বাংলাদেশ কিংবা বিশ্বের যেকোন দেশে অবস্থান করে, বাংলাদেশের NID ব্যবহার করে বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারবেন। বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে নিজে নিজে অনলাইনে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন এই লেখাতে। অ্যাপসে প্রবেশ করে প্রথমবার লেনদেন করলেই পাবেন সর্বমোট ১২৫ টাকা বোনাস।
বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা হলো বিকাশ। তবে প্রাপ্তবয়স্ক অনেকেরই বিকাশ একাউন্ট নেই। অনেকেই আবার দেশের বাইরে থেকে একাউন্ট খুলতে চায়। তাই কিভাবে রেজিস্ট্রেশন করবেন এবং কি কি লাগবে তা জেনে নিন।
বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম
বিকাশ একাউন্ট খোলার জন্য, প্রথমেই প্লে স্টোর থেকে বিকাশ অ্যাপ ইনস্টল করে নিন। তারপর অ্যাপ ওপেন করে ‘লগইন/ রেজিস্টার’ লেখাতে ক্লিক করুন। এবার যে নাম্বার দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খুলতে চান, সেটি লিখুন। মোবাইলে ওটিপি কোড আসলে Allow করুন। এবার বিকাশের শর্তাবলী পড়ে, পরবর্তী ধাপে যান। তারপর আইডি কার্ডের দুই পাশের ছবি তুলুন, প্রয়োজনীয় তথ্য দিন এবং আপনার ফেইস ভেরিফাই করে নিবন্ধন করুন।
সফলভাবে তথ্য সাবমিট করার পর ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হলে একটি কনফারমেশন এসএমএস আসবে। তারপর পুনরায় অ্যাপস এর প্রবেশ করে পিনকোড সেট করুন। এবার মোবাইল নাম্বার ও পিন কোড দিয়ে এপসের ড্যাশবোর্ডে প্রবেশ করতে পারবেন। বিকাশ অ্যাপস থেকে প্রথমবার লেনদেন করলেই ১২৫টাকা পর্যন্ত বোনাস পাবেন।
আরও পড়ুনঃ ইংরেজি শেখার প্রয়োজনীয়তা ও শেখার কৌশল।
বিকাশ একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে
বিকাশ একাউন্ট খুলতে খুব বেশি কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় না। এর জন্য শুধুমাত্র রেজিস্ট্রেশন কারীর ভোটার আইডি কার্ড থাকলেই হবে। অনলাইনে বিকাশ মোবাইল অ্যাপ এর মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করার সময় রেজিস্ট্রেশনকারীকে তার ভোটার আইডি কার্ডের দুই পাশের ছবি আপলোড করতে হয়। তারপর যিনি রেজিস্ট্রেশন করবেন তার নিজেকে ফেইস ভেরিফিকেশনের জন্য উপস্থিত থাকতে হবে।
নিজে নিজে অনলাইনে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম
বর্তমানে অনলাইনে নিজে নিজেই বিকাশ একাউন্ট খোলা যায়। বিকাশ লিমিটেড এর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের এবং বিশ্বের যেকোন প্রান্তের বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য অ্যাপসের মাধ্যমে একাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন শুধুমাত্র একটি স্মার্ট ফোন থাকলেই ঘরে বসে বিকাশ একাউন্ট খোলা যায়। মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে বিকাশ একাউন্ট খোলার বিস্তারিত প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে দেখানো হলো:
ধাপ ১: বিকাশ অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করুন
অ্যাপস দিয়ে বিকাশ একাউন্ট প্রথমেই আপনার মোবাইলে বিকাশ অ্যাপ্লিকেশনটি ইন্সটল করে নিন। অ্যাপ ইন্সটল করার জন্য এখানে ক্লিক করুন: bKash.
