খুলনা বিভাগ বাংলাদেশের অন্যতম বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান সুন্দরবনের বিভাগ। ১০ টি জেলার সমন্বয়ে গঠিত এই বিভাগের প্রতিটি জেলাতেই রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান ও পর্যটন কেন্দ্র। আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক পরিবেশ, ঐতিহাসিক নিদর্শন, বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং আধুনিকভাবে নির্মিত বিভিন্ন পার্ক ও রিসোর্টে ভরপুর এই বিভাগটি। ভ্রমন পিপাসু বাঙালিদের জন্য খুলনা বিভাগের সকল জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ তুলে ধরা হলো এই লেখাতে।
খুলনা জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ
সুন্দরবন
সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন বা লবণাক্ত বনাঞ্চল। ইউনেস্কোর অন্যতম এই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটটির মোট আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। এটি যৌথভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অবস্থিত। সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬,৫১৭ বর্গ কিলোমিটার। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালি ও বরগুনা জেলার অংশ নিয়েই বাংলাদেশের সুন্দরবন। সুন্দরী বৃক্ষের আধিক্য থাকায় এই বনের নামকরণ করা হয় সুন্দরবন।
সুন্দরবন বাংলাদেশের অন্যতম জীববৈচিত্র সমৃদ্ধ বন। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ চিত্রা হরিণ, কুমির, সাপ, বিচিত্র ধরনের পাখি এবং অসংখ্য প্রজাতির নানা বর্ণের প্রাণীর আবাস। এখানে রয়েছে প্রায় ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, আটটি প্রজাতির উভচর প্রাণী, ১২০ প্রজাতির মাছ এবং ২৭০ প্রজাতির পাখি। বৃহৎ এই বনটিতে প্রায় ১,৮৭৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে নদী-নালা ও বিলের জলাকীর্ণ অঞ্চল। সব মিলিয়ে এটি দেশের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ও দর্শনীয় স্থান। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটক এই পর্যটন কেন্দ্রটিতে আসেন।
কটকা সমুদ্র সৈকত
সুন্দরবনের বৈচিত্রময় স্থান গুলোর মধ্যে খুলনার কটকা সমুদ্র সৈকত অন্যতম। এটি একটি নির্জন এবং পরিচ্ছন্ন সৈকতের বেলাভূমি। এটি মংলা বন্দর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এই সৈকতটিতে রয়েছে ৪০ ফুট উঁচু একটি ওয়াচ টাওয়ার। বনের একটি নিরিবিলি জায়গায় গেলেই দেখতে পাওয়া যায় অপরূপ সুন্দর চিত্রা হরিণ, বানর, বন্য শুকর, বনবিড়াল এবং নানা প্রজাতির পাখি। দক্ষিণ দিকে টাইগার টিলায় প্রায়ই বাঘের পদচিহ্ন দেখা যায়।
করমজল পর্যটন কেন্দ্র
গরম জল পর্যটন কেন্দ্রটি সুন্দরবনের পশুর নদীর তীরে বাংলা সমুদ্র বন্দর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে ৩০ হেক্টর জমির উপর গড়ে তোলা একটি পর্যটনকেন্দ্র। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি এখানে রয়েছে হরিণ, কুমির, রেসাস বানর সহ নানা প্রজাতির পশু-পাখি। আধুনিক মাত্রা যুক্ত করতে এখানে নির্মিত হয়েছে কাঠের তৈরি ট্রেইল, টাওয়ার ইত্যাদি। পাশাপাশি এখানে অবস্থিত কুমিরের প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র এবং জেলেদের মাছ ধরার কর্মযজ্ঞ একটি ভিন্ন রকম চিত্র।
