আপনি কি নতুন নগদ একাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন? তাহলে জেনে নিন ২০২৪ সালের নগদ একাউন্ট কিভাবে খুলতে হয় এবং বোনাস পাওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত।
বর্তমানে বাংলাদেশের মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা গুলোর মধ্যে অত্যন্ত সুবিধাজনক হচ্ছে নগদ। কারণ নগদে ক্যাশ আউট চার্জ অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং থেকে খুবই কম। তাই নগদের ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে একজন নতুন গ্রাহক নিজে নিজে নগদ একাউন্ট খুলতে চাইলে প্রায়ই সঠিক পদ্ধতি বুঝতে পারেনা। তাই নগদ একাউন্ট কিভাবে খুলতে হয় তার বিস্তারিত জেনে নিন এই লেখা থেকে।
নগদ একাউন্ট কিভাবে খুলতে হয়
বর্তমানে তিনটি উপায়ে নগদ একাউন্ট খোলা যায়। এগুলো হলো:
- *১৬৭# ইউএসএসডি কোড ডায়াল করে একাউন্ট খোলা।
- নগদ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে নগদ একাউন্ট খোলা।
- নগদ উদ্যোক্তা পয়েন্টে বা আঞ্চলিক কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট থেকে একাউন্ট খোলা।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ হলো ঘরে বসে নগদের মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে একাউন্ট খোলা। নিচে প্রতিটি পদ্ধতিতে নগদ একাউন্ট খোলার বিস্তারিত প্রক্রিয়া আলোচনা করা হলো।
আরও পড়তে পারেনঃ বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম | লুফে নিন ১২৫ টাকা বোনাস।
নগদ একাউন্ট খুলতে যা যা লাগে
নগদ এর মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে একাউন্ট খুলতে চাইলে শুধুমাত্র রেজিস্ট্রেশনকারী ব্যক্তির ভোটার আইডি কার্ড ও সে নিজে উপস্থিত থাকলেই হবে। তবে নগদের উদ্যোক্তা পয়েন্ট থেকে অ্যাকাউন্ট খুলতে চাইলে নিম্নোক্ত বিষয়বস্তুগুলো লাগবে:
- আপনার একটি মোবাইল ফোন।
- একটি নিবন্ধিত SIM।
- দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- নিবন্ধনকারীর ভোটার আইডি কার্ডের কপি।
কোড ডায়াল করে নগদ খোলার নিয়ম
নগদের কোড ডায়াল করে নগদ একাউন্ট খোলার জন্য সর্বপ্রথম আপনার মোবাইলের ডায়াল প্যাড থেকে *167# লিখে কল করুন। এক্ষেত্রে আপনি যেই নাম্বারটি ব্যবহার করে নগদ একাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন, সেই নাম্বার থেকে কল করতে হবে। এছাড়া যে নাম্বার থেকে নগদ একাউন্টটি খুলতে চাচ্ছেন, সেই নাম্বারটি গ্রাহকের নিজের ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে রেজিস্টার করা হতে হবে। অন্যথায়, কেওয়াইসি ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হবে না, বরং তার জন্য অ্যাপস ব্যবহার করতে হবে।
নগদ কোড (*167#) ডায়াল করার পর, এখানে সর্বপ্রথম আপনাকে একটি ৪ ডিজিটের পিন নম্বর সেট করতে হবে। এর জন্য প্রথমে পিন নাম্বারটি লিখে সেন্ড করুন এবং পুনরায় তা কনফার্ম করতে একই পিন লিখুন। এই পিন নাম্বারটি পরবর্তীতে আপনার অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হবে। তাই এটি ইউনিক ও কঠিন রাখতে চেষ্টা করুন।
দুইবার কোড লিখে কনফার্ম করার পর, নগদ একাউন্টের ধরন নির্বাচন করার অপশন আসবে। এখানে ১ নং-এ Regular এবং ২ নং-এ Islamic অপশন দেখতে পাবেন। এর দ্বারা বুঝানো হয় যে, আপনি আপনার নগদ একাউন্ট থেকে কোন ধরনের মুনাফার পেতে চান কিনা। আপনি যদি মুনাফা গ্রহণ করতে চান, তাহলে Regular সিলেক্ট করতে পারেন। তবে মুসলিমদের উচিত Islamic অপশনটি সিলেক্ট করা। (কারণ মুনাফার ক্ষেত্রে সুদভিত্তিক কর্মকান্ড হতে পারে)।
