বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম

বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম ২০২৪

আপনার বিকাশ নাম্বারটি কি হারিয়ে গেছে বা চুরি হয়ে গেছে? অথবা আপনি কি বিকাশ একাউন্টটি বন্ধ করতে চাচ্ছেন? তাহলে জেনে নিন বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম, কি কি লাগবে ও বিস্তারিত তথ্যাবলী।

বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম হলো বিকাশ। কিন্তু অনেকে বিকাশ একাউন্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করে না, ফলে হ্যাকারের শিকার হয়। কেউবা অন্যের নামে রেজিস্টার করা সিম দিয়ে নিজের বিকাশ একাউন্ট খুলে। এধরনের বিভিন্ন কারণে পরবর্তীতে তারা নানান জটিলতার শিকার হয়। তাই অনেক বিকাশ গ্রাহক তাদের একাউন্টটি বাতিল করে নতুন ভাবে একাউন্ট করতে চায়। আপনিও যদি এমন গ্রাহক হয়ে থাকেন, তাহলে বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম এবং গুরুত্বপূর্ণ সকল তথ্যাবলী জেনে নিন এখানে।

বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম

বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার জন্য আপনার বিকাশ একাউন্টের ব্যালেন্স শূন্য করে নিন। তারপর আপনি যে নাম্বার দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খুলেছেন সেই নাম্বার থেকে 16247 নাম্বারে কল করুন। কল করার পর একাউন্ট বন্ধ করতে একজন বিকাশ প্রতিনিধির সাথে কথা বলার জন্য মেন্যু থেকে অপশন বেঁছে নিন। তারপর বিকাশ প্রতিনিধির কাছে আপনার একাউন্টটি বন্ধ করার কথা বলুন। অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার জন্য তিনি বিকাশ গ্রাহকের যাবতীয় পরিচয়বাচক তথ্যাবলী ও একাউন্টের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে জানতে চাইবে। এসকল তথ্য সঠিকভাবে দিতে পারলে বিকাশ কাস্টমার হেল্পলাইন থেকে আপনার একাউন্টে সাময়িকভাবে স্থগিত করে দেওয়া হবে।

এ পদ্ধতিতে স্থায়ীভাবে বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করা যায় না। স্থায়ীভাবে বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার জন্য, স্থানীয় বিকাশ কাস্টমার কেয়ার বা এজেন্ট অফিসে বিকাশের গ্রাহক, তার এনআইডি কার্ড ও পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি নিয়ে উপস্থিত হতে হবে। তারপর অ্যাকাউন্ট বন্ধের জন্য অনুরোধ করলে, দায়িত্বরত বিকাশ কর্মকর্তা আপনার ডকুমেন্টগুলো যাচাই-বাছাই করে একাউন্ট বন্ধ করে দিবে। পরবর্তীতে আপনি চাইলে অন্য একটি নাম্বারে পুনরায় বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারবেন। 

আরও পড়তে পারেনঃ বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম | লুফে নিন ১২৫ টাকা বোনাস

কেন বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার প্রয়োজন হয়

অনেক সময় দেখা যায়, আমাদের বিকাশ একাউন্টটি হ্যাকিং এর শিকার হয়। কিংবা একাউন্টে নিরাপত্তাজনিত অন্যান্য ঝুঁকি থাকে। কেউবা বিদেশে চলে যাবে বলে স্থায়ীভাবে তার বিকাশ একাউন্টটি বাতিল করতে চায়। 

অধিকাংশ ক্ষেত্রে এমন হয় যে, একজনের রেজিস্টার করা সিমকার্ড দিয়ে অন্য একজন বিকাশ একাউন্ট খুলেছে। এক্ষেত্রে আপনি নতুন নম্বরে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ২য় বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারবেন না। তাই বিকাশ গ্রাহকরা তাদের একাউন্ট বাতিল করে, অন্য সিম দিয়ে নতুন বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারবে। 

অন্যদিকে, আপনি যদি অন্যকারো জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে রেজিস্টার করা বিকাশ ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রেও একাউন্টটি বন্ধ করা উচিত। অর্থাৎ আপনার সিম দিয়ে এবং অন্য কারো এনআইডি দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খুললে তা বন্ধ করে নিজের এনআইডি দিয়ে পুনরায় খোলা উচিত। কারণ ভবিষ্যতে আপনার লেনদেনের নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ।

তাছাড়া অন্য যেকোনো কারণে, বিকাশ বন্ধ করতে পারেন। যেমন: সিম অপারেটর পরিবর্তন করতে চাইলে, একাউন্টের মালিকানা পরিবর্তন, পুরাতন সিম বাদ দিয়ে নতুন সিম একাউন্ট ব্যবহার করতে চাইলে কিংবা বিকাশ ব্যবহার বন্ধ করতে চাইলে।