হিরণ পয়েন্ট
হিরন পয়েন্ট বা নীলকমল সুন্দরবনের দক্ষিণাঞ্চলে খুলনা রেঞ্জে প্রমত্তাকুঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত একটি সংরক্ষিত অভয়ারণ্য। এই অভয়ারণ্যটি অধিক পরিমাণে বানর, হরিণ, বাঘ সহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী, বাহারি রংয়ের ও প্রজাতির পাখি, সরীসৃপ ইত্যাদি পশু পাখির আবাসস্থল। এটি ইউনেস্কোর অন্যতম বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। এখানে রয়েছে কাঁচের তৈরি সুন্দর রাস্তা এবং হিরণ পয়েন্ট থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে কেওড়াসুটি নামক স্থানে একটি ওয়াচ টাওয়ার।
ভূতিয়ার পদ্মবিল
ভূতিয়ার পদ্মবিল খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলায় অবস্থিত প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য যেন একটি স্বর্গরাজ্য। সমস্ত বিল জুড়ে হাজার হাজার পদ্ম ফুল ফুটে এখানে, যা গ্রাম বাংলার অপরূপ প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলে। সকাল ৬টা থেকে ৬:৩০ মিনিট পর্যন্ত পদ্ম ফুলের সেই মোহনীয় দৃশ্য সকল দর্শনার্থীদেরই আকৃষ্ট করে।
যশোর জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ
জেস গার্ডেন পার্ক
জেস গার্ডেন পার্ক যশোর জেলা থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে বাহাদুরপূর উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছাকাছি সুন্দর ও নিরিবিলি একটি চিত্তবিনোদনমূলক প্রাকৃতিক স্থান। মরহুম এ. এস. এম. হাবিবুল হক চুনি ১৯৯২ সালে প্রায় ১২ একর জমির উপর এই পার্কটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুশীতল ছায়াঘেরা এই পার্কে রয়েছে শিশু পার্ক, নাগরদোলা, চেয়ার চরকি, মিনি ট্রেন, প্যাডেল বোট, ক্যান্টিন, মিনি চিড়িয়াখানা, নামাযের স্থান এবং বাচ্চাদের জন্য আলাদা প্লেগ্রাউন্ড।
কালেক্টরেট পার্ক
কালেক্টরেট পার্ক যশোর জেলা শহরে অবস্থিত কালেক্টরেট ভবন চত্বরের পাশে ভৈরব নিদীর তীরে গড়ে তোলা অন্যতম একটি বিনোদন কেন্দ্র। এই পার্কের পাশেই রয়েছে ফ্লাওয়ার পার্ক এবং ৩ বিঘা জায়গা জুড়ে বিস্তৃত একটি পুকুর। এখানে রয়েছে গাঁদা, সূর্যমুখী, চন্দ্রমল্লিকা, ব্লুস্টার, গোলাপ, কসমস, জিনিয়া ইত্যাদি বিভিন্ন রকম রঙের ও প্রজাতির ফুল। পার্কের ভেতরের ইট বিছানো পথ, বসার বেঞ্চ এবং প্রাকৃতিক রূপ দর্শনার্থীদের আকর্ষন করে।
হনুমান গ্রাম, কেশবপুর
যশোর জেলার কেশবপুরে বর্তমানে ভবঘুরে প্রজাতির প্রায় ৪০০ কালোমুকগী হনুমানের বসবাস রয়েছে। আনুমানিক কয়েক শত বছর ধরে কেশবপুরের ১০-১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিরল প্রজাতির হনুমান বসবাস করায়, এই স্থানটিকে হনুমান গ্রাম বলা হয়। গত ২০-৩০ বছর আগেও এই গ্রামে প্রায় ৪-৫ হাজার হনুমানের বসবাস ছিলো। তবে বর্তমানে তা মাত্র ৪০০ টিতে নেমে এসেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা পরিবেশে বিরল প্রজাতির এই প্রানীগুলো দেখতে বহু দর্শনার্থীরা আসেন এই গ্রামটিতে।
বিনোদিয়া ফ্যামিলি পার্ক
