আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে প্রায় প্রতিটি শ্রেনিতেই গুরুত্বপূর্ন একটি রচনা হলো অধ্যবসায় রচনা। বিশেষ করে বোর্ড পরীক্ষা গুলোতে এই রচনাটি অনেক বেশি কমন পড়ে থাকে। তাছাড়া অধ্যবসায় রচনা পড়ার মাধ্যমে আমাদের জীবনে এই গুনাবলীর প্রয়োগ করতে আমরা অনুপ্রানিত হই।
তাই প্রিয় শিক্ষার্থীদের জন্য নিচে “অধ্যবসায় রচনা” লিখে দেওয়া হলো।
“অধ্যবসায়”
ভূমিকাঃ
অধ্যবসায় মানুষকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি অপরিহার্য গুণ। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। একটি মানুষ জীবনের নানান বাধা অতিক্রম করে কিভাবে নিজের লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে, সেই পথে এগিয়ে যেতে একাগ্রভাবে সহায়তা করে এই অধ্যবসায়ের গুনাবলী।
অধ্যবসায়ের সংজ্ঞাঃ
অধ্যবসায় বলতে কোনো কাজে অটুটভাবে লেগে থাকা এবং সাফল্য না আসা পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াকে বুঝানো হয়। অধ্যবসায় মানুষকে চূড়ান্ত সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে। এটি এমন এক ধরনের মানসিক দৃঢ়তা, যা মানুষের মনকে শক্তিশালী ও সংকল্পবদ্ধ করে তোলে। অধ্যবসায় মানে হলো প্রতিদিনের নিরলস প্রচেষ্টা, সাফল্যের পথে থেমে না যাওয়া। কোনো মানুষ যখন নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে বারবার চেষ্টা চালায়, তখন তাঁর এই দৃঢ় সংকল্পই তাঁকে অধ্যবসায়ী মানুষ হিসেবে গড়ে করে।
আরও পড়ুন: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা ১৭ পয়েন্ট
অধ্যবসায়ের বৈশিষ্ট্যঃ
অধ্যবসায়ের মূল বৈশিষ্ট্য হলো ধৈর্য, দৃঢ়তা, একাগ্রতা, এবং সংকল্প। একজন অধ্যবসায়ী মানুষ যে কোনো পরিস্থিতিতে হাল ছাড়ে না এবং নিজের লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যায়। ইতিহাস ঘাটলে আমরা দেখতে পারি যে, অধ্যবসায়ী মানুষেরা প্রতিটি কাজে স্থির থেকে লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা চালিয়ে যায়। অধ্যবসায়ী ব্যক্তি সময়ের প্রয়োজনীয়তাকে বোঝেন এবং লক্ষ্য অর্জনের পথে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেন। তারা বাধা-বিপত্তি এলে হতাশ না হয়ে পুনরায় চেষ্টা চালিয়ে যান। এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রনে রাখা এবং কঠিন পরিস্থিতিতেও ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখা। এছাড়াও মনোবল ও ইচ্ছাশক্তি দৃঢ়ভাবে স্থীর রাখা।
অধ্যবসায়ের গুরুত্বঃ
মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুনাবলীর মধ্যে অধ্যবসায় অন্যতম। এই গুনাবলীটি নুষের জীবনকে স্থিতিশীল এবং সাফল্যমণ্ডিত করতে ভূমিকা রাখে। অধ্যবসায় ছাড়া অনেক প্রতিভাবান মানুষও জীবনে কিছু করতে পারেন না। আবার অনেক সময় দেখা যায়, একক অধ্যবসায় সম্পূর্ণ জাতিকে উন্নতির পথে নিয়ে যায়। শিক্ষাক্ষেত্রে, ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে এবং জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে যারা অধ্যবসায়ী তারা সাফল্যের শিখরে পৌঁছানোর সক্ষমতা রাখে। যখন আমরা নতুন কোন কাজ করি, তখন আমাদের সামনে নানান বাধা-বিপত্তি আসতে পারে। অধ্যবসায়ী মনোভাব ছাড়া এই বাধা অতিক্রম করা কঠিন। তাছাড়া অধ্যবসায় ছাড়া মানুষের মনে লক্ষ্য অর্জনের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় না। তাই জীবনে সফল হতে হলে অধ্যবসায়কে নিজেদের অন্যতম গুণ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
ব্যক্তিগত উন্নয়নে অধ্যবসায়ঃ
