জন্ডিস (Jaundice) অতি পরিচিত একটি ব্যাধি। মানবদেহে বিলিরুবিনের অতিরিক্ত উপস্থিতির কারণেই ত্বক, মিউকাস মেমব্রেন এবং চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়। এ ধরনের সমস্যাকে জন্ডিস বলা হয়। বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কারণে কিংবা অসচেতন জীবনযাপন করার ফলে জন্ডিস হয়। বর্তমানে প্রায় ৫০-৬০% মানুষ জীবনের বিভিন্ন সময়ে জন্ডিসের সম্মুখীন হয়ে থাকে। নবজাতকদের ক্ষেত্রে প্রতি ৫ জনের মধ্যে ৩ জনই জন্ডিসে আক্রান্ত হতে পারে।
জন্ডিসকে একটি সাধারণ রোগ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও, এর ফলে মারাত্মক জীবন-ঝুঁকির সৃষ্টি হতে পারে। জন্ডিসের পেছনে কিছু বড় বড় রোগের পূর্ব লক্ষণও লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই জন্ডিসের প্রকারভেদ, জন্ডিসের কারণ, জন্ডিসের লক্ষন, জন্ডিস হলে করণীয়, জন্ডিসের আক্রান্তদের খাবার তালিকা ও জন্ডিস থেকে মুক্তি পাওয়ার ঘরোয়া চিকিৎসা সমূহ তুলে ধরা হলো এই লেখাতে।
জন্ডিস হওয়ার কারণ কী | জন্ডিস কেন হয়?
সাধারণত আমাদের শরীরের রক্ত এবং টিস্যুতে যখন বিলিরুবির নামক পদার্থ জমা হয়, তখন জন্ডিস হয়। শরীরের লাল রক্ত কোষগুলো যখন ভেঙে যায় তখন বিলিরুবির উৎপাদিত হয়। তারপর যখন আমাদের যকৃত সঠিকভাবে কাজ করে তখন এই বিলিরুবিন প্রক্রিয়াকৃত হয় এবং পরিপাকতন্ত্রে মুক্তি পায়। কিন্তু যখন আমাদের যকৃত (লিভার) সঠিকভাবে কাজ করে না, তখনই রক্তে বিলিরুবিন তৈরি হয়।
এছাড়াও শারীরিক বিভিন্ন কারণে জন্ডিস হতে পারে। যেমন: টিউমার, কিডনিতে পাথর ইত্যাদি। অন্যদিকে, হেপাটাইটিস ভাইরাসের কারণে জন্ডিস হয় অনেক বেশি। হেপাটাইটিস দূষিত পানির মাধ্যমে ছড়ায় এবং খুব সহজেই দেহে সংক্রমণ ঘটায়। একইভাবে টাইফয়েড এবং ম্যালেরিয়ার মতো সংক্রমণের কারণেও জন্ডিস হয়।
জন্ডিসের প্রধান কারণ সমূহকে- জন্ডিসের প্রকারভেদের উপর ভিত্তি করে ৩টি ভাগে ভাগ করা যায়। নিচে এসকল কারণগুলো তুলে ধরা হলো:
প্রি হেপাটিক জন্ডিস (Pre-Hepatic Jaundice)
- ম্যালেরিয়া হলো পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট রক্তের সংক্রমণের ফলে এই ধরনের জন্ডিস হয়।
- সিকেল সেল অ্যানিমিয়া নামক জেনেটিক রোগের কারণে প্রি হেপাটিক জন্ডিস হয়। এর ফলে লাল রক্তকণিকা সাধারণ ডিস্কের আকৃতির পরিবর্তে অর্ধচন্দ্রাকার হয়ে যায়।
- থ্যালাসেমিয়া নামক জেনেটিক রোগের কারণেও এটি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে দেহে হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন কমে যাওয়ার ফলে রক্তে সুস্থ লাল রক্ত কণিকার সংখ্যা কমে যায়।
- হেমোলাইটিক অ্যানিমিয়া নামক রোগের ফলে দেহের রক্ত কোষগুলো তাদের স্বাভাবিক জীবনকাল শেষ হওয়ার আগেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। যার ফলে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়।
হেপাটিক জন্ডিস (Hepatic Jaundice)
- হেপাটাইটিস এ, বি, সি এবং এপস্টাইন-বার নামক ভাইরাসের সংক্রমনের কারণে হেপাটিক জন্ডিস হয়।
- লিভার ক্যান্সার হলেও এমনটি হয়ে থাকে।
- লিভারের দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণ হলে, কিংবা লিভার দীর্ঘদিন বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে থাকার কারণে লিভারের টিস্যুতে দাগ পড়ে যায়। একে লিভার সিরোসিস বলা হয়। এ সমস্যার কারণে জন্ডিস হয়ে থাকে।
