ব্যাবিলনীয় সভ্যতা

ব্যাবিলনীয় সভ্যতার ইতিহাস এবং বর্তমান অবস্থা 

পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতাগুলোর মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত একটি নগরী হলো ব্যাবিলনীয় সভ্যতার। এই সভ্যতার ইতিহাস-ঐতিহ্য, অবস্থান ও মানব সভ্যতার কম বিকাশে এর অবদান সম্পর্কে জানতে প্রায় ৩ হাজার বছরের পুরনো ইতিহাসে ফিরে যেতে হবে। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার প্রায় সমসাময়িক একটি সভ্যতা এটি। এই ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি। বহুবার বহু স্থানে আমরা এই প্রাচীন নগরীর কথা শুনেছি। তবে এই ব্যাবিলন নগরীর ঐতিহাসিক পটভূমি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই অনেকেরই। তাই পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন এই ব্যাবিলনীয় সভ্যতার ইতিহাস এবং বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন এই লেখা থেকে।

ব্যাবিলনীয় সভ্যতা (Babylonian Civilization)

ব্যাবিলন ছিল প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ নগরী। ব্যাবিলন শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ‘বাব ইল’ শব্দ থেকে। যার অর্থ দেবতার নগর। আরব ঐতিহাসিকগণ উন্নত এই উপত্যকা ভূমিকে ‘উম্মুল বিলাদ’ বা সভ্যতার জন্মভূমি নামে অভিহিত করেছে। ইতিহাস প্রসিদ্ধ নৃপতি দুঙ্গীর মৃত্যুর পর সুমেরীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর এই প্রসিদ্ধ ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্যের উদ্ভব ঘটেছিল। কোনাে কোনাে ঐতিহাসিকের মতে, এটি ছিল প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার সমসাময়িক এবং সমান গুরুত্বপূর্ণ মানবসভ্যতা। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় উন্নত এই নগরীটি মানব সভ্যতার বিকাশে সাহিত্য ও শিক্ষা, জ্যোতির্বিদ্যা, গণিতশাস্ত্রে, কৃষি ব্যবস্থা, যুগোপযোগী আইন প্রতিষ্ঠা করেছিল।

ধারণা করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে সেমেটিক জাতির একটি শাখা টাইগ্রীস ও ইউফ্রেটিস (দজলা ও ফোরাত) উপত্যকায় গমন করে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেছিল। তারা সুমেরীয়দের কাছে গৃহ নির্মাণ, জলসেচ, লিখন পদ্ধতি প্রভৃতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানার্জন করে। পরবর্তীতে কালক্রমে অ-সেমেটিক সুমেরীয় জাতি এবং সেই সেমেটিক জাতির সংমিশ্রণে ব্যাবিলনীয় সভ্যতার উৎপত্তি হয়।

খ্রিস্টপূর্ব ১৭৭০ থেকে ৩২০ অব্দের সময়টিতে ব্যাবিলনই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় শহর। তখন প্রায় ২ লক্ষেরও বেশি জনসংখ্যার নগরী ছিল এটি। খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতকের দিকে ব্যাবিলন নগরীটি বিশাল আকারের প্রাচীরের আড়ালে সুরক্ষিত ছিল। সমগ্র নগরী ২ স্তরের প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত ছিল। গ্রিক ঐতিহাসিকদের মতে, সেই দেয়ালগুলো প্রায় ৯০ ফুট উঁচু ও ১০ মাইল জুড়ে বিস্তৃত ছিল। দেশের বাণিজ্যপথ ও জলপথের কাছাকাছি হওয়ায় এই শহরটি ব্যবসা বাণিজ্যে ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করেছিল। 

