নখ সুন্দর করার উপায়

নখ সুন্দর করার উপায় এবং ঘরোয়াভাবে নখের পরিচর্যা 

নখ হাত ও পায়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। তাই সুন্দর লাইফস্টাইলের জন্য নখের সৌন্দর্য রক্ষা করাও অপরিহার্য। সুন্দর, আকর্ষণীয় নখ অনেকেরই আগ্রহের বিষয়ও। তবে আকর্ষণীয় নোট পেতে নখ সুন্দর করার উপায় মেনে চলা এবং ঘরোয়াভাবে নখের পরিচর্যা গুরুত্বপূর্ণ।

মানুষের চালচলনের নানা বিষয়ে জরিপ করার মাধ্যমে জানা যায় যে, মানুষ প্রথম দেখাতে সামনের জনের যে কয়টি বিষয়ে লক্ষ করে তার মধ্যে নখ অন্যতম। এই নখের সৌন্দর্য আমাদের ব্যক্তিত্ত্বের উপরেও বিশেষভাবে প্রভাব ফেলে। অনেকেই নখ সাদা করার উপায়, নখ দ্রুত বড় করার উপায়, সুন্নতি পদ্ধতিতে নখ কাটার নিয়ম, নখের পরিচর্যা সম্পর্কে জানতে চায়। তাই চাহিদা সম্পন্ন তথ্যের উপর ভিত্তি করে, নখ সুন্দর করার উপায় এবং ঘরোয়াভাবে নখের পরিচর্যা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে এই লেখাতে।

ঘরোয়াভাবে হাত ও পায়ের নখ সুন্দর করার উপায়

নখ সুন্দর রাখতে আমরা বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করতে পারি। অনেকে নখ সুন্দর রাখতে বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করে। কিন্তু সকলের পক্ষে তা সম্ভব না। তাছাড়া কেমিক্যাল জাতীয় দ্রব্য নখে ব্যবহার করলেও দেহে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই হাত ও পায়ের নখ সুন্দর করার জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে। এগুলো হলো:

(১) লেবুর রস ও বেসন

নখকে সুন্দর করতে চাইলে নখের আশেপাশে থাকা বিভিন্ন দাগ, ছোপ ও হলদেটে ভাব দূর করতে হয়। এর জন্য কার্যকর উপায় হলো লেবুর রস ও বেসনের পেস্ট। কয়েক ফোটা লেবুর রস ও পরিমান মতো অল্প একটু বেসন নিয়ে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। তারপর নখে মাখুন। ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন। এভাবে অল্প সময়েই নখে পরিবর্তন লক্ষ করতে পারবেন। 

(২) বেকিং সোডা

বেকিং সোডা নখের স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করলে নখের সকল দাগ দূর হয় ও নখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। এটিকে প্রাকৃতিক ব্লিচও বলা হয়। হালকা গরম পানি ও সোডা মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নখের চারপাশে মাখুন। তারপর ২ মিনিট অপেক্ষা করে পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এতে নখের যাবতীয় জীবানু ও দাগ দূর হয়ে নখের সৌন্দর্য্য পরিলক্ষিত হবে।

(৩) টুথপেস্ট

টুথপেস্ট দাতের জন্য যেমন উপকারী, তেমনি নখে ব্যবহার করেও ভালো ফল পাওয়া যায়৷ একটি ব্রাশে কিছুটা টুথপেষ্ট নিয়ে নখের উপর হালকাভাবে কিছুক্ষন মাজুন এবং নখের চারপাশে লাগান। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। দেখুন আপনার নখ আগের থেকে ঝকঝকে ও আকর্ষণীয় দেখাচ্ছে। নিয়মিত কয়েকদিন ব্যবহার করলে নখ থেকে হলদে ভাব ও অন্যান্য দাগ দূর হয়ে যাবে।

(৪) কমলালেবুর রস 

কমলালেবুর রস হাতের ও পায়ের নখ সুন্দর করার জন্য খুবই কার্যকরী একটি উপায়। এটি ভিটামিন-সি দ্বারা ভরপুর একটি ফল। নখের বৃদ্ধিতে কোলাজেন নামক উপাদান কাজ করে থাকে। কমলালেবু সেই কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে। এছাড়াও কমলালেবুর এন্টি-অক্সিডেন্ট গুন নখের সংক্রমন থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত ১০ মিনিট করে কমলালেবুর রসে নখ ভিজিয়ে রাখলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। 

