ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম বড় অংশ হলো ঢাকা মেট্রোরেল। তাই এই যুগান্তরকারী প্রকল্পের তথ্য দেশের সাধারন শিক্ষার্থীদের মাঝে পৌছে দেওয়ার জন্য, শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন পরীক্ষায় এই মেট্রোরেল রচনার প্রশ্ন আসে। তাই প্রিয় শিক্ষার্থীদের জন্য নিচে স্বপ্নের মেট্রোরেল, ঢাকা মেট্রোরেল, বা মেট্রোরেল রচনা লিখে দেওয়া হলোঃ
“স্বপ্নের মেট্রোরেল / ঢাকা মেট্রোরেল”
ভূমিকাঃ
স্বপ্নের মেট্রোরেল বাংলাদেশে আধুনিক নগর পরিবহনের প্রতীক হিসেবে আমাদের জীবনে নতুন যুগের সূচনা করেছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে যানজটপূর্ন শহর ঢাকাকে এখন যানজট মুক্ত শহরে পরিনত করতে অগ্রগামী ভূমিকা রাখছে এই মেট্রোরেল। এর মাধ্যমে যাতায়াত হচ্ছে স্বাচ্ছন্দ্যময়। আবার দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে এই মেট্রোরেল।
মেট্রোরেল কীঃ
মেট্রোরেল হলো একটি দ্রুতগামী রেল পরিবহন ব্যবস্থা। মেট্রোরেল বিভিন্ন রকমের হতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মেট্রোরেল গুলো মাটির নিচে, উপরে, উন্মুক্ত স্থানে ও ঝুলন্ত ট্র্যাকের মাধ্যমে নির্মিত ও পরিচালিত হয়েছে। একটি আধুনিক শহর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মূলত যাত্রীদের যানজটমুক্ত, সময়সাশ্রয়ী এবং আরামদায়ক যাতায়াতের ব্যবস্থা করতেই মেট্রোরেলের উদ্ভাবন করা হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে, উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার দেশের তালিকায় নাম লেখাতে বাংলাদেশেও নির্মান করা হয়েছে মেট্রোরেল। ২০২২ সালে ঢাকা শহরের মানুষের যানজট ভোগান্তি কমাতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আর এর মাধ্যমেই দেশের নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন হয়েছে।
মেট্রোরেলের গুরুত্ব:
বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ যানজটময় দেশ। বিশেষ করে ঢাকা ও অন্যান্য শহরগুলোতে যানজটের ব্যাপক সমস্যা দেখা যায়। এই যানজট কমাতে বাংলাদেশে মেট্রোরেলের গুরুত্ব অনেক বেশি। এই মেট্রোরেল আমাদের প্রতিদিনের যাত্রার সময় সাশ্রয় করে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, কারণ এটি শহরের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি করে এবং পরিবহন খরচ কমায়। এছাড়াও এটি সাধারণ রেলগাড়ি থেকে বেশি পরিবেশবান্ধব। বর্তমানে ঢাকা মেট্রোরেল শহরের জীবনযাত্রার মান উন্নত করছে এবং আধুনিক অবকাঠামো তৈরি করতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
আরও পড়ুন:
স্বদেশপ্রেম রচনা ২০ পয়েন্ট (JSC, SSC, HSC)
অধ্যবসায় রচনা ১৫ পয়েন্ট (JSC, SSC, HSC)
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা ১৭ পয়েন্ট
মেট্রোরেল প্রকল্পের উদ্যোগ ও পরিকল্পনা:
মেট্রোরেল প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ২০১৬ সালে। প্রাথমিকভাবে এটি শুধুমাত্র ঢাকা শহরের সবচেয়ে জনবহুল স্থানগুলোর জন্য তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ঢাকায় প্রতিদিনের যানজট জনগণের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে সড়কপথের যানজট এড়াতে মেট্রোরেল প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। আর বর্তমানে ঢাকা শহরের পরিবহন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে এই মেট্রোরেল।
মেট্রোরেল প্রকল্প ব্যয় ও অর্থায়ন:
বাংলাদেশে মেট্রোরেল প্রকল্প বা, এমআরটি লাইন-৬ এর মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকার এবং জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) একসাথে কাজ করছে। জাপানের জাইকা সংস্থার সাথে বাংলাদেশ সরকারের ঋণচুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল এই প্রকল্পের জন্য। জাইকা এই প্রকল্পে সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দিয়েছিল। এই ঋণচুক্তিই মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
মেট্রোরেল প্রকল্পের উদ্বোধন ও অগ্রগতি:
বাংলাদেশের মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রথম অংশ- এমআরটি লাইন-৬, ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছিল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এর প্রথম বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হয়। এটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল। তাই অনেক কৌতুহলের সাথে আধুনিক এই নগর পরিবহন ব্যবস্থা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে যুক্ত হয়েছে। প্রকল্প উদ্বোধনের পর দ্রুত গতিতে নির্মাণকাজের ব্যাপক অগ্রগতি দেখা দিয়েছিল। নির্ধারিত সময়সীমা মেনে কাজ সম্পন্ন করতে আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ শ্রমিক ব্যবহার করা হয়েছে এই প্রকল্পে। প্রকল্পের প্রথম অংশ সফলভাবে চালু হওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থায় নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য অংশের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে।
