ময়মনসিংহ বিভাগকে বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তবর্তী প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা একটি বিভাগ। ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনা নিয়ে গঠিত মাত্র চারটি জেলার এই ছোট বিভাগটি। নদীমাতৃক গ্রামাঞ্চল, ঐতিহাসিক স্থাপনা, পাহাড়ি বনাঞ্চল, উঁচু উঁচু টিলায় ভরা গ্রামাঞ্চল, ইকো পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন, হাওর-দীঘি, সবুজের সমারোহে ঘেরা সমতল ভূমি, আধুনিক পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র, শিশু পার্ক ও আধুনিক চিত্ত বিনোদনমূলক নান্দনিক পার্কে ভরা এই ময়মনসিংহ বিভাগ।
স্থানীয়দের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এমনকি বিদেশি পর্যটকদেরও আগমন হয় ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ দেখতে। এই বিভাগের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থানসমূহ এবং তাদের প্রাথমিক পরিচিতি সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন এই লেখা থেকে।
ময়মনসিংহ জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
ব্রহ্মপুত্র নদ (Brahmaputra River)
এশিয়া মহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ এবং বৃহৎ ব্রহ্মপুত্র নদটি কুড়িগ্রাম জেলা দিয়ে বাংলাদেশের প্রবেশ করে ময়মনসিংহ অঞ্চল দিয়ে মেঘনা নদীর সাথে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। উৎপত্তিস্থল থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণ ও বঙ্গোপসাগরে মিলিত হতে এই নদীটি প্রায় ২,৯০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে। ব্রহ্মপুত্র নদ হিমালয়ের কৈলাস পর্বতমালার কাছে জিমা ইয়ংজং হিমবাহ থেকে সৃষ্টি হয়ে সাং পো নামে তিব্বতের পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এটি ভারতের অরুণাচল প্রদেশে সিয়াম এবং আসামে দিহং নামে বয়ে যাবার সময় দিবং এবং লোহিত নামে আরও দুইটি বড় নদীর সাথে যুক্ত হয়েছে।
ময়মনসিংহের জেলা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের অভ্যন্তরীণ এবং দুই প্রান্তের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরূপ। নদীর তীর গুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে নানান পার্ক বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানা, বিনোদন কেন্দ্র, বোটানিক্যাল গার্ডেন ইত্যাদি। জেলা শহরের পাশে এই অংশটিতে দর্শনার্থীরা এসকল বিনোদন কেন্দ্র দর্শনের পাশাপাশি নদীতে নৌ ভ্রমণ এবং নদীতে চড়ে বনভোজনের সুযোগও পায়।
বিপিন পার্ক (Bipin Park)
বিপিন পার্ক ময়মনসিংহে অবস্থিত প্রায় ২০০ বছর পুরনো একটি ঐতিহ্যবাহী বিনোদন কেন্দ্র। এই বিনোদন কেন্দ্রটি ময়মনসিংহ জেলা শহরের কেন্দ্রস্তলে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত। দীর্ঘদিন ধরে নির্মিত হওয়ায় এই পার্কটির ভগ্নদশার সৃষ্টি হয়েছিল। কিছুকাল পূর্বে সেই ভগ্নদশার সংস্কার করে থিমপার্ক রূপে সীমিত পরিসরে জেলা শহরের কংগ্রেস জুবিলী রোডে পার্কটিকে পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে।
সংস্কার করার পর পার্কটিকে নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা, ফুলের বাগান, পায়ে হাঁটার পথ, মন মাতানো সৌন্দর্যের ঝর্ণা ও পার্কের সীমানা প্রাচীর। সব মিলিয়ে নতুন রূপের এই পার্কটি ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত।
