আপনি যদি বিকাশের এজেন্ট হয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে চান, তাহলে জেনে নিন বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম ও প্রয়োজনীয় সকল তথ্যাবলী।
বর্তমানে সারা বাংলাদেশ জুড়ে প্রায় তিন লক্ষেরও বেশি বিকাশ এজেন্ট রয়েছে। অন্যান্য যেকোনো ধরনের ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি বিকাশ এজেন্ট ব্যবসাটি বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করে। ফলে অনেক ব্যবসায়ীরা বিকাশ এজেন্ট হতে চায়। তাই বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম, শর্তাবলী, কি কি লাগবে, কত টাকা লাগবে, অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া, সুবিধাসমূহ ও বিকাশ এজেন্ট কমিশন সম্পর্কে জেনে নিন এই লেখা থেকে।
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম ২০২৪
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য, bkash.com এর বিকাশ এজেন্ট ও মার্চেন্ট রেজিস্ট্রেশন ফরমে ভিজিট করুন। তারপর আপনার ব্যবসার প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা, ট্রেড লাইসেন্সের তথ্য, মোবাইল নাম্বার ইত্যাদি তথ্য দিয়ে আবেদন জমা দিন। বিকাশের অফিস থেকে আপনার সাথে যোগাযোগ করে যাবতীয় তথ্য যাচাই করা হবে। তারপর জেলা অফিসে তথ্য প্রেরণের পর অনুমোদন পেলে, আপনি বিকাশ এজেন্ট ব্যবসা করতে পারবেন। এটি সবচেয়ে সহজ আবেদন প্রক্রিয়া।
এছাড়া আপনি চাইলে আপনার এলাকার বিকাশ SR এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। তিনি আপনাকে এজেন্ট একাউন্ট খুলতে সহায়তা করবে। অন্যথায়, সরাসরি বিকাশের ডিস্ট্রিবিউটর অফিসে গিয়েও নতুন এজেন্ট হতে আবেদন করতে পারবেন।
আরও পড়তে পারেনঃ বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম | লুফে নিন ১২৫ টাকা বোনাস।
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খুলতে কোন এক্সট্রা ফি দিতে হয় না। শুধুমাত্র বিকাশ এজেন্ট রেজিস্ট্রেশন বাবদ পোস্টপেইড সিম ক্রয় ও ছবি বাবদ কিছু খরচ হতে পারে। তবে এজেন্ট হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা করতে আপনার কিছু টাকা ইনভেস্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে বিকাশ এজেন্ট একাউন্টে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্যাশ বক্সে উভয় স্থানেই টাকা জমা রাখতে হবে।
গ্রামাঞ্চলে যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিকাশ এজেন্ট রয়েছে তারা ২০-৩০ হাজার টাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্যাশবক্সে রাখলে এবং ২০,০০০ টাকার মতো এজেন্ট একাউন্টে ব্যালেন্স রাখলেই হয়। তবে শহরাঞ্চলে এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা গেলেও, উপযুক্ত হলো সর্বনিম্ন ১ লক্ষ টাকা ইনভেস্ট করা। কারণ সেখানে বিকাশের লেনদেন বেশি হয়ে থাকে।
আরও পড়তে পারেনঃ বিকাশে টাকা দেখার নিয়ম | কোড ও অ্যাপ দিয়ে বিকাশ ব্যালেন্স চেক।
বিকাশ এজেন্ট হওয়ার শর্ত
বিকাশ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবসা। অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মতোই বিকাশেরও এজেন্ট হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্তাবলী রয়েছে। এসকল শর্তাবলী পূরণ ব্যতীত আপনি একজন এজেন্ট হতে পারবেন না। এজেন্ট অ্যাকাউন্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ শর্তাবলী হলো:
(১) নিবন্ধনকারীর নিজস্ব দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
বিকাশ এজেন্ট ব্যবসা পরিচালনার জন্য নিবন্ধনকারী ব্যক্তির অবশ্যই নিজস্ব একটি দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকতে হবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোকেশন এমন জায়গায় হতে হবে যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ লোকের সমাগম হয়। অথবা যেখানে আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ বেশি হবে বলে ধারণাকৃত হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে আদর্শ স্থান হলো বাজার, চৌরাস্তার মোড়, লোকালয় পুর্ন গ্রাম (যেখানে অন্য কোন এজেন্ট নেই), বাসস্ট্যান্ড ইত্যাদি জায়গা।
(২) ট্রেড লাইসেন্স – বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
যেকোনো বৈধ ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিকাশ এজেন্টশিপ দেশের আইন অনুযায়ী একটি বৈধ ব্যবসা এবং এই ব্যবসা করতে একটি বৈধ দোকানের প্রয়োজন হয়। তাই বিকাশ এজেন্ট হতে আপনার ব্যবসার প্রতিষ্ঠানের একজন ট্রেড লাইসেন্স লাগবে। ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য দোকানের একটি ভালো নাম ঠিক করে, উপযুক্ত কাগজপত্র ব্যবহার করে ব্যবসায়ের লাইসেন্স করতে হবে।