(৫) অলিভ অয়েল

অলিভ অয়েল শরীরের ত্বক, চুল ও নখের জন্য অনেক উপকারি। এটি নখে ব্যবহার করলে নখের গোড়ায় পৌঁছে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। এতে নখ তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পায় ও মজবুত হয়। ঘুমানোর পূর্বে অলিভ অয়েল হালকা গরম করে নখ এবং কিউটিক্যালে ম্যাসেজ করে সারারাত রেখে সকালে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে অল্প কিছুদিন ব্যবহারেই নখের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।

(৬) নারিকেল তেল

নারিকেল তেল চুল, ত্বক ও নখের জন্যও অনেকটাই উপকারী। নারিকেল তেলে থাকা ভিটামিন ডি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট নখের পুষ্টি জোগায় ও নখকে মজবুত করে তোলে। পাশাপাশি নখের ময়েশ্চারাইজিং এর জন্যও নারিকেল তেল কার্যকর। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর পূর্বে নারিকেল তেল হাতের ও পায়ের নখে মেখে নিন এবং সকালে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে নখ কোমল ও সুন্দর হওয়ার পাশাপাশি নখ মজবুত হয়।

(৭) মধুর ব্যবহার 

মধু নখকে সুন্দর ও কোমল রাখে। পাশাপাশি নখ ও পাশের কিউটিক্যাল কে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক থেকে মুক্ত রেখে নখের উন্নতি করে। শুধু মধু ব্যবহার করেও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তবে দ্রুত ফলাফল পেতে কয়েক ফোটা লেবুর রস এই মধুর সাথে মিশিয়ে নখে ম্যাসাজ করতে পারেন। তারপর ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন। এভাবে নিয়মিত করলে নখ মজবুত, জীবানুমুক্ত ও সুন্দর হয়।

উপরোক্ত উপায়গুলোর মাধ্যমেই আপনার হাতের ও পায়ের নখ সুন্দর রাখতে পারবেন।

নখের যত্নে যা যা করতে হবে 

যেহেতু না আমাদের দেহেরই একটি অংশ, তাই আমাদের জীবনব্যবস্থা নখের সৌন্দর্য্যে প্রভাব ফেলে। তাই স্বাভাবিকভাবে সর্বদা নখের স্বাস্থ্য রক্ষায় নিচের বিষয়গুলো মেনে চলতে পারেন:

  • নখে অযথা ঘর্ষণ কিংবা চাপ যেন না পড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
  • পুষ্টিকর খাবার যেমন- ভিটামিন, প্রোটিন, আয়রন, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম, রঙিন ফলমূল ও সবজি খান।
  • ঘুমানোর পূর্বে নখে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
  • নখ কাটার পূর্বে হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
  • ছোট ছোট করে নখ কাটুন এবং নেল কাটার ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে নখ কাটা থেকে বিরত থাকুন। 
  • নখের ভিতরে ময়লা জমতে দেওয়া যাবেনা।

পায়ের নখের কুনি ঔষধ

নখের রোগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত এবং পায়ের নখের কুনি। অধিকাংশ মানুষ এই সমস্যায় ভুগেন। কেউ কেউ অপারেশনের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে চায়। তবে নখ ভালো থাকলে এবং শুধু এর কুনির অংশে সমস্যা হলে, কিছু ঔষধের ব্যবহারেই সমাধান হয়ে যাবে।

প্রথমে আপনি নখের কুনি গুলো সম্ভব হলে কেটে ছোট করে ফেলুন। আর সম্ভব না হলে বাদ দিন। বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে এই রোগের ঔষধ স্বল্পমূল্যে কিনতে পারবেন। এর দুটি কার্যকরী ঔষধ হলো:

  • Hydrogen,peroxide 6%bp
  • Dermasim 

এছাড়াও আরও বহু ঔষধ রয়েছে। এখানে Hydrogen,peroxide 6%bp একটি এসিড। তুলার সাহায্যে নখে এই লিকুইডটি অল্প পরিমাণে দিলেই, নখের ভেতরের ময়লা নিজে নিজেই বেরিয়ে আসবে। তারপর Dermasim নামক লিকুইডটি নখের দুই পাশে এক ফোঁটা করে দিনে দুই বার ব্যাবহার করুন। কিছুদিন ব্যাবহার করলেই ভালো উপকার পাবেন। 