অধ্যবসায় ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য অপরিহার্য। যারা অধ্যবসায়ী, তারা নিজেদের লক্ষ্য পূরণের জন্য সকল প্রকার প্রচেষ্টায় নিয়োজিত থাকে। অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তারা নিজেরা দক্ষতা অর্জন করে এবং উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। এই গুনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তির চরিত্রে দৃঢ় মনোভাবের প্রতিফলন ঘটে। তাই ব্যক্তিগত উন্নতির ক্ষেত্রে অধ্যবসায়কে সঙ্গী করে চলা অপরিহার্য।
পারিবারিক জীবনে অধ্যবসায়ঃ
পারিবারিক জীবনেও অধ্যবসায়ের ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। আমাদের পরিবারে বিভিন্ন সময়ে সমস্যা ও বিপদ-আপদ দেখা দিতে পারে। এই সময়ে অধ্যবসায় পরিবারের সদস্যদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে সাহায্য করে। একজন অধ্যবসায়ী ব্যক্তির পরিবার তাঁর কাছ থেকে শিখতে পারে এবং তাঁকে দেখে উৎসাহিতও হয় অনেকাংশে। পারিবারিক জীবনে অধ্যবসায় থাকলে সম্পর্ক মজবুত হয়, তারা বিপদ-আপদে ভেঙ্গে পড়েনা এবং প্রতিটি সদস্য পারিবারিক বাধা অতিক্রম করতে প্রস্তুত থাকে।
সামাজিক উন্নয়নে অধ্যবসায়ঃ
অধ্যবসায় শুধু ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য নয়, বরং সামগ্রিক সমাজ উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। অধ্যবসায়ী নেতৃত্বের কারণেও বহু জাতি উন্নতি লাভ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেও আমরা অধ্যবসায়ের চরম উদাহরণ দেখতে পাই। বাঙালি জাতি অধ্যবসায়ের সাথে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল এবং শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। এক্ষেত্রে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের একটাই লক্ষ্য ছিল যে, তারা লাখো শহীদের বিনিময়ে হলেও একটি স্বাধীন দেশ গড়ে তুলতে চেষ্টা করবে। তাই বলেই মহান সৃষ্টিকর্তার সহায়তায় অবশেষে তারা ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিজয়ী হয়েছে।
শৈশবে অধ্যবসায়ের শিক্ষাঃ
শিশুদের শৈশব থেকেই অধ্যবসায়ের মূল্য শেখানো উচিত। একজন শিশুকে ছোট থেকেই অধ্যবসায়ী হতে শেখালে সে জীবনে যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকবে। বিভিন্ন শিক্ষামূলক খেলাধুলা ও কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে অধ্যবসায়ের বীজ বপন করা যায়। এটি একটি শিশুকে জীবনে সংগ্রামী ও আত্মবিশ্বাসী হতে সহায়তা করে।
শিক্ষার্থীদের জীবনে অধ্যবসায়ঃ
শিক্ষার্থীদের জীবনে অধ্যবসায় একটি অপরিহার্য গুণ। প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে সাফল্যের জন্য অধ্যবসায়ী হতে হয়। শিক্ষাজীবনে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। সেসকল পরীক্ষায় অধ্যবসায়ী শিক্ষার্থীই বেশি সফল হয়। আলবার্ট আইনস্টাইনের জীবনীর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে, তিনি বারবার চেষ্টা করেই তাঁর গবেষণায় সফল হয়েছেন এবং মানবজাতিকে অসাধারণ আবিষ্কারের উপহার দিয়েছেন। অধ্যবসায় ছাড়া একজন শিক্ষার্থী মেধাবী হলেও পরীক্ষায় ভালো ফলাফল নাও অর্জন করতে পারে। অন্যদিকে, একজন সাধারন শিক্ষার্থী অধ্যবসায়ের গুনাবলীর মাধ্যমে তার পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারে।
ক্যারিয়ার গঠনে অধ্যবসায়ঃ
কর্মজীবনে ক্রমাগতভাবে শুধু দিনাতিপাত করতে না চাইলে, এবং উন্নতির ইচ্ছা থাকলে অধ্যবসায়ী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অধ্যবসায়ী মনোভাব কর্মক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা নিয়ে আসে এবং কর্মীর মধ্যে উন্নতির ভাব জাগায়। যারা ক্যারিয়ারে অধ্যবসায়ী, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরাই কর্মক্ষেত্রে সফলতা লাভ করে। সফল ব্যবসায়ী স্টিভ জবস, বিল গেটস প্রমুখ ব্যক্তিদের জীবনে অধ্যবসায় গুনাবলীটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অধ্যবসায়ঃ
