প্রাকৃতিকভাবে চাপ দাড়ি গজানোর উপায়

একজন পুরুষের সৌন্দর্য্য বিশেষভাবে ফুটিয়ে তুলতে দাড়ির প্রভাব অনস্বীকার্য। সুন্দর ও ঝলমলে গালভর্তি চাপ দাড়ি পুরুষের সৌন্দর্য্যকে কয়েকগুন বাড়িয়ে তুলে। দাড়ি আমাদের জিনগত বৈশিষ্ট্যের সাথে সম্পৃক্ত। প্রাকৃতিকভাবেই অনেকে আকর্ষণীয় দাড়ির অধিকারী হয়। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বয়সসীমা পেরিয়ে গেলেও, দাড়ির দেখা মেলে না। এক্ষেত্রে প্রাকৃতিকভাবে চাপ দাড়ি গজানোর উপায় নিয়মিত প্রয়োগ করে দাড়ির বৃদ্ধিকে গতিশীল করতে পারেন। 

তাই প্রাকৃতিকভাবে চাপ দাড়ি গজানোর উপায় গুলো কি কি, কিভাবে ব্যবহার করবেন, দাড়ি পেতে হলে কি কি করা যাবে এবং কি কি করা যাবে না, তার বিস্তারিত জেনে নিন এই লেখা থেকে।

প্রাকৃতিকভাবে চাপ দাড়ি গজানোর উপায়

চাপ দাড়ি গজানোর জন্য বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে থাকে। তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত ভেষজ উপাদান দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে দাড়ির বৃদ্ধি গতিসম্পন্ন করতে পারবেন। এ সকল উপাদানের ব্যবহার নিচে তুলে ধরা হলো:

(১) পেঁয়াজের রস | মুখে দাড়ি গজানোর উপায়

দাড়ি ও চুলের যত্নে পেঁয়াজের রস অত্যন্ত কার্যকরী একটি প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান। তারিখ ঘন করার ক্ষেত্রে এটি কাজ করে। আমাদের গালের প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ছোট ছোট লোম থাকে। যা পর্যাপ্ত সালফারের শক্তি না পাওয়ায় বড় হতে পারে না। পেঁয়াজের রসে প্রচুর পরিমাণে সালফারের উপস্থিতি থাকায় এটি দাড়ি বাড়তে সহায়তা করে। একইসাথে, সালফার রক্ত চলাচলকে সহজতর করে। এটি ত্বকের মধ্যে কোলাজেন নামক উপাদান বৃদ্ধি করে দাড়িকে দ্রুত ঘন করে তোলে।

ভালো ফলাফল পেতে, প্রথমে ৩ চা চামচ পেঁয়াজের রস নিন। এর সাথে ২ চা চামচ অলিভ অয়েল নিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি ভালোভাবে আপনার গালের যেই অংশে দাড়ি নেই সেখানে মাখুন। তারপর ২০ মিনিট অপেক্ষা করে, ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই পদ্ধতিতে সপ্তাহে ৩-৪ বার ব্যবহার করলে খুব দ্রুতই ফলাফল পেতে পারেন।

(২) লেবু আর দারুচিনি | দ্রুত দাড়ি গজানোর উপায়

পছন্দসই গাল ভর্তি দাড়ি পেতে চাইলে মুখের ত্বক পরিষ্কার রাখাটাও গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের বাইরের আবরণের বহু কোষ মৃত অবস্থায় গালে আটকে থাকে। এই মৃত কোষগুলো সরে না গেলে দাড়ির ছোট ছোট হেয়ার ফলিকলগুলো সহজে বেরিয়ে আসতে পারেনা। এক্ষেত্রে পাতিলেবু ব্যবহার করতে পারেন। এটি ভেতর থেকে ত্বককে পরিষ্কার ও মসৃণ করে তোলে। এর সাথে দারুচিনি ব্যবহার করলে দাড়ির উন্নতিতে প্রভাব ফেলবে।

ভালো ফলাফল পেতে, ৪ চামচ পাতিলেবুর রসের সাথে ২ চামচ পরিমাণ দারুচিনির গুঁড়ো নিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি ভালোভাবে গালে মাখুন এবং ২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ২ দিন ব্যবহার করলেই ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

