যেকোনো আধুনিক প্রযুক্তি এবং কম্পিউটিং সিস্টেমের ডিজিটাল সার্কিটের কার্যপদ্ধতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ লজিক গেইট (Logic Gate)। আমাদের জানা অজানায়, প্রায় সকল ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্সে Logic Gate এর প্রয়োগ রয়েছে। লজিক গেইট কাকে বলে এবং এর বৈশিষ্ট্যসমূহ জানলেই দৈনন্দিন ব্যবহার্য বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইসের কার্যপদ্ধতি স্পষ্টভাবে জানা যাবে।
লজিক গেইট ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্সের মেরুদণ্ড গঠন করে এবং বাইনারি তথ্যের প্রক্রিয়াকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কম্পিউটার সায়েন্সের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইসের কাজ করার প্রক্রিয়াকে লজিক গেইট নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই লজিক গেইট কাকে বলে, এর প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন এই লেখা থেকে।
লজিক গেইট কি? (What is a Logic Gate)
লজিক গেইট হলো এক ধরনের ডিজিটাল ইলেকট্রনিক সার্কিট। বুলিয়ান বীজগনিতের মৌলিক কাজগুলো সম্পাদনার জন্য যে ডিজিটাল ইলেকট্রনিক বর্তনী ব্যবহার করা হয়, তা-ই লজিক গেইট।
এটি বুলিয়ান অ্যালজেবরা ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকার যৌক্তিক অপারেশন সম্পাদনা করে থাকে। তাই বলা যায়, যে সকল ডিজিটাল সার্কিট যুক্তিমূলক সিগন্যালের প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, সেই সার্কিট গুলোকেই লজিক গেইট বলে। আধুনিক ইলেকট্রনিক্সের মৌলিক কর্মকাণ্ডে লজিক গেইট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ার একটি।
লজিক গেইটের বৈশিষ্ট্য
সাধারণত সকল প্রকার জটিল ডিজিটাল সিস্টেমই লজিক গেইট গুলোর সংমিশ্রণে গঠিত হয়। লজিক গেইটের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন:
- লজিক গেইট গুলো AND, OR ও NOT গেইটের মতো যৌক্তিক অপারেশনগুলো সম্পাদনা করে বিভিন্ন প্রকার ডিজিটাল সংকেত গুলোকে প্রক্রিয়াকরণ করে।
- লজিক গেইটগুলো একটি আউটপুট সিগন্যাল তৈরি করতে, ইনপুট সিগন্যালে বুলিয়ান অপারেশন হিসেবে AND, OR ও NOT গেইটের ব্যবহার করে।
- লজিক গেইটগুলোতে সিগন্যাল গ্রহণের জন্য এক বা একাধিক ইনপুট টার্মিনাল থাকে। একইসাথে বুলিয়ান অপারেশনের ফলাফল তৈরি করতে ১টি আউটপুট টার্মিনাল থাকে।
- এই গেইটগুলো জটিল সার্কিট তৈরি করতে আন্তঃসংযোগ স্থাপন করতে পারে।
- লজিক গেইট গুলো কম্পিউটার চিপের মতো ডিভাইসে ব্যবহার করা যায়।
- এটি আধুনিক ইলেকট্রনিক্সে ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত। কারণ, লজিক গেইটগুলো উচ্চ গতিসম্পন্ন হয়।
- এগুলো শক্তির খরচ হ্রাস করে। তাই ব্যাটারি চালিত ডিভাইস গুলোতে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।
- লজিক গেইট গুলো অত্যন্ত নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য হয়।