জীবনের যে কোনো ক্ষেত্রেই অধ্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ। যাঁরা অধ্যবসায়ী হন তাঁরা তাঁদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতার শীর্ষে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। খেলাধুলায় সফল অ্যাথলেটদের পেছনেও থাকে অধ্যবসায়ের অবদান। এই গুনাবলীটি মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় দিক। এটি আমাদের জীবনের বাধা ও বিপত্তি জয় করার শক্তি জোগায় এবং সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অধ্যবসায়ের গুনাবলীকে গুরুত্ব দিতে হবে।
ইতিহাসে অধ্যবসায়ের উদাহরণঃ
পৃথিবীর ইতিহাসে অধ্যবসায়ী মহামানবদের মধ্যে সবচেয়ে বড় উদাহরন হলো মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। তিনি নিরলস চেষ্টা ও শ্রম দিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালার রহমতে আমাদের কাছে পৌছে দিয়েছেন সত্য ধর্ম ইসলাম। তেমনিভাবে ইসলাম প্রচারে যুগে যুগে অধ্যবসায়ের ইতিহাস গড়ে গেছেন অনেক সাহাবীরা, ওলি-আউলিয়ারা এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দারা।
অন্যদিকে, বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা এবং থমাস এডিসন তাঁদের অধ্যবসায় এবং নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে আমাদের বৈদ্যুতিক প্রযুক্তির সুবিধা এনে দিয়েছেন। এদের মতো অসংখ্য বিজ্ঞানীরা হাজার হাজার বার চেষ্টা করেও সফলতার মুখ দেখেননি, কিন্তু তাঁদের অধ্যবসায় তাঁদের সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দেয়।
আবার নজরুল ইসলামসহ বিভিন্ন মহান সাহিত্যিকের জীবনেও অধ্যবসায়ের প্রভাব দেখা যায়। তাঁদের লেখা কেবল প্রতিভার ফল নয়; এর পেছনে আছে দীর্ঘ অধ্যবসায় ও কঠোর পরিশ্রম। তাঁদের লেখাগুলি আজও আমাদের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করছে এবং তাঁদের লেখার মধ্য দিয়ে অধ্যবসায়ের মর্মবাণী প্রকাশিত হচ্ছে। এছাড়াও নানান রাজা-বাদশা থেকে শুরু করে যুদ্ধক্ষেত্রে পর্যন্ত অধ্যবসায়ের লক্ষ লক্ষ উদাহরন রয়েছে।
অধ্যবসায় ও সাফল্যের সম্পর্কঃ
অধ্যবসায় ও সাফল্যের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। অধ্যবসায় মানুষকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। অধ্যবসায়ী ব্যক্তি প্রতিকূলতার মুখেও লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হন না। এই বৈশিষ্ট্য তাকে জীবনে স্থায়ী সাফল্যের পথে চলতে উতসাহিত করে। জীবনে সফল হতে চাইলে আপনাকে মহান আল্লাহর রহমতের আশা করতে হবে এবং প্রচুর অধ্যবসায়ী হতে হবে।
বর্তমান সমাজে অধ্যবসায়ের গুরুত্বঃ
আধুনিক প্রতিযোগিতামূলক সমাজে অধ্যবসায় মানুষের জীবনের অন্যতম মূলধন হিসেবে কাজ করে। বর্তমান বিশ্বে যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রতিযোগিতা বেড়েছে, সেখানে অধ্যবসায় ছাড়া কেউই স্থায়ীভাবে সফল হতে পারে না। আমরা প্রায় সকলেই জাপান ও চীন দেশের মানুষের অধ্যবসায়ী গুনাবলী সম্পর্কে জানি। তারা তাদের নিরলস শ্রম দিয়ে বিশ্বের অন্যতম উদ্ভাবনী শক্তির দেশের পরিনত হয়েছে। এমনিভাবে, যেই সমাজের মানুষ অধিক অধ্যবসায়ী হবে, তাদের সফলতার হার ততই বেশি হবে বলে আশা করা যায়।
আরও দেখুন:
- ক্যাপশন দিয়ে ভালোবাসা মানুষটিকে নিজের করে নিন
- প্রেমের উক্তি, স্ট্যাটাস ও ক্যাপশন
- সেরা কিছু শিক্ষণীয় স্ট্যাটাস
- তোমাকে নিয়ে স্ট্যাটাস, উক্তি, কবিতা ও গল্প
- সেরা ভালোবাসার স্ট্যাটাস, ক্যাপশন, উক্তি, কবিতা ও ছন্দ
উপসংহারঃ
অধ্যবসায় জীবনের আসল শক্তি। সফলতার সোপানে উঠতে হলে অধ্যবসায়কে নিজের জীবনের অন্যতম গুণ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজে সুস্থ ও সফল জীবনযাপন সহজ হবে।