প্রাচীন ব্যাবিলন নগরীর ভৌগলিক অবস্থান

ব্যাবিলন নগরী বাগদাদ থেকে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার দক্ষিনে ইরাকের হিলাল, গভর্নরেট নামক স্থানে অবস্থিত একটি প্রাচীন নিদর্শন। এই স্থানটিকে ইরাকের মেসোপটমিয়া শহরও বলা হয়। কালক্রমে এটি সমগ্র দক্ষিণ মেসােপটেমিয়া পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে। প্রাচীন এই শহরটি টাইগ্রীস ও ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। এর আশেপাশের এলাকাগুলো সমতল শুস্ক ভূমি ছিল। এই অঞ্চলের ঋতু সাধারনত গ্রীস্ম এবং হালকা শীত ছিল। ভৌগোলিক অবস্থার কারনে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে এখানে বেশী বৃষ্টিপাত হতো এবং কৃষিকাজের জন্য এই অঞ্চলের মাটির গঠন উর্ভর এলাকা হিসাবে বিবেচিত হতো।

মানব সভ্যতার বিকাশে ব্যাবিলনীয় সভ্যতার প্রভাব

মানব সভ্যতার বিকাশে ব্যাবিলনীয় সভ্যতার প্রভাব বেশ স্পষ্টভাবে লক্ষ করা যায়। প্রায় ৩ হাজার বছর পুরনো প্রাচীন ব্যাবিলনীয় সভ্যতাটি মানব সভ্যতার অন্যতম উল্লেখযোগ্য অংশ। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় গভীর জ্ঞান অর্জনের অজানা পথের সন্ধান জানিয়ে গেছে এই জাতি। এটি মুসলিম-অসুমলিম, প্রাচ্য-পাশ্চাত্য এবং আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিকাশের ক্ষেত্রে অন্যতম পটভূমি হিসেবে বিবেচিত হয়। 

ফরাসি ও জার্মানি ভূতত্ত্ববিদদের ব্যাবিলনীয় সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করার ফলে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, ব্যাবিলনীয় সভ্যতা একটি উন্নত ও উচুদরের সভ্যতা। ঐতিহাসিক জে. ই. সােয়াইন বলেন, মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের সময় দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া এবং গ্রিক সভ্যতার বিকাশেও ব্যাবিলনীয়দের প্রভাব রয়েছে। তারা বিস্তৃতভাবে পর্যবেক্ষণ পরিচালনা করে গনিত শাস্ত্র, ভূতত্ত্ববিদ্যা, ইতিহাস, চিকিৎসাবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, ব্যাকরণ, দর্শন এবং অভিধান সংকলনের ভিত্তি রচনা করে গিয়েছেন। এছাড়া তাদের মহাকাব্য, ধর্মীয় গীতি, প্রবাদ ইত্যাদির প্রবর্তকও বলা যায়। 

ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান

ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান বা ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান ছিল প্রাচীন সভ্যতার প্রকৌশল এবং উদ্যান শিল্পের যুগান্তকারী কীর্তি। বর্তমানে এগুলো পৃথিবীর প্রাচীন বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে একটি ছিল। ধারনা করা হয়, এই উদ্যান খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে রাজা দ্বিতীয় নেবুচাদনেজার দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। কথিত আছে, দ্বিতীয় নেবুচাদনেজার তার স্ত্রীর উপহার হিসাবে এই উদ্যান তৈরি করেছিলেন 

এই ঝুলন্ত উদ্যানগুলো একটি বিশাল পাথরের কাঠামোর উপর নির্মিত সোনালী রঙের বাগানের সারি। এই বাগান ৮০ ফুটেরও বেশি লম্বা। এই বাগানগুলো বিভিন্ন ধরণের গাছ, গুল্ম এবং ফুলে ভরা ছিল। এগুলো যেন মরুভূমির মাঝখানে একটি সবুজ মরূদ্যান। বলা হয় যে, এই উদ্যান গুলো  ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্যের শক্তি এবং সম্পদের প্রতীক ছিলো। তবে ঝুলন্ত উদ্যান আসলেই ছিল কিনা তা নিয়ে ইতিহাসবিদের মধ্যে কিছু বিতর্ক রয়েছে। কারন, বাগানের কোন ভৌত অবশিষ্টাংশ পাওয়া যায়নি। তবে গ্রীক এবং রোমান ঐতিহাসিকদের বর্ণনা অনুযায়ী, প্রাচীন সাহিত্যে বাগানের অনেক বিবরণ রয়েছে। সর্বোপরি এগুলো প্রাচীন বিশ্বের সৌন্দর্য ও বিস্ময়ের প্রতীক।