আরও পড়তে পারেনঃ বিকাশ পিন ভুলে গেলে করণীয় – bKash PIN Reset

বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করতে কি কি লাগে

বিকাশ একাউন্টটি বন্ধ করতে প্রয়োজন হবে:

  • গ্রাহকের NID Card বা পাসপোর্টের কপি।
  • গ্রাহকের ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • কাস্টমার কেয়ার অফিসার গ্রাহকের স্বশরীরে উপস্থিতি।
  • বিকাশ একাউন্টের কিছু তথ্য।

ঘরে বসে বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম

বর্তমানে বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং এর যাবতীয় কার্যক্রম সারা বাংলাদেশের যেকোন স্থান থেকেই করা যায়। অন্যান্য সেবার পাশাপাশি আপনি চাইলে বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার সেবাটিও ঘরে বসেই পেতে পারেন। আপনার মোবাইল চুরি হলে বা হারিয়ে গেলে, ঘরে বসেই একাউন্টটি সাময়িকভাবে বন্ধ করতে পারবেন।

যেকোনো প্রয়োজনে কিংবা যেকোনো জটিলতার শিকার হয়ে, আপনি যদি বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করতে চান, তাহলে ঘরে বসেই সরাসরি বিকাশ কাস্টমার হেল্পলাইনে যোগাযোগ করুন। বিকাশ কাস্টমার হেল্পলাইন নম্বরটি হলো ১৬২৪৭। এই নাম্বারে কল করে বিকাশ গ্রাহকরা যেকোন সেবা পেতে পারে।

আপনার একাউন্টটি বন্ধ বা বাতিল করার জন্য, যেই সিমে থাকা একাউন্টটি বাতিল করতে চান সেই সিম থেকে ১৬২৪৭ নাম্বারে কল করুন। এবার বিকাশের যাবতীয় সার্ভিস সমূহ সম্পর্কে একটি কলার টিউন শুনতে পাবেন। এখান থেকে অপশন গুলো লক্ষ্য করুন। বিকাশের কাস্টমার হেল্পলাইন এজেন্টের সাথে কথা বলতে যেই অপশনটি সিলেক্ট করতে বলা হবে, সেটি সিলেক্ট করুন। তারপর কিছুক্ষণ রিং হয়ে একজন বিকাশ কাস্টমার হেল্পলাইন প্রতিনিধি আপনার সাথে কথা বলবে।

আরও পড়তে পারেনঃ বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম ২০২৪

এবার আপনার একাউন্টটি বন্ধ করার ইচ্ছা এবং কারণ বিকাশ প্রতিনিধিকে জানান। তিনি মালিকানা ভেরিফিকেশনের জন্য আপনার এনআইডি কার্ডের তথ্যাবলী জানতে চাইবে। পাশাপাশি বিকাশের লেনদেন সম্পর্কে এবং অন্যান্য নিরাপত্তাসূচক বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রশ্ন করবে। 

এসময় আপনার আইডি কার্ড এবং বিকাশের সর্বশেষ কিছু লেনদেনের তথ্যাবলী পূর্বেই সংগ্রহ করুন। এ সকল তথ্য বলি আপনি সঠিকভাবে দিতে পারলে, আপনার অ্যাকাউন্টটি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হবে। পরবর্তীতে, আপনার সমস্যার সমাধান হলে, কাস্টমার কেয়ারে কল করে আপনার একাউন্ট চালু করতে পারবেন।

আরও পড়তে পারেনঃ বিকাশে টাকা দেখার নিয়ম | কোড ও অ্যাপ দিয়ে বিকাশ ব্যালেন্স চেক

কাস্টমার কেয়ার থেকে বিকাশ বন্ধ করার নিয়ম

আপনি যদি কোন কারণে স্থায়ীভাবে আপনার একাউন্টটি বাতিল করে দিতে চান, তাহলে আপনাকে সরাসরি বিকাশ কাস্টমার কেয়ারে যেতে হবে। তারপর সেখানে বিকাশ গ্রাহক নিজে যাবতীয় ডকুমেন্টস দিয়ে আবেদন করলে, তার একাউন্টটি বাতিল করে দেওয়া হবে।

কাস্টমার কেয়ার থেকে বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়মাবলী জানতে, নিজে ধাপগুলো পড়তে থাকুন:

ধাপ ১: একাউন্টের সাথে সম্পৃক্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করুন

একাউন্টটি চিরস্থায়ীভাবে বন্ধ করার জন্য, যেই ভোটার আইডি কার্ড বা পাসপোর্ট দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলা হয়েছিল, সেটি লাগবে। পাশাপাশি যার এনআইডি কার্ড দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা তার দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি নিতে হবে।