বোটানিক্যাল গার্ডেন (Botanical Garden)
বোটানিক্যাল গার্ডেন ১৯৬৩ সালে ময়মনসিংহ জেলার পুরাতন বহ্মপুত্র নদীর তীরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রায় ২৫ একর জায়গা জুড়ে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদের সংগ্রহ নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই গার্ডেনটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বোটানিক গার্ডেনস কনজারভেশন ইন্টারন্যাশনাল (BGCI) কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বাংলাদেশের প্রথম বোটানিকাল গার্ডেন।
এখানে রয়েছে প্রায় ১,০০০টি বড় ১,২৭৮টি মাঝারি এবং ৪৪৬০ টি ছোট বৃক্ষসহ প্রায় ৬০০টি বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ। কাইজেলিয়া, সর্পগন্ধা, মিছরিদানা নীলকান্ত, পাটেনজাবা, পাহাড়ি কাশ, সুলতানচাপা, কালোমেঘ, আফ্রিকান টিউলিপ সহ নানান বিদেশি ও দুর্গম প্রজাতির বৃক্ষ। সবুজে ঢাকা শান্ত নিরিবিলি এই স্থানের অপার সৌন্দর্যের পরিবেশ দেশব্যাপী দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে বছরজুড়ে।
ময়না দ্বীপ (Myna Island)
ময়না দ্বীপ ময়মনসিংহ শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি ব্রহ্মপুত্র নদীতে জেগে ওঠা একটি ব-দ্বীপ। স্থানীয়দের কাছে এটি ময়নার চর নামেও পরিচিত। কথিত আছে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকর্মী ময়না মিয়া এখানে বসবাস করতেন। অবসর সময়ে গাছের তলায় বসে সুমধুর সুরে বাঁশি বাজিয়ে অনেককেই আকৃষ্ট করতেন ময়না মিয়া।
ভিন্নমতে, একসময় এখানে প্রচুর ময়না পাখির বসবাস ছিল। এভাবে লোকমুখে এই চরের নাম ময়না চর বা ময়না দ্বীপ হয়ে উঠে। সবুজে ঘেরা, কোলাহল মুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশের এই ময়না দ্বীপে হাজার হাজার বুনো হাঁসের ঝাঁক, পানকৌড়ি, বিভিন্ন শিকারি পাখি, সারিবদ্ধ নৌকা এবং স্থানীয়দের নদী কেন্দ্রিক জীবনধারার ঐতিহ্যবাহী সৌন্দর্য।
মেঘমাটি ভিলেজ রিসোর্ট (Meghmati Village Resort)
মেঘমাটি ভিলেজ রিসোর্ট ময়মনসিংহ জেলার ভালুকায় অবস্থিত গ্রামীণ পরিবেশ এবং সবুজ প্রকৃতির সমন্বয়ে গড়ে তোলা একটি রিসোর্ট। রিসোর্টের চারপাশে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার গাছপালা। রেজাল্টে চমৎকার সুইমিং পুল এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি ইনডোর এবং আউটডোর উভয় রকম খেলার সুব্যবস্থা রয়েছে। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য অবসর বা ছুটির সময় কাটাতে এই স্থানটি উপযুক্ত।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্ক (Shilpacharya Zainul Abedin Park)
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদন পার্ক ময়মনসিংহ জেলায় বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত। বাংলাদেশের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ঐতিহাসিক চিত্রকর্মগুলো সংরক্ষণ করে রাখতে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন মিউজিয়াম নির্মাণ করা হয়েছিল। সেই মিউজিয়াম এলাকায় বাঁধ দিয়ে নতুন আকর্ষণ ‘শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্ক’ নির্মিত হয়েছে।