(৩) আমলা তেল | ঘন দাড়ি গজানোর উপায়

আমরা তেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। দাড়ির বৃদ্ধির জন্য এই উপাদানগুলো বেশ কার্যকর। প্রতিদিন যেকোনো সময় আমরা তেল আপনার দাড়িতে পরিমাণমতো মাখতে পারেন। এটি দাড়ির বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে।

(৪) নারিকেল তেল | চাপ দাড়ি গজানোর উপায়

দাড়ির উন্নয়নের জন্য নারকেল তেলও অনেকটাই উপকারী। আমাদের গালে থাকা চুলের ফলিকলগুলোকে ময়েশ্চারাইজ করতে নারকেল তেল সাহায্য করে। ভালো ফলাফল পেতে, পেঁয়াজের রসের সাথে নারিকেল তেল মিলিয়ে মুখে লাগান এবং ৩০-৬০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

(৫) ইউক্যালিপটাস তেল | ঘন দাড়ি গজানোর উপায়

ইউক্যালিপটাস তেল দাড়ি বড় করতে সাহায্য করে। এটি আমাদের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং দাঁড়ির বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে। অনেকেই ইউক্যালিপটাস তেলকে ফেসিয়াল ম্যাসাজ তেল হিসেবে ব্যবহার করে। দাড়ি গজানোর উপায় হিসেবে এটি নিয়মিত ঘুমানোর পূর্বে ব্যবহার করতে পারেন।

(৬) এগ মাস্ক | দাড়ি গজানোর উপায়

ডিম দিয়ে তৈরি ফেস মাস্ক ব্যবহার করলেও দাড়ির বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বিশেষ করে ডিমের কুসুম ব্যবহার করে, সাথে নারিকেল তেল/ বাদাম তেল/ ইউক্যালিপটাস তেল, আমলা তেল ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। এই মিশ্রনটি দাড়ির গোড়ায় ব্যবহার করলে, সেখানে প্রয়োজনীয় প্রোটিন সরবরাহ হয় এবং সুন্দর ও কাঙ্খিত দাড়ির বৃদ্ধি ঘটে।

ভালো দাড়ি পেতে যা যা করতে হবে

দাড়ি বাড়ানোর জন্য ধৈর্য থাকা এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ যত্ন নেওয়া জুরুরি। নিম্নোক্ত কাজগুলো করার মাধ্যমে আপনার দাড়ির গজাতে পারেন:

  • আপনার দাড়ির গ্রোথ পর্যবেক্ষন করতে একটানা কয়েক সপ্তাহ শেভ না করেই আপনার দাড়িগুলোকে বাড়তে দিন। প্রাথমিকভাবে চুলকানিসহ অন্যান্য সমস্যার সম্মুখীন হলেও, দাড়ি কাটা যাবেনা।
  • সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে চেষ্টা করুন। একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা দাড়ি গজানোর উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তাই সর্বদা হাইড্রেটেড থাকুন, নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং ভিটামিন এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য খান।
  • কিছু ভিটামিন এবং মিনারেল দ্রুত দাড়ি গজাতে সাহায্য করে। খাদ্যতালিকায় ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই-সমৃদ্ধ খাবার রাখুন।
  • দাড়িকে এবং আমাদের মুখের ত্বককে পরিষ্কার রাখতে নিয়মিত হালকা ক্লিনজার বা শ্যাম্পু দিয়ে দাড়ি ধুতে হবে। এটি ত্বকে ময়লা ও তেল জমতে দেয় না।
  • দাড়িসহ স্বাস্থ্যের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত ঘুমান।
  • মুখের দাড়িকে নরম, হাইড্রেটেড এবং স্বাস্থ্যজ্জল রাখতে দাড়ির তেল বা কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এর ফলে দাড়ির চুলকানি কমবে, শুষ্কতা দূর হবে এবং স্বাস্থ্যকর দাড়ি পাবেন।
  • মুখের ম্যাসাজ করা রক্তের চলাচলকে বাড়ায়। এটি দাড়ি গজাতে সাহায্য করে। তাই প্রায়ই মুখে ম্যাসাজ করুন। 
  • দাড়ির বৃদ্ধি ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হয়। কিছু মানুষের দাড়ি অন্যদের তুলনায় দ্রুত বড় এবং ঘন হতে পারে। তবে কারো কারো অনেক বেশি সময় লেগে যায়৷ তাই ধৈর্যের সাথে দাড়ির যত্ন করতে হবে।

