ভূমিকম্প

পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর ও শক্তিশালী ১০টি ভূমিকম্প (১৯০০-২০২৪)

ভূমিকম্প একটি অনিয়ন্ত্রণযোগ্য এবং অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এটি যে কোন সময় পৃথিবীর যেকোনো স্থানে সংঘটিত হতে পারে কোন পূর্বাভাস ছাড়াই। প্রাচীনকাল থেকে পৃথিবীতে বহু বড় বড় ভূমিকম্প হয়েছে, যার কিছু কিছু পৃথিবীর কক্ষপথকেও সামান্য নাড়িয়ে দিয়েছিল। তন্মধ্যে ১৯০০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ১২৪ বছরে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে ভয়াবহ ও শক্তিশালী ১০টি ভূমিকম্প, ভূমিকম্প সংগঠনের স্থান, ভূমিকম্পের মাত্রা, ক্ষয়ক্ষতি ও যাবতীয় ইতিহাস তুলে ধরা হলো এই লেখাতে।

(১) ভালদিভিয়া ভূমিকম্প বা গ্রেট চিলির ভূমিকম্প, ২২ মে ১৯৬০ (মাত্রা ৯.৫)

গ্রেট চিলির ভূমিকম্পটি ইতিহাসে রেকর্ড করা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প ছিল। ভূমিকম্পের দিন ২২ মে বিকালে এই ভূমিকম্পটি চিলির উপকূল থেকে প্রায় ১০০ মাইল (১৬০ কিমি) দূরে ভালদিভিয়া শহরের সমান্তরালে আঘাত করেছিল৷ এতো শক্তিশালী এই ভূমিকম্পটি প্রায় ১০ মিনিট স্থায়ী, যা চারিদিকে মারাত্বক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। 

এর ফলে প্রায় ২৫ মিটার বা ৮২ ফুট উঁচু ঢেউয়ের একটি বিশাল সুনামি গঠিত হয়েছিল। এই বিধ্বংসী সুনামি চিলির উপকূলে মারাত্মকভাবে আঘাত হানে এবং প্রশান্ত মহাসাগরের হিলো, হাওয়াই পেরিয়ে গিয়েছিল। পানির তরঙ্গগুলো চিলিসহ জাপান এবং ফিলিপাইনের প্রায় ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে গিয়েছিল। 

এই সুনামির কারনে ভূমিকম্পের ক্ষতি আরও কয়েক গুন বেড়ে গিয়েছিল। চারিদিকে ধ্বংস ও হাহাকারের পাশাপাশি ঝড়ে গিয়েছিল বহু প্রান। ১৯৬৯ সালের এই ভালদিভিয়া ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা নিশ্চিত করা যায়নি। তবে ভূমিকম্প এবং সুনামিতে মোট নিহতের সংখ্যা ৪-৬ হাজার হবে বলে ধারনা করা হয়। আহত হয়েছিল ২০ লাখের বেশি। পাশাপাশি লক্ষ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি তো আছেই।

(২) প্রিন্স উইলিয়াম সাউন্ড, আলাস্কা, ২৪ মার্চ ১৯৬৪ (মাত্রা ৯.২)

১৯৬৪ সালের আলাস্কায় ঘটে যাওয়া প্রিন্স উইলিয়াম সাউন্ড নামক ভূমিকম্পটি গুড ফ্রাইডে নামেও পরিচিত। রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৯.২। ভূমিকম্পটি প্রায় ৪.৫ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল এবং এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে রেকর্ড করা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।

এই ভূমিকম্পটির ফলে ৮.২ মিটার বা ২৭ ফুট উচ্চতার সুনামি সৃষ্টি হয়েছিল। সেই সুনামির চেনেগা গ্রামকে ধ্বংস করার পাশাপাশি আশেপাশের এলাকাতে ব্যাপকভাবে ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল। দুর্যোগের সময় চেনেগা গ্রামে বসবাসকারী ৬৮ জনের মধ্যে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। বাকীরা ঢেউকে অতিক্রম করে, উঁচু ভূমিতে উঠতে সক্ষম হয়েছিল। এই ভূমিকম্প ও বিশাল পানির জলোচ্ছ্বাসের ফলে ভূমিধস হয় এবং পোর্ট ভালদেজ শহরের পোতাশ্রয় এবং ডকগুলি ধসে পড়ে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