ধাপ ২: নিকটস্থ কাস্টমার কেয়ার অফিসে স্বশরীরে যান

যিনি বিকাশ একাউন্টের মালিক তাকে স্বশরীরে নিকটস্থ কাস্টমার কেয়ার অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে উপস্থিত হতে হবে। তবে যদি বিকাশের আসল মালিক মৃত্যুবরণ করে কিংবা কাস্টমার কেয়ার অফিসে যেতে অপারগ হয়, তাহলে তার প্রতিনিধি হিসেবে অন্য একজন যেতে পারবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে, যিনি কাস্টমার কেয়ারে যাবেন তার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি ও ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবিও প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ আসল মালিক ও প্রতিনিধি উভয়ের ডকুমেন্টস লাগবে।

ধাপ ৩: আপনার বিকাশ একাউন্ট ব্যালেন্স ০.০০ করুন

বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার অন্যতম প্রধান শর্ত হলো একাউন্টের ব্যালেন্স ০.০০ হতে হবে। অর্থাৎ আপনার একাউন্টে ব্যালেন্স যদি ১ পয়সাও হয়, তাহলেও বিকাশ একাউন্টটি বন্ধ করা হবে না। তাই সেন্ড মানি, মোবাইল রিচার্জ, ক্যাশ আউট ইত্যাদি যেভাবেই হোক আপনার একাউন্টের ব্যালেন্স শূন্য করে নিন।

ধাপ ৪: কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধির সাথে বিস্তারিত কথোপকথন

আপনার একাউন্ট বন্ধের জন্য যেই কাস্টমার কেয়ার অফিসে যাবেন, সেখানে একজন প্রতিনিধির কাছে একাউন্ট বাতিল করার বিষয়টি জানান। তারপর তিনি গুরুত্বের সাথে আপনার নেওয়া ডকুমেন্টগুলো এবং বিকাশ বন্ধ করার কারণ যাচাই-বাছাই করবেন। তারপর তিনি সামগ্রিক বিষয়গুলো বিবেচনা করে, বিকাশ একাউন্টটি বাতিল করে দিবেন।

মৃত ব্যক্তির বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়ম

যেব্যক্তি নামে বিকাশ একাউন্ট খোলা রয়েছে যদি সে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে সেই একাউন্টটি বন্ধ করে দেওয়াই উচিত। কারণ অন্য কেউ সেই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে লেনদেনের অনিরাপত্তায় ভুগবে। 

মৃত ব্যক্তির বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করতে, সেই ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি ও ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি নিয়ে বিকাশ কাস্টমার কেয়ারে উপস্থিত হতে হবে। যিনি একাউন্টটি বন্ধ করতে যাবেন তার নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র কপি ও কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবিও নিতে হবে। তারপর কাস্টমার কেয়ারে বললে একাউন্টটি বাতিল করে দিবে।

কখন বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করতে হবে না

  • আপনার যদি বিকাশ সিম হারিয়ে যায় তবে একাউন্ট বন্ধ করার প্রয়োজন নেই। কারন সিমটি যার নামে রেজিস্ট্রেশন করা তাকে দিয়ে একই নাম্বারে আরেকটি তুলে নেওয়া যাবে।
  • বিকাশের পিন ভুলে গেলে একাউন্ট বন্ধ করার প্রয়োজন নেই। বরং বিকাশের মালিকানা উপযুক্ত প্রমাণ থাকলে পিন কোডটি রিসেট করতে পারবেন।
  • বিকাশ একাউন্ট হ্যাক হয়েছে মনে হলে, তা সাময়িকভাবে বন্ধ করতে পারেন।

বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার পুনরায় চালু করা যাবে কিনা

আপনি যদি বিকাশ কাস্টমার কেয়ারে কল করে সাময়িকভাবে আপনার বিকাশ একাউন্টটি বন্ধ করে নেন, তাহলে পুনরায় কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করে একাউন্টটি সচল করতে পারবেন। এক্ষেত্রে নতুন একাউন্ট খুলতে হবে না।

তবে আপনি যদি বিকাশ কাস্টমার কেয়ারে উপস্থিত হয়ে সরাসরি আপনার একাউন্টটি স্থায়ীভাবে বাতিল করে দেন, তাহলে নতুন সিম কার্ড ব্যবহার করে পুনরায় বিকাশ চালু করতে পারবেন।

শেষকথা

উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে, আপনার একাউন্টটি বাতিল করা জরুরী কিনা ভেবে নিন। তারপর বিকাশ একাউন্ট বন্ধ করার নিয়মে একাউন্টটি বাতিল করে নিতে পারবেন।

About Durud Ahmed

সম্মানিত ভিজিটর আমি দুরুদ আহমেদ,পেশায় আমি একজন ব্লগ লেখক। প্রযুক্তি ও শিক্ষা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, লাইফস্টাইল এবং ইসলামিক লেখাই আমার প্রিয়। এই ব্লগের মাধ্যমে আমি সঠিক তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ভিজিটরদের সহযোগিতা করাই মূল লক্ষ্য।