ধাপ ২: রেজিস্ট্রেশন শুরু করুন
বিকাশ অ্যাপ্লিকেশন ওপেন করার পর নিচের ছবির মতো একটি পেজ দেখতে পাবেন। এখানে লগইন/রেজিস্ট্রেশন এবং বিকাশ নাম্বার পরিবর্তন করার অপশন পাবেন। নতুন অ্যাকাউন্ট রেজিস্টার করতে প্রথম অপশনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৩: মোবাইল সিম ও ওটিপি ভেরিফিকেশন করুন
রেজিস্ট্রেশন করার জন্য, সর্বপ্রথম আপনি যেই নাম্বারে অ্যাকাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন সেটি লিখুন।
অবশ্যই আপনার সেই মোবাইল নাম্বারের সিমটি রেজিস্ট্রেশনের জন্য ব্যবহার করা মোবাইলে থাকতে হবে। তারপর আপনার সেই নাম্বারের অপারেটর সিলেক্ট করুন। এখানে বাংলাদেশের ৬টি সিম অপারেটর থেকে আপনার সিমের অপারেটরে সিলেক্ট করুন। এবার আপনার মোবাইল নাম্বারে একটি ভেরিফিকেশন কোড পাঠানো হবে।
বিকাশ অ্যাপ এর স্ক্রিনে থাকা অবস্থায় সেই ভেরিফিকেশন কোডটি লিখতে ‘Allow’ লেখাতে ক্লিক করন। তাহলেই ভেরিফিকেশন হয়ে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাবে।
ধাপ ৪: বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়মের ধাপগুলো সম্পন্ন করুন
অ্যাপসের মাধ্যমে বিকাশ একাউন্ট খুলতে, এই ধাপে একজন রেজিস্ট্রেশন কারীকে ৩টি সহজ ধাপ অতিক্রম করতে হয়। যথা:
- ভোটার আইডি কার্ডের ছবি উত্তোলন,
- অ্যাকাউন্ট এর প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান,
- রেজিস্ট্রেশন কার্ডের ফেইস ভেরিফিকেশন।
রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে প্রথমেই নিচের ‘NID এর ছবি তুলুন লেখাতে ক্লিক করুন। তারপর নিজের সহজ ধাপ গুলো সম্পন্ন করুন:
(১) NID কার্ডের ছবি উত্তোলন করুন
প্রথমেই ভোটার আইডি কার্ডের সামনের পাশের ছবি তুলে সাবমিট করুন। তারপর একইভাবে পেছনের পাশের ছবিও তুলেও সাবমিট করতে হবে। এক্ষেত্রে মোবাইলের ক্যামেরা মোটামুটি স্পষ্ট হওয়া জরুরী।
(২) প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করুন
আইডি কার্ডের সামনের ও পেছনের পাশের ছবি সাবমিট করার পর, বিকাশ অ্যাপস থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এর আইডি কার্ডের তথ্যগুলো দেখানো হবে। সেখানে আপনার পরিচয়বাচক যে তথ্যগুলো এডিট করার প্রয়োজন সেগুলো এডিট করে নিবেন।
তারপর রেজিস্ট্রেশন কারী সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য দিতে হবে। যেমন: রেজিস্ট্রেশন কারীর লিঙ্গ কি? আয়ের উৎস কি? আনুমানিক মাসিক আয়ের পরিমাণ এবং পেশা নির্বাচন করতে হবে।
(৩) ফেইস ভেরিফাই করুন
এই ধাপে, রেজিস্ট্রেশন কারীর চেহারার সাথে আইডি কার্ডের চেহারার মিল ভেরিফাই করা হবে। এক্ষেত্রে ছবি কিভাবে তুলতে হবে তার দিকনির্দেশনা অ্যাপসে দেওয়া থাকবে।
এই ধাপটি সম্পন্ন করলেই আপনার বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়মের ধাপগুলো সম্পন্ন হবে।
ধাপ ৫: বিকাশ একাউন্ট এক্টিভেশন
বিকাশ একাউন্টের সকল তথ্য সাবমিট করার পর, ভেরিফিকেশন করতে কিছুটা সময় লাগে। এ সময় ৩টি ধাপ পার করা হয়।
ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হলে কনফার্মেশন এসএমএস পাঠানো হবে। তারপর নতুন বিকাশ একাউন্ট পিন সেট করলেই একাউন্টে লগইন করে ব্যবহার করতে পারবেন।