(৩) টিন সার্টিফিকেট
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য টিন (TIN) সার্টিফিকেট বা ট্যাক্স-পেয়ার আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার রাখতেই হয়। এটি মূলত করদাদাকে সনাক্তকরণের জন্য বাংলাদেশের সরকার কর্তৃক আরোপকৃত একটি সনদ। তাই বিকাশ এজেন্টের ব্যবসা করার জন্যও দেশের একজন করদাতার প্রমাণ পত্র হিসেবে এই টিন সার্টিফিকেট লাগবে। অনলাইন থেকে নিজে নিজেই টিন ডাউনলোড করতে পারবেন।
(৪) বিকাশ এজেন্ট সিম কার্ড – বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
বিকাশ এজেন্ট হওয়ার জন্য একটি ইউনিট পোস্টপেইড সিম কার্ড লাগবে। আপনার এলাকায় নিকটস্থ সিম কার্ডের দোকান থেকে একটি পোস্টপেইড সিম সংগ্রহ করতে পারবেন। সেখান থেকে একটি ইউনিক নাম্বার সিলেক্ট করে সংগ্রহ করুন। এমন একটি নাম্বার সিলেক্ট করুন যা হবে সহজ এবং সহজে মনে রাখার মতো। এতে করে গ্রাহকের সাথে লেনদেনে সুবিধা হয়। খেয়াল রাখবেন, উক্ত সিমটি দিয়ে যেন পূর্বে কোন পার্সোনাল বিকাশ একাউন্ট খোলা না থাকে।
এছাড়া এজেন্ট হওয়ার পর আপনাকে আরো কিছু দায়িত্ব পালন করতে হবে। যেমন:
- বিকাশ এজেন্টের একাউন্টে কমপক্ষে ৭,০০০ টাকা ব্যালেন্স সর্বক্ষণ রাখতে হবে।
- একজন এজেন্টকে প্রতিদিন কমপক্ষে ২,০০০ টাকা বিকাশে লেনদেন করতে হবে।
- নতুন গ্রাহকদের রেফার করে বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট খুলে দিতে হবে।
আরও পড়তে পারেনঃ বিকাশ পিন ভুলে গেলে করণীয় – bKash PIN Reset।
বিকাশ এজেন্ট হতে কি কি লাগে
বিকাশ এজেন্ট হওয়ার জন্য উপরোক্ত শর্তাবলী গুলো পূরণ করতে পারলে, এজেন্টের আবেদন করতে নিম্নোক্ত ডকুমেন্টগুলো প্রয়োজন হবে:
- একটি পোস্টপেইড সিম কার্ড।
- ৩ কপি স্ট্যাম্প সাইজের এবং ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের কালার ছবি।
- ভোটার কার্ডের রঙিন ফটোকপি।
- ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি।
- টিন সার্টিফিকেটের ফটোকপি।
এসকল কাগজপত্র আপনার হাতে থাকলে, বিকাশ এজেন্ট হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
বিকাশে নিজস্ব কিছু সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ বা SR রয়েছে। তাদের সাথে যোগাযোগ করে খুব সহজেই বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলা যায়। অথবা আপনি চাইলে, অনলাইনে বিকাশ এজেন্ট রেজিস্ট্রেশন করেও আবেদন করতে পারেন। নিচে অনলাইন আবেদনের প্রক্রিয়াটি দেখানো হলো:
অনলাইনে বিকাশ এজেন্ট রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করার নিয়ম
অনলাইনে বিকাশ এজেন্ট রেজিস্ট্রেশন করার জন্য, একটি ফরম পূরণ করে আবেদন করতে হয়। সরাসরি রেজিস্ট্রেশন ফর্মটি পেতে ভিজিট করুন – বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম (রেজিস্ট্রেশন)। তারপর নিচের ফরমটি স্ক্রিনে আসলে, নিম্নোক্তভাবে তা পূরণ করুন:
Bkash Agent Registration Form – বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
- ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা দোকানের নাম লিখুন।
- আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান অনুযায়ী জেলার নাম ও এলাকার নাম সিলেক্ট করুন।
- এজেন্ট হওয়ার জন্য যেই SR এর সাথে যোগাযোগ করতে চান তার নাম লিখুন।
- আপনার একটি সচল মোবাইল নাম্বার লিখুন।
- আপনার মোবাইলে ব্যবহৃত ইমেইল এড্রেস লিখুন।
- আপনি অতিরিক্ত কোন তথ্য বা প্রমাণপত্র দিতে চাইলে, সেই তথ্যটি লিখুন।
- আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র থাকলে হ্যাঁ সিলেক্ট করুন। অন্যথায় পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়েও রেজিস্টার করা যেতে পারে।
- আপনার বৈধ ট্রেড লাইসেন্স থাকলে হ্যাঁ সিলেক্ট করুন।
- আপনার ট্রেড লাইসেন্স এর নাম্বারটি লিখুন।
- ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ (মাস ও বছর) লিখুন।
- সর্বশেষে, ‘আমি রোবট নই’ লেখার পাশে চেকবক্সে ক্লিক করে ক্যাপচা পূরণ করুন।
- এবার আপনার সাইন আপ অ্যাপ্লিকেশনটি জমা দিন।
এই আবেদনটি সাবমিট করার পর বিকাশ অফিস থেকে আপনাকে কল করা হবে। তারপর অফিসিয়াল ভাবে আপনার ব্যবসার প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক এলাকা এবং বিকাশ এজেন্ট হওয়ার ইচ্ছার কারণসহ যাবতীয় তথ্যাদি জানতে চাইবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আপনার তথ্যটি জেলা অফিসে পাঠানো হবে। এরই মধ্যে বিকাশের একজন SR আপনার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
পার্সোনাল বিকাশ একাউন্ট দিয়ে কি ব্যবসা করা যায়?