জয়নুল আবেদীনের বিখ্যাত সব চিত্রকর্ম দেখার পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশের মুগ্ধতায় কিছুটা সময় কাটানোর সুযোগ হয়েছে দর্শনার্থীদের। এখানে রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা, ঘোড়ার গাড়ি, বৈশাখী মঞ্চ, ম্যাজিক নৌকা, দোলনা, ট্রেন, চরকি, দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা ইত্যাদি।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (Bangladesh Agricultural University)
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সমগ্র দেশজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছে। এটি ময়মনসিংহ জেলা শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ১,২০০ একর। ১৯৬১ সালে যাত্রা শুরু করা এই বিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে রয়েছে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, মিলনায়তন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, জিটিআই ভবন, স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১৩ টি আবাসিক হল, প্রশাসনিক ও অনুষদীয় ভবন, বোটানিক্যাল গার্ডেন, হর্টিকালচার ফিল্ড, জিমনেশিয়াম, স্টেডিয়াম ইত্যাদি।
এছাড়াও এখানে বেশ কয়েকটি বাগান, লেক, সবুজ মাঠ, কেন্দ্রীয় মসজিদ, কৃষি মিউজিয়াম ও বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত, মৎস্য খামার, ফিস মিউজিয়াম, গবাদিপশুর খামার, নান্দনিক সড়ক ইত্যাদি আকর্ষণীয় অংশ রয়েছে।
সন্তোষপুর রাবার বাগান (Santoshpur Rubber Garden)
সন্তোষপুর রাবার বাগান ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার নওগাঁও ইউনিয়নে অবস্থিত। সন্তোষপুরের বনাঞ্চল প্রায় ১০৬ একর পাহাড়ি জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। প্রতিবছর এখান থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে গাছেরকর সংগ্রহ করে রাবার তৈরি করা হয় বিপুল পরিমাণে, এবং তা বিদেশেও রপ্তানি করে ‘বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন’। লম্বা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল আকৃতির হাজার হাজার গাছের পাশাপাশি, এখানে রয়েছে শাল ও গজারিসহ নানাজাতের বৃক্ষ এবং ৫০০+ বিরল প্রজাতির বানর।
ছালড়া শালবন (Shalban bark)
ছালড়া শালবন ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার দুল্লা ইউনিয়নের ছালড়া গ্রামে অবস্থিত। চারিদিকে হাজার হাজার গাছের শালবন এবং মাঝখানে জোয়ারের পানি জমে তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি বিশাল বিশাল দৃষ্টিনন্দন দিঘী। শালবনের পাশাপাশি রয়েছে বেতগাছ ও বাঁশ বন। জোয়ারের পানিতে বাঁশের কচিকান্ড গুলো দেখতে অনেকটা সুন্দরবনের শ্বাসমূলের মতো। সব মিলিয়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই ছালড়া শালবন যেন একটি ছোট সুন্দরবন।
জামালপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
মালঞ্চ মসজিদ (Malanch Mosque)
মালঞ্চ মসজিদটি জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার মালঞ্চ শিশু ও চক্ষু হাসপাতালের কমপ্লেক্স গড়ে তোলা একটি কারুকার্যমণ্ডিত দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। সাবেক সচিব ও ইউনাইটেড ট্রাস্টের সহযোগিতায় মসজিদ মাদরাসা ও ইসলামিক মিশনের সমন্বয়ে, প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে এই এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। মজিদের সামনেই রয়েছে একটি স্বচ্ছ পানির দীঘি। নান্দনিক সৌন্দর্যের কারণে বর্তমানে এটি জামালপুরের অন্যতম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।