আরও পড়ুন: কিবোর্ড কী? কিভাবে কাজ করে, কিবোর্ডের অংশবলী ও প্রকারভেদ।
বিকাশ একাউন্ট খোলার পরবর্তী ধাপ
বিকাশ অ্যাপস এর মাধ্যমে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম শেষে পরবর্তী ধাপ হলো পিন কোড এবং ইউজার নেম সেট করা। প্রতিটি বিকাশ একাউন্টে নিরাপত্তার জন্য একটি ৫ সংখ্যার পাসওয়ার্ড বা পিনকোড সেট করতে হয়।
অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন হওয়ার পর, আপনি যখন পুনরায় এই অ্যাপস এ সাইন ইন করতে নতুন পিন সেট করতে হবে। এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম আপনি যেই নাম্বার দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খুলেছেন, এই নাম্বারটি লিখে ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করুন। এবার আপনার নাম্বারে একটি ৬ সংখ্যার ভেরিফিকেশন কোড আসবে। এই কোডটি লিখে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন। তারপর পিন সেট করার একটি পেজ আসবে। এখানে নতুন বিকাশ পিন অপশনে একটি ৫ সংখ্যার পিন লিখুন।
বিকাশ পিন কনফার্ম করার জন্য নিচে পুনরায় সেই একই পিনকোড লিখুন। এবার নিচের ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করলে কি নতুন পিন সেট হয়ে যাবে। খেয়াল রাখবেন পিনকোড টি যত ইউনিক হবে আপনার বিকাশ একাউন্টে নিরাপত্তা ততটাই বৃদ্ধি পাবে।
তারপর বিকাশ ইউজার নেম সেট করার অপশন আসবে। এখানে আপনার নামের প্রথম অংশ ও নামের শেষ অংশ লিখে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।
তারপর একটি বিকাশ প্রোফাইল পিকচার দিয়ে বিকাশ একাউন্টে ড্যাশবোর্ডে প্রবেশ করতে পারবেন।
বিকাশ একাউন্ট খোলার পর বোনাস পাওয়ার নিয়ম
যারা নতুন বিকাশ একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করে তাদের জন্য বিকাশের পক্ষ থেকে ১০০ টাকা কিংবা ১২৫ টাকা বোনাস দেওয়া হয়। তবে বিকাশ একাউন্ট খোলার পরপরই ১০০ টাকা বিকাশ রেজিস্ট্রেশন বোনাস দেওয়া হবে না।
সর্বপ্রথম bKash অ্যাপে সাইন ইন করার পর, ব্যালেন্স অপশনে ২৫ টাকা দেখতে পাবেন। আপনাকে এই ২৫ টাকা ব্যালেন্স ব্যবহার করে কোন নাম্বারে মোবাইল রিচার্জ করতে হবে। তাহলে ইনস্ট্যান্ট আরো ৫০/ ১০০ টাকা বোনাস দেওয়া হবে। মূলত প্রথমবার লেনদেনের পর বিকাশ তার নতুন গ্রাহককে শুভেচ্ছা জানাতে এই ১২৫ টাকা বোনাস দিয়ে থাকে। তাই লেনদেন করার মাধ্যমে এটি আপনিও পেতে পারেন।
যাদের আগেই বিকাশ একাউন্ট খোলা আছে তাদের ক্ষেত্রে বিকাশ বোনাস
যাদের আগে থেকেই বিকাশ একাউন্ট খোলা রয়েছে তারা বিকাশ অ্যাপ এ সাইন ইন করতে পারবে। অ্যাপসে সাইন করার জন্য তাদের শুধু ইউজার নেম ও প্রোফাইল পিকচার সেট করতে হতে পারে। তারপরেই ড্যাশবোর্ড থেকে লেনদেন করতে পারবে। তবে আগে থেকেই বিকাশ ব্যবহারকারীরা নতুন করে ১২৫ টাকা বোনাস পাবেনা। কিন্তু বিকাশের বিভিন্ন সময়ের অফার অনুযায়ী প্রথমবার অ্যাপস থেকে লেনদেন করলে বোনাস দেওয়া হয়।
অ্যাপ দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম
উপরোক্তভাবে বিকাশ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে, খুব সহজেই একজন বাংলাদেশী নাগরিক একাউন্ট খুলতে পারে। বিকাশ অ্যাপসের মাধ্যমে একাউন্ট খোলার প্রক্রিয়াটি সকলের জন্যই অত্যন্ত সহজ ও কম জটিলতপূর্ণ।