এই ভূমিকম্পের ফলে মোট মৃতের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৩৯ জন। তন্মধ্যে সরাসরি ভূমিকম্পের কারণে ১৫ জন, আলাস্কায় পরবর্তী সুনামি থেকে ১০৬ জন, ওরেগনের সুনামি থেকে ৫ জন এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় সুনামিতে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া প্রায় তিন হাজার মানুষ আহত হয়েছিল। ভূমিকম্পের ফলে যাবতীয় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩১ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার।

(৩) উত্তর সুমাত্রার ভূমিকম্প, ২৬ ডিসেম্বর ২০০৪ (মাত্রা ৯.১)

সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগ গুলোর মধ্যে একটি, ২০০৪ সালে উত্তর সুমাত্রায় ঘটে যাওয়া বিশাল আকৃতির ভূমিকম্প। এটি ভারত মহাসাগরীয় ভূমিকম্প নামেও পরিচিত। রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৯.১। এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রার পশ্চিম উপকূলে।

সুমাত্রা ভূমিকম্পের ছিল ১,৫০০ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে রেকর্ড করা ভূমিকম্পের সবচেয়ে বড় ফল্ট দৈর্ঘ্য। এই ভূমিকম্পটি প্রায় ৮.৩ থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী ছিল। সুমাত্রা ভূমিকম্প এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, এই ভূমিকম্পের ফলে সমগ্র গ্রহটি এক সেন্টিমিটার কেঁপে উঠেছিল। এর ফলে প্রায় ১০০ ফুট উচ্চতার ঢেউ সহ একটি সুনামি হয়েছিল। এশিয়া ও পূর্ব আফ্রিকার ১৪টি দেশে অনুভূত হয়েছিল এই ভূমিকম্প ও সুনামি।

ভূমিকম্পের দ্বারা প্রকাশিত মোট শক্তি ছিল হিরোশিমা পারমাণবিক বোমার ৫৫০ মিলিয়ন গুণ। এই সুনামিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ইন্দোনেশিয়া, যেখানে প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। মৃতের সংখ্যা নিরূপণ করতে কয়েক মাস সময় লেগে গিয়েছিল। এই ভূমিকম্প ও সুনামির ফলে ইন্দোনেশিয়ার মৎস্য শিল্প ও কারখানার প্রায় ৬০ শতাংশ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

(৪) জাপানের তুহুকু ভূমিকম্প, ১১ মার্চ ২০১১, (মাত্রা ৯.১)

২০১১ সালের ১১ই মার্চ জাপানের তুহুকু উপকূলীয় অঞ্চলের কাছাকাছি সমুদ্রের নিচে একটি বিশাল ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়েছিল। সমুদ্রের নিচে উৎপত্তিস্থল হওয়ায় এই ভূমিকম্পটি সুনামির বিশাল তরঙ্গকে ত্বরান্বিত করেছিল, যা প্রায় ৪০.৫ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট ঢেউয়ের সৃষ্টি করেছিল। এই সুনামির ঢেউ সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৬ মাইল অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছিল। এর ফলে উত্তর-পূর্ব জাপানে ব্যাপক এবং গুরুতর কাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে।

৯.১ মাত্রার বিশাল ও শক্তিশালী এই ভূমিকম্পের ফলে এবং তাৎক্ষণিক সুনামির কারণে বেশ কিছু পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটেছিল। তন্মধ্যে, ফুকুশিমা দাইচি নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কমপ্লেক্সের তিনটি চুল্লিতে সর্বোচ্চ মাত্রায় আঘাত হেনে লেভেল ৭ মেল্টডাউনের সৃষ্টি করেছিল। এই ভূমিকম্প ও সুনামের ফলে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল প্রায় ১৫ হাজার ৭০৩ জন। এছাড়াও ভূমিকম্পের ফলে ধ্বসে পড়েছিল প্রায় ২ হাজার ১২৬টি সড়ক, ৫৬টি ব্রিজ এবং ৩ লক্ষ ৩২ হাজার ৩৯৫ টি ভবন।

(৫) রাশিয়ার পেট্রোপাভলভস্ক-কামচাটস্কি, ৪ নভেম্বর ১৯৫২ (মাত্রা ৯) 

১৯৫২ সালের ৪ নভেম্বর রাশিয়ার দূরপ্রাচ্যে সুদূর পূর্বে কামচাটকা উপদ্বীপের উপকূলে একটি বিশাল ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল কামচাটকা উপদ্বীপ থেকে শুরু করে প্রায় তিন হাজার মাইলজুড়ে এই ভূমিকম্পের ভূকম্পন অনুভূত হয়েছিল। এটি রাশিয়ার দূরপ্রাচ্য, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, পেরু ও চিলিতেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। বৃহৎ জায়গাজুড়ে বিস্তৃত হওয়া এই ভূমিকম্পটি রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ছিল। 