গান্ধী আশ্রম (Gandhi Ashram)
গান্ধী আশ্রমটি ১৯৩৪ সালে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ঝাউগড়া ইউনিয়নে কাপাস হাটিয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তৎকালীন জামালপুর মহকুমার কংগ্রেসের সম্পাদক কৃষক নেতা নাসির উদ্দিন সরকার নামের জনৈক ব্যক্তি, গান্ধীজীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ১ একর জায়গা নিয়ে এই আশ্রমটি নির্মাণ করেছিলেন। নাসির উদ্দিন সরকারের জ্যৈষ্ঠ কন্যা রাজিয়া খাতুন এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন। এই আশ্রমের অন্যতম লক্ষ্য ছিল দেশপ্রেমী তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করা। আশ্রমের কার্যক্রমের মধ্যে ছিল খাদি কাপড় বোনা, শিক্ষা কার্যক্রম, পাঠাগার, হাস্ত-কারুশিল্প তৈরি, স্বাবলম্বন, বৃক্ষরোপণ, শরীর চর্চা ও স্বাস্থ্যসেবা সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি।
লুইস ভিলেজ রিসোর্ট এন্ড পার্ক (Lewis Village Resort & Park)
লুইস ভিলেজ রিসোর্ট এন্ড পার্ক বর্তমানে ময়মনসিংহ বিভাগের মধ্যে সর্বাধুনিক বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ২০১৬ সালে জামালপুরের জেলা সদরের বেলটিয়ায় নিরিবিলি পরিবেশে প্রায় ১০ একর জায়গা জুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে রয়েছে মিনি ট্রেন, মেরী গো রাউন্ড, সুইং চেয়ার, বাম্পার কার, ওয়ান্ডার হুইল, বোট রাইডিং, ইত্যাদি দেশি-বিদেশি ১৪টি রাইড, খেলনা ও হস্তশিল্পের দোকান, রেস্তোরাঁ, ফাস্টফুড কর্নার এবং একটি কনভেনশন সেন্টার।
শেরপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
গজনী অবকাশ কেন্দ্র (Ghazni Vacation Center)
গজনী অবকাশ কেন্দ্র শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান। বিশেষ করে শীতকালে ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে এটি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। এখানে সারি সারি গজারি, শাল ও সেগুন গাছের ঘন সবুজ বন, পাহাড়ি ঝর্না লেক, টিলা এবং ঝরনার প্রবাহমান স্বচ্ছ পানি পরিবেশের সৌন্দর্য্যে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে।
পাহাড়ের ঝরনার গতিপথে বাদ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম লেক, লেকের মাঝে কৃত্রিম পাহাড় ও লেক ভিউ প্যান্টাগন। দর্শনার্থীদের জন্য গারো পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে একটি ৬ কক্ষবিশিষ্ট আধুনিক রেস্ট হাউস এবং পিকনিকের সুব্যবস্থা।
মধুটিলা ইকো পার্ক (Madhutila Eco Park)
মধুটিলা ইকোপার্ক শেরপুর জেলা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে নালিতাবাড়ি উপজেলার পোড়াগাঁওয়ে অবস্থিত। এটি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রিত। এখানে রয়েছে আকর্ষণীয় রাইড, ওয়াচ টাওয়ার, স্টার ব্রিজ, মিনি চিড়িয়াখানা, রেস্ট হাউজ, ক্যান্টিন এবং বিভিন্ন প্রাণীর ভাস্কর্য। সবুজের সময় পাহাড়ের হাতছানির পাশাপাশি এখানে মধুটিলার লেকে নৌকায় বা প্যাডেল বোটে ঘুরারও সুযোগ রয়েছে।
রাজার পাহাড় (Rajar Pahar)
রাজার পাহাড় শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে ঢেউফা নদীর তীরে অবস্থিত একটি অপূর্ব ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র। এই পর্যটন কেন্দ্রটিকে নিয়ে বিভিন্ন লোককথা প্রচলিত রয়েছে। তবে বিশ্বস্ত মতানুযায়ী, প্রাচীন রাজবংশের সম্ভ্রান্ত কোন রাজার অবস্থানের কারণেই মূলত এটি রাজার পাহাড় নামে প্রচলিত হয়ে আসছে। গারো পাহাড়ের সবচেয়ে উচু রাজার পাহাড়ের চূড়ায় প্রায় ১০০+ হেক্টর সমতল ভূমি রয়েছে।