সর্বোপরি, মনে রাখবেন দাড়ি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে জেনেটিক্স সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই উপরোক্ত বিষয়গুলো মেনে চললেই যে আপনার গালভর্তি দাড়ি গজাবে তা ভাবা উচিত নয়।

ভালো দাড়ি পেতে যা যা করা যাবেনা 

স্বাস্থ্যকর ও আকর্ষণীয় দাড়ি পেতে কিছু বিষয় পরিত্যাগ করা উচিত। যেমন:

  • দাড়িকে খুব ঘন ঘন ছাঁটাই করা উচিত নয়। কাঙ্খিত আকৃতি ধারণ করার পূর্বে দাড়ি না ছাঁটাই ভালো।
  • কখনো দাড়ি টানা বা উপড়ে ফেলা এড়িয়ে চলুন। এটি দাড়ির ফলিকল গুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে।
  • তীব্র রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। কিছু শ্যাম্পু বা ক্লিনজার প্রাকৃতিক তেল দূর করতে সহায়তা করে। তবে এগুলোর অধিক ব্যবহারের ফলে ত্বকের শুষ্কতা বৃদ্ধি পায় এবং দাড়ির বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।
  • বারবার দাড়ি এবং দাড়ির গোড়া ধোঁয়া থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজন অনুসারে ধুতে পারেন।
  • দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ হরমোনের মাত্রাকে প্রভাবিত করে। তাই দুশ্চিন্তা এবং হতাশা দূরে রাখুন। এর জন্য ধ্যান করে বা যোগব্যায়াম করে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।
  • পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খান। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যতালিকা পরিহার করুন।
  • ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন।

এই অভ্যাসগুলো এড়িয়ে চললে এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখতে পারলে, দাড়ি বৃদ্ধির জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারবেন।

দাড়ি গজানোর উপায় ঔষধ

দারি গজানোর জন্য কোনো ঔষধ কাজ করবে কি না তা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। কারন এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হরমোনের উপর নির্ভর করে। অনেকেই চুল ও দাড়ি গজানোর ক্ষেত্রে কিংবা টাক মাথায় চুল গজানোর ক্ষেত্রে মিনোক্সিডিল (Minoxidil) নামে এক ধরনের স্প্রে ব্যবহার করে। 

আরো পড়ুন: প্রাকৃতিকভাবে চুল লম্বা করার উপায় 

এছাড়াও বাজারে বহু ধরনের কেমিক্যাল, ঔষধ ও প্রসাধনী সামগ্রী রয়েছে, যা দাড়ি গজানোর গ্যারান্টি দিয়ে বিক্রি করা হয়। অস্পষ্ট ধারণা অনুযায়ী সে সকল পণ্যে উল্লেখিত থাকে: 

  • মুখ ভর্তি চাপ দাঁড়ি গজাবে।
  • গালের ফাঁকা জায়গায় দাঁড়ি গজাবে। 
  • পাতলা দাঁড়ি ঘন হবে।
  • দাঁড়ি ঘন লম্বা ও মজবুত হবে।
  • হরমোনের সমস্যা দূর করবে ইত্যাদি। 

এসকল পণ্যগুলোর প্রভাব তখনই লক্ষনীয় হবে যখন আপনার জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের সাথে এই স্প্রেটি সামঞ্জস্যপূর্ণতা করতে পারবে।

শেষকথা 

উপরোক্ত প্রাকৃতিকভাবে চাপ দাড়ি গজানোর উপায় গুলো আপনি নিয়মের মাধ্যমে আপনার গালভর্তি দাড়ি পাওয়ার পথে অগ্রসর হতে পারেন। বিশেষ ক্ষেত্রে আপনি চাইলে জন্ম বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন ডাক্তারের সাক্ষাৎকার নিতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন, এই বিষয়টি সম্পূর্ণভাবেই আপনার জেনেটিক্সের উপর নির্ভরশীল।

Scroll to Top