মোট নির্ধারিত ব্যয়ের মধ্যে ১,৩১৫ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা সরকারি তহবিল থেকে অর্থায়ন করা হয়েছিল। প্রকল্প ব্যয়ের বাকি ১,৬৫২ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা বৈদেশিক ঋণ সরবরাহকারী সংস্থা থেকে অর্থায়ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সম্পূর্ণ অর্থ একসাথে তাৎক্ষণিক প্রয়োজন না হওয়ায় নির্মাণ কাজ চলতে থাকে। এরইমধ্যে, প্রকল্প বাস্তবায়ন খরচ কমে মোট ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকায় আসে। সর্বমোট প্রকল্প ব্যয় কমে আসার পর, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১,৩৫৮ কোটি টাকা ঋণের চুক্তি করা হয়- ‘হংক সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন’ (Hong Shanghai Banking Corporation- HSBC) -এর সাথে।
HSBC সংস্থার সেই ১,৩৫৮ কোটি টাকা ঋণ ১২ বছর মেয়াদে ২০ কিস্তিতে ১.৫১% সুদসহ পরিশোধ করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের কাঠামো সম্পূর্ণরূপে তৈরি হওয়ার পর, ২০১৭ সালের ১৬ই ডিসেম্বর এটি উৎক্ষেপণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ফ্লোরিডায় সংগঠিত হারিকেন- ‘ইরমা’ এর ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ অনেক উপযোগী থাকায় তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার পর, ২০১৮ সালের ৩০ মার্চ, একটি বিশেষ উড়োজাহাজের মাধ্যমে ‘থ্যালিস অ্যালেনিয়া স্পেস’ কোম্পানি থেকে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপনকারী প্রতিষ্ঠান SpaceX এর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
২০১৮ সালে কয়েকবার এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে আবহাওয়া জনিত কারণে বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়। ২০১৮ সালের ৪ মে চূড়ান্তভাবে উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি হিসেবে SpaceX- এ উৎক্ষেপণ রকেটের Static Fire State কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। তারপর ১০ মে উৎক্ষেপনের চূড়ান্ত সময়ে এসেও কারিগরি সমস্যার কারণে তা স্থগিত করা হয়। অবশেষে, ১১ মে (বাংলাদেশের ১২ মে) স্পেসএক্স এর লঞ্চ প্যাড থেকে ফ্যালকন ৯ (Falcon 9) রকেটের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করা হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে কক্ষপথে স্থাপন প্রক্রিয়া
মহাকাশে উৎক্ষেপণের পর বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সবচেয়ে বড় ঝুঁকিবহুল কাজটি সম্পাদনা করতে হয়েছিল। স্যাটেলাইট থেকে যেই ‘ফ্যালকন-৯’ রকেট এর মাধ্যমে মহাকাশে প্রেরণ করা হয়েছিল, সেই রকেটের গতি অত্যন্ত বেশি হওয়ায় উৎক্ষেপণের পর মাত্র ৩৩ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের মধ্যেই এটি ‘জিওস্টেশনারি ট্রান্সফার অরবিট (Geostationary Transfer Orbit)-এ পৌঁছে গিয়েছিল। এটি ছিল পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কিলোমিটার উপরে।
বঙ্গবন্ধু-১ মহাকাশে পৌঁছানোর পর একটি স্যাটেলাইটকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ২০-৩০ দিন সময় লাগে। এর নিজস্ব কক্ষপথে যেতে আরো অনেকটা পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। প্রায় ৯-১২ দিন পর নির্মাতা কোম্পানি স্যাটেলাইটের অন্যান্য কার্যক্রম গুলো করতে শুরু করে। এভাবে একটি স্যাটেলাইটকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ২০-৩০ দিন সময় লাগে।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট ভূ-কেন্দ্র থেকে পরিচালনার ব্যবস্থা
ভূ-কেন্দ্র থেকে একটি স্যাটেলাইটকে নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জটিল বিষয়। তাই মহাকাশে উৎক্ষেপণের পর থেকে প্রথম ৩ বছর এর পরিচালনা করতে সহায়তা করবে ‘থ্যালিস এলেনিয়া স্পেস’ কোম্পানি। তারপর বাংলাদেশী ভূ-কেন্দ্র থেকে দেশীয় প্রকৌশলীদের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
স্যাটেলাইট টি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরে এবং রাঙ্গামাটি জেলার বেতবুনিয়ায় ২টি ভূ-কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের অবস্থান | বর্তমানে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কোথায় অবস্থিত?
