গর্ভাবস্থায় মায়ের যত্ন ও নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য করনীয়

প্রচলিত আছে, একজন নারীর জীবনে পূর্ণতা আসে মাতৃত্বের মাধ্যমে। প্রতিটি নারীর কাছে গর্ভধারণ করার পরবর্তী সময়টি অনেক বেশি গুরুত্বের এবং কৌতূহলের। একটি সুস্থ শিশুর মুখ দেখার তৃপ্তির জন্য দীর্ঘ ৯-১০ মাস একজন গর্ভধারী মাকে অসংখ্য জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। মা এবং বিকাশমান শিশু উভয়ের সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য এই সময়ে যত্নশীল হওয়া অপরিহার্য। তাই গর্ভাবস্থায় মায়ের যত্ন ও নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য করনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে গবেষণালব্ধ বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো এই লেখাতে।

গর্ভকালীন সেবার প্রয়োজনীয়তা

গর্ভকালীন সেবার মাধ্যমে একজন নারী গর্ভধারণ করেছে কি-না, গর্ভের সময়কাল, শিশুর বয়স, গর্ভবতীর স্বাস্থ্য জটিলতা সম্পর্কিত তথ্য ইত্যাদি জেনে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া যায়। পাশাপাশি গর্ভবতী মায়ের সঠিক ও সুষম খাদ্য তালিকা, গর্ভকালীন চেকআপে করণীয় এবং সঠিক লাইফস্টাইল অনুসরণ করা যায়। সামগ্রিকভাবে সুস্থ সবল মা ও শিশুর জন্য এই সময়কালীন সেবামূলক কর্মকাণ্ডগুলো অপরিহার্য।

গর্ভবতী মায়ের খাদ্যতালিকা 

প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি নারীর দৈনিক ২১শ’ ৬০ কিলো- ক্যালরি খাদ্যের প্রয়োজন হলেও একজন গর্ভবতীর প্রয়োজন হয় তার চেয়ে ৩৫০ কিলো ক্যালরি খাদ্যের। তা না হলে শিশু অপুষ্টিতে ভুগে ও কম ওজন নিয়ে শিশু জন্মায় যার মৃত্যু আশঙ্কাজনক।

  • এ সময় আমিষ জাতীয় খাবার, উদ্ভিজ্য চর্বি, যা পূরণে ভোজ্য তৈল, সয়াবিন, সরিষা বাদাম খেতে পারেন। 
  • ক্যালসিয়াম এর চাহিদা পূরণ করতে দুধ, স্টিমড ব্রকোলি, পনির, কম চর্বিযুক্ত ইয়োগট খেতে পারেন।
  • আয়রন ও ফলিক এসিডের চাহিদা পূরণে কাঁচা কলা, কচুশাক, অন্যান্য ঘন সবুজ ও লাল শাক, মাছ, মাংস ও ডিম খেতে পারেন।
  • ভিটামিনের জন্য প্রচুর শাকসবজি, টক, মিষ্টি ফল, জুস খেতে হবে।
  • গর্ভস্থ শিশুর পুষ্টির সরবরাহ সঠিক রাখতে এবং শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থসমূহ নিষ্কাষণে সহায়ক হিসেবে পর্যাপ্ত পানি পান। 
  • আঁশযুক্ত শর্করা যেমন ঢেঁকিছাঁটা চালের ভাত, গমের রুটি ইত্যাদি খাওয়া উচিত। আলু, ও মিষ্টি আলু স্বাস্থ্যসম্মত যা শর্করার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আমিষ লৌহ ও থায়ামিন, ভিটামিন সরবরাহের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

গর্ভাবস্থায় মায়ের যত্নে করণীয় 

একজন গর্ভবতী মায়ের সঠিকভাবে যত নেওয়ার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়বস্তুগুলো অনুসরণ করতে হবে:

(১) পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহন

গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়ের খাবার দাবারের দিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। এ সময় দৈনন্দিন চাহিদা অনুযায়ী সুষম খাদ্য খাওয়ার পাশাপাশি খাবার দাবার হওয়া চাই বিভিন্ন মিনারেল ও ভিটামিন যুক্ত। তাই যেসব খাবারে প্রোটিন, আয়োডিন, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ভিটামিনের মতো বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান বেশী পাওয়া যায়, সে সকল খাবার খেতে হবে। তাই নানা প্রকার ফলমূল, শাকসবজি ,ডাল, ডিম, সামুদ্রিক মাছ, গোটা শস্য, চর্বিহীন প্রোটিন এবং দুগ্ধজাত দ্রব্যে ইত্যাদি খেতে হবে। গর্ভবতী মায়েদের এসময় অভ্যন্তরীন পরিপাক ও বিপাক প্রক্রিয়া ক্রিয়া সহজ করতে একবারে বেশি না খেয়ে বার বার অল্প অল্প করে খাওয়া তার জন্য অনেক উপকারী।