রাজার পাহাড়ের উপর থেকে ভারতের কিছুটা সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এই পাহাড়ের কাছে রয়েছে ওয়ার্ল্ড ভিশন, বিট অফিস, কারিতাস, রাবার বাগান এবং বিডিআর ক্যাম্প। আকাশছোঁয়া বৃহদাকৃতির এই পাহাড়ের নৈস্বর্গিক দৃশ্য যেন সকলকেই নতুন করে প্রকৃতির প্রেমে ফেলে।
মাইসাহেবা জামে মসজিদ (Maisaheba Jame Masjid)
মাইসাহেবা জামে মসজিদ শেরপুর জেলা শহরে প্রবেশের পর সর্বপ্রথম নজরে আসা, প্রায় ২৫০ বছর পূর্বে নির্মিত একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। এটি শেরপুর শহরের কেন্দ্রস্থলে শেরপুর সরকারি কলেজের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। মসজিদটি বিভিন্ন সময়ে সংস্কার করা হলেও এখনো তাতে ঐতিহ্যের ছাপ স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। মসজিদে ২টি সুউচ্চ মিনার রয়েছে।
প্রচলিত আছে যে তৎকালীন সময়ে শেরপুরের তিনআনী জমিদার মুক্তগাছার জমিদারকে নিমন্ত্রণ করেন এবং মসজিদের বর্তমান অবস্থানের জায়গাটি উপহার দিতে চান। তখন হাতি দিয়ে সেখানে বিদ্যমান ঘর ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিলে, হাতিটি বারবার ঘরের কাছে যাওয়া মাত্রই সালাম দিয়ে বসে পড়ে। পরক্ষণে তিন আনি জমিদার নিজে সেখানে এসে দেখতে পান ঘরের ভেতর একজন নারী ইবাদতে মগ্ন আছেন। জমিদার বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইলেন এবং সেই নারীর (মাই সাহেবা) মৃত্যুর পর সেখানে মাইসাহেবা জামে মসজিদ নির্মাণ করেন।
পানিহাটা-তারানি পাহাড় (Panihata-Tarani hills)
পানিহাটা-তারানি পাহাড় শেরপুর জেলা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে গারো পাহাড় সীমান্তবর্তী রামচন্দ্রপুর এলাকায় অবস্থিত। মূলত এই এলাকায় চারিদিকে সারি সারী পাহাড় দিয়ে ঘেরা পানিহাটা ও তারানি গ্রামের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত অঞ্চল দর্শনার্থীদের কাছে পানিহাটা-তারানি পাহাড় নামে পরিচিত। তারানি পাহাড়ের উত্তরে রয়েছে মেঘের আবছা আবরণে ঢাকা ভারতের তুরা পাহাড় প্রকৃতির সান্নিধ্য পাওয়ার পাশাপাশি মেঘ ও পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিভিন্ন প্রান্তের বহু প্রকৃতিপ্রেমীরা এখানে ঘুরতে আসেন।
নেত্রকোনা জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
বিরিশিরি (Bhirishiri)
বিরিশিরি নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলাধীন একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম। বিরিশিরিতে থাকা চিনামাটির পাহাড়, নীল পানির হ্রদ সোমেশ্বরী নদী, কমলা রানীর দীঘি ইত্যাদি এই গ্রামটিকে ভ্রমণের জন্য আদর্শ স্থান করে তুলেছে। এখানের চিনামাটির পাহাড় এবং সমভূমির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬ কিলোমিটার এবং প্রস্থ প্রায় ৬০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এখান থেকেই স্পষ্টভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সোমেশ্বরী নদীর তীরের কাশবন এবং দূরের গারো পাহাড়ের সৌন্দর্য। এছাড়াও এখানে রয়েছে পাহাড়ি কালচারাল একাডেমি, হাজং, গারো ইত্যাদি নৃ-গোষ্ঠীদের বসবাস।
সোমেশ্বরী নদী (Someswari River)