বিনোদিয়া ফ্যামিলি পার্কটি যশোর জেলা শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে যশোর ক্যান্টনমেন্ট শানতলা নামক স্থানে অবস্থিত। ১৯৯৮ সালে ল্যাফটেন্যান্ট কর্ণেল ফয়েজ আহমেদ এই ফ্যামিলি পার্কটি তৈরি করেছিলেন। এই পার্কটিতে রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা, আকর্ষনীয় রাইড, শিশু পার্ক, নদী, কৃত্রিম ঝর্ণা, কনফারেন্স রুম ইত্যাদি। পিকনিক এবং বিভিন্ন প্রকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য এই স্থানটি অত্যন্ত উপযুক্ত।
সাতক্ষীরা জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ
মোজাফফর গার্ডেন এন্ড রিসোর্ট
মুজাফফর গার্ডেন এন্ড রিসোর্ট সাতক্ষীরা জেলায় ১২০ বিঘা জায়গাজুড়ে ১৯৮৯ সালে জনাব কে. এম. খাইরুল মোজাফফরের নির্মিত একটি বাগান। এটি মন্টু মিয়ার বাগান বাড়ি নামে বহুল প্রচলিত। এখানে রয়েছে একটি অপরূপ লেক, লেকে প্যাটেল বোট ও মাছ ধরার সুযোগ, মাছের একুরিয়াম, থ্রিডি থিয়েটার, চিলড্রেন পার্ক, চিড়িয়াখানা, খেলার মাঠ এবং এবং সর্বমোট ১০৫ টি পিকনিক স্পট।
মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত
মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতটি সাতক্ষীরা জেলায় বঙ্গোপসাগরের তীরে হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত একটি নয়নাভিরাম বেলাভূমি। নীলডুমুর ঘাট থেকে খোলপেটুয়া-কপোতাক্ষ নদের মোহনা দিয়ে অতিক্রম করে মান্দারবাড়িয়া যেতে কলাগাছিয়া, আড়পাঙ্গাসিয়া, মালঞ্চ নদী বেয়ে যেতে হয়। এখানে পৌঁছানো কিছুটা কষ্টসাধ্য হলেও, যারা যেতে পারে, তারা নির্জন ও নিরিবিলি পরিবেশে সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে।
বংশীপুর শাহী মসজিদ
বংশীপুর শাহী মসজিদ সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলা থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দক্ষিনে বংশীপুর গ্রামে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে বর্তমানে এটিকে আধুনিক ও ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে। ঐতিহাসিক এ মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪১.১৫ মিটার এবং প্রস্থ ১০.৬৭ মিটার। ৫টি গম্বুজ এবং চার দেয়ালের মাঝে ৪টি ধনুক আকৃতির নকশা সমৃদ্ধ এই মসজিদটিতে মোঘল আমলের স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন রয়েছে।
মেহেরপুর জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ
আমঝুপি নীলকুঠি
আমঝুপি নীলকুঠি মেহেরপুর জেলা থেকে সাত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইংরেজ শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত একটি ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। আনুমানিক ১৮০০ এর দশকে প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে এই ভবনটি নীলকুঠি হিসেবে ব্যবহৃত হলেও, পরবর্তীতে এখানে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিস চালু করা হয়েছিল। ৭৭ একরের বেশি জায়গা জুড়ে অবস্থিত এই আমঝুপি নীলকুঠিতে ১৫ টি কক্ষ বিশিষ্ট মূল ভবন, খাবারের কক্ষ, হল রুম, অতিথিদের আবাসস্থল ও জলসাঘর রয়েছে।
আমদহ গ্রামের স্থাপত্য
আমদহ গ্রামটি মেহেরপুর জেলা শহর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পরীখা ঘেরা এই গ্রামের স্থাপত্য নিদর্শনগুলোকে রাজা গোয়ালা চৌধুরীর সাথে বগা দস্যুদের যুদ্ধে ধ্বংসপ্রাপ্ত আবাসস্থল হিসেবে মনে করা হয়। এখানে নিদর্শন স্থানের আয়তন প্রায় ১ বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে এই প্রত্নস্থানের কোন দর্শনীয় নিদর্শন অবশিষ্ট নেই, তবে পুরাতন জেলা প্রশাসকের ভবনের সামনে একটি প্রত্নতত্ত্ব স্তম্ভ স্থাপিত রয়েছে।