লজিক গেইট এর প্রকারভেদ
ব্যবহারিক অপারেশনের উপর ভিত্তি করে লজিক গেইট কিছু ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। বীজগনিতের মৌলিক কাজগুলো বাস্তবায়নের জন্যই মূলত ডিজিটাল ইলেকট্রনিক সার্কিট হিসেবে লজিক গেইটগুলো তৈরি করা হয়েছে। বুলিয়ান অ্যালজেবরায় গাণিতিক অপারেশনগুলো মূলত ৩ টি গাণিতিক পদ্ধতিতে সম্পাদন করা হয়। যথা: পূরক, যোগ ও গুণ।
এই তিনটি গাণিতিক পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে, ডিজিটাল সিস্টেমে অপারেশন সম্পাদনে ব্যবহৃত লজিক গেইট গুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা:
- মৌলিক গেট (Basic Gate);
- যৌগিক গেট (Compound Gate)।
এই প্রধান দুইটি ভাগের অভ্যন্তরে আরো কিছু ভাগ রয়েছে। নিচে মৌলিক গেইট ও যৌগিক গেইট এবং অন্যান্য উপ-গেইট গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো:
মৌলিক গেইট (Basic Gate)
যে সকল লজিক গেইট বুলিয়ান বীজগণিতের মৌলিক কার্যকলাপগুলো সম্পাদনা করে সেগুলোই মৌলিক গেইট বলে।
প্রতিটি মৌলিক গেইটের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে এবং এই গেইটগুলো গঠিত হতে অন্য কোন গেইটের সমন্বয় প্রয়োজন হয় না। স্বতন্ত্র কার্যক্রম হওয়ার ফলেই এগুলোকে মৌলিক গেইট বলা হয়। একটি মৌলিক গেইট দ্বারা সকল প্রকার লজিক বর্তনী তৈরি করা সম্ভব। বুলিয়ান অ্যালজেবরায় ৩ ধরনের লজিক অপারেশনের জন্য ডিজিটাল বর্তনীতে ৩টি মৌলিক গেইট ব্যবহার করা হয়। যথা:
- OR Gate
- AND Gate
- NOT Gate
এখানে, OR Gate -কে যৌক্তিক যোগের জন্য, AND Gate -কে যৌক্তিক গুণের জন্য এবং NOT Gate -কে যৌক্তিক পূরকের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
যৌগিক গেইট (Compound Gate)
যৌগিক গেইট মূলত কোন একক গেইট নয়। যখন দুই বা ততোধিক মৌলিক গেইটের সাহায্যে একটি গেইট তৈরি করা হয়, তাকে যৌগিক গেট বা Compound Gate বলে। একটি যৌগিক লজিক গেইট কিছু মৌলিক গেইটের উপর নির্ভরশীল।
যৌগিক গেইটকে আবার ব্যবহারিক ও প্রয়োগিক বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ২টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
- বিশেষ গেইট (Special Gate);
- সার্বজনীন গেইট (Universal Gate)।
(১) সার্বজনীন গেইট (Universal Gate)
যে সকল গেইট ব্যবহার করে মৌলিক গেইট সহ অন্যান্য সকল প্রকার গেইট গঠন, বাস্তবায়ন ও সম্পাদনা করা যায় সেগুলোকে সর্বজনীন গেইট বা Universal Gate বলে। সার্বজনীন গেইট প্রধানত ২টি। যথা:
- NAND Gate (ন্যান্ড গেইট)
- NOR Gate (নর গেইট)
(২) বিশেষ গেইট (Special Gate)
বুলিয়ান অ্যালজেবরায় যে সকল গেইট বিশেষ বিশেষ অপারেশনের জন্য ডিজিটাল বর্তনীতে ব্যবহার করা হয়, সেগুলোকে বিশেষ গেইট বা Special Gate বলে। বিশেষ গেইট ২টি। যথা:
- X-OR Gate (এক্সঅর গেইট);
- X-NOR Gate (এক্সনর গেইট)।
বুলিয়ান অ্যালজেবরা কি?