(২) নিয়মিত প্রসবপূর্ব চেক-আপ

গর্ভাবস্থার স্বাস্থ্যের অগ্রগতি পরীক্ষা করার জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সাথে বারবার প্রসবপূর্ব সাক্ষাৎকার করা অপরিহার্য। মা এবং শিশুর স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য এই পরিদর্শনগুলোর মধ্যে বিভিন্ন পরীক্ষা এবং স্ক্রীনিং অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিশুর বৃদ্ধির উপর নজর রাখা, মায়ের স্বাস্থ্যের মাপকাঠি পরীক্ষা করা এবং যেকোনো উদ্বেগের সমাধান করাই এই চেক-আপের গুরুত্বপূর্ণ দিক। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভাবস্থায় কমপক্ষে ৪ বার স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা চেকআপের জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হবে। মূলত World Health Organisation (WHO) এর নির্দেশিত পদ্ধতি অনুযায়ী একইভাবে গর্ভকালীন সময়ে কমপক্ষে ৪ বার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চেকআপের জন্য যাওয়ার কথা বলেছে। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবা/ চেকআপের সময়সূচিতে এই ৪ বারের জন্য নিম্নোক্ত নির্দেশনা দিয়েছেঃ

  1. ৪র্থ মাসের মধ্যে (১৬ সপ্তাহ)
  2. ৬ষ্ঠ মাসে (২৪ সপ্তাহ)
  3. ৮ম মাসে (৩২ সপ্তাহ)
  4. ৯ম মাসে (৩৬ সপ্তাহ)

 তবে গর্ভবতী মায়ের অবস্থা ও প্রয়োজন অনুসারে ৪ বারের বেশি চেকআপে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

(৩) নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করা

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অন্যান্য স্বাস্থ্য সচেতনতার পাশাপাশি নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় যে সকল ব্যায়ামগুলো একজন গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপযুক্ত, সে সকল ব্যায়ামের জন্য প্রার্থী রুটিন করে নিতে হবে। একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য হাঁটা, সাঁতার বা প্রসবপূর্ব যোগব্যায়ামের মতো শারীরিক কার্যকলাপ গুলো উপযুক্ত।

(৪) মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখা

গর্ভাবস্থায় অগণিত মানসিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। তাই গর্ভবতী মায়েদের মানসিকভাবে অনুপ্রেরণা দেওয়া শারীরিক যত্নের মতোই অপরিহার্য।  এই সময়ে চাপ, উদ্বেগ এবং মেজাজের পরিবর্তনগুলো নিয়ন্ত্রণের রাখতে পারলে সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। তাছাড়া গর্ভাবস্থার পর প্রসবকালীন মুহূর্তের আগে থেকেই মায়েদের মানসিকভাবে আত্মবিশ্বাসকে দৃঢ় করতে হয়। ব্যক্তিগতভাবে গর্ভবতীরা চিন্তামুক্ত থাকার প্রচেষ্টার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদেরও উচিত এই সময় আশ্বাস ও সাহস দেওয়া। 

(৫) পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম

গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রামের গুরুত্ব অপারেশন। বিশ্রাম এবং ঘুম মা এবং ক্রমবর্ধমান শিশু উভয়ের সুস্থতার জন্যই অত্যাবশ্যক। ঘুম ক্লান্তি দূরকরে, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যকে উপযুক্ত রাখতে সাহায্য করে। আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশ, আরামদায়ক বালিশ ব্যবহার করা এবং ঘুমের রুটিন মেনে চললে ঘুমের গুণ ও মান বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে।

(৬) প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় পানীয় পান করা

গর্ভাবস্থায় হাইড্রেটেড থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  প্রচুর পানি পান করলে শরীরে অ্যামনিওটিক তরলের মাত্রা বজায় থাকে এবং শরীরের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।  গরমের সময় প্রচুর ঘামার কারণে ড্রিহাইড্রেশন বা পানিশূনতা একটি সাধারণ সমস্যা। এই পানিশূন্যতা দূরীকরণে গর্ভবতী মাকে সারাদিন প্রচুর পানি পান করা উচিত। 

দেহে পানিশূন্যতা দেখা দিলে শরীর অনেক দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি প্রস্রাবের রং হলুদ হয়ে যায়। তাই এরুপ ঘটার পূর্বেই তাঁকে প্রচুর তরল জাতীয় খাবার যেমন  ডাবের পানি, ফলের জুস, লাচ্ছি, লেবু মিশ্রিত পানি, দই ইত্যাদি দিতে হবে। 

