ইসলাম ধর্মের সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) । তিনি আরবের একজন ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। তিনি ইসলামি সূত্র মতে, ঐশ্বরিকভাবে প্রেরিত ইসলামের সর্বশেষ নবী ও রাসূল তথা ’আল্লাহর বার্তাবাহক’, যার উপর ইসলামের প্রধান ধর্মগ্রন্থ ’আল-কুরআন’ অবতীর্ণ হয়। তিনি ছিলেন একেশ্বরবাদী শিক্ষা প্রচারক।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্মঃ
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্ম কুরাইশ বংশে ৫৭০ খ্রীস্টাব্দে ১২ ই রবিউল আউয়াল মাসের সোমবার। পশ্চিম আরবের উচ্চ মরুভূমির একটি পাহাড়ী শহর মক্কা শহরে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ছিলেন আব্দুল্লাহ বিন আল-মুত্তালিব এবং আমিনা বিনতে ওয়াহবের প্রথম এবং একমাত্র পুত্র। জন্মের পূর্বে পিতা, ৬ বছর বয়সে মা আমিনাকে হারান এবং ৮ বছর বয়সে তাঁর দাদা মৃত্যু বরণ করেন। ইয়াতীম শিশু বড় হয়ে উঠেন চাচার সযত্ন ভালোবাসায়।
নামকরণঃ
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্ম হওয়ার সাথে সাথেই মা আমিনা এ খবর দাদা আব্দুল মুত্তালিবকে পাঠান। খবর পাওয়ার সাথে সাথেই তিনি ছুটে আসেন। পরম স্নেহে দেখেন, যত্নের সহিত কোলে নিয়ে কা’বার ভেতর প্রবেশ করেন, আল্লাহর হামদ বর্ণনা করেন এবং দোয়া করেন। তারপর তাঁর নাম রাখেন ‘মুহাম্মদ’ যার অর্থ প্রশংসিত।
আহমদ নামকরণঃ
মা আমিনা গর্ভাবস্থায় স্বপ্নযোগে প্রাপ্ত নাম অনুসারে ’আহমদ’ (যার অর্থ উচ্চ প্রশংসিত) নাম রাখেন। বাল্যকাল হতে মুহাম্মদ ও আহমদ উভয় নামই প্রচলিত ছিল। আল-কুরআনে উভয় নামই রয়েছে।
দুগ্ধ পান কালঃ
সবার প্রথমে তাঁকে তাঁর মাতা মা আমিনা দুগ্ধ পান করাতেন। তারপর আবু লাহাবের বাঁদী ‘সুওয়াইবা’ তাঁকে দুগ্ধ পান করায়। তারপর ধাত্রীর সন্ধান করতে থাকেন। ’হাওয়াযিন’ গোত্রের বানী সা’দ এর মহিলা হালিমা ছাদিয়া এই বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী হন। এমনভাবে যে, অন্য কোনো ধাত্রী শিশু মুহাম্মদকে গ্রহণ করল না পক্ষান্তরে হালিমা ছাদিয়াও অন্য কোনো শিশু পেল না। ফলে বাধ্য হয়ে মুহাম্মদ (সাঃ) কে গ্রহণ করলেন। গ্রহণ করার পর হতে হালিমার ঘরে ইলাহি বরকতের জোয়ার শুরু হল।
দু বাছর দুগ্ধ পান করার পর মা আমিনার কাছে নিয়ে আসেন এবং হালিমা মা আমিনাকে বললেন যে, আরও কিছুদিনের জন্য মুহাম্মদকে যেনও তার কাছে থাকতে দেন। তখন মক্কায় মহামারি চলছিল। সবদিক বিবেচনা করে মুহাম্মদকে হালিমার কাছে আবার ফিরিয়ে দেন। এইভাবে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ৫ বছর বয়স পর্যন্ত বানী সাদে লালিত পালিত হন। সেখানে তিনি তাঁর দুধ ভাইয়ের সাথে জঙ্গঁলে ছাগল চরাতেন। ( সহীহ আল বুখারী, কিতাবুন নিকাহ, সীরাতুননবী: ১/১৭২ )
মাতা-পিতার মৃত্যুর পর লালন পালনঃ