মূলত লজিক গেইট কিছু বুলিয়ান অ্যালজেবরা নিয়েই কাজ করে। তাই বুলিয়ান অ্যালজেবরা সম্পর্কে সামগ্রিক তথ্য জানাও গুরুত্বপূর্ণ।
গণিতের যে শাখা যৌক্তিক চলক ব্যবহার করে গঠিত হয়, সেগুলোকে বুলিয়ান বীজগণিত বা বুলিয়ান অ্যালজেবরা বলা হয়। কোন লজিক গেইটের সত্য/ মিথ্যা, এই ২টি স্তরের উপর ভিত্তি করেই বুলিয়ান বীজগণিত তৈরি করা হয়েছে।
এই বুলিয়ান বীজগণিতে ব্যবহৃত প্রতিটি চালকের মান 0 অথবা 1 হয়ে থাকে। কোন একটি লজিক বর্তনীর উচ্চ স্তরের ভোল্টেজকে 1 এবং নিম্ন স্তরের ভোল্টেজকে 0 হিসেবে প্রকাশ করা হয়। বুলিয়ান বীজগণিত ব্যবহৃত প্রতিটি চলকের দুটি ভিন্ন মান থাকায় এটি দশমিক বীজগণিতের তুলনায় অনেকটা সহজ পদ্ধতি। এখানে কোন প্রকার লগারিদম, বর্গ, ভগ্নাংশ, ঋণাত্মক সংখ্যা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় না।
যখন থেকে কম্পিউটারে বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার শুরু হয়, তখন বুলিয়ান অ্যালজেবরার সত্য ও মিথ্যাকে স্তরকে যথাক্রমে বাইনারির 1 এবং 0 দ্বারা পরিবর্তন করে নেয়। এর ফলে কম্পিউটারের সকল গাণিতিক সমস্যা বুলিয়ান অ্যালজেবরার সাহায্যে করা সম্ভব হয়ে উঠেছে।
বুলিয়ান অ্যালজেবরার বৈশিষ্ট্য
বুলিয়ান বীজগণিতের নিজস্ব কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এগুলো হলো:
- বুলিয়ান বীজগণিতে ব্যবহৃত প্রতিটি চলকের মান 0 অথবা 1 হয়ে থাকে।
- এখানে শুধুমাত্র 0 ও 1 প্রতীক ব্যবহার করা যায়।
- শুধুমাত্র দুইটি চলক নিয়ে কাজ করায় এটি সম্পাদনা করা সহজ হয়।
- বুলিয়ান অ্যালজেবরাতে জ্যামিতি ও ত্রিকোণমিতির সূত্র প্রয়োগ করা যায় না।
- বুলিয়ান অ্যালজেবরা যোগ ও গুণের কাজ করার জন্য গণিত ও যুক্তির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে।
- শুধুমাত্র ডিজিটাল ডিভাইসে বুলিয়ান অ্যালজেবরার সূত্র প্রমাণ এবং সম্পাদনা করা যায়।
- আধুনিক প্রয়োজনীয়তা সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়ে বুলিয়ান অ্যালজেবরার ইনপুট ও আউটপুটে 0 ও 1 -কে A ও B ব্যবহার করা হয়।
- কম্পিউটারের ইনপুট ও আউটপুটে 0 ও 1 এর মধ্যে যেকোনো একটিকে পাওয়া যায়।
বুলিয়ান বীজগণিতের মৌলিক যুক্তিমূলক অপারেশন সমূহ
যৌক্তিক চলকের ক্ষেত্রে বুলিয়ান অ্যালজেবরায় ৩ ধরনের অপারেশন হয়ে থাকে, তা লজিক গেইট কিছু ভিন্ন প্রক্রিয়ায় সম্পাদন করে। এই ৩ প্রকার অপারেশন গুলো হলো:
- অর (OR);
- এ্যান্ড (AND);
- নট (NOT)।
OR ও AND অপারেশনে এক বা একাধিক চলকের সমন্বয়ে কাজ করে। অন্যদিকে NOT অপারেশনে শুধুমাত্র একটি চলক নিয়েই কাজ করা হয়। যৌক্তিক কার্যক্রম সম্পর্কিত হওয়া এগুলোকে যুক্তিমূলক অপারেশন বলা হয়। নিচে বুলিয়ান অ্যালজেবরার OR, AND এবং NOT অপারেশন গুলোর বিস্তারিত প্রক্রিয়া তুলে ধরা হলো:
অর অপারেশন (OR Operation)
অর অপারেশনের ক্ষেত্রে ২টি বুলিয় চলক A ও B -কে OR করলে, OR অপারেশনের প্রাপ্ত রাশির মান সত্য হবে। অন্যদিকে, A ও B উভয়ের মান মিথ্যা হলে, অর অপারেশনে প্রাপ্ত রাশির মান মিথ্যা দেখাবে। ২ টিরও বেশি চলকের ক্ষেত্রে যেকোনো একটি চলক সত্য হলে OR অপারেশনের মান সত্য হয় এবং ফলাফল মিথ্যা হতে হলে সবগুলো চলকের মানও মিথ্যা হতে হয়।
OR অপারেশনকে মাঝে মাঝে যুক্তিমূলক যোগও বলা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে + চিহ্ন দিয়ে OR অপারেশন নির্দেশ করা হয়। যুক্তিমূলক যোগে A OR B -কে A + B রূপে লেখা হয়। তবে সাধারণ যোগ চিহ্ন দিয়ে প্রকাশ করা হলেও যুক্তিমূলক যোগ প্রচলিত বীজগাণিতিক যোগের মতো নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে OR -কে v চিহ্ন দিয়ে প্রকাশ করতেও দেখা যায়।
এ্যান্ড অপারেশন (AND Operation)
এ্যান্ড অপারেশনের ক্ষেত্রে, ২টি বুলিয় চলক A ও B কে AND করলে এবং যদি A ও B এর উভয়ের মান সত্য হয়, তাহলে AND অপারেশনে প্রাপ্ত রাশির মান সত্য হবে। A ও B এর মধ্যে যেকোনো একটির মান মিথ্যা হলেও AND অপারেশনের প্রাপ্ত রাশির মান মিথ্যা দেখাবে।
২ টিরও বেশি চলকের ক্ষেত্রে অপারেশন ব্যবহৃত সকল চলক সত্য হলে AND অপারেশনের প্রাপ্ত রাশির মান সত্য হয়। যেকোনো একটি চলকের মান মিথ্যা হলেই ফলাফলে প্রাপ্তর রাশির মান মিথ্যা দেখাবে।
AND অপারেশনকে যুক্তিমূলক গুণও বলা হয়ে থাকে। তখন স্টার (*) চিহ্ন দিয়ে AND অপারেশনের নির্দেশ করা হয়। সেক্ষেত্রে A এ্যান্ড B -কে A * B রূপে লেখা হয়। AND অপারেশনকে- ^ চিহ্ন দিয়েও প্রকাশ করা হয়।
নট অপারেশন (NOT Operation)
নট অপারেশনের ক্ষেত্রে, শুধুমাত্র একটি চলকের ব্যবহার করেই কাজ করা হয়। এক্ষেত্রে চলকের মিথ্যা মানকে NOT করলে প্রাপ্ত রাশির মান সত্য হয়। আবার, চলকের সত্য মানকে NOT করলে প্রাপ্ত রাশির মান মিথ্যা হয়।
নট অপারেশনকে প্রকাশ করার জন্য চলকের উপরে বার চিহ্ন (Ā) দিয়ে অথবা চলকের পাশে প্রাইম (A’) চিহ্ন দিয়ে প্রকাশ করা হয়। শুধুমাত্র ~ চিহ্ন দিয়েও NOT অপারেশনকে প্রকাশ করা যায়। যেমন: (A ~ B)।
লজিক গেইট কিভাবে কাজ করে | বিভিন্ন প্রকার লজিক গেইটের কার্যপদ্ধতি
উপরোক্ত লজিক গেইটের প্রকারভেদ থেকে মৌলিক ও যৌগিক গেইটের সর্বমোট ৭টি উপ-গেইট সম্পর্কে উল্লেখিত রয়েছে। প্রতিটি উপ-গেইটেরই আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য, কার্যপদ্ধতি ও ব্যবহারিক বিস্তৃত রয়েছে। নিচে বিভিন্ন প্রকার লজিক গেইটের বিস্তারিত তথ্যাবলী তুলে ধরা হলো:
অর গেইট (OR Gate)