নীলকুঠি ও ডিসি ইকোপার্ক
মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার শাহারবাটি ইউনিয়নের ভাটপাড়ায় কাজলা নদীর তীরে ঐতিহাসিক ভাটপাড়া নীলকুঠি অবস্থিত। এই ভাটপাড়া নীলকুঠিটি ১৮৫৯ সালে নির্মিত হয়েছিল। এর নির্মাণ কাজে ইট, চুন-শুরকি, লোহার বীম এবং ইটের টালি ব্যবহার করা হয়েছে। ২৭ একরের এই কুঠিবাড়ির বর্তমান আয়তন কমে গেলেও অবশিষ্ট জায়গাতে ২০১৭ সালে মেহেরপুর জেলা প্রশাসন ডিসি ইকো পার্ক প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে রয়েছে ডিসি ইকো পার্কের কৃত্রিম লেক, বিভিন্ন প্রাণীর ভাস্কর্য, ঝর্ণাধারা, খেলাধুলার সরঞ্জাম এবং ফুলের বাগান।
মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স
মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরে অবস্থিত বাংলাদেশের ঐতিহাসিক তত্ত্ব দ্বারা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর উপজেলার বৈদ্যনাথ তলা গ্রামের আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধকালীন নানান স্মৃতিকে ধরে রাখতে সেখানে মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে।
নড়াইল জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ
নিরিবিলি পিকনিক স্পট
নিরিবিলি পিকনিক স্পট নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানার রামপুরে অবস্থিত দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম একটি বিনোদন কেন্দ্র। ১৯৯১ সালে প্রায় ১৪ আগর জায়গা জুড়ে নিরিবিরি পিকনিক স্পট নির্মাণ করা হয়েছিল। দর্শনার্থীদের জন্য এখানে রয়েছে বনভোজনের ব্যবস্থা, মিনি চিড়িয়াখানা, শিশু পার্ক, মিনি ট্রেন, দোলনা, রোপওয়ে, ওয়াটার বোট এবং এস. এম. সুলতানের শিল্পকর্ম। মিনি চিড়িয়াখানায় নানান প্রজাতির প্রাণীর পাশাপাশি রয়েছে ৭০ ফুট লম্বা একটি তিমি মাছের কঙ্কাল।
অরুনিমা ইকো পার্ক
অরুনিমা ইকো পার্ক নড়াইল জেলার নারাগাতির পানিপাড়া গ্রামে প্রায় ৫০ একর জমির উপর তৈরি একটি ইকো পার্ক। মূলত এটি অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাব। এখানে মোট ১৯ টি ছোট-বড় পুকুর এবং একটি লেক রয়েছে। লেকের মাঝে তৈরি করা হয়েছে ৪টি বাঁশের সেতু, কৃত্রিম দ্বীপ, সেখানে রেস্টুরেন্ট, কটেজ এবং কনফারেন্স রুম নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে ঘোড়ার গাড়ি ও নৌকা ভ্রমণের পাশাপাশি বহু ইনডোর ও আউটডোর গেমসের ব্যবস্থা রয়েছে।
চিত্রা রিসোর্ট
চিত্রা রিসোর্ট নড়াইল জেলার চিত্রা নদীর তীরে প্রায় ৭ বিঘা জমির উপর নির্মিত একটি দর্শনীয় স্থান। শহরের কোলাহলমুক্ত মনোরম এই প্রাকৃতিক পরিবেশ আকর্ষণ করে বিভিন্ন প্রান্তের বিনোদনপ্রেমী দর্শনার্থীদের। এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার আকর্ষণীয় রাইড, শিশু পার্ক, কটেজ, সেমিনার হল, মিনি ট্রেন, দোলনা, বাস্কেট বল, বিলিয়ার্ড, বনভোজন এবং বারবিকিউ এর ব্যবস্থা।
স্বপ্নবীথি পিকনিক স্পট
স্বপ্নবীথি পিকনিক স্পট নড়াইল জেলা শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে লোহাগড়া উপজেলার রামপুরে প্রায় ১২ একর জায়গাজুড়ে স্থাপিত একটি বিনোদন কেন্দ্র। এটি দক্ষিণ বঙ্গের সবচেয়ে সুন্দর পিকনিক স্পট হিসেবে খেতে অর্জন করেছে। এই পিকনিক স্পটে রয়েছে আকর্ষণীয় রাইড, মিনি চিড়িয়াখানা, বোট রাইডিং এবং চিত্তবিনোদনমূলক নিবিড় প্রাকৃতিক পরিবেশ।
চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ
মেহেরুন শিশু পার্ক
মেহেরুন শিশু পার্ক চুয়াডাঙ্গা জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে দামুড়হদা উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামে প্রায় ৬০ বিঘা জমির উপর নির্মিত একটি শিশু পার্ক ও মিনি চিড়িয়াখানা। এই শিশু পার্ক রয়েছে বিভিন্ন আকর্ষণীয় রাইড, ঘোড়ার গাড়ি, নান্দনিক প্রাকৃতিক পরিবেশ, রেস্টুরেন্ট, রিসোর্ট এবং তাঁতশিল্প পল্লী। মিনি চিড়িয়াখানায় রয়েছে উট, হরিণ, ময়ূর, বানর ও পেঁচাসহ নানা প্রজাতির পশুপাখি।
দর্শনা
দর্শনা হলো চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় ৩,৫৭২ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পনগরীর নাম। এই দর্শনতেই ১৮৬২ সালের ১৫ই নভেম্বর দেশের প্রথম রেল লাইনের কাজ শুরু হয়েছিল। এখানেই এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম চিনিকল ‘কেরু এন্ড কোং’ অবস্থিত। দর্শনার সম্পূর্ণ জায়গাজুড়ে রয়েছে চিনি কারখানা, ডিস্টিলারি ওয়াটার, বাণিজ্যিক খামার ও জৈব সার কারখানা। এখানে স্পিরিট ও হার্ড ড্রিঙ্কস উৎপাদন করা হয়।
আমলডাঙ্গা বধ্যভূমি
আমলডাঙ্গা বধ্যভূমি চুয়াডাঙ্গা জেলার ১৯৭১ সালের পাকবাহিনীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের অন্যতম নিদর্শন। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে বাংলাদের উপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হত্যাকাণ্ড চালানোর পর এই বধ্যভূমিতে পুঁতে রাখত। দেশ স্বাধীন হবার পরও এই বধ্যভূমিতে শত শত মানুষের মাথার খুলি ও হাড় পাওয়া যেত। ২০১২ সালে তরুন প্রজন্মের কাছে পাক বাহিনীর নির্যাতনের ইতিহাস তুলে ধরার লক্ষ্যে, আমলডাঙ্গা বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ ও কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়। বধ্যভূমির ভিতরে শহীদের ভাস্কর্য ও মিউজিয়ামে ১৭৫৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের পর্যায়ক্রমিক ইতিহাসের সচিত্র ছবিগুলো রয়েছে।
পুলিশ পার্ক
পুলিশ পার্ক চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের কেন্দ্রস্থলে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে মাথাভাঙ্গা তীরে অবস্থিত একটি বিনোদন কেন্দ্র। এখানে কমিউনিটি সেন্টার এন্ড চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, বিয়ে, জন্মদিন, সেমিনার সহ যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে আয়োজনের সুব্যবস্থা রয়েছে। নিরিবিলি ও মনোরম পরিবেশের এই পার্কটিতে বিনোদনের জন্য রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা, উন্মুক্ত মঞ্চ এবং বিভিন্ন আকর্ষণীয় রাইড।
কুষ্টিয়া জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ
মীর মশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা
বাস্তভিটা হলো কুষ্টিয়া জেলার লাহিনীপাড়া গ্রামে অবস্থিত মীর মোশারফ হোসেনের বাসস্থান। মীর মোশাররফ হোসেন ছিলেন একসময়ের জনপ্রিয় উপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক। এখানে জড়িয়ে আছে মীর মশাররফ হোসেনের জীবনকালের শৈশব, কৈশোর ও কর্মজীবনের নানা অধ্যায়ের স্মৃতি।