ব্যাবিলনীয়দের সাহিত্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা

প্রাচীনকালের উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার নগরী হওয়ায় ব্যাবিলনীয়রা গদ্য ও পদ্য সাহিত্যেও বিশেষ অবদান রেখেছিল। মহাকাব্য ও পৌরাণিক কাহিনী সম্বলিত সাহিত্য রচনায় তারা ছিল কিংবদন্তি। জনপ্রিয় বিখ্যাত ‘গিলগামেশ উপাখ্যান’ সুমেরীয়দের কাছ থেকে সংগ্রহ করে ব্যাবিলনের কবিগণ অপূর্ব সাহিত্য তৈরি করতো।

ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদরা এই নগরীর খননকার্য পরিচালনা করে ১৮৯৪ সালে একটি ব্যাবিলনীয় বিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করেন। এই বিদ্যালয়টি ৫৫০ বর্গফুট আয়তনবিশিষ্ট এবং বর্গাকার একটি বিদ্যালয় ছিল। সে বিদ্যালয়ের একটি দেয়ালে প্রাচীন ভাষায় লিখিত ছিল যে- “ফলকে লিখন পদ্ধতিতে যে উৎকর্ষ সাধন করবে, সে সূর্যের ন্যায় উজ্জ্বল হবে”। সেই বিদ্যালয়ে লিখন পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করার ব্যবস্থা ছিল এবং সম্ভবত প্রায় ৩৫০ টি বর্ণ চিহ্ন আয়ত্ত করতে হতো। 

ব্যাবিলনীয় সভ্যতার লিখন পদ্ধতি

প্রাচীন ব্যাবিলন নগরীতে প্রাচীন মিশরীয় এবং সুমেরীয় ‘চিত্র-লিখন’ পদ্ধতি অপেক্ষা উন্নততর একটি লিখন পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। ব্যাবিলনীয় সেই অভিনব লিখন পদ্ধতিটি ‘কুইনিফরম লিখন’ নামে কীলক আকারে প্রচলিত ছিল। ঐতিহাসিক মায়ার্সের মতানুযায়ী, পশ্চিম এশিয়ার জনগণের মধ্যে ব্যাবিলনীয় লিখন পদ্ধতি খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ বছর থেকে খ্রিস্টীয় শতাব্দী পর্যন্ত প্রচলিত ছিল।

তাদের এই লিখন পদ্ধতিটি ৩৫০-৫০০ অক্ষরের পর্যন্ত হতে পারে। পাথরে খােদাই কিংবা মাটির থালাতে তিনকোণা কাঠি দিয়ে লেখা পাত রৌদ্রে শুকিয়ে বা আগুনে সেঁকে রাখা হতাে সেই বর্ণচিহ্ন। বর্তমানে এর মধ্যে কিছু কিছু ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে।

জ্যোতির্বিদ্যা ও গণিতশাস্ত্রে ব্যাবিলনীয় সভ্যতার অবদান

প্রায় ৩ হাজার বছর পূর্বে ব্যাবিলন নগরী অনেকাংশেই আধুনিক সভ্যতার পথিকৃৎ হয়ে উঠেছিল। কারণ সেই প্রাচীন আমাদেরই তাদের মাঝে জ্যোতির্বিদ্যা, গণিতশাস্ত্র এবং আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের চর্চা হতাে। মানব সভ্যতায় ১২ মাসে বছর গণনা, ৪ সপ্তাহে মাস, ১২ ঘণ্টায় দিন এবং এক ঘণ্টাকে ষাট মিনিটে ভাগ করার সর্বপ্রথম কৃতিত্ব তাদের ছিল বলে জানা যায়। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্রাদি সম্পর্কে তারা বিশেষ জ্ঞানার্জন করেছিল। চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ সম্পর্কেও তাদের উপযুক্ত ধারণা ছিল। সূর্যঘড়ি ও জলঘড়ি দ্বারা তারা সময় নিরূপণ করতো। 

তারা ওজন, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, শক্তি পরিমাপক প্রথার উদ্ভাবন করেছিল। দশমিক গণনা পদ্ধতি আবিষ্কার করে গনিতশাস্ত্রেও মৌলিক অবদান রেখেছিল তারা। ব্যাবিলন নগরী তৈরি ব্যাবিলনীয় পঞ্জিকা মিশরীয় পঞ্জিকা থেকে অনেকাংশেই উন্নত ছিল।