OR লজিক গেইট কিছু বুলিয়ান অ্যালজেবরার OR অপারেশন বাস্তবায়নের জন্য যে গেইট ব্যবহার করা হয়, এটিকে একটি অর গেইট বলা হয়। OR গেইটকে যৌক্তিক যোগের গেইটও বলা হয়ে থাকে।
ব্যবহারিক ভাষায় বলতে গেলে, যে ডিজিটাল ইলেকট্রনিক সার্কিটে দুই বা ততোধিক চলকের ইনপুট দিয়ে একটি মাত্র আউটপুট পাওয়া যায় এবং আউটপুটের প্রাপ্ত ফলাফলটি ইনপুট গুলোর যৌক্তিক যোগের সমান হয়, তাকে অর গেইট (OR Gate) বলে।
উদাহরণস্বরূপ, A ও B দুইটি ইনপুট চলক প্রদান করলে, বুলিয়ান অ্যালজেবরার অর গেইটের মাধ্যমে প্রাপ্ত আউটপুট হবে, ক = A OR B; = A + B।
নিচে একটি OR লজিক গেইটের প্রতীক, বুলিয়ান সূত্র এবং সত্যক সারণি উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরা হলো:
Input | Output | |
A | B | Y = A + B |
0 | 0 | 0 |
0 | 1 | 1 |
1 | 0 | 1 |
1 | 1 | 1 |
এ্যান্ড গেইট (AND Gate)
বুলিয় বীজগণিতের AND অপারেশন বাস্তবায়নের জন্য AND গেইট ব্যবহৃত হয়। AND গেইটকে যৌক্তিক গুনের গেইটও বলা হয়ে থাকে।
ব্যবহারিক ভাষায় বলতে গেলে, যে ডিজিটাল ইলেকট্রনিক সার্কিটে দুই বা ততোধিক চলকের ইনপুট দিয়ে একটি মাত্র আউটপুট পাওয়া যায় এবং আউটপুটটি ইনপুট চলক গুলোর যৌক্তিক গুণের সমান হয়, তাকে এ্যান্ড গেইট (AND Gate) বলে।
নিচে একটি AND লজিক গেইটের প্রতীক, বুলিয়ান সূত্র এবং সত্যক সারণি উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরা হলো:
Input | Output | |
A | B | Y = A ∙ B |
0 | 0 | 0 |
0 | 1 | 0 |
1 | 0 | 0 |
1 | 1 | 1 |
নট গেইট (NOT Gate)
NOT লজিক গেইট কিছু বুলিয় বীজগণিতের NOT অপারেশন বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহৃত হয়। একে ইনভার্টার (Inverter) গেইটও বলা হয়ে থাকে।
ব্যবহারিক ভাষায় বলতে গেলে, যে ডিজিটাল ইলেকট্রনিক সার্কিটে একটি ইনপুট দিয়ে একটি আউটপুট পাওয়া যায় এবং আউটপুটের প্রাপ্ত ফলাফলটি ইনপুট চলক গুলোর পরিপূরকের সমান হয়, তাকে নট গেইট (NOT Gate) বলে। নট গেইট মূলত একটি সুইচ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
নিচে A ইনপুট বিশিষ্ট NOT লজিক গেইটের প্রতীক, বুলিয়ান সূত্র এবং সত্যক সারণি উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরা হলো:
Input | Output |
A | Y = |
0 | 1 |
1 | 0 |
ন্যান্ড গেইট (Nand Gate)
বুলিয়ান অ্যালজেবরায় এ্যান্ড গেইট ও নট গেইট -এর সমন্বয়ে ন্যান্ড গেইট তৈরি হয়। ব্যবহারিক ভাষায়, যেসকল ডিজিটাল ইলেকট্রনিক সার্কিটে দুই বা ততোধিক চলকের ইনপুট দিয়ে একটি মাত্র আউটপুট পাওয়া যায়, যেখানে কোনো একটি ইনপুট এর মান ০ হলে আউটপুট ১ হবে এবং যখন সবগুলো ইনপুট ১ হবে তখনই আউটপুট ০ হয়, সেগুলোকে ন্যান্ড গেইট (Nand Gate) বলে।