লালন শাহ সেতু
লালন শাহ সেতুটি কুষ্টিয়া জেলা থেকে প্রায় ৩১ কিলোমিটার দূরে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশে পদ্মা নদীর উপর কুষ্টিয়া ও পাবনা জেলাকে সংযুক্তকারী একটি সেতু। এটি কুষ্টিয়ার বিখ্যাত বাউল সাধক ফকির লালন সাঁই -এর নামে লালন শাহ সেতু নামকরণ করা হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ১.৮ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার। পদ্মা নদীর ঢেউয়ের কলতান, সবুজে ঢাকা বাংলার রূপ ও উত্থান হাওয়ার মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় এখানে।
ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ
ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ কুষ্টিয়া সদর উপজেলা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে ঝাউদিয়া গ্রামে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন। অনেকেই বলেন এই মসজিদটি অলৌকিকভাবে নির্মিত হয়েছিল। শৈল্পিক কারুকার্যমন্ডিত এই মসজিদটি মাটির ট্যালি চুন ও শুঁড়কি দিয়ে নির্মিত হওয়ায় অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন এবং ঠান্ডা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকেই এই মসজিদ পরিদর্শনে এবং নামাজ আদায় করতে আসেন।
মাগুরা জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ
কবি কাজী কাদের নেওয়াজের বাড়ি
কবি কাজী কাদের নেওয়াজের পৈতৃক নিবাস পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট গ্রামে হলেও ১৯৬৬ সালে অবসর গ্রহণ করে মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার মুজদিয়া গ্রামে বসবাস করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছিলেন। প্রেম, প্রকৃতি, দেশ, সত্য ও সুন্দরের প্রতি আহ্বান করাই ছিল তার কবিতার মূল উপজীব্য। মুজদিয়া গ্রামের এই বাড়িটিতে তার বহু স্মৃতি জড়িত রয়েছে।
ভাতের ভিটা
ভাতের ভিটা হলো মাগুরা সদর উপজেলা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে ফটকি নদীর উত্তর তীরবর্তী টিলা গ্রামে অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। ধারণা করা হয় মৌর্য্য সাম্রাজ্যের তৃতীয় শতাব্দীতে আনুমানিক ৩২১ খ্রিস্টপূর্বে গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময়কাল পর্যন্ত টিলা গ্রামে একটি বৌদ্ধ সংঘ্যারাম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তখন এই অঞ্চলের শাসনকার্য পরিচালনা করার জন্য একটি বিচারালয় ও অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য একটি উঁচু জায়গা নির্মাণ করা হয়েছিল। যা বর্তমানে ভাতের ভিটা বা ছোট টিলা নামে পরিচিত। লোকমুখে এই স্থানকে ঘিরে নানান অলৌকিক ঘটনাও রচিত হয়।
বাগেরহাট জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ
চন্দ্রমহল ইকো পার্ক
চন্দ্রমহল ইকো পার্ক মূলত ৩০ একর জায়গা জুড়ে নির্মিত একটি ইকো পার্ক ও পিকনিক স্পট। এই ইকো পার্কে তাজমহলের আদলে তৈরি একটি ভবন রয়েছে, যা চন্দ্রমহল নামে পরিচিত। এটি বাগেরহাট জেলা সদরের খুলনা-মোংলা মহাসড়কের পাশে রঞ্জিতপুর গ্রামে অবস্থিত। দর্শনার্থীদের জন্য এখানে রয়েছে প্রাচীন দেশি-বিদেশী মুদ্রা, ডাকটিকেট, যুদ্ধের অস্ত্র, প্রাচীন ঘড়ি, অলংকার, পাথরের আসবাবপত্র, বিরল পাণ্ডুলিপি এবং অন্যান্য প্রাচীন নিদর্শন। এছাড়াও ইকোপার্কে বাঁশের তৈরি ঘর, পানসী নৌকা, কৃত্রিম রেললাইন, রেস্টুরেন্ট ও পিকনিক স্পট রয়েছে। এখানে একটি মিনি চিড়িয়াখানাও রয়েছে।