পার্সোনাল বিকাশ একাউন্ট দিয়ে ব্যবসা করা যায় না। অনেকেই পার্সোনাল বিকাশ একাউন্ট দিয়ে ‘সেন্ড মানি’ অপশনের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করে অধিকারে উপার্জন করছে। কিন্তু এটি আইনিভাবে বৈধ নয়। কারণ পার্সোনাল বিকাশ একাউন্ট দিয়ে ব্যবসা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিকাশ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বৈধতা জারি করা হয়নি।
যারা এ ধরনের কার্যক্রমের সাথে জড়িত রয়েছে, তাদের সনাক্ত করা গেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তাই ব্যবসা করতে চাইলে বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম অনুসারে একটি এজেন্ট একাউন্ট খুলে নিন।
বিকাশের ব্যবসার জন্য যেসকল সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী
পার্সোনাল বিকাশ একাউন্ট থেকে এজেন্ট একাউন্টে বেশি টাকা জমা থাকে। ফলে প্রতারক ও হ্যাকারদের অন্যতম লক্ষ্য থাকে এজেন্ট একাউন্টগুলো। তাই আর্থিক ক্ষতির হার থেকে বাঁচতে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। যেমন:
- বিকাশ এজেন্ট পিন নাম্বার গোপন রাখার চেষ্টা করা।
- লেনদেনের সময় নাম্বার সঠিক কিনা যাচাই করে নেওয়া।
- টাকা হাতে পেয়ে লেনদেন করা।
- প্রতিবার লেনদেন শেষ করে ব্যালেন্স চেক করে দেখা।
- হঠাৎ কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে বিকাশ সার্ভিস পয়েন্টে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা ইত্যাদি।
বিকাশ এজেন্ট হওয়ার সুবিধা সমূহ
বিকাশের একজন এজেন্ট হলে আপনার যে সকল লাভগুলো হবে, সেগুলো হলো:
- অন্যান্য ব্যবসার পাশাপাশি একটি বাড়তি আয়ের সুযোগ।
- প্রতিবার বিকাশে লেনদেনের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন পাওয়া।
- একজন নতুন গ্রাহককে বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট খুলে দিলে প্রতি অ্যাকাউন্টের জন্য ৫০ টাকা ইন্সেন্টিভ।
- এজেন্ট হয়ে বিদ্যুৎ বিল পে করার মাধ্যমে কমিশন পাওয়া।
- প্রতিমাসে এজেন্ট অ্যাপ ব্যবহার করে লেনদেনের টার্গেট পূরণ করলে বাড়তি ইন্সেন্টিভ পাওয়া ইত্যাদি।
বিকাশ এজেন্ট কমিশন
একজন বিকাশ এজেন্টকে সাধারণত দুইভাবে লেনদেনের ভিত্তিতে কমিশন দেওয়া হয়। যথা:
- *২৪৭# কোড ডায়াল করে লেনদেন; এবং
- বিকাশ এজেন্ট অ্যাপস ব্যবহার করে লেনদেন।
এই দুই ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে কমিশনের হার নিম্নরূপ:
(১) *২৪৭# কোড ডায়াল করলে বিকাশ এজেন্ট কমিশন
*২৪৭# কোড ডায়াল করে যদি কোন এজেন্ট লেনদেন করে, তাহলে-
- প্রতি ১,০০০ টাকা = ৪.১০ টাকা,
- প্রতি ১০,০০০ টাকা = ৪১ টাকা,
- প্রতি ১,০০,০০০ টাকা = ৪১০ টাকা পাবে।
(২) বিকাশ এজেন্ট অ্যাপস ব্যবহার করে লেনদেন করলে কমিশন
বিকাশ এজেন্ট অ্যাপস ব্যবহার করে যদি কোন এজেন্ট লেনদেন করে, তাহলে-
- প্রতি ১,০০০ টাকা = ৪.৩০ টাকা,
- প্রতি ১০,০০০ টাকা = ৪৩ টাকা,
- প্রতি ১,০০,০০০ টাকা = ৪৩০ টাকা পাবে।
শেষকথা
উপরোক্ত বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম অনুসরণ করে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে সংগ্রহ করে আজই এজেন্ট হতে আবেদন করতে পারেন, ধন্যবাদ।