বর্তমানে বাংলাদেশের শহরাঞ্চল ও আধা-শহরাঞ্চল এর মানুষের জন্য ডেঙ্গু একটি মারাত্মক রোগ। সর্বত্রই এর সংক্রমনের বিস্তার ঘটে বছরের বিভিন্ন সময়ে। কিছু ক্ষেত্রে সংক্রমণ এতটাই তীব্রতার হয় যে, এর ফলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আমাদের সচেতনতার অভাবেই প্রতিনিয়তই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই সুস্থতার সাথে জীবনযাপন করতে ডেঙ্গু রোগের কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার, প্রতিরোধ এবং ডেঙ্গু হলে রোগীর খাদ্যতালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন এই লেখা থেকে।
ডেঙ্গু রোগের কারণ | ডেঙ্গু সংক্রমণ হওয়ার কারন কি?
ডেঙ্গু হলো একটি মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। এডিস মশার মাধ্যমেই ডেঙ্গু রোগের জীবাণু ছড়ায়। এটি প্রাথমিকভাবে সংক্রামিত স্ত্রী এডিস মশা, বিশেষ করে এডিস ইজিপ্টাই কামড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। যখন কোন মশা ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী হয়ে যায়, তখন সেটি কোন ব্যক্তিকে কামড়ালে, সেই ব্যক্তি ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত অবস্থায় থাকা ব্যক্তিকে কোন জীবাণুহীন এডিস মশা কামড়ালে, সেই মশা একইভাবে ডেঙ্গু রোগের জীবাণুবাহী হিসেবে পরিণত হয়।
বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এডিস মশাগুলো শহর কিংবা আধা-শহুরে এলাকায় অধিক হারে পাওয়া যায়। এবং শহরের মানুষজনই ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হয়।
ডেঙ্গুর ভাইরাস সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক তথ্যাবলী
ডেঙ্গুর ভাইরাসকে বলা হয় ডেঙ্গু ফিভার ভাইরাস বা DENV। এই ভাইরাসটি Flavivirus জিনের Flaviviridae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একটি আরএনএ ভাইরাস। Flavivirus জিনের অন্যান্য ভাইরাস ভিত্তিক সদস্যদের মধ্যে রয়েছে সেন্ট লুইস এনকেফেলাইটিস ভাইরাস, জাপানি এনকেফেলাইটিস ভাইরাস, ওমস্ক হেমোরেজিক ফিভার ভাইরাস, ইয়েলো ফিভার ভাইরাস, ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস, টিক-বর্ন এনকেফেলাইটিস ভাইরাস এবং ক্যাজেনুর ফরেস্ট ডিজিজ ভাইরাস। আর্থ্রোপোডা বা পতঙ্গরা এ ধরনের ভাইরাস পরিবহন করে বলে এগুলোকে আর্বোভাইরাসও বলা হয়ে থাকে।
ডেঙ্গুর ভাইরাসের ৪টি স্বতন্ত্র সেরোটাইপ রয়েছে। যথা:
- DEN-1,
- DEN-2,
- DEN-3 এবং
- DEN-4.
যখন কোন ব্যক্তি একবার একটি নির্দিষ্ট সেরোটাইপের ডেঙ্গুর ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তখন ওই ব্যক্তির দেহে আজীবন সেই সেরোটাইপের ডেঙ্গু পুনরায় সংক্রমণ করতে পারে না। কিন্তু পরবর্তীতে ভিন্ন কোন সেরোটাইপের ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণ হলে সেই ব্যক্তির মারাত্মক ডেঙ্গু হতে পারে। এটিকে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম বলা হয়।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ
ডেঙ্গু একটি ভাইরাস জনিত জটিল রোগ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রথমবারের মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে রোগীর শরীরে বিশেষ কোন পরিবর্তন বা রোগের লক্ষণ দেখা যায় না। সাধারণভাবে ডেঙ্গু রোগটি লক্ষণবিহীন ভাবে কিংবা শুধুমাত্র সাধারণ জ্বরের মতো লক্ষণ নিয়ে দীর্ঘদিন কাটিয়ে দিতে পারে। শতকরা ৮০ভাগ আক্রান্তদেরই লক্ষণ বোঝা যায় না। বাকি বেশ ভাগের মধ্যে শুধুমাত্র ৫ ভাগ মানুষের দেহে এই রোগের গুরতর প্রভাব এমনকি প্রাণঘাতী আক্রমণ দেখা যায়।