মুহাম্মদ (সাঃ) এর মাতা-পিতার মৃত্যুর পর দাদা আব্দুল মুত্তালিব তাঁর লালন পালনের দায়িত্ব নেন। তিনি তাঁকে খুব ভালোবাসতেন। আব্দুল মুত্তালিবের ছেলের থেকেও তাঁকে প্রাধান্য দিতেন। আব্দুল মুত্তালিব তার নিজ আসনে তাঁকে বসাতেন। আব্দুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্তেই তিনি তাঁর তত্ত্বাবধানে ছিলেন। দাদার মৃত্যুর পর চাচা আবু তালিব তাঁর দায়িত্ব নেন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র আট বছর। মুহাম্মদ (সাঃ) চাচা আবু তালিবকে বকরী লালন-পালন ও শাম দেশের ব্যবসার কাজে সহযোগিতা করতেন।
বিবাহ বন্ধনঃ
পঁচিশ বছর বয়সে মক্কার ধনবতী মহিলা খাদিজা বিনতে খোয়ালিদের সহিত নবী করিম (সাঃ) এর বিবাহ হয়। তিনি এমন একজন মহিলা অভিজাত সতী, ধনবতী ও গুনবতী। খাদিজা বিভিন্ন লোককে পণ্য দিয়ে ব্যবসা করাতেন এবং তিনি লাভের একটা অংশ গ্রহণ করতেন। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর সততা, সত্যবাদীতা ও বিশ্বস্ততা তখন সুবিদিত ছিল। আল-আমিন, আস-সাকিন এর প্রশংসা শুনে তিনি তাঁর কাছে ব্যবসার প্রস্তাব পাঠান। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) খাদিজা (রাঃ) এর প্রস্তাবে রাজি হন এবং ব্যবসা শুরু করেন।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ব্যবসার শেষে অনেক বেশি লাভসহ খাদিজার নিকট তাঁর সব কিছু বুঝিয়ে দেন। নবী করিম (সাঃ) গুণ মুগ্ধ ও অলৌকিক সংকেতের কথা শুনে খাদিজা (রাঃ) বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। উভয়ের সম্মতিতে তাঁহাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিয়ের সময় খাদিজা (রাঃ) বয়স ছিল ৪০ বছর। খাদিজা (রাঃ) যতদিন জীবিত ছিলেন নবী করিম (সাঃ) আর কোনো বিয়ের প্রয়োজন অনুভব করেন নি। নবী করিম (সাঃ) মোট ১১ টি বিয়ে করেন। নবী করিম (সাঃ) এর মৃত্যুর পূর্বে দুই জন মারা যান এবং বাকী নয় জনের সাথে তিনি বৈবাহিক জীবন অতিবাহিত করেন।
আরো পড়ুন: মেয়েদের ইসলামিক নাম – নামের অর্থসহ তালিকা
আল্লাহর ডাকে সাড়াঃ
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ৮ জুন ৬৩২ খ্রিস্টাব্দ, ১২ ই রবিউল-আউয়াল ১১ হিজরি ইয়াসরিব (মদিনা), হেজাজ, আরব উপদ্বীপে আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন। আল্লাহর ডাকে সাড়া দেয়ার সময় তাঁর বয়স ছিল ৬২ বছর। মৃত্যুর কারণ ছিল অসুস্থতা (প্রবল জ্বর)।
হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর সমাধিঃ মসজিদে নববির সবুজ গুম্বুজের নিচে মদিনায়।
পরিশেষে বলতে চাই যে, আমার মতো অদমের দ্বারা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সব বিষয় তুলে ধরা অসম্ভব। তারপরও যতটুকু সম্ভব তা তুলে ধরলাম। লেখায় যদি ভুল পরিলক্ষিত হয় দয়া করে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।