ব্যাবিলনীয় সভ্যতার কৃষি ব্যবস্থা

প্রাচীন ব্যাবিলন নগরীটি মূলত নদী তীরবর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল। প্রাচীনকালের প্রায় প্রতিটি নগরীর আশেপাশেই কোন না কোন নদীর অবস্থান ছিল, যা পারিপার্শ্বিকভাবে কৃষি কাজে এবং পানির যোগান দিতে সহায়তা করত। ব্যাবিলন নগরীর পাশেই দজলা ও ফোরাত নদীর উপত্যকা অত্যন্ত উর্বর থাকায় ব্যাবিলনবাসী কৃষিকার্যও ছিল উন্নত। এই অঞ্চলের শস্যের প্রাচুর্য এবং কৃষি ব্যবস্থার প্রসার নিয়ে বিখ্যাত গ্রিক ঐতিহাসিক হেরােডােটাস অনেক প্রশংসা করেছেন। 

তৎকালীন সময়ে সামন্ত ভূমি ব্যবস্থার জন্য কৃষকরা উৎপন্ন শস্যের দুই-তৃতীয়াংশ জমির মালিককে দিতে বাধ্য থাকতাে, এবং বাকি এক-তৃতীয়াংশ নিজেরা ভোগ করতো। তখন নদীর বন্যার প্রকোপ থেকে ফসলি জমি রক্ষা করতে এবং অনাবৃষ্টির সময় জমিতে সেচের ব্যবস্থা রাখতে উপযুক্ত বাঁধ নির্মাণ করা হতো। কৃষিকাজ, খাল খনন ও বাঁধ নির্মাণে অবহেলার জন্য কঠোর শাস্তি দেওয়া হতো।  

ব্যাবিলনীয় সভ্যতার ব্যবসায়-বাণিজ্য

প্রাচীন ব্যাবিলন নগরীটি ব্যবসায়-বাণিজ্যেও ছিল উন্নত। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, ব্যাংকিং ব্যবস্থা ইত্যাদি সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। ব্যাবিলনীয়রা তাদের উদ্বৃত্ত শসা, তেল, খেজুর, মুয়পাত্র, কাচ, চামড়া ইত্যাদি পন্যগুলো রপ্তানি করতাে। অন্যদিকে, তারা স্বর্ণ, রৌপ্য, সীসা ইত্যাদি আমদানি করতাে। তখন ভারতীয় উপমহাদেশের হরম্পা ও মহেন-জে দারাে এবং মিশরের সাথে ব্যাবিলনীয়দের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও যােগাযােগ বিদ্যমান ছিল।

ব্যাবিলন নগরীর প্রসিদ্ধ সম্রাট- হাম্মুরাবি তোর ক্লিন ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য নির্দিষ্ট আইন প্রতিষ্ঠা করেছিল। সেই আইনের নির্দেশ অনুযায়ী, অসাধু ও অতিরিক্ত মুনাফাখাের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা ছিল। ব্যাবিলনে নির্দিষ্ট ওজন, পরিমাপ প্রণালী এবং হিসাব রক্ষার এক নির্ভুল পদ্ধতিও প্রচলিত ছিল।

ব্যাবিলনীয় সভ্যতার সম্রাট হাম্মুরাবির আইনি ব্যবস্থা 

ব্যাবিলন নগরীর সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট হাম্মুরাবি খ্রিস্টপূর্ব ২১২৩ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ২০৮১ অব্দ পর্যন্ত একটি বিরাট সাম্রাজ্যের অধিকারী ছিলেন। পাশাপাশি তিনি একটি বিখ্যাত আইন সংহিতা প্রণয়ন করে ইতিহাসে বিশেষ স্থান দখল করেছেন। হাম্মুরাবির আইন সংহিতা মনুষ্য প্রণীত আইন সংহিতার মধ্যে সবচাইতে প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ। 