- লেপ্টোস্পাইরোসিস নামক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ জনিত রোগের কারণে হেপাটিক জন্ডিস হয়। এটি সংক্রমিত প্রাণী বা সংক্রমিত প্রাণীর প্রস্রাব বা মল দ্বারা ছড়াতে পারে।
- দীর্ঘদিন মদ পান করার ফলে লিভার টিস্যুতে দাগ পড়তে থাকে। এর ফলে একপর্যায়ে জন্ডিস হয়। একে অ্যালকোহলিক হেপাটাইরিস বলা হয়।
এছাড়াও অ্যাসিটামিনোফেন, পেনিসিলিন, ওরাল গর্ভনিরোধক, ক্লোরপ্রোমাজিন এবং ইস্ট্রোজেনিক বা অ্যানাবলিক স্টেরয়েড ইত্যাদির কারণেও হেপাটিক জন্ডিস হতে পারে।
পোস্ট হেপাটিক জন্ডিস (Post-Hepatic Jaundice)
- অগ্ন্যাশয় টিউমার হলে।
- পিত্তথলিতে পাথর হলে।
- বিলিয়ারি অ্যাট্রেসিয়া নামক জেনেটিক রোগের কারণে। এর ফলে পিত্ত নালী সরু বা অনুপস্থিত হয়ে থাকে।
- গলব্লাডার ক্যান্সার হলে কিংবা গলব্লাডার ফুলে গেলে।
মূলত উপরোক্ত শারীরিক কারণগুলোর ফলেই বিভিন্ন ধরনের জন্ডিস হয়ে থাকে। জন্ডিসের সঠিক মাত্রা এবং কারণ জানতে জন্ডিসের টেস্ট করানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জন্ডিস হলে কি কি রোগ হতে পারে?
জন্ডিস একটি সাধারণ শারীরিক সমস্যা। তবে এটি বিভিন্ন জটিল রোগের পূর্ব লক্ষণও। যেমন:
- যকৃতের অকার্যকারিতা।
- কিডনি ফেইলর।
- ইলেক্ট্রোলাইটের অস্বাভাবিকতা।
- ক্রনিক হেপাটাইটিস।
- ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার।
- হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথি বা মস্তিষ্কের কর্মহীনতা।
- মৃত্যু।
- রক্তশূন্যতা।
- রক্তপাত।
- সংক্রমণ/ সেপসিস।
জন্ডিসের প্রকারভেদ
জন্ডিস বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। আমাদের লিভার দ্বারা বিলিরুবিন শোষণ এবং ফিল্টার করার ক্ষমতার জন্য, দেহের বিভিন্ন পয়েন্টে বিভিন্ন ধরনের জন্ডিস হতে পারে। জন্ডিসকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
(১) প্রি-হেপাটিক জন্ডিস: আমাদের দেহের রক্ত লিভারে পৌঁছানোর আগেই বিলিরুবিন শরীরের টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে রক্তের কোষের লাইসিসের হার কমতে থাকে। লিভারে পৌঁছানোর আগেই এটি হয় বলে একে প্রি-হেপাটিক জন্ডিস বলা হয়। প্রি হেপাটিক জন্ডিস হলে- পেটে ব্যথা, জ্বর, ঠান্ডা লাগা, অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস, চুলকানি, গাঢ় প্রস্রাব বা ফ্যাকাশে মল ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
(২) হেপাটিক জন্ডিস: আমাদের দেহে যকৃতের টিস্যু রক্ত থেকে বিলিরুবিন অপসারণে কম কার্যকরী হলে হেপাটিক জন্ডিস হয়ে থাকে। হেপাটিক জন্ডিসের হলে- ক্ষুধা মন্দা, রক্তাক্ত নাক, ত্বকের চুলকানি, দুর্বলতা, অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস, গাঢ় প্রস্রাব বা ফ্যাকাশে মল, পেশী বা জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, ত্বক কালো হওয়া, জ্বর, পেট বা পা ফুলে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
(৩) পোস্ট হেপাটিক জন্ডিস: আমাদের লিভারে পরিশোধিত হওয়ার পররক্ত থেকে অপসারিত বিলিরুবিন শরীর থেকে বের করে দেওয়া হয়। এসময় রক্তগুলো পিত্তনালী বা পরিপাকতন্ত্রে কার্যকরভাবে প্রবাহিত না হলে এই ধরনের জন্ডিস হয়। মূলত এটি একটি ব্লকেজের ফলে ঘটে থাকে। পোস্ট হেপাটিক জন্ডিস হলে- অসুস্থ অনুভব হওয়া, গাঢ় প্রস্রাব বা ফ্যাকাশে মল, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস, ত্বকের চুলকানি, পেট ফুলে যাওয়া, জ্বর ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
জন্ডিস এর লক্ষণ কি কি?