এই দুটি তথ্য দিয়ে send বাটনে ক্লিক করলেই আপনার নগদ একাউন্টটি তৈরি হয়ে যাবে এবং আপনার দেওয়া মোবাইল নাম্বারে একটি শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানো হবে। আপনার একাউন্টটি সফলভাবে তৈরি হলে আপনি পরবর্তীতে আবারও *167# ডায়াল করে নগদে লেনদেন ও এর সেবা ভোগ করতে পারবেন।
তবে অ্যাকাউন্ট তৈরির ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হলে, তা SMS এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। এভাবে কেওয়াইসি ভেরিফিকেশনের সমস্যা হয়। অ্যাপ থেকে একাউন্ট খোলাই সবচেয়ে সুবিধাজনক।
আরও পড়তে পারেনঃ বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম ২০২৪।
নগদ অ্যাপ থেকে নগদ একাউন্ট খোলার নিয়ম
বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেমের নিজস্ব অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে। এর মধ্যে নগদ অ্যাপ অনেক বেশি জনপ্রিয়। এই অ্যাপ ব্যবহার করেই নগদের গ্রাহক যাবতীয় সেবা ভোগ করতে পারে। এমনকি অ্যাপ থেকে সবচেয়ে সহজ উপায়ে নগদ একাউন্ট খোলা যায়। এর থেকে নগদ একাউন্ট খুলতে যথাক্রমে:
- জাতীয় পরিচয়পত্রের উভয় পিঠের ছবি আপলোড করে।
- একটি সেল্ফি তুলে একাউন্টে যুক্ত করতে পারেন।
- টার্মস এবং কন্ডিশনস সঠিকভাবে পড়া, ইত্যাদি।
সর্বপ্রথম গুগল প্লে-স্টোর থেকে নগদ অ্যাপটি ইন্সটল করে নিন। তারপর নগদ অ্যাপ ওপেন করে Mobile number অপশনে আপনার নাম্বারটি লিখুন। তারপর আপনার মোবাইল সিম অপারেটরটি সিলেক্ট করে দিন। তারপর ভোটার আইডি কার্ডের প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করতে হবে।
এর জন্য ভোটার আইডি কার্ডের উভয় পাশের ছবি স্ক্যান করে নগদ অ্যাপ-এ ক্যাপচার করে নিন। নগর থেকে ছবিগুলো জমা নিলে ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করুন। এবার আপনার ভোটার আইডি কার্ডের যাবতীয় কেওয়াইসি KYC তথ্যাবলী স্ক্রিনে দেখতে পাবেন।
এখানে যদি কোন তথ্য ভুল লিপিবদ্ধ হয়, তাহলে সেটি এডিট করে নিতে পারবেন। এখান থেকে পরবর্তী পেইজে গেলে, আবেদনকারীর লিঙ্গ, লেনদেনের উদ্দেশ্য, পেশা ও মুনাফা গ্রহিতা একাউন্টের প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে চাইবে। এ সকল তথ্য সঠিকভাবে সিলেক্ট করে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।
এবার আবেদনকারীর ফেইস ভেরিফিকেশন করুন। এর জন্য ক্যামেরা অপশনে গিয়ে আপনার সম্পূর্ণ চেহারাটি মোবাইল ক্যামেরার সামনে ধরুন এবং চোখের পলক ফেলুন। ছবি স্ক্যানিং সম্পন্ন হলে আপনার ট্রেড লাইসেন্স এর তথ্য দিতে পারেন (ঐচ্ছিক)। এবার নগদের যাবতীয় শর্তাবলির পেইজে একটি টিক মার্ক দিন।
এবার আবেদনকারীর স্বাক্ষর আপলোড দিতে হবে। এক্ষেত্রে মোবাইলের ফাইল আপলোড করতে অথবা মোবাইল স্ক্রিনে সাইন দিতে পারবেন। এবার সকল তথ্য রিভিউ দেওয়ার জন্য দেখানো হবে। তারপর আপনার সামনে পিন সেট করার অপশন আসলে, একটি শক্তিশালী, ইউনিক ও গোপন পিন কোড দিন। তারপর পুনরায় পিন দিয়ে কনফার্ম করুন। ব্যাস আপনার নগদ একাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
উদ্যোক্তা পয়েন্ট থেকে নগদ একাউন্ট কিভাবে খুলতে হয়
নগদ একাউন্ট খোলার অন্যতম সহজ উপায় হলো ও উদ্যোক্তা পয়েন্ট থেকে একাউন্ট খোলা। এক্ষেত্রে যিনি একাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন তাকে কোন বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হবে না। সাধারণত বৃদ্ধ ব্যক্তিবর্গ, যারা স্মার্টফোন ব্যবহার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখেন না, তারা উদ্যোক্তা পয়েন্ট থেকে সহজেই একটি অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে নিতে পারেন।
উদ্যোক্তা পয়েন্ট থেকে নগদ একাউন্ট খুলতে প্রয়োজন হবে:
- ভোটার আইডি কার্ড,
- পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি,
- যে সিম দিয়ে একাউন্ট খুলবেন সেই সিম,
- আপনার মোবাইল ফোন।
এসকল ডকুমেন্ট নিয়ে উদ্যোক্তা পয়েন্টে উপস্থিত হওয়ার পর, আপনাকে একটি ফর্ম দেওয়া হবে। সে ফর্মটি পূরণ করে সংশ্লিষ্ট নগদ উদ্যোক্তার হাতে জমা দিলেই আপনার মোবাইলে একটি নগদ একাউন্ট খুলে দিবে। তারপর সেই একাউন্টে ৫০ টাকা ক্যাশইন করলেই অ্যাকাউন্টটি এক্টিভ হয়ে যাবে।
২০ টাকা বোনাস পেতে নগদ একাউন্ট কিভাবে খুলতে হয়
বর্তমানে নগদের অ্যাপ ব্যবহার করে সেলফ রেজিস্ট্রেশন করে নতুন একাউন্ট খুললেই নগদের পক্ষ থেকে ২০ টাকা বোনাস দেওয়া হবে। তারপর সেই ব্যালেন্স থেকে ২০ টাকা রিচার্জ করলে ২০ টাকা ক্যাশব্যাক পাওয়া যাবে। এটি শুধুমাত্র নতুন গ্রাহকদের জন্যই প্রযোজ্য। নগদ একাউন্টে ২০ টাকা রিচার্জে ক্যাশব্যাক অফারটি পেতে কিছু শর্ত প্রযোজ্য রয়েছে। এগুলো হলো:
- নগদ একাউন্ট খুলে কেওয়াইসি ভেরিফিকেশন, পিন সেট করা সহ প্রোফাইল সেটিং সম্পন্ন করতে হবে।
- তারপর নগদের সাইন আপ বোনাস ব্যবহার করে ২০ টাকা রিচার্জ করতে হবে।
- যদি আপনার একাউন্ট প্রোফাইলের যাবতীয় সেটিং সম্পন্ন করা থাকে তাহলে মোবাইল রিচার্জের সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই ২০ টাকা রিচার্জ বোনাস দেওয়া হবে।
তবে নগদ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এ ধরনের অফারগুলো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য থাকে। হতে পারে আপনি যখন রেজিস্ট্রেশন করেছেন তখন অন্য কোন অফারের সময়কাল চলছে। অথবা এই মুহূর্তে কোন অফার চালু নেই।
নগদ ইসলামিক একাউন্ট খোলার নিয়ম
নগদে সাধারণ একাউন্ট খোলা এবং ইসলামিক একাউন্ট খোলা প্রায় একই রকম। অধিকাংশ নগদ ব্যবহারকারী বর্তমানে ‘নগদ ইসলামিক একাউন্ট’ ব্যবহার করতে পছন্দ করে। কারণ নগদের ইসলামিক একাউন্টে কোনরকম মুনাফা বা সুদ ভিত্তিক কর্মকাণ্ড যুক্ত থাকে না।
ইসলামিক নগদ একাউন্ট কিভাবে খুলতে হয় তা আর্টিকেলের উপরোক্ত ‘নগদ কোড ডায়াল করে নগদ একাউন্ট খোলার নিয়ম’ অংশে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র একাউন্টের ধরন অপশনে (1) Regular, ও (2) Islamic অপশন থেকে- 2 টাইপ করে ইসলামিক সিলেক্ট করলেই হবে।
যারা ইতিমধ্যেই নগদ একাউন্ট ব্যবহার করছেন তারাও চাইলে আপনার একাউন্টটি রেগুলার একাউন্ট থেকে ইসলামিক একাউন্টে রূপান্তর করতে পারেন। এর জন্য নগদের মোবাইল অ্যাপে লগইন করুন।
তারপর নিচের আমার নগদ অপশনে ক্লিক করুন। এই পেজের উপরের দিকে ভাষা এর নিচে একাউন্টের ধরন অপশনে ক্লিক করুন। তারপর ইসলামিক অপশনটি সিলেক্ট করলেই আপনার একাউন্টটি ইসলামিক একাউন্ট হয়ে যাবে।
বাটন মোবাইলে নগদ একাউন্ট খোলার নিয়ম
উপরোক্ত কোড ডায়াল করে নগদ খোলার নিয়ম অনুসারে আপনি যেকোন স্মার্টফোন কিংবা বাটন ফোন দিয়েই নগদ একাউন্ট খুলতে পারবেন। তবে তার জন্য আপনি যেই সিম থেকে কোড ডায়াল করবেন সেই সিমটি আপনার নামে রেজিস্ট্রেশন করা হতে হবে। তাহলেই আপনার পরিচয়বাচক তথ্য বা কেওয়াইসি (KYC) ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হবে।
নগদে ক্যাশ আউট চার্জ কত
নগদ ইসলামিক অ্যাপ থেকে ক্যাশ আউট চার্জ ১৫.০০ টাকা এবং নগদ রেগুলার অ্যাপ থেকে ক্যাশ আউট চার্জ ১২.৫০ টাকা। নগদ কোড ডায়াল করে লেনদেন করলে ক্যাশ আউট চার্জ সর্বদাই ১৫.০০ টাকা।
নগদ একাউন্ট কোড
নগদ একাউন্টের কোড হলো *167#। এই কোডটি ডায়াল করলে বাটন ফোন কিংবা স্মার্টফোন থেকে নগদের একটি মেন্যু আসবে। সেখান থেকে নগদের যাবতীয় সেবা ভোগ করা যাবে।
শেষকথা
উপরোক্ত আলোচনা থেকে নগদ একাউন্ট কিভাবে খুলতে হয় তা সম্পূর্ণরূপে জেনে একটি একাউন্ট খুলতে পারবেন।