AND গেইট-এর আউটপুটকে নট গেইট দিয়ে প্রবাহিত করলে যে আউটপুট পাওয়া যায়, মূলত সেটি একটি Nand গেইট। Nand গেইটটি যৌক্তিক গুণের বিপরীত গেইট।
নিচে A ও B দুটি ইনপুট বিশিষ্ট Nand লজিক গেইটের প্রতীক, বুলিয়ান সূত্র এবং সত্যক সারণি উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরা হলো:
Input | Output | ||
A | B | A ∙ B | |
0 | 0 | 0 | 1 |
0 | 1 | 0 | 1 |
1 | 0 | 0 | 1 |
1 | 1 | 1 | 0 |
নর গেইট (NOR Gate)
বুলিয়ান অ্যালজেবরায় অর গেইট ও নট গেইট -এর সমন্বয়ে নর গেইট তৈরি হয়। ব্যবহারিক ভাষায়, যে ডিজিটাল ইলেকট্রনিক সার্কিটে দুই বা ততোধিক চলকের ইনপুট দিয়ে একটি মাত্র আউটপুট পাওয়া যায়, যেখানে কোনো একটি ইনপুটের মান ১ হলেই আউটপুট ০ হবে এবং বিপরীতে সবগুলো ইনপুট ০ হলে আউটপুট ১ হবে, তাকে নর গেইট (NOR Gate) বলে। অর গেইট -এর আউটপুটকে নট গেইট -এর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত করে নর গেইট তৈরি করা হয়।
নিচে A ও B দুটি ইনপুট বিশিষ্ট NOR লজিক গেইটের প্রতীক, বুলিয়ান সূত্র এবং সত্যক সারণি উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরা হলো:
Input | Output | ||
A | B | A ∙ B | |
0 | 0 | 0 | 1 |
0 | 1 | 1 | 0 |
1 | 0 | 1 | 0 |
1 | 1 | 1 | 0 |
এক্সঅর গেইট (XOR Gate)
এক্সঅর লজিক গেইট কিছুটা অর গেইটের মতোই কার্যপদ্ধতি অনুসরণ করে। তবে, পার্থক্য হলো: XOR গেইটের ইনপুটে জোড় সংখ্যক ১ থাকলে আউটপুট ০ হয়, আর বিজোড় সংখ্যক ১ থাকলে আউটপুট ১ হয়।
ব্যবহারিক ভাষায়, যে ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স সার্কিটে দুই বা ততোধিক ইনপুট এর মধ্যে বিজোড় সংখ্যক ১ ইনপুট-এর জন্য আউটপুট ১ হয় এবং জোড় সংখ্যক ১ ইনপুট এর জন্য আউটপুট ০ হবে তাকে এক্সঅর বলে। এক্সঅর গেইট একীভূত সার্কিট আকারে পাওয়া যায়। মূলত XOR গেইটের ব্যবহার করা হয় বাইনারি যোগ ও দুটি বিটের অবস্থা তুলনা করার জন্য। A ও B দুটি ইনপুট হলে আউটপুট হবে, Y = A ⊕ B = AB + AB।
নিচে একটি XOR লজিক গেইটের প্রতীক, বুলিয়ান সূত্র এবং সত্যক সারণি উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরা হলো:
Input | Output | |
A | B | Y = A ⊕ B |
0 | 0 | 0 |
0 | 1 | 1 |
1 | 0 | 1 |
1 | 1 | 0 |
এক্সনর গেইট (XNOR Gate)
যে ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স সার্কিটে দুই বা ততোধিক ইনপুটের মধ্যে বিজোড় সংখ্যক ১ ইনপুটের জন্য আউটপুট ০ হয় এবং জোড় সংখ্যক ১ ইনপুটের জন্য আউটপুট ১ হয়, তাকে এক্সনর গেইট (XNOR Gate) বলে। এক্সঅর গেইটের আউটপুটে অতিরিক্ত একটি নট গেইট সংযুক্ত করে XNOR গেইট তৈরি করা যায়।