এই রোগের লক্ষণ সমূহের সূত্রপাত থেকে রোগের প্রাথমিক পর্যায়ের মধ্যবর্তী সময় ৩-১৪ দিন স্থায়ী হতে পারে। কখনো বা ৪-৭ দিন। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সাধারণ সর্দি-কাশি এবং বমি ও ডায়েরিয়ার মত সাধারণ লক্ষণ প্রকাশ পায়। সাধারণত বড়দের ক্ষেত্রে শিশুদের দেহে এই রোগের জটিলতা বেশি হয় তবে রোগের লক্ষণ কম প্রকাশ পায়।
ডেঙ্গু জ্বরের উল্লেখযোগ্য লক্ষণ ও উপসর্গগুলো হলো:
- তীব্র জ্বর হওয়া ও ঠান্ডা লাগা,
- তীব্র মাথা ব্যথা,
- মাথা ঘোরানো,
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া,
- মাংসপেশি, হাড় বা হাড়ের জয়েন্টে বা অস্থি সন্ধিতে ব্যথা,
- গায়ে লাল রঙের ফুসকুড়ি পড়া,
- চোখের পিছনে ব্যথার অনুভূতি হওয়া,
- গ্রন্থি ফুলে যাওয়া ইত্যাদি।
ডেঙ্গু জ্বরের এসকল লক্ষণগুলো সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার ৪-১০ দিনের মধ্যেই প্রকাশ পায়। এবং এ সকল লক্ষণগুলো ২-৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। যেহেতু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের ধাপে ধাপে জ্বর হয়, তাই দ্বিতীয় বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে রোগের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পায়।
ডেঙ্গু জ্বর গুরুতর হওয়ার লক্ষণ
যখন কোন ব্যক্তির দেখে ডেঙ্গু সংক্রমনের পর রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়, তখন নিম্নোক্ত লক্ষণ গুলো প্রকাশ পেয়ে থাকে:
- তীব্র পেট ব্যথা হওয়া ও পেট ফাঁপা।
- বারবার বমি করা।
- মাংশপেশি ও হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা হয় বলে, ডেঙ্গুকে হাড়-ভাঙা জ্বরও বলা হয়ে থাকে।
- মেরুদণ্ড ও কোমরে ব্যথা হয়।
- অনিয়ন্ত্রিত বা বারবার মলত্যাগ করা।
- প্রস্রাবে এবং মলের সাথে রক্তপাত হওয়া।
- দাঁতের মাড়ি ও নাক থেকে রক্তপাত হওয়া।
- কারোর মুখ ও নাকের মিউকাস মেমব্রেন থেকে অল্প রক্তপাতও হতে পারে।
- ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ হওয়া, যা অনেকটাই ফুসকুড়ি পড়া বা ক্ষতের মতো দেখাতে পারে।
- শ্বাস-প্রশ্বাসের স্থায়িত্ব কমে যাওয়া ও দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া।
- অস্থিরতা অনুভব করা ও বিরক্তিভাব আশা।
- অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ।
এছাড়াও ডেঙ্গুর জীবাণু আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের রক্তনালী গুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং রক্তনালীতে ছিদ্র তৈরি করে। এর ফলে, রক্তে প্ল্যাটলেটের সংখ্যা কমে যেতে থাকে। এর ফলে মানুষের শরীরে খিচুনি উঠে, শক লাগে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তপাত হতে পারে। এমনকি রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
তাই উপরোক্ত লক্ষনগুলো থেকে কোন একটি লক্ষন দেখা দিলেই আমাদের দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হওয়া উচিত।
ডেঙ্গুর ক্ষতি সম্পর্কে ক্লিনিক্যাল ব্যাখ্যা
ডেঙ্গু সংক্রমণের পর থেকে রোগের গুরতর অবস্থা পর্যন্ত এ রোগের অবস্থাকে ৩ পর্যায়ে ভাগ করা হয়। ডেঙ্গুর প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ১০৪° ফারেনহাইট পর্যন্ত অত্যধিক জ্বর হয়। এর সাথে শরীর ব্যাথা, মাথাব্যাথা এবং অন্যান্য শারীরিক অবস্থাতো দেখা যায়ই। এই পর্যায়ে ৫০-৮০% মানুষের দেহে র্যাশ দেখা দেয়।