জন্ডিস একটি অতি সাধারণ শারীরিক সমস্যা। আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষই কম-বেশি জন্ডিসের স্বীকার হয়ে থাকে। এবং জন্ডিসের লক্ষণগুলোও খুব সহজেই চোখে পড়ে যায়। সাধারণত জন্ডিসের সবচেয়ে সাধারণ ও প্রধান লক্ষণ হলো চোখ ও প্রসাবের রং হলুদ হয়ে যাওয়া। কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা বেশি হলে পুরো শরীর গাঢ় হলুদাভ বর্ণ ধারণ করতে পারে। তখন ত্বক বা মুখের ভেতরও হলুদ দেখায়। এছাড়াও জন্ডিসের সকল সাধারণ উপসর্গ গুলো হলো:
- হলুদ ত্বক এবং চোখ;
- গাঢ় রঙের প্রস্রাব;
- প্রচন্ড জ্বর। অনেক সময় জ্বর জ্বর অনুভূতি কিংবা কাঁপানি দিয়ে জ্বর আসা;
- ফ্যাকাশে বা মাটির রঙের মল;
- বমি এবং বমি বমি ভাব;
- যকৃত শক্ত হয়ে যাওয়া।
- ক্ষুধামান্দ্য;
- পেটে ব্যথা;
- অব্যক্ত ওজন হ্রাস;
- পেশী এবং যৌথ ব্যথা;
- শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া;
- উষ্ক-খুষ্ক চামড়া;
- শারীরিক দুর্বলতা ইত্যাদি।
সাধারণত একজন মানুষের জন্ডিস হওয়ার এসকল উপসর্গগুলো প্রকাশ পাওয়ার ৪-৬ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ৪ সপ্তাহের মধ্যে নরমাল জন্ডিসগুলো ভালো হয়ে যায়। কিন্তু কখনো জন্ডিসের স্থায়ীত্ব ৪ সপ্তাহ পার হয়ে গেলে, বুঝতে হবে সেটি নরমাল জন্ডিস না। এ ধরনের স্থায়ী জন্ডিসগুলো বিভিন্ন শারীরিক ক্ষতির কারণে হতে পারে। যেমন: টিউমার, পাথর কিংবা অন্য কোন শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্ষতির কারণে জন্ডিস হয়।
তাই জন্ডিসের স্থায়িত্ব চার সপ্তাহ পার হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অতি গুরুত্বপূর্ণ। তখন চিকিৎসকরা শারীরিক লক্ষণ ও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জন্ডিসের এই তীব্রতা ও সঠিক কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা প্রদান করবে।
জন্ডিসের টেস্ট বা জন্ডিস পরীক্ষা
জন্ডিস নির্ণয় করার জন্য, হেপাটাইটিস ভাইরাসের অ্যান্টিবডি, বিলিরুবিনের মাত্রা, অস্বাভাবিক লোহিত রক্তকণিকা এবং অন্যান্য পদার্থ যা লিভারের কার্যকারিতা প্রকাশ করে, তা পরীক্ষা করা হয়। এর জন্য একটি ডায়াগনস্টিক রক্ত পরীক্ষাও করা যায়। এছাড়া আল্ট্রাসাউন্ড বা বায়োপসি করার মাধ্যমেও জন্ডিসের কারণ নির্ধারণ করা হয়। জন্ডিসের বিভিন্ন টেস্টের তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
(১) জন্ডিস হইছে কি না বা জন্ডিসের মাত্রা জানতে ‘সিরাম বিলিরুবিন’ টেস্ট করা হয়। যখন এই দেশটার মাত্রা ১.১ এর বেশি হয়, তখন তা জন্ডিস হিসেবে সনাক্ত করা হয়।
(২) বিলিরুবিনের পাশাপাশি দেহে কিছু এনজাইম বেড়ে গেলে, ধরে নেওয়া হয় লিভারের কারণে জন্ডিস হয়েছে।
(৩) দেহে অ্যালক্যালাইন ফসফেটাস বেড়ে গেলে ওষুধের কারণে জন্ডিস হয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়।
(৪) হেপাটাইটিস এ, বি, সি ও ই ভাইরাস টেস্ট করার মাধ্যমে জন্ডিস নির্ণয় করা যায়।
(৫) ভাইরাস কিংবা উপরোক্ত কারণগুলোতে জন্ডিস না হয়ে থাকলে, ‘আলট্রাসনোগ্রাম’ করে লিভারের মধ্যে টিউমার বা স্টোন আছে কিনা সনাক্ত করা যায়।