সোমেশ্বরী নদী ভারতের মেঘালয়ের গারো পাহাড়ের সীমসাংগ্রী নামক স্থান থেকে উৎপন্ন হয়ে দুর্গাপুরে প্রবেশ করেছে। এটি নেত্রকোনা জেলার অন্যতম সৌন্দর্য উপভোগ্য স্থানগুলোর একটি। কথিত আছে যে, বহুকাল পূর্বে সোমেশ্বর পাঠক নামে জনৈক ব্যক্তির দ্বারা এই অঞ্চল দখল হয়ে যায়। পরবর্তীতে তার নামানুসারেই এই নদী টি সোমেশ্বরী নদী হিসেবে পরিচিতি পায়। বর্তমানে এটি কয়লা খনি নামেই অধিক পরিচিত। বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রূপে সজ্জিত হওয়া এই নদী দেখতে বহু মানুষের আগমন হয়।
কমলা রানী দীঘি (Kamala Rani Dighi)
কমলা রানী দীঘি বা সাগর দীঘি নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে বিরিশিরি ইউনিয়ন পরিষদের কাছে অবস্থিত। লোকমুখে কথিত আছে যে, ১৫ শতকের শেষভাগে সুসং দুর্গাপুরের রাজার জানকিনাথ- কমলা দেবী নামে এক সুন্দরী রমণীকে বিয়ে করেন। কিছুকাল পর প্রজাদের পানির অভাব দূরীকরণের জন্য রাজা জানকি নাথ একটি পুকুর খনন করেন। তখন পুকুরের সাথে সম্পৃক্ত কোন ঘটনার কারণে কমলা রানী পানিতে ডুবে যায়, এবং এই দীঘিটিকে কমলা রানী দীঘি নামকরণ করা হয়।
আরও পড়ুন: খুলনা বিভাগের সকল জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ
এই দীঘিকে নিয়ে আরো বিভিন্ন বিস্তৃত মতবাদ রয়েছে। তবে যাই হোক বর্তমানে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঘেরা এই ঐতিহাসিক দীঘিটি নেত্রকোনার অন্যতম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।
ডিঙ্গাপোতা হাওর (Dingapota Haor)
ডিঙ্গাপোতা হাওর নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম হাওরগুলোর মধ্যে একটি। বাংলাদেশের বিভিন্ন ঋতুতে এই হাউ টিকে ভিন্ন ভিন্ন রূপে সজ্জিত হতে দেখা যায়। বর্ষায় হাওরের অথৈ পানির ধারা, শীতকালে চারিপাশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, শরৎ ও হেমন্তকালে হাওরের দুপাড়ের সবুজ-সোনালী ধানক্ষেত ও নীলচে আকাশের সৌন্দর্য ইত্যাদি প্রকৃত প্রেমীদের কাছে সত্যিই মোহনীয়।
এর অন্যতম আকর্ষণ হলো এই বিশাল জলরাশির গভীরতম স্থানে থাকা আধাডোবা হিজল গাছ ও জলরাশির উচ্ছল ঢেউ। মাছের মৌসুমে দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে হাওরের তাজা মাছ কিনে খাবার সুবিধাও।
পাঁচগাও (Panchgaon)
পাঁচগাও হলো নেত্রকোনা জেলার সীমান্তবর্তী কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের পাহাড়ি সৌন্দর্যে ঘেরা একটি এলাকা। কলমাকান্দা উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটি ইউনিয়নে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের পাহাড়ি সীমান্তবেষ্টিত। রংছাতির পাঁচগাও এমনি একটি সীমান্তলগ্ন এলাকা।
পাঁচগাও এলাকায় অবস্থিত চন্দ্রডিঙ্গা টিলা নিয়ে হয়েছে বহু মতভেদ। এগুলো গারো পাহাড়ের সাথে সম্পৃক্ত। টিলা গুলো সবুজের সমারোহে অপরূপ সৌন্দর্যে সেজেছে। এলাকার চারপাশের সমতল ভূমির মাঝখানে অবস্থিত এই টিলার পাদদেশে বাস করে গারো ও হাজং উপজাতিরা। অতীতে এখানে বন্যহাতির দেখাও পাওয়া যেত, তা এখন নেই।
শেষকথা
উপরোক্ত প্রতিটি দর্শনীয় স্থানেরই বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আপনি ময়মনসিংহ বিভাগের সকল জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ পরিদর্শন করতে চাইলে, প্রথমে পছন্দনীয় দর্শনীয় স্থানগুলোর ভ্রমণ, যাতায়াত ব্যবস্থা ও পর্যটন সুবিধা সম্পর্কে জেনে নিন।