হার্টের নানান রোগ, লক্ষণ, প্রতিরোধের উপায় ও হার্টের রোগীর খাদ্য তালিকা

মানুষের দেহের অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো আমাদের হৃদপিণ্ড বা হার্ট। বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষ নানান হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিনিয়তই। সচেতনতার অভাবে এই সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করছে। তাই হার্টের নানান রোগ, লক্ষণ, প্রতিরোধের উপায় ও হার্টের রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জেনে নিন এখানে।

হার্টের যে সকল রোগ হয় | হার্টের সমস্যা গুলো কি কি?

হার্টের সমস্যা বলতে আমরা হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট ফেইলিওর সম্পর্কেই জানি। তবে আমাদের এই হৃদযন্ত্রে বহু ধরনের রোগ হতে পারে। বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী সবচেয়ে বেশি যে সকল হৃদরোগে মানুষ আক্রান্ত হয়, সেগুলো সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো:

(১) করোনারি হৃদরোগ (Coronary Heart Disease)

যখন মানবদেহের হৃদপিন্ডের রক্তনালী ও করোনারী ধমনী এবং সংকীর্ণ বা অবরুদ্ধ হয়ে যায়, তখন হৃৎপিণ্ডে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ করতে পারে না। এ ধরনের অবস্থাকেই করোনারি হৃদরোগ বলে। এটি তাৎক্ষণিকভাবে হার্ট অ্যাটাকের ক্ষতিসাধন করতে সক্ষম। স্কটল্যান্ডের মানুষের মাঝে করোনারি হৃদরোগ বেশি প্রভাব ফেলে।

(২) এনজিনা (Angina)

যখন ধমনী সংকীর্ণ হওয়ার কারণে হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ সীমাবদ্ধ হয়ে যায়, তখন বুক, বাহু, ঘাড়, পেট বা চোয়ালে একটি ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হয়। এর ফলে হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। এটিকে এনজিনা বলে। এটি করোনারি হৃদরোগের একটি উপসর্গ।

(৩) হার্ট অ্যাটাক (Heart Attack)

হার্ট অ্যাটাকের ফলে হৃদপিণ্ডের পেশীর অংশে রক্ত সরবরাহ সম্পূর্ণরূপে অবরুদ্ধ হয়ে যায়। হৃদপিন্ডের এই অবস্থাকে হার্ট অ্যাটাক, মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন ইত্যাদি বলা হয়। এটি করোনারি ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে ঘটে।

(৪) হার্ট ফেইলিউর (Heart Failure)

যদি হার্টের পাম্পিং অ্যাকশন কার্যকরভাবে কাজ করতে না পারে, তাহলে আপনার হৃদপিণ্ডের পেশী 

শরীরের রক্ত এবং অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে পারে না। এর ফলে শরীরে ক্লান্তি এবং শ্বাসকষ্টের মতো বিভিন্ন উপসর্গ তৈরি হয়। হার্ট সঠিকভাবে কাজ করতে না পারার এই অবস্থাকেই হার্ট ফেইলিউর বলা হয়।

(৫) অ্যারিথমিয়া (Arrhythmia)

হৃদপিন্ডের পেশীর নিজস্ব বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা রয়েছে যা হৃদস্পন্দনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। যদি হৃৎপিণ্ডের মধ্যে বৈদ্যুতিক সংকেতগুলি বাধাগ্রস্ত হয়, তখন হৃৎপিণ্ড খুব দ্রুত বা খুব ধীরে ধীরে অস্বাভাবিক ছন্দে স্পন্দিত হয়। একে অ্যারিথমিয়া বলা হয়।

(৬) ভালভ রোগ (Valve Disease)

হৃৎপিণ্ডের মাধ্যমে রক্তের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য হৃদপিন্ডের ভালভগুলো খোলে এবং বন্ধ হয়। এ সকল ভালভে সমস্যা হলে হৃদপিন্ডের চাপ বেড়ে যায়। ফলে হৃৎপিন্ডের পেশিতে চাপ সৃষ্টি হয়। এ সময় নিঃশ্বাসের দুর্বলতা, ক্লান্তি, বুকে ব্যথা, মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।