(৬) দীর্ঘদিন ধরে থেমে থেমে জন্ডিস হলে ‘ক্যালোরি ডিপ্রাইভেশন টেস্ট’ করা হয়।
(৭) ঘন ঘন জন্ডিসে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ‘ব্লাড টেস্ট’ বা ‘সিবিসি’ করে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা আছে কিনা তা দেখা যায়।
(৮) ‘হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস’ করে হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া আছে কি-না তা নির্ণয় করা হয়। কারণ হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া বা থ্যালাসেমিয়া কারণেও জন্ডিস হয়ে থাকে।
(৯) ওষুধ বা ড্রাগের কারণে জন্ডিস হয়ে থাকলে ‘গামা-জিটি’ নামক টেস্ট করানো হয়।
(১০) লিভারের টিউবের ভেতরে জন্ডিস হলে, এবং পাথর বা টিউমারের কারণে সেই জন্ডিস হয়ে থাকলে ‘এমআরসিপি’ টেস্ট করানোর মাধ্যমে পাথর বা টিউমারের অবস্থান জানা যায়।
জন্ডিস হলে করনীয় কি? জন্ডিস হলে কি ঔষধ খাবো?
আলোচনা থেকে আমরা জানলাম জন্ডিস বিভিন্ন কারণে হতে পারে এবং বিভিন্ন পর্যায়ের হতে পারে। তাই জন্ডিস হলে করণীয় বা চিকিৎসা নির্ভর করবে অন্তর্নিহিত কারনের উপর। সাধারণ জন্ডিস হলে এটি উপযুক্ত খাদ্য তালিকা অনুসরণ করতে হবে। পাশাপাশি সুনিয়ন্ত্রিত জীবনব্যবস্থা মেনে চললেই এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
তবে আপনার জন্ডিসটি চার সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী জন্ডিস বড় রোগের লক্ষণও প্রকাশ করে। তাই জন্ডিস পরীক্ষা করে, সঠিক কারণটি জেনে নিতে হবে। তারপর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন বা চিকিৎসা নিতে হবে।
জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা
সাধারণ জন্ডিস হলে একটি সঠিক খাদ্য তালিকা অনুসরণের মাধ্যমে এর থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব। তাই জন্ডিসে আক্রান্তদের জন্য একটি উপকারী খাদ্য তালিকা নিচে তুলে ধরা হলো:
- বেশি বেশি পানি পান করুন। পানি আমাদের হজমে সাহায্য করার পাশাপাশি লিভার এবং কিডনি থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতেও সাহায্য করে।
- গোটা শস্যদানা জাতীয় খাবার বেশি বেশি খাওয়া ভালো। এতে স্বাস্থ্যকর চর্বি, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ সহ উচ্চ পরিমাণে লিভার-বান্ধব পুষ্টি থাকে।
- সম্ভব হলে পরিমিত পরিমাণে বাদাম এবং শিম খেতে পারেন। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, ফেনোলিক অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
- চর্বিহীন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান। এ ধরনের খাবার লিভারের জন্য উপকারী। তৈলাক্ত প্রজাতির মাছ, যেমন স্যামন এবং ম্যাকেরেল জাতীয় খাবারে ওমেগা -3 ফ্যাটি এসিড/ omega-3 fatty acid এবং জিঙ্ক রয়েছে। এগুলো কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিনকে বিপাক করতে সাহায্য করে।
- তাজা ফল ও রঙিন শাকসবজি খান। এ ধরনের খাবারে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার থাকে। এগুলো হজম প্রক্রিয়া সহজ করতে এবং বিপাকের সময় লিভারের ক্ষতি কমাতে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কিছু খাবার হলো: পেঁপে, তরমুজ, কুমড়া, মিষ্টি আলু, ব্লুবেরি, আঙ্গুর, লেবু, জাম্বুরা, ফুলকপি, আদা, পালং শাক, জলপাই, টমেটো, গাজর, শালগম ইত্যাদি।