বঙ্গবন্ধু-১ ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৫ হাজার ৭০০ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থান করছে। বর্তমানে এটি ১১৯.২ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের কক্ষপথে থেকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে।
এটি বাংলাদেশের দ্রাঘিমাংশ থেকে অনেকটাই দূরে অবস্থিত। বাংলাদেশের দ্রাঘিমাংশ ৯০.৪ এবং স্যাটেলাইটের দ্রাঘিমাংশ ১১৯.২। এর ফলে স্যাটেলাইটের ফুটপ্রিন্ট বা কভারেজ বাংলাদেশের স্থল কিংবা জলসীমায় পরছে না। বরং এর ফুটপ্রিন্ট ইন্দোনেশিয়া থেকে তাজিকিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডার গুলোর মধ্যে ‘কে-ইউ’ ও ‘সি’ ব্যান্ডের আওতায় বাংলাদেশ সহ ভারত, ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি দেশগুলোকে রাখা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু-১ এর সুবিধাভোগী দেশসমূহ
বাংলাদেশের স্যাটেলাইটটি মূলত দেশীয় বিভিন্ন মিডিয়া সংস্থার উন্নয়নের জন্যই নির্মাণ করা হয়েছে। তবে আরো বেশ কয়েকটি দেশের মিডিয়া সংস্থাগুলো ট্রান্সপন্ডার ভাড়া নিয়ে সুবিধা ভোগ করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশগুলো হলো:
- দক্ষিণ আফ্রিকা: ২টি টিভি চ্যানেল সম্প্রচার হচ্ছে।
- তুরস্ক: ১টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল সম্প্রচার হচ্ছে।
- ফিলিপাইন: ১টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল সম্প্রচার হচ্ছে এবং আরো ১টি চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।
- ঘানা: ২ টিভি চ্যানেল সম্প্রচার হচ্ছে এবং আরো ১টি সম্প্রচারের প্রস্তুতি চলছে।
- ক্যামেরুন: ১টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল সম্প্রচার হচ্ছে।
- হন্ডুরাস: ২টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল সম্প্রচার হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এর সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা
বাংলাদেশসহ বিশ্বের আরো বহু দেশে তথ্য সম্প্রচার ভিত্তিক সেবা-সুবিধা প্রদান করতেই বঙ্গবন্ধু-১ নির্মিত হয়েছে। এর উল্লেখযোগ্য সুবিধা সমূহের পাশাপাশি কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। নিচে এর সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ তুলে ধরা হলো:
বঙ্গবন্ধু-১ এর সুবিধাসমূহ
- বাংলাদেশে নিজস্ব টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার করা যায় নিজস্ব স্যাটেলাইটের মাধ্যমে। এতে করে প্রতিবছর প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হ্রাস পাবে।
- বৈদেশিক মিডিয়া সংস্থার কাছে বঙ্গবন্ধু-১ এর ২০টি ট্রান্সপন্ডার ভাড়া দিয়ে প্রতিবছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকা উপার্জন করা সম্ভব।
- ডিটিএইচ (Direct to Home) ডিশ সার্ভিস দেওয়া যাবে।
- এটি ৩৬ মেগাহার্টজ (MHz) পর্যন্ত উচ্চ ব্যান্ডউইথ দিতে সক্ষম।
- এর উচ্চ ব্যান্ডউইথ ও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে, দেশের বিভিন্ন পার্বত্য ও হাওড় অঞ্চলের ইন্টারনেট বঞ্চিত এলাকায় ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়া যাবে।
- তীব্র প্রাকৃতিক দুর্যোগে এর মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু রাখা যাবে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সীমাবদ্ধতা
- উন্নত টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা পরিচালনা করতে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সহযোগী স্যাটেলাইট প্রয়োজন হবে, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
- পৃথিবীতে এই স্যাটেলাইটের ফুটপ্রিন্ট বাংলাদেশের স্থল বা জলসীমার মধ্যে না থাকায় বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের সর্বোচ্চ সুবিধা পাচ্ছে না।
- বঙ্গবন্ধু-১ এর জীবনকাল ১৫ বছর নির্ধারিত হয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্প থেকে আশানুরূপ আয় হচ্ছে না। ফলে ভবিষ্যতে এটি লাভজনক প্রকল্প নাও হতে পারে।
বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট এর ধারণা
বাংলাদেশের ২য় ভূস্থির যোগাযোগ ও সম্প্রচার ভিত্তিক স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ এর নির্মানকাজ চলছে। এটি মূলত পৃথিবীর একটি অবজারভেটরি স্যাটেলাইট হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে, যা ভূ-পৃষ্ঠের ৩০০-৪০০ উপরে স্থাপন করা হবে। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ এবং নিরাপত্তাসংক্রান্ত কাজের জন্যই এটি ব্যবহৃত হবে।
সবচেয়ে সুবিধাজনক বিষয় হলো ভূ-পৃষ্ঠের কাছাকাছি স্থাপন করা হলে, এর জন্য অরবিটাল স্লট বা কক্ষপথ ক্রয় করতে হবে না। এটি নির্মান এবং উৎক্ষেপণের জন্য রাশিয়ার গ্লাভকসমস কোম্পানির সাথে চুক্তি করা হয়েছে। ২০২৩ সালের মধ্যেই এটি উৎক্ষেপণ করা যাবে বলে আশা করা যায়।
শেষকথা
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সকল তথ্য জানা যায়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বাংলাদেশের প্রথম নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ হিসেবে মহাকাশে অবস্থান করছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ২ উদ্ভাবন করা হলে দেশের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।