বৃহৎ এই ভূমিকম্পের ফলে প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্টি হয়েছিল সুনামির। এই সুনামি টি প্রায় ৫০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতার ঢেউ নিয়ে কামচাটকা উপদ্বীপ এবং কুরিল দ্বীপপুঞ্জে আছড়ে পড়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছিল। এর ফলে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। সুনামির বিশাল আকৃতির ঢেউ পেরু, চিলি এবং নিউজিল্যান্ডে পর্যন্ত প্রভাব ফেলেছিল। এমনকি আলাস্কা, অ্যালেউটিয়ান দ্বীপপুঞ্জ এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় ৪.৬ ফুট পর্যন্ত উচ্চতার সুনামির ঢেউ পৌঁছেছিল। তবে সেখানে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

(৬) চিলির মৌল ভূমিকম্প, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০ (মাত্রা ৮.৮)

২০১০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি চিলির উপকূলে পেলুহু কমিউনের উপকূল থেকে প্রায় ৩ কিমি দূরে ঘটেছে মৌল অঞ্চল ভূমিকম্প। রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮.৮ এবং এর ফলে গঠিত তীব্র কম্পন প্রায় ৩ মিনিট স্থায়ী হয়। এই ভূমিকম্পের ফলে সুনামির সৃষ্টি হয়েছিল। দক্ষিণ-মধ্য চিলির বেশ কিছু উপকূলীয় শহর ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট সুনামিতে বিধ্বস্ত হয়েছে। 

সপ্তদশ শতক থেকেই চিলিতে ছোট-বড় ভূমিকম্প অনুভূত হয়ে আসছে। ২০১০ সালের এই ভূমিকম্পটি তন্মধ্যে অন্যতম ভয়ঙ্কর একটি ভূমিকম্প। এর ফলে তালকাহুয়ানো বন্দর, বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে বহু ভবন ধ্বসে পড়ে এবং সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিশ্বস্ত তথ্য অনুযায়ী এই ভূমিকম্পের ফলে প্রায় ৫২১-৫২৫ জন মানুষ প্রাণ হারায় অন্তত ১২ হাজার জন আহত হয় এবং প্রায় ৮ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে।

(৭) ইকুয়েডর-কলম্বিয়া ভূমিকম্প, ৩১ জানুয়ারি ১৯০৬ (মাত্রা ৮.৮)

১৯০৬ সালের ৩১ জানুয়ারি ইকুয়েডর এবং কলম্বিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কম্পন সৃষ্টি করা এই ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৮.৮। ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প গুলোর মধ্যে একটি এটি। মূলত ইকুয়েডর-কলম্বিয়া ভূমিকম্পটি দক্ষিণ আমেরিকান প্লেটের নড়াচড়ার কারণে সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ এটির সাথে নাজকা প্লেটের সাথে সংঘর্ষ হয়েছিল। ফলে দুটি প্লেটের মধ্যে সীমানা বরাবর উল্লেখযোগ্য নড়াচড়ার সৃষ্টি হয়। 

এই ভূমিকম্পটি বেশ কয়েকটি আফটারশক শুরু করেছিল এবং এর প্রভাব সমগ্র অঞ্চলে অনুভূত হয়েছে। এর ফলে ইকুয়েডর ও কলম্বিয়ার সমুদ্র উপকূলে একটি সুনামির সৃষ্টি হয়েছিল। সেই সুনামের আঘাতে প্রায় ৫ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এবং আহত হয়েছিল আরো ১.৫ হাজারেরও বেশি। এই ভূমিকম্পটি মধ্য আমেরিকা ও সানফ্রান্সিসকোতেও অনুভূত হয়েছে। এর ফলে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংসের পাশাপাশি হাওয়াইয়ের নদীগুলো প্লাবিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছিল। সব মিলিয়ে এই ভূমিকম্পের ফলে মোট মৃত সংখ্যা ছিল প্রায় ১,০০০।

(৮) রেট আইল্যান্ড ভূমিকম্প, ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৫ (মাত্রা ৮.৭) 

১৯৬৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আলাস্কাতে ইঁদুর দ্বীপপুঞ্জে ৮ দশমিক ৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। তাৎপর্যপূর্ণ এই ভূমিকম্পটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে হলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সৃষ্টি করেছিল। এটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা প্রকাশ করে। মূলত উত্তর আমেরিকার প্লেটের নীচে প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেটটি উপড়ে যাওয়ার কারণে এই ভূমিকম্পটির সৃষ্টি হয়েছিল। এর ফলে দুটি প্লেটের মধ্যে সীমানা বরাবর উল্লেখযোগ্য নড়াচড়া হয়েছিল। 