ষাট গম্বুজ মসজিদ
ষাট গম্বুজ মসজিদ বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। ধারনা করা হয়, ১৫০০ শতাব্দীতে খান-ই-জাহানের স্থাপত্যশৈলীতে এই মসজিদে নির্মাণ করা হয়েছিল। এই মসজিদের প্রধান আকর্ষণ এর ষাটটি গম্বুজ। বাইরের দিক থেকে এই মসজিদে দৈর্ঘ্য ১৬০ ফুট এবং প্রস্থ ১০৪ ফুট। মসজিদের দেয়ালগুলো প্রায় ৮.৫ ফুট পুরু। মসজিদের চারপাশে রয়েছে ৪টি গোলাকার মিনার।
কচিখালী সমুদ্র সৈকত
কচিখালী সমুদ্র সৈকত সুন্দরবনের কটকা নদীর পূর্ব দিকে অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি এখানে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য এবং পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এটি দেখতে সুন্দরবনের প্রায় ৩ কিলোমিটার বন্য পথ পাড়ি দিতে হয়। আর সেই পথে দেখা যায় হরিণের পাল, বন্য শুকর এবং বাঘের পায়ের ছাপ। অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান।
ঝিনাইদহ জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ এবংঅ
জোহান ড্রিম ভ্যালি পার্ক
জোহান ড্রিম ভ্যালি পার্ক এন্ড রিসোর্ট ঝিনাইদহ জেলার প্রায় ১০০ বিঘা জমির উপর নির্মিত একটি জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্র। এখানে রয়েছে ইনডোর এবং আউটডোর বিভিন্ন প্রকার বিনোদনের সুযোগ। শিশুদের জন্য কেইভ ট্রেন, জেট কোষ্টার, মেরিগো রাউন্ড, প্যাডেল বোট, ফানি অ্যাডভেঞ্চার, সুইং চেয়ার, নাগরদোলা এবং কিডস জোন রয়েছে। বড়দের জন্যও রয়েছে দর্শনীয় মনোরম পরিবেশ।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম বিভাগের সকল জেলার ৫০টি দর্শনীয় স্থান
মল্লিকপুরের বটগাছ
ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বেথুলী গ্রামের মল্লিকপুরে প্রায় ১১ একর জায়গা জুড়ে ৫২টি বিভিন্ন আকারের বট গাছের রূপে ছড়িয়ে রয়েছে ঐতিহাসিক এক বটগাছের অস্তিত্ব। ধারণা করা হয় এর বয়স প্রায় ৩০০ বছর। বিবিসির জরিপে ১৯৮৪ সালে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বটগাছের খ্যাতি অর্জন করেছিল এই মল্লিকপুরের বটগাছটি। এই বট গাছের উচ্চতা আনুমানিক ২৫০-৩০০ ফুট। বট গাছের সৌন্দর্য এবং বটগাছকে ঘিরে চারপাশের শান্ত ও পরিবেশ পাখির কলরব সকলকেই মুগ্ধ করে।
ঢোল সমুদ্র দীঘি
ঢোল সমুদ্র দীঘি হলো ঝিনাইদহ জেলা শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পাগলা কানাই ইউনিয়নের রাজা মুকুট রায়ের এক ঐতিহ্যবাহী মহাকীর্তি। এটি ঝিনাইদহের সর্ববৃহৎ এবং শতবর্ষ পুরানো দিঘি। এটি প্রায় ৫২ বিঘা জায়গা জুড়ে বিস্তৃত, যার চার পাশে রয়েছে সারি সারি গাছে আবৃত সবুজ পরিবেশ। কথিত আছে ঝিনাইদহের প্রতাপশালী রাজা মুকুট রায়ের রাজত্বকালে অলৌকিকভাবে এই দীঘিটি পানিতে পরিপূর্ণ হয়েছিল।
শেষকথা
উপরোক্ত খুলনা বিভাগের সকল জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ থেকে আপনার পছন্দনীয় স্থানটি বেছে নিন। তবে ভ্রমণের পূর্বে অবশ্যই সেই সকল স্থানের লোকেশন, যাতায়াত ব্যবস্থা ও সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জেনে নিন।