আরো পড়ুন: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এর সামগ্রিক তথ্য ও সাধারণ জ্ঞান
দুটি বিটের অবস্থা তুলনা করার জন্য XNOR গেইট ব্যবহার করা হয়। এর পূর্ণরূপ হচ্ছে এক্সক্লুসিভ নর (Exclusive NOR) গেইট। মৌলিক গেইট অর, এ্যান্ড এবং নট গেইট দিয়ে এটি তৈরি করা যায়। এক্সঅর গেইটের যে আউটপুট হয় এক্সনর গেইট তার বিপরীত আউটপুট হয়।
নিচে A ও B দুটি ইনপুট বিশিষ্ট XNOR লজিক গেইটের প্রতীক, বুলিয়ান সূত্র এবং সত্যক সারণি উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরা হলো:
Input | Output | |
A | B | Y = A B |
0 | 0 | 1 |
0 | 1 | 0 |
1 | 0 | 0 |
1 | 1 | 1 |
লজিক গেইটের প্রয়োগ
লজিক গেইট ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্সের মূল ভিত্তি। বর্তমান আধুনিক যুগে আমাদের দৈনন্দিন বহু প্রয়োজনতার সাথে লজিক গেইটের ব্যবহার জড়িত রয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে লজিক গেইট কিছুটা বহুমুখীভাবে ব্যবহার রয়েছে। ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স এবং কম্পিউটার সায়েন্সে লজিক গেইটের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি।
সাধারণত লজিক গেটের সবচেয়ে প্রয়োগিক ক্ষেত্র হচ্ছে বুলিয়ান অ্যালজেবরা বা বীজগণিত। এছাড়াও এটি আরো যেসকল ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, সেগুলো হলো:
- কন্ট্রোল সার্কিটগুলোর ডিজিটাল সিস্টেমে গাণিতিক ক্রিয়াকলাপ সম্পাদনায় ব্যবহৃত হয়।
- মাইক্রোপ্রসেসর তৈরিতে ব্যাপক পরিমাণ লজিক গেইট ব্যবহৃত হয়।
- অ্যারেথমেটিক সার্কিটে যোগকারী ও বিয়োগকারি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- ডিজিটাল পদ্ধতিতে ডাটা সংরক্ষণ করতে মেমোরি সার্কিটে লজিক গেইটের প্রয়োগ রয়েছে।
- কমিউনিকেশন সার্কিটে ডিজিটাল কার্যক্রম সম্পাদনায় ব্যবহৃত হয়। এনকোডার এবং ডিকোডারের মত যোগাযোগ সার্কিট তৈরিতে লজিক গেইটের ব্যাপক প্রয়োগ রয়েছে।
- টাইমার বা কাউন্টারের মতো নিয়ন্ত্রণ সার্কিট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
এছাড়াও বর্তমানে ডিজিটাল যুগে লজিক গেইটের প্রয়োগ সর্বত্রই কম-বেশি লক্ষ্য করা যায়।
শেষকথা
উপরোক্ত আলোচনা থেকে লজিক গেইট কি, এর প্রকারভেদ বৈশিষ্ট্য ও প্রয়োগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়। লজিক গেইট ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্সের অন্যতম মৌলিক উপাদান। আমাদের সকলের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত ডিজিটাল ডিভাইসের কার্যপ্রক্রিয়া সকলকে সঠিক ধারণা পেতে লজিক গেট সম্পর্কে বিস্তারিত জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।