২য় পর্যায়ে কিছু লোকের ক্ষেত্রে এই রোগের চরম পর্যায়ে পৌছে যায়। তখন উপরে উল্লেখিত গুরতর ডেঙ্গুর লক্ষনগুলো প্রকাশ পায়। এসময় ১-২ দিন পর্যন্ত প্রবল জ্বর স্থায়ী হয়। সংক্রমিতদের দেহে প্রচুর পরিমাণে তরল বুক এবং অ্যাবডোমিনাল ক্যাভিটিতে বর্ধিত ক্যাপিলারি শোষণ ও লিকেজ হয়। এর ফলে রক্তপ্রবাহে তরলের পরিমাণ কমে যায় এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্ত সরবরাহ হ্রাস পায়। তাই অনেক সময় অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকলতাও দেখা দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে যাদের আগে থেকেই ডেঙ্গু ভাইরাসের অন্যান্য স্টিরিওটাইপ-এর সংক্রমণ ঘটেছে তারা অধিক ঝুকির সম্মুখীন হয়।
সর্বশেষ পর্যায়ে, প্রচণ্ড চুলকানি হয় এবং হৃদস্পন্দনের গতি ধীরহ হতে থাকে। এসময় ভিন্নরকম র্যাশও বের হতে পারে, যা ম্যাকুলোপাপুলার বা ভাস্কুলাইটিক রূপে দেখা দেয়। এই অবস্থার প্রভাব মস্তিষ্কে পরলে রোগী মূর্ছা যায় এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে থাকে। তবে এই পর্যায় পেরোলেই মানুষ আরোগ্য লাভ করতে পারে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এতোটাই ক্ষতি সম্মুখীন হতে পারে যে, ৩য় পর্যায়ে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা | ডেঙ্গু রোগের প্রতিকার ও ঘরোয়া চিকিৎসা
সাধারণত ডেঙ্গু রোগের জন্য নির্দিষ্ট কোন ঔষধ বা চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। বরং তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসার জন্য এর ক্ষতিকর লক্ষণগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করাই প্রধান উপায়। অধিকাংশ ডাক্তাররাই এই রোগটি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্যারাসিটামল দিয়ে জ্বর নামিয়ে রাখতে উৎসাহিত করেছেন। অনেকে ব্যাথানাশক ঔষধ সেবন করে। কিন্তু ব্যথানাশক ঔষধ আমাদের দেহে রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে।
কিন্তু অন্যদিকে প্যারাসিটামলের পরিবর্তে NSID বা অন্য কোন জ্বর নিয়ন্ত্রণের ঔষধ খেলেও দ্রুত জ্বর নামিয়ে, ঘাম ঝরিয়ে শকে নিতে পারে, কিডনির ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তাছাড়া নিম্নোক্ত চিকিৎসাব্যবস্থা গুলো অনুসরণ করতে পারেন:
- প্রতিদিন অন্তত ৩ লিটার পানি পান করা।
- বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়া। চিকিৎসকদের মতে, তরল খাবার ৯০ শতাংশ ডেঙ্গুর তীব্রতা কমায়। এক্ষেত্রে ডাবের পানি, স্যুপ, ফলের রস, লেবুর পানি, ভাতের মাড়, স্যালাইন ইত্যাদি খেতে পারেন।
- ডেঙ্গু রোগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে প্লাটিলেট কমে যায়। তাই রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সূর্যমুখী বীজ, গ্রিন টি, সাইট্রাস ফল, কাঠবাদাম, দই, পালংশাক, আদা, রসুন ও হলুদ, ক্যাপসিকাম, ব্রোকলি ইত্যাদি খেতে পারেন।
- পেয়ারা কিংবা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ অন্যান্য ফলের শরবত খেতে পারেন।
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খান।
এছাড়া যেকোনো সময় ডেঙ্গু রোগীর দেখা দিতে পারে। তাই আশঙ্কা জনক অবস্থা দেখা দিলে স্থানীয় হাসপাতালে বা ক্লিনিকে ভর্তি রেখে উপযুক্ত ও সময়োপযোগী চিকিৎসা নিতে পারেন।
ডেঙ্গুজ্বরে রক্তে প্লাটিলেট কমে গেলে কী খাবেন এবং করনীয় কি?
ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতিকর প্রভাবটি হলো রক্তের প্লাটিলেট কমে যাওয়া। যখন রক্তের প্লাটিলেট কমতে শুরু করে, তখন আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বকে বেগুনি রঙের চিহ্ন দেখা দেয়। এসময় দাঁতের মাড়ি বা নাক থেকে কিংবা প্রস্রাব ও মলের সাথে রক্তপাত হতে পারে। শরীরের কোন অংশে একবার রক্তপাত শুরু হলে তা সহজে বন্ধ হয় না। প্লাটিলেট কমে গেলে শরীরে ক্লান্তিবোধ ও পানিশূন্যতা দেখা দেয়।
এবিষয়ক চিকিৎসকেরা বলেছেন, রক্তে প্লাটিলেট কমে গেলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সাধারন মানুষের রক্তে ১.৫-৪.৫ লক্ষ প্লাটলেট/ প্রতি মাইক্রোলিটার থাকে। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের প্লেটলেট সংখ্যা ২১-৪০ হাজারে নেমে আসে। উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ ডেঙ্গু রোগীদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ২০ হাজারেরও কম হয়, যা মৃত্যু ঘটাতে যথেষ্ট।
তাই দ্রুতই প্লাটিলেট নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হবে। এর জন্য-
- রোগীকে তরলজাতীয় সুষম খাবার খেতে দিতে হবে।
- সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। এক্ষেত্রে পুদিনা পাতা, লেটুস পাতা, ধনিয়া পাতা ইত্যাদি অনেক বেশি কার্যকর।
- প্রোটিনযুক্ত খাবার, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন কে, ই সমৃদ্ধ খাবার বেশি বেশি খান।
- পাশাপাশি পাকা পেঁপে, বেদানা, অ্যালোভেরা, ডাব, লেবু, আমলকী, মিষ্টি কুমড়া, ব্রোকলি এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খান।
- রক্তের প্লাটিলেট বাড়াতে নিম পাতার রস ভালো কাজ করে।
তাই সাধারন চিকিৎসার পাশাপাশি প্লাটিলেট নিয়ন্ত্রণের দিকেও লক্ষ রাখা উচিত।
ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা | ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে
উপরোক্ত ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা পদ্ধতির অংশে উল্লেখিত খাবার গুলোই ডেঙ্গু রোগীর জন্য উপযুক্ত। এছাড়া অনেক রোগীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট ও বিস্তারিত খাবার তালিকা নিয়েছে তুলে ধরা হলো:
(১) ফল
সাইট্রাস ফল (যেমন: লেবু, আমলকী, পেয়ারা, কমলালেবু ইত্যাদি), বেরি, পেপে, আনার, লাল ড্রাগন, কলা, ডাবের পানি, আপেল ইত্যাদি।
(২) শস্যদানা
মটরশুটি, বাদাম, ওটমিল ইত্যাদি।
(৩) শাক-সবজি
গাঢ় সবুজ শাক-সবজি যেমনঃ পালং শাক, লাল শাক, কচু শাক, পেপে পাতা, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, গাজর, বীট, ব্রকলী।
(৪) প্রোটিন জাতীয় খাবার
মাছ, মাংস, দিম, দুধ, দই, ডাল, বাদাম, বীচি ইত্যাদি।
(৫) আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
কলিজা, ডিমের কুসুম, কবুতরের মাংস, কচু শাক, লতা, পালং শাক, ডাটা শাক, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা ইত্যাদি।
(৬) তরল খাবার
চিকেন সুপ, সাগু, সুজি, জাউ ভাত ইত্যাদি।
(৭) পানি ও পানীয়
এসময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের সরবত, জুস, অ্যালোভেরা জুস, পেপের জুস খাওয়া যেতে পারে।
এছাড়াও আদা, রসুন, দারুচিনি, হারবাল টি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ডেঙ্গু উপশমে সহায়তা করে।
ডেঙ্গু রোগীর বর্জনীয় খাবার
ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে সহজে হজম হয় না এমন খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন- চর্বি, তৈলাক্ত খাবার, অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া জাতীয় খাবার, চা, কফি, সফট ড্রিংকস বা কোল্ড ড্রিংকস ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়
ডেঙ্গু রোগের প্রধান কারণ স্ত্রী এডিস মশা। প্রতিরোধ করতে চাইলে এডিস মশা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে ডেঙ্গু প্রতিরোধে যা যা করতে পারেন তা নিচে তুলে ধরা হলো:
- বাড়ির চারপাশ যতটা সম্ভব পরিষ্কার রাখতে হবে।
- ঘরের ভেতরে কিংবা আশেপাশে ফুলের টব, ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন এবং জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
- যেখানে সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করুন। দীর্ঘক্ষণ এই পানি জমে থাকলে সেখানে এডিস মশার জন্ম হয়।
- শহরাঞ্চলে মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত তিন বার স্প্রে বা ফগিং করতে পারেন।
- ব্যক্তিগতভাবে সচেতন থাকতে বাড়ির বাইরে বের হলে মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম মেখে নিন।
- সন্ধ্যার পর থেকে মশারি ব্যবহার করুন।
এডিস মশা সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায়। তাই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।
এডিস মশা চেনার উপায়
এডিস মশা মাঝারি আকারের সাদা-কালো ডোরাকাটা হয়। এই মশার শুঁড় লোমযুক্ত থাকে। এডিস মশার মাথার পেছনের উপরের দিকেও একটি সাদা দাগ থাকে। ভালো করে লক্ষ্য করলে খুব সহজেই এই মশা চেনা যায় এবং এর থেকে রক্ষার চেষ্টা করা যায়।
আরও পড়ুন: হার্টের নানান রোগ, লক্ষণ, প্রতিরোধের উপায়
শেষকথা
উপরোক্তা আলোচনার তথ্যানুসারে ডেঙ্গু রোগের কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার, প্রতিরোধ এবং ডেঙ্গু হলে রোগীর খাদ্যতালিকা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে পারলে সবচেয়ে। তবে সংক্রমিত হলে এবং স্বাস্থ্যের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ বা ক্লিনিক্যাল স্বাস্থ্যসেবা নেওয়া উচিত।