মেট্রোরেল এর নির্মাণ, গঠন ও ধারন ক্ষমতা:
ঢাকা মেট্রোরেল একটি উড়াল সড়কভিত্তিক রেল প্রকল্প। এর প্রথম লাইন MRT-6 উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি ১৬টি স্টেশন নিয়ে গঠিত এবং সম্পূর্ণ রেলপথটি স্ট্যান্ডার্ড গেজ ট্র্যাকে নির্মিত। এর গঠন শক্তিশালী স্টিল ও কংক্রিটের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে, যা ভূমিকম্প প্রতিরোধে সক্ষম।
- বগি ও কামরা: মেট্রোরেল ট্রেনের প্রতিটি মেট্রো ট্রেনে ৬টি করে বগি রয়েছে। প্রতিটি বগি আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। ট্রেনের মাঝের ৪টি কামরার যাত্রী ধারণক্ষমতা ৩৯০ জন এবং ট্রেলার কামরাগুলোর ধারণক্ষমতা ৩৭৪ জন। একটি ট্রেন সর্বোচ্চ ২,৩০৮ জন যাত্রী বহনে সক্ষম।
- মেট্রোরেলের ট্রেন সংখ্যা, স্টেশন ও সময়: এমআরটি লাইন-৬ এ প্রথম পর্যায়ে ১০টি ট্রেন পরিচালিত হচ্ছে এবং সর্বমোট ১৬টি স্টেশনে যাত্রীবাহী কার্যক্রম করা হচ্ছে। ঢাকার উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এই মেট্রোরেলের মাধ্যমে যাত্রার সময় প্রায় ৩৮ মিনিট। যাত্রীদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার জন্য পিক আওয়ারে ট্রেনের ফ্রিকোয়েন্সি ৩ মিনিট ৩০ সেকেন্ড।
- যাত্রী বহন ক্ষমতা ও ভাড়া আদায়: ঢাকা মেট্রোরেল ঘণ্টায় প্রায় ৬০,০০০ যাত্রী পরিবহন করতে পারে। এই ট্রেনের ভাড়া আদায়ে আধুনিক ইলেকট্রনিক কার্ড পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যাত্রাপথের দৈর্ঘ্যের উপর নির্ভর করে ভাড়া নির্ধারিত রয়েছে আগে থেকেই। ফলে যাত্রীদের মাঝে ভাড়া নিয়ে স্বচ্ছতা দেখা যায় অনেক।
মেট্রোরেলের সুবিধাসমূহ:
বাংলাদেশকে উন্নত একটি দেশে রূপান্তর করার জন্য মেট্রোরেল এর ব্যাপক সুবিধা রয়েছে। দেশের আর্থ-সামাজিক নানা উন্নয়নে এই প্রকল্পটি একটি যুগান্তরকারী পদক্ষেপ হিসেবে ভূমিকা রাখছে। মেট্রোরেলের উল্লেখযোগ্য সুবিধাসমূহ হলোঃ (১) মেট্রোরেলের ট্রেনগুলি আধুনিক প্রযুক্তি দ্বারা পরিচালিত হবে। ফলে এগুলো সুরক্ষা ও নিরাপত্তার দিক থেকে খুবই উন্নত। (২) মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর থেকে ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যবহার কমছে, ফলে জ্বালানি খরচও কমছে অনেকাংশে। (৩) মেট্রোরেল শহরের বিভিন্ন স্থানকে একত্রিত করার মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করেছে। (৪) ঢাকা শহরের জনসংখ্যার চাপ কমিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ করেছে।
(৫) এই বাহনটি পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় বায়ু দূষন কমবে। (৬) মেট্রোরেলের মাধ্যমে সড়ক দূর্ঘটনা কমতে পারে অনেকাংশেই। (৭) এই প্রকল্পের মাধ্যমে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। (৮) মেট্রোরেল চালু হলে সড়কপথে যানজট কমবে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য উপকারী হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। (৯) বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহের জন্য এটি অত্যন্ত সুবিধাজনক। শিক্ষার্থী ও অফিসগামী কর্মকর্তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারবেন। এছাড়াও মেট্রোরেলের আরও অনেক অনেক সুবিধা রয়েছে।
মেট্রোরেল নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
বাংলাদেশের রেল ও যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের মেট্রোরেল নিয়ে বিস্তর ভবিষ্যত পরিকল্পনা রয়েছে। এখন মেট্রোরেল প্রকল্পের লক্ষ্য হলো ৫টি লাইন নির্মান করা। এর মধ্যে MRT-1 এবং MRT-5 এর কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করা হয়েছে। এই লাইনগুলোর মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সাথে আশেপাশের এলাকাগুলোর সংযোগ বাড়ানো হবে। এই সম্পূর্ন প্রকল্প শেষ হলে মেট্রোরেল লাইনের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ১০০ কিলোমিটার।
আরও দেখুন:
ক্যাপশন দিয়ে ভালোবাসা মানুষটিকে নিজের করে নিন
প্রেমের উক্তি, স্ট্যাটাস ও ক্যাপশন
সেরা কিছু উক্তি, যা আপনার জীবন পরিবর্তন করে দিতে পারে!
সেরা ভালোবাসার স্ট্যাটাস, ক্যাপশন, উক্তি, কবিতা ও ছন্দ
উপসংহারঃ
ঢাকা মেট্রোরেল দেশের প্রথম ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট হিসেবে পরিচিত। এটি ঢাকা শহরের যানজট কমাতে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখছে। এই যাতায়াত ব্যবস্থার আধুনিক প্রযুক্তি, সময়োপযোগী যাতায়াত ও অন্যান্য সুবিধা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে সমগ্র বাংলাদেশ একটি উন্নত ও টেকসই পরিবহন ব্যবস্থার দেশে পরিনত হবে।