১৯০২ সালে ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদ এম. ডি. মরগান প্রাচীন সেই ব্যাবিলনীয়দের দলিল সুসা নামক স্থানে উদ্ধার করেছে। ব্যাবিলন নগরীতে প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন হিসেবে আইন সম্বলিত প্রস্তরটি ৮ ফুট উঁচু মসৃণ ব্যাসেল্ট পাথর এবং এর উপরের দিক স্থূলভাবে বৃত্তাকার অবস্থায় রয়েছে। বৃত্তাকার এই স্তম্ভের বাকি অংশের সামনে ও পিছনে দু’দিকে সংবাদপত্রের মতাে কলামে ২৮২ টি আইন অত্যন্ত বিশুদ্ধ ব্যাবিলনীয় ভাষায় খােদাই করা রয়েছে।

এসকল আইনগুলো মূলত ব্যবসায়-বাণিজ্য, ক্রয়-বিক্রয়ের নীতিমালা, বৃত্তিধারী লোকদের পারিশ্রমিক ও দায়িত্ব, কৃষিবিষয়ক আইনগত সমস্যা, বিবাহ, পরিবার, সম্পত্তি, ভাড়ার হার এবং পরিমাণ, বিভিন্ন দ্রব্যাদির মূল্য, নানা প্রকার আইনভঙ্গের শাস্তি ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কিত। এছাড়া চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত ইত্যাদি অত্যন্ত কঠোর ফৌজদারী দণ্ডবিধির কথা এই আইন সংহিতাতে উল্লেখিত রয়েছে। প্রায় ২০০০ বছরের বেশি সময় ধরে এ আইন সংহিতাটি ব্যাবিলনীয়, অ্যাসিরীয় ইত্যাদি সাম্রাজ্যে কার্যকর ছিল। বর্তমানে এটি প্যারিসের ল্যুভর যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। 

নব্য-ব্যাবিলন সভ্যতা (Neo-Babylonian)

প্রাচীন ব্যাবিলনের পতনের পর খ্রিষ্টপূর্ব ৭ম শতাব্দীতে অ্যামোরিয়ান সামারাজ্য এই নগরীর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। সেই ৭ম শতাব্দীতেই ক্যালডীয়ের অধীনে শহরটি পুনরায় স্বাধীন করে নব্য-ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তারপর শক্তিশালী রাজাদের মাধ্যমে নব্য-ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্য শক্তিশালী হয়ে খ্রিস্টপূর্ব ৬২৬ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৯ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৬১২ -তে নিনেভেহে অসরীয়দের পরাজিত করার মাধ্যমে এই সাম্রাজ্যটি তৎকালীন সময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রাজ্যের পরিণত হয়েছিল।

আরও পড়ুন: প্রবাস জীবন-দেশে প্রবাসীদের গুরুত্ব

পরবর্তীতে, ৫৮৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জেরুজালেমের অবরোধ করে অভিজান চালিয়ে বহু ইহুদিদের বন্দি করে ব্যাবিলনে নিয়ে আসেন। এমনই নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, নেবুচাদনেজারের রাজত্বকে একটি স্বর্ণযুগ হিসাবে বর্ণনা করা হয়। সব মিলিয়ে নব্য-ব্যাবিলন সভ্যতা ছিল ব্যাবিলন নগরীর ইতিহাসে এবং তৎকালীন সময়ের বিশ্বব্যাপী অনন্য সাম্রাজ্য।

শেষকথা

উপরোক্ত প্রাচীন সভ্যতাটির অস্তিত্ব বর্তমান পৃথিবীতে স্পষ্টভাবে না থাকলেও মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশে এর ব্যাপক অবদান রয়েছে। ব্যাবিলনীয় সভ্যতার ইতিহাস এবং বর্তমান অবস্থা সম্পর্কিত উপরোক্ত আলোচনা থেকেই এর গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়।

About Durud Ahmed

সম্মানিত ভিজিটর আমি দুরুদ আহমেদ,পেশায় আমি একজন ব্লগ লেখক। প্রযুক্তি ও শিক্ষা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, লাইফস্টাইল এবং ইসলামিক লেখাই আমার প্রিয়। এই ব্লগের মাধ্যমে আমি সঠিক তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ভিজিটরদের সহযোগিতা করাই মূল লক্ষ্য।