(৭) উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure)

উচ্চ রক্তচাপ কোন একক রোগ নয়। তবে এর ফলে করোনারি হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের মতো গুরুতর অবস্থার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। উচ্চ রক্তচাপ সরাসরি আমাদের হার্টকে প্রভাবিত করতে পারে।

(৮) জন্মগত হার্টের অবস্থা (Congenital Heart Conditions)

জন্মগতভাবে মাতৃগর্ভে থাকাকালীন বিকাশমান ভ্রূণের হৃদপিন্ডের গঠনে অস্বাভাবিকতা বা ত্রুটি থাকতে পারে। এটিকে Congenital Heart Conditions বলা হয়। 

(৯) উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হার্টের অবস্থা (Inherited Heart Conditions)

পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কোন হার্টের সমস্যা থাকলে, বংশগত বা জেনেটিক ভাবে সেই সমস্যা শিশুর দেখেও হতে পারে। জীবনের বিভিন্ন বয়সে সেই সমস্যাগুলো প্রকাশ পেতে পারে। অনেক সময় কোন কারন ছাড়াই পারিবারিকভাবে পাওয়া হার্টের রোগের কারণে একজন মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

এছাড়াও হার্টের ব্লক ও অন্যান্য হৃদরোগ জনিত সমস্যা প্রতিনিয়তই আমাদের চোখে পড়ে।

হার্টের সমস্যার লক্ষণ | হার্টের রোগের লক্ষণ

হার্টের সমস্যা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। তবে এর কিছু উল্লেখযোগ্য লক্ষণ রয়েছে। হার্ট দুর্বল হলে কিংবা হার্টের কোন রোগ হলে এগুলো প্রকাশ পায়। নিচে এগুলো তুলে ধরা হলো:

বুকে চাপ অনুভূত হওয়া

হার্টের সমস্যা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হলো বুকে চাপ লেগে থাকা বা ব্যথা অনুভূত হওয়া। সাধারণত হার্টে রক্ত চলাচল ঠিকমতো না হলে এ ধরনের সমস্যা হয়। নালীতে প্লাক জমে গিয়ে এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই দীর্ঘক্ষণ এমন অনুভূত হলে সতর্ক হোন।

ঘাড় ও চোয়ালে ব্যথা

দীর্ঘক্ষণ যাবত ক্ষার ও চলে ব্যথা হওয়া হার্ট অ্যাটাক বা হার্টের অন্যান্য সমস্যার একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, হঠাৎ করে চোয়ালে বা ঘাড়ে ব্যথা হলে সতর্ক হোন। কারণ এক্ষেত্রে দাঁতের মাড়ির সমস্যা ছাড়াও জটিল কারণ থাকতে পারে। হার্ট অ্যাটাক হয়েছে এমন রোগীদের থেকে জানা যায়- তাদের বিভিন্ন সময়ে বুকের বাঁ পাশ ব্যথা শুরু হয়ে চোয়াল, কান, ঘাড় ও কাঁধের দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এ সময় পেশিতে টানটান ভাব অনুভূত হয়।

পেট ফাঁপা ও বমি বমি ভাব

পেট ফাঁপা ও বমি বমি ভাব বিভিন্ন কারণে হতে পারে। তবে অনেক সময় এটি হার্টের সমস্যার লক্ষণ হিসেবেও প্রকাশ পায়। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের পূর্বে বমি বমি ভাব দেখা দেয়। যদি বুকের ব্যথা এবং বমি বমি ভাব একইসাথে অনুভূত হয় তবে সচেতনতা অবলম্বন করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

শ্বাস ছোট হয়ে আসা

হার্টের দুর্বলতার কারণে ফুসফুসে ঠিকমতো রক্ত সঞ্চালন না হলে, ফুসফুস দেহের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে বাতাস গ্রহণ করতে পারে না। এর ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং শেষের স্থায়িত্ব ছোট হয়ে আসে। এটি হার্ট অ্যাটাকরেও অন্যতম কারণ।