নখে চুলকানি থাকলে fermacy থেকে Alatrol tab বা flugal 50 tab খেতে পারেন। যদি নখের ভেতরে চুলকায়। আপনার নখের অবস্থা যদি খুবই বাজে হয়, তাহলে অপারেশন করা যেতে পারে। তবে প্রথম উপায়টি প্রয়োগ করে উপকার পেতে পারেন বলে আশা করা যায়।

নখ কাটার সুন্নত পদ্ধতি

প্রতিটি ভাল কাজেরই নির্দিষ্ট পদ্ধতি ও সুন্নত রয়েছে।

সপ্তাহে একবার (হাত পায়ের) নখ কাটা সুন্নত। এবং শুক্রবার জুমার নামাজে যাওয়ার আগে নখ কাটা সুন্নত। (শরহুস্ সুন্নাহ, হাদিস : ৩০৯০ ও ৩০৯১)

প্রতিটি ভালো কাজ ডান দিক থেকে করা সুন্নত। সে হিসেবে নখও ডান হাত ও ডান পা থেকে কাটা সুন্নত। আর কোন আঙ্গুল থেকে কাটা শুরু করবে, তা নিয়ে একটা বর্ণনা আমাদের সমাজে প্রচলিত। তবে এটা কোনো হাদিস ও সাহাবিদের আমলের মাধ্যমে প্রমাণিত নয়।

অনেক বুজুর্গ বলে থাকেন যে, উভয় হাত (মুনাজাতের আকৃতিতে ধরে) ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল থেকে আরম্ভ করে ধারাবাহিকভাবে বাম হাতের বৃ্দ্ধাঙ্গুলির নখ কেটে শেষ করা। অতঃপর সর্বশেষে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির নখ কাটা। (ফাতওয়ায়ে শামি, ৬/৪০৬; ফাতওয়ায়ে আলমগিরি, ৫/৩৫৮) 

অন্যদিকে, ডান পায়ের কনিষ্ঠাঙ্গুলি থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে বাম পায়ের কনিষ্ঠাঙ্গুলির নখ কেটে শেষ করা। তবে হাদিসে নখ কাটার বিষয়ে সরাসরি কোন বর্ণনা নেই। তাই সুন্নাত বলে আকিদা না রেখে, নিয়ম হিসেবে আমল করা ভালো।

আরো পড়ুন: প্রাকৃতিকভাবে চাপ দাড়ি গজানোর উপায়

নখের ময়লা দূর করে নখ সাদা করার উপায়

উপরোক্ত ঘরোয়াভাবে হাত ও পায়ের নখ সুন্দর করার উপায়গুলো থেকে পছন্দসই যেকোনো একটি উপায় অনুসরণ করলেই ঝকঝকে সুন্দর ও সাদা নখ পেতে পারেন। তাৎক্ষণিকভাবে নখ সাদা করতে, হালকা গরম পানিতে শ্যাম্পু মিশিয়ে কিছুক্ষন সেই মিশ্রনে নখ ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর নখের চারপাশের ময়লা ব্রাশ দিয়ে ঘষে ও কিউটিক্যালস পরিষ্কার করে নিলে নখের ময়লা দূর হয়ে পরিষ্কার দেখায়।

শেষকথা

সুষ্ঠু জীবনধারার অংশ হিসেবে নখ সুন্দর করার উপায় এবং ঘরোয়াভাবে নখের পরিচর্যা জেনে নখের যথাযথ যত্ন নিতে হবে সকলকেই। নখে ময়লা বা জীবনু জমে থাকলে, আমাদের নানারকম অসুখেরও কারণ হতে পারে। তাই রোগ-জীবাণমুক্ত, সাদা ও আকর্ষণীয় নখের জন্য উপরোক্তভাবে পরিচর্যা করতে পারেন।

About Durud Ahmed

সম্মানিত ভিজিটর আমি দুরুদ আহমেদ,পেশায় আমি একজন ব্লগ লেখক। প্রযুক্তি ও শিক্ষা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, লাইফস্টাইল এবং ইসলামিক লেখাই আমার প্রিয়। এই ব্লগের মাধ্যমে আমি সঠিক তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ভিজিটরদের সহযোগিতা করাই মূল লক্ষ্য।