এজেন্টের মাধ্যমে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম
সাধারণত গ্রাম কিংবা শহরের বৃদ্ধ মানুষদের কাছে স্মার্ট ফোন থাকে না। কিংবা এমন অনেক নিরক্ষর মানুষজন রয়েছেন যারা স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারেনা। তারা চাইলে বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে একটি বিকাশ একাউন্ট খুলে নিতে পারবে। তবে বিকাশ এজেন্টের কাছে নিম্নোক্ত ডকুমেন্টগুলো জমা দিতে হবে:
- ভোটার আইডি কার্ড/ পাসপোর্ট কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফটোকপি।
- রেজিস্ট্রেশন কারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- একটি সচল মোবাইল।
- আপনি যেই সিমে অ্যাকাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন সেই সিম প্রয়োজন হবে।
এজেন্ট এর মাধ্যমে বিকাশ একাউন্ট খুলতে চাইলে, যিনি বিকাশ একাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন তাকে স্থানীয় কোন বিকাশ এজেন্টের কাছে যেতে হবে। তারপর এজেন্ট এর কাছে আপনার একটি বাটন মোবাইল এবং ভোটার আইডি কার্ডের কপি ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিতে হবে। বিকাশ এজেন্ট এ সকল ডকুমেন্টের তথ্যাবলী অনুযায়ী আপনাকে একটি বিকাশ একাউন্ট খুলে দিবে। একাউন্টে আপনি বাটন ফোনের মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারবেন।
একটি আইডি কার্ড দিয়ে কয়টি বিকাশ একাউন্ট খোলা যায়
একটি আইডি কার্ড দিয়ে শুধুমাত্র একটি বৈধ বিকাশ একাউন্ট খোলা যায়। সাধারণত বিকাশ একাউন্ট অত্যন্ত নিরাপত্তার সাথে পরিচালনা করা হয়। একজন বাংলাদেশী নাগরিক একাধিক বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারবে না। কারণ প্রত্যেকের ভোটার আইডি কার্ডের আইডি নম্বর এবং পরিচয়বাচক তথ্য ইউনিক। কেউ যদি জালিয়াতির মাধ্যমে একাধিক বিকাশ একাউন্ট খুলে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
অনলাইনে বিকাশ একাউন্ট খোলার জটিলতা
বর্তমানে সারা বাংলাদেশব্যাপী এমনকি দেশের বাইরের বাংলাদেশী নাগরিকরাও অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইনে বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারে। তবে অনলাইনে নিজে নিজে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়মে ব্যাপক জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। অধিকাংশ সময় এমন হয় যে, সকল তথ্য সঠিকভাবে দেওয়ার পরও বিকাশ রেজিস্ট্রেশন গ্রহণ করা হয় না। এর মূল কারণ হলো সার্ভারে সমস্যা। এছাড়া অন্যান্য সমস্যা থাকতে পারে।
শেষকথা
উপরোক্ত বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়মের ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি নিজে নিজে বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারবেন। বিকাশ একাউন্ট এবং বিকাশ অ্যাপস ব্যবহার করার যাবতীয় সুবিধাসমূহ, বিকাশ ক্যাশ আউট চার্জ, বিকাশ সম্পর্কিত যাবতীয় প্রশ্নাবলী এবং বিকাশ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে ভিজিট করতে পারেন: bKash.com.