ক্লান্তিবোধ

আমরা অধিক পরিশ্রমসহ বিভিন্ন শরীরবৃত্তীয় কারণে ক্লান্তি অনুভব করতে পারি। কিন্তু অনেক সময় শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্ত ঠিকভাবে না পৌঁছালে ক্লান্তিবোধ হয়। দীর্ঘদিন এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে, এর পেছনে হার্টের দুর্বলতার লক্ষণ ও প্রকাশ পেতে পারে। একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, হার্ট অ্যাটাকের পর প্রায় ৭০% নারীরা বলেছেন- যে মাসে তাদের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, সে মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশিই অবসন্ন লেগেছিল

হাত-পা অসাড় হয়ে যাওয়া

অনেকেরই হাত-পা, বিশেষ করে পা অসার হয়ে যাওয়ার সমস্যা থাকে। এটি হার্টের দুর্বলতা বা হার্টের কোন রোগের লক্ষণ হিসেবে ও প্রকাশ পেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে এটি পেরিফেরাল ভাস্কুলার ডিজিজের লক্ষণ। এই রোগের ফলে পায়ের আর্টারিতে প্লাক জমে যায় ও রক্ত চলাচল ঠিকভাবে হয় না। তাই দীর্ঘদিন যাবত এমন সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ঠিকমতো ঘুম না হওয়া

হার্টের রোগীদের ঠিকমতো ঘুম না হওয়ার একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ প্রকাশ পায়। হার্টে রোগীদের তথ্যমতে, হার্ট অ্যাটাকের মাসখানেক আগে থেকেই কম ঘুমের সমস্যা হতে থাকে। এটি বিভিন্ন কারণেই হতে পারে, তবে তা হাটের দুর্বলতার লক্ষণও প্রকাশ করে।

উপরোক্ত লক্ষণগুলো একজন সাধারন মানুষের শরীরেও দেখা দিতে পারে। তবে এগুলো দীর্ঘস্থায়ী হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তাছাড়া হার্টের প্রতিটি রোগের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।

হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষন সমূহ

হার্টের বিভিন্ন রোগ ও সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং বিপদজনক সমস্যাটি হলো হার্ট অ্যাটাক। এর ফোনে তাৎক্ষণিকভাবে একজন মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে। হার্ট অ্যাটাকের বহু পূর্ব লক্ষণ রয়েছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে হার্ট এটাকে আক্রান্ত রোগীদের যেসকল পূর্ব লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:

  • বুকের মাঝখানে প্রচণ্ড ব্যথা এবং ধীরে ধীরে সেই ব্যথা চোয়ালে অথবা বাম কাঁধ ও হাতে ছড়িয়ে পড়া।
  • পাকস্থলীতে ব্যথা, ইনটেসটাইনাল ক্রাম্প, বমি বমি ভাব এবং হজমে সমস্যা ইত্যাদি।
  • অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়া।
  • হার্ট অ্যাটাকের আগে ঠান্ডা ও ফ্লু হওয়া।
  • ঘর্মাক্ত ত্বক এবং মাথা ঘোরানো। অতিরিক্ত ঘাম হওয়া হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ। বিশেষ করে ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা হওয়া ছাড়াও অতিরিক্ত ঘাম, বুক ধড়ফড়, হঠাৎ শরীর খারাপ লাগতে শুরু করে।
  • দীর্ঘদিন যাবত কাশি থাকলে এবং কফের সঙ্গে নিয়মিত রক্ত বের হওয়া।
  • প্রায়ই হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
  • হঠাৎ করে শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
  • নিয়মিত তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
  • অল্পতেই দম ফুরিয়ে যাওয়া, মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়া ইত্যাদি।
  • শারীরিক পরিশ্রম কিংবা অন্য কোন কারণ ছাড়াই অনিয়মিত পালস রেট হওয়া।

ইত্যাদি বিষয়গুলো হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ হিসেবে বহু রোগীর দেহে প্রকাশ পেয়েছে।

হার্ট ভালো রাখার উপায় | হার্টের রোগ প্রতিরোধের উপায়

হার্ট ভালো রাখতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মানতে হবে:

  • হার্ট ভালো রাখতে নিয়মিত সুষম খাদ্য খেতে হবে। অতিরিক্ত ভাজা ও চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।
  • ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • শর্করা জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া যাবে না।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • খুব বেশি উত্তেজিত কিংবা মানসিক চাপে থাকা যাবে না।