এই ভূমিকম্পের ফলে একটি বৃহৎ আকৃতির সুনামির সৃষ্টি হয়েছিল। সেই সুনামি টি আলাস্কা, হাওয়াই এবং ক্যালিফোর্নিয়ার বেশ কয়েকটি সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করেছিল। কিন্তু উপকেন্দ্রের দূরবর্তী অবস্থান এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব কম থাকায় হতাহতের সংখ্যা সীমিত ছিল।

(৯) আসাম-তিব্বত ভূমিকম্প, ১৫ আগস্ট ১৯৫০ (মাত্রা ৮.৬)

১৯৫০ সালের ১৫ই আগস্ট ভারতের আসাম এবং চীনের তিব্বত এলাকার সীমান্তে প্রায় ৮.৬ মাত্রার একটি বিশাল ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। ভারতের আসামে সৃষ্টি হওয়া এই ভূমিকম্পটি বিধ্বংসী ভাবে আঘাত হেনেছিল পার্শ্ববর্তী দেশ চীনের তিব্বত এলাকায়। এই ভূমিকম্পের ফলে ব্যাপকভাবে ভূমিধ্বস হয়েছিল। ফলস্বরূপ চীনের তিব্বতের পূর্বাঞ্চলে নিহত হয়েছিল প্রায় ৭৮০ জন। 

অন্যদিকে, আসামে বহু মানুষের প্রাণহানির আশংকা করা হলেও শেষ পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ভূমিকম্পের পর সৃষ্ট বড় একটি ভূমিধ্বসের কারনে সুবানসিরি নদী বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং এই প্রাকৃতিক বাঁধটি ৮ দিন পরে ভেঙে যায়। বাঁধ হঠাৎ ভেঙে যাওয়ার ফলে প্রায় ৭ মিটার উচ্চতার একটি বিশাল ঢেউ তৈরি হয়, যা আশেপাশের বিভিন্ন গ্রামকে মুহূর্তের মধ্যেই পানিতে তলিয়ে নেয় এবং আনুমানিক ৫৩৬ জনের মৃত্যু হয়। সবমিলিয়ে এই ভূমিকম্পে প্রায় ১.৫-৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে।

(১০) ভারত মহাসাগরীয় ভূমিকম্প, ১১ এপ্রিল ২০১২ (মাত্রা ৮.৬)

২০১২ সালের ১১ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশসহ সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভারতে ৮ দশমিক ৬ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প সমুদ্রের গভীরে আঘাত হানে। এতে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এই ভূমিকম্পটি ছিল অস্বাভাবিকভাবে শক্তিশালী ইন্ট্রাপ্লেট ভূমিকম্প এবং এ পর্যন্ত রেকর্ড করা বৃহত্তম স্ট্রাইক-স্লিপ ভূমিকম্প।

আরো পড়ুন: ব্যাবিলনীয় সভ্যতার ইতিহাস এবং বর্তমান অবস্থা 

মূলত এটি জনবসতিপূর্ণ স্থান থেকে অনেক দূরে সংঘটিত হয়েছিল এবং এর ফলে তেমন ধ্বংসাত্মক কোন সুনামি তৈরি হয়নি। তবুও এই ভূমিকম্পের ফলে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছিল এবং ১২ জন আহত হয়েছিল। মৃত ১০ জনের মধ্যে অধিকাংশেরই মৃত্যু হয়েছিল আতঙ্ক কিংবা হার্ট অ্যাটাকের কারণে।

শেষকথা

উপরোক্ত ভূমিকম্প গুলো মানব ইতিহাসের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ও ভয়ংকর ১০টি ভূমিকম্পের মতো অতীতে আরো ভূমিকম্প সংগঠিত হয়েছিল। দুঃখের বিষয় হলো, ভূমিকম্প সংগঠনের পূর্বে কোন পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। 

About Durud Ahmed

সম্মানিত ভিজিটর আমি দুরুদ আহমেদ,পেশায় আমি একজন ব্লগ লেখক। প্রযুক্তি ও শিক্ষা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, লাইফস্টাইল এবং ইসলামিক লেখাই আমার প্রিয়। এই ব্লগের মাধ্যমে আমি সঠিক তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ভিজিটরদের সহযোগিতা করাই মূল লক্ষ্য।