- কফি এবং ভেষজ চা খেতে পারেন।
উপরোক্ত খাবারগুলো খাওয়ার পাশাপাশি, জন্ডিস আক্রান্তদের কিছু খাবার পরিহার করতে হবে। যেমন: ধূমপান ও মদ্যপান, প্যাকেটজাত বা টিনজাত করা খাবার, কাঁচা বা কম সিদ্ধ করা মাছ, শেলফিশ, স্যাচুরেটেড এবং ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার ইত্যাদি।
জন্ডিসের ঘরোয়া চিকিৎসা
অধিকাংশ জন্ডিস আক্রান্তরাই ঘরোয়া উপায়ে এর চিকিৎসা নিতে চেষ্টা করে। নিম্নোক্ত ঘরোয়া টোটকা গুলো ব্যবহার করে সাধারণ জন্ডিস থেকে মুক্তি পেতে পারেন:
টমেটোর রস: টমেটোর রসের সাথে লবণ এবং গোলমরিচ মিশিয়ে পান করুন। এটি জন্ডিসের জন্য উপকারী।
লেবুর রস: দিনে ৩-৪ বার লেবুর রস পানিতে মিশিয়ে পান করুন। এতে লিভার কোষের সুরক্ষা বৃদ্ধি পায় এবং জন্ডিস দূর হয়।
আঁখের রস: জন্ডিস আক্রান্ত দিনে কয়েকবার আঁখের রস পান করলে, খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠে।
পেঁয়াজ: পেঁয়াজ জন্ডিসের জন্য উপকারী। লেবুর রসের সাথে পেঁয়াজের রস, লবণ এবং গোলমরিচ মিশিয়ে পান করলে দ্রুত জন্ডিস ভালো হয়।
সবুজ শাকসবজি ও ফল খান: উপরে উল্লেখিত সবুজ শাকসবজি ও ফলগুলো নিয়মিত খেলে দ্রুত জন্ডিস ভালো হয়।
মুলার পাতা: মুলার পাতা বেটে, তা থেকে রস সংগ্রহ করে নিয়মিত খেলে জন্ডিস ভালো হয় ও ক্ষুধামন্দা দূর হয়।
সূর্যের আলো: জন্ডিস থেকে রক্ষা পেতে সকালের সূর্যের আলো খুবই উপকারী। এতে ভিটামিন ডি থাকে যা আমাদের দেহের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডকে গতিসম্পন্ন করে।
আরও পড়ুন: নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায়
জন্ডিসের প্রতিরোধ গড়ে তোলার উপায়
জন্ডিস হওয়ার পর প্রতিকার করার চেয়ে হওয়ার আগে তা প্রতিরোধ করাই উত্তম। জন্ডিস প্রতিরোধ করতে নিম্নোক্ত সতর্কতা গুলো অবলম্বন করুন:
- শিশুকে হেপাটাইটিস বি এর ভ্যাকসিন দিন।
- সকল বয়সেই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
- উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করুন।
- জন্ডিসের ঝুঁকি কমায় এমন খাবার বেশি খান। একইভাবে জন্ডিসের ঝুঁকি বাড়ায় এমন খাবার পরিহার করুন।
- প্রতিদিন কমপক্ষে ২.৫ কাপ সবজি এবং ২ কাপ ফল খান।
- অস্বাস্থ্যকর ও দূষিত খাবার পরিহার করুন এবং ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন।
- নিরাপদ পদ্ধতিতে যৌন মিলন করুন।
- পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন এবং স্বাস্থ্যকর জীবন পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
সর্বদা সচেতন থাকলে জন্ডিসসহ সব ধরনের রোগ-ব্যাধি থেকেই মুক্ত থাকা সম্ভব।
শেষকথা
জন্ডিস মানবদেহের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাধি। দীর্ঘস্থায়ী জন্ডিসের ফলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই প্রাথমিক অবস্থাতেই সাধারণ খাদ্যতালিকা ও জীবনের অবস্থা অনুসরণের মাধ্যমে এর থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।