সামগ্রিকভাবে সুষ্ঠ জীবন পদ্ধতি অনুসরণ করার মাধ্যমেই হার্ট ভালো রাখা সম্ভব।

হার্টের রোগীর খাবার তালিকা | হার্টের জন্য উপকারী খাবার

হার্টকে সুস্থ রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করার বিকল্প নেই। হার্টের প্রায় সকল প্রকার রোগই কোন না কোনভাবে আমাদের খাদ্যাভ্যাসের সাথে সম্পৃক্ত। হার্ট ভালো রাখতে আমাদের যে সকল খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত তার বিস্তারিত তথ্য নিচে দেওয়া হলো:

(১) শস্যদানা

হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আমাদের প্রচুর পরিমাণে দানাজাতীয় বা বীজ জাতীয় খাবার খেতে হবে। দানাজাতীয় খাবার আমাদের রক্তচাপ, শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রদাহ, কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণসহ অসংখ্য হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে বিশেষভাবে কার্যকরী। এ ধরনের খাবারে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা করোনারি হার্ট ডিজিস কমাতে কাজ করে। তাছাড়া বীজে ফাইবার এবং ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। নিয়মিত খাবারে এ ধরনের উপাদান রাখতে পারলে ১০-২০% পর্যন্ত হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।

(২) সবুজ শাক-সবজি

সবুজ ও রঙিন শাকসবজি বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হয়। এছাড়াও এগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকে। তন্মধ্যে, ভিটামিন-কে বিশেষভাবে শরীরের ধমনিগুলোকে সুস্থ রাখে এবং রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। সবুজ শাকে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডায়েটারি নাইট্রেট। এগুলো রক্তচাপ কমাতে, ধমনির দৃঢ়তা হ্রাস করতে এবং রক্তনালিগুলোর কোষগুলোর কার্যকারিতা বাড়াতেও কাজ করে। তাই খাবারে নিয়মিত পালংশাক, কলমিশাক, সরিষাশাক ইত্যাদি রাখতে পারেন।

(৩) রঙিন ফলমূল

বিভিন্ন ফলের পুষ্টিগুণ আমাদের হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। যেমন- পেয়ারা, আপেল, ন্যাসপাতি, কমলালেবু, কলা ইত্যাদি। এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। এ ছাড়া ভিটামিন ডি, সি, কে এবং পটাশিয়াম থাকায় রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে।

(৪) ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত খাবার

আমাদের হৃদপিণ্ডকে সুস্থ থাকতে সবচেয়ে বেশি উপকারী পুষ্টি উপাদানটি হলো ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হলো অত্যাবশ্যক পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের দেহ থেকে উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল এবং হার্টের সমস্যা সৃষ্টিকারী অন্যান্য উপাদান গুলো নিয়ন্ত্রণ করে। এটি অ্যারিথমিয়া এবং আরও নানা ধরনের হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়।

নিয়মিত এই পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার খেলে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমে প্রদাহ কমে, হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে থাকে, রক্ত জমাট বাঁধা কমে ইত্যাদি। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সবচেয়ে ভালো কিছু উৎস হলো সামুদ্রিক মাছ ও বীজ। তিসি, তুলসীর বীজ, চিয়া সিড ও আখরোটে প্রচুর পরিমাণে এই উপাদানটি থাকে।

(৫) মাছ ও মাছের চর্বি

বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ, যেমন- স্যামন, সার্ডিন, ম্যাকেরেল, টুনা ইত্যাদি মাছের চর্বিতে এবং অন্যান্য সামুদ্রিক খাবারে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। তাছাড়া এই খাবার গুলোর মধ্যে অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানতো রয়েছেই। এগুলো হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে ভূমিকা পালন করে। এসকল মাছ খেলে কার্ডিওভাসকুলার রোগ ও বিষণ্নতা কমে। নিয়মিত সামুদ্রিক মাছ খেলে খারাপ কোলেস্টেরল অর্থাৎ ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে থাকে।

(৬) বেরি জাতীয় ফল

বেরি জাতীয় ফলগুলো আমাদের হৃদপিণ্ড এবং হৃদপিন্ডের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন অঙ্গ গুলোকে ভালো রাখতে সহায়তা করে। এই ফলগুলোতে অ্যান্থোসায়ানিন নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে হৃৎপিণ্ডকে রক্ষা করে। এগুলো রক্তনালির কোষের কার্যকারিতাও বাড়ায়। ফলে রক্তচাপ ও রক্ত জমাটবাঁধা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই হার্ট সুস্থ রাখতে নিয়মিত স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি অথবা রাশবেরি খেতে পারেন।

(৭) বাদাম

বাদাম আমাদের হৃদযন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। বাদামে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। এছাড়া বিভিন্ন প্রকার মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস থাকে, যেমন- ম্যাগনেশিয়াম, কপার ও ম্যাঙ্গানিজ। এর সকল উপাদানে আমাদের হৃদপিন্ডের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে

বাজারে বিভিন্ন ধরনের বাদাম পাওয়া যায়। তন্মধ্যে, কাঠবাদাম রক্তের কোলেস্টেরল লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখে। চীনাবাদাম লো-গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ খাবার, যা হার্টের জন্য ভালো। এগুলো ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক। 

(৮) রসুন

রসুনের পুষ্টি উপাদান গুলো বহু ঔষধি গুণ সমৃদ্ধ। এতে রয়েছে অ্যালিসিন নামক একটি যৌগ, যা হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে কাজ করে। রসুনের সামগ্রিক উপাদানগুলো সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টোলিক উভয় রক্তচাপ কমাতে সক্ষম। খারাপ কোলেস্টেরল কমাতেও এটা কার্যকর। নিয়মিত রসুন খেলে হার্ট সুস্থ থাকে। 

(৯) টমেটো

টমেটোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি লাইকোপেনে ভরপুর। টমেটোর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো ক্ষতিকারক ফ্রি র‌্যাডিক্যাল নিরপেক্ষ রাখতে, অক্সিডেটিভ ক্ষতি রোধ করতে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে অবদান রাখে। আমাদের শরীরে তাজা টমেটোর তুলনায় রান্না করা টমেটো এবং টমেটো পণ্য থেকে লাইকোপিন ভালভাবে শোষণ হয়। তাই নিয়মিত রান্নায় টমেটোর আইটেম রাখতে পারেন।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, কাঁচা টমেটো, টমেটো সস, বা মিহি জলপাই তেলের সাথে টমেটো সস ইত্যাদি অনেক উপকারি। এগুলো রক্তের কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে পারে এবং HDL কোলেস্টেরল বাড়াতে পারে। 

(১০) অলিভ অয়েল

অলিভ অয়েল প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। এগুলো হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। তাছাড়া এতে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডও থাকে, যা হৃদযন্ত্রের যত্ন নিতে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ।

(১১) গ্রিন টি

গ্রিন টি এর বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুণ রয়েছে। এর ফলে শরীরের চর্বি কাটে এবং এটি ইনসুলিন উৎপাদন হিসেবেও কাজ করে। হৃৎপিণ্ডের জন্য খুবই উপকারি পলিফেনল ও ক্যাটেচিন রয়েছে গ্রিন টি-তে। এটি হার্টের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। LDL কোলেস্টেরল কমাতেও এটি বেশ কার্যকরী।

আরও পড়ুন: কিডনি রোগের লক্ষণ, কারন, পরীক্ষা, প্রতিকার ও প্রতিরোধ

এসকল খাবার নিয়মিত খেলে হৃৎপিণ্ড ভালো থাকে এবং কোন ক্ষতি হওয়ার পূর্বেই তা প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। এমনকি কোন হার্টের রোগী তার স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য এই খাবারগুলো নিয়মিত খেতে পারে।

শেষকথা

হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সর্বপ্রথম নিজেদের সচেতন হয়ে সঠিক জীবন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। পাশাপাশি উপরোক্ত হার্টের বিভিন্ন রোগ ও হার্টের রোগের লক্ষণ জেনে সতর্ক থাকুন। হার্টের রোগীর খাবার তালিকা অনুযায়ী খাবার খেয়েও ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব।

Scroll to Top