(৭) ক্ষতিকর পদার্থ এড়িয়ে চলা

গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল, তামাক এবং উচ্চ মাত্রায় ক্যামিকেল সমৃদ্ধ ওষুধের মতো ক্ষতিকারক পদার্থ থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পদার্থগুলো বিকাশমান ভ্রূণের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলবে। এছাড়াও এসময় চর্বিযুক্ত খাবার যতটা পারা যায় এড়িয়ে চলাই উচিত। তাছাড়া অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবারও এড়িয়ে চলা ভালো।

লিভার কিংবা লিভার জাত অন্য খাবার কম খেতে হবে। কিছু কিছু খাবার যেমন কাঁচা পেঁপে, আলু, ছোলা, গাজর, বিট, ফুলকপি, ধনেপাতা পুদিনাপাতা, চীনাবাদম, কাজু বাদাম, পেস্তা ইত্যাদিতে এমন কিছু উপাদন আছে যা রান্না না করলে জরায়ুর ভ্রূণের ক্ষতিসাধন করে। ফলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু ভালোভাবে সিদ্ধ করলে এসব ক্ষতিকারক উপাদান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এগুলো কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না। গর্ভাবস্থায় আনারসও ঝুঁকিপূর্ণ। 

(৮) গর্ভকালীন নির্দেশনা এবং প্রসবকালীন প্রস্তুতি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন

প্রতিটি গর্ভবতী মায়ের এই গর্ভাবস্থায় করনীয় বিভিন্ন দিকনির্দেশনা গুলো সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। পর্যন্ত ধারণা না থাকলে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপটি গ্রহণ করা যায়না। গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং আশেপাশের অভিজ্ঞ নারীদের থেকে ধারণা নিতে পারেন। এছাড়াও প্রসবকালীন সময় সম্পর্কে একজন গর্ভধারী মায়ের পূর্ব ধারণা থাকাও গুরুত্বপূর্ণ। এই শিক্ষার মাধ্যমে জন্মদানের কৌশল, ব্যথা ব্যবস্থাপনা, বুকের দুধ খাওয়ানো এবং নবজাতকের যত্ন, জ্ঞান এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে মায়েদের ক্ষমতায়ন করা যায়।

গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত চেকআপ এবং চেকআপে যা যা করা হয়

গর্ভকালীন সময়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা একজন মা’কে নিম্নোক্ত কার্যকলাপের মাধ্যমে সাহায্য করতে পারে:

  1. গর্ভকালীন অবস্থার বিস্তারিত তথ্য নেওয়া।
  2. শারীরিক পরীক্ষা করা।
  3. স্রাব পরীক্ষা।
  4. চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা।
  5. প্রতিরোধক বাবস্থাপনা।
  6. মা’কে পরামর্শ প্রদান করা।
  7. স্বাস্থ্য শিক্ষা।

এসকল বিষয়গুলো সম্পর্কে সাধারণ ধারণা তুলে ধরা হলো:

(১) গর্ভকালীন অবস্থার বিস্তারিত তথ্য গ্রহণের মাধ্যমে বর্তমান গর্ভাবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ কী না তা জানতে মায়ের সাধারণ তথ্য নেয়া হয়। যেমনঃ

  • গর্ভবতী মায়ের নাম ও বয়স, ঠিকানা, স্বামীর নাম ও পেশা।
  • বর্তমান গর্ভের তথ্য, যেমন: শেষ মাসিকের তারিখ, বর্তমানে কোনো সমস্যা সম্পর্কে জানা।
  • পূর্ববর্তী প্রসব সংক্রান্ত ইতিহাস, যেমন: সন্তান সংখ্যা, প্রসব তারিখ, প্রসবের স্থান, প্রসব হতে কত সময় লেগেছিল, কাকে দিয়ে প্রসব করানো হয়েছিল, উচ্চ রক্তচাপ ছিল/ আছে কি-না, অজ্ঞান/খিঁচুনি হয়েছিল কি-না, কোনো চিকিৎসা সেবা পেয়েছিল কি-না, প্রসবের ধরণ, প্রসবোত্তর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছিল কি-না ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানা হয়।

(২) শারীরিক পরীক্ষা করার মাধ্যমে বর্তমানে কোনো জটিলতা আছে কি-না, তা জানা। যেমন:

  • উচ্চ রক্তচাপ
  • ডায়াবেটিস
  • জন্ডিস
  • হৃদরোগ
  • যমজ গর্ভ
  • গর্ভস্থ শিশু ও প্ল্যাসেন্টা এর অবস্থান

(৩) গর্ভের কোন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা আছে কি-না, তা জানা। যেমন:

  • বয়স ১৮ এর কম অথবা ৩৫ বছর এর বেশি হলে।
  • রক্তস্বল্পতা।
  • যৌনবাহিত রোগ।
  • সময়ের পূর্বে পানি ভেঙে যাওয়া।
  • প্রথম গর্ভ বা ৪ এর অধিক সন্তান হলে।
  • মায়ের উচ্চতা ৪ ফুট ১০ ইঞ্চির কম হলে।
  • পূর্ববর্তী প্রসবের সময় প্রসবপূর্ব রক্তক্ষরণ, প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ অথবা জরায়ুতে গর্ভফুল আটকে থাকার কোন ঘটনা ঘটে থাকলে।
  • দীর্ঘায়িত/ বাধাপ্রাপ্ত প্রসবের কোন পূর্ববর্তী ঘটনা ঘটে থাকলে।
  • গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু/নবজাতকের মৃত্যুর কোন পূর্ববর্তী ঘটনা ঘটে থাকলে।

(৪) গর্ভাবস্থায় সাধারণ শারীরিক পরীক্ষা, যেমন:

  • গর্ভবতী মায়ের রক্তস্বল্পতা আছে কি-না।
  • ওজন বাড়ছে কি-না।
  • পেট পরীক্ষার মাধ্যমে জরায়ুর উচ্চতা, বাচ্চার অবস্থান ও বাচ্চার হৃদস্পন্দন ঠিক আছে কি-না।
  • রক্তচাপ কত, হাত-পা ফোলা আছে কি-না ইত্যাদি জানা।

(৫) রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করা, যেমন:

রক্তস্বল্পতা, রক্তের গ্রুপ ও প্রস্রাব পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য পরীক্ষাগুলো করা।

উপরোক্ত সকল পরীক্ষাগুলো গর্ভকালীন সময়ে চেকআপের ক্ষেত্রে করা হয়ে থাকে।

কিভাবে বুঝবেন গর্ভের সন্তান সুস্থ আছে

গর্ভধারণের ১৮-২০ সপ্তাহ পর থেকেই একজন মা, বাচ্চার নড়াচড়া অনুভব করতে পারেন। পেটে বাচ্চার নড়াচড়ার মাধ্যমে বাচ্চার সুস্থতার লক্ষণ স্পষ্ট হয়। একটি সুস্থ বাচ্চা স্বাভাবিক পরিমাণ নড়াচড়া করে থাকে। এই নড়াচড়ার সংখ্যা সাধারণত ১২ ঘন্টায় ১০ বার হয়। আপনি ১২ ঘন্টায় ১০ বার নড়াচড়া পেয়ে থাকলে আপনার বাচ্চা সুস্থ আছে মনে করতে পারবেন। তবে ১২ ঘন্টায় ১০ বারের কম, যেমন ৬-৮ বার নড়াচড়া অনুভব করলে, অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

গর্ভাবস্থায় কিছু স্বাভাবিক সমস্যা

গর্ভাবস্থায় বুকজ্বালা, বদহজম, অরুচি ও বমি বমি ভাব ইত্যাদি স্বাভাবিক সমস্যাগুলো দেখা যায়। এগুলো দেখা দিলে তেমন আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে এই সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হলে হালকা সহজপাচ্য অথচ পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পানীয় ও টাটকা ফল, বেল, কলা, পেয়ারা, দুধ, ভাত, কলা, আটার রুটি, ইসুবগুলের ভূষি খাওয়া যায়। কিন্তু শ্বাসকষ্ট, চুলকানি, বুক ধড়ফড়, রক্তক্ষরণ, মাড়িস্ফীতি, পাইলস ও পায়ের শিরাস্ফীতি হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

গর্ভাবস্থায় বিশেষ সতর্কতা এবং বিপদ সংকেত 

গর্ভাবস্থায় প্রতিটি মায়ের স্বাস্থ্যের জন্যই অতিরিক্ত আবেগ, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, ভয়, রোগ-শোক ইত্যাদি ক্ষতিকর। তাই এসব এড়িয়ে ভালো চিন্তা করতে হবে। প্রথম তিন মাস ও শেষ তিন মাস স্বামীর সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে। পানিশূন্যতা রোধে স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক পরিমাণে পানি পান করতে হবে। সব ধরনের ঝুঁকি এড়াতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া আবশ্যক। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা যাবে না।

অন্যদিকে, গর্ভাবস্থার শেষের দিকে অথবা প্রসবকালীন সময়ে নিম্নোক্ত সমস্যাগুলো দেখা দেওয়া মারাত্মক বিপদজনক:

  • গর্ভাবস্থায় রক্তস্রাব,
  • মাথা ব্যাথা ও চোখে ঝাপসা দেখা,
  • গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় বা প্রসবের পর খিঁচুনি,
  • ভীষণ জ্বর,
  • বিলম্বিত প্রসব ইত্যাদি।

তাই গর্ভকালীন এবং প্রসবকালীন সময়ে উপরোক্ত সমস্যাগুলোর যেকোনো একটি দেখা দিলেই, দেরি না করে গর্ভবতী মাকে জরুরি সেবার জন্য হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। আরও পড়ুন: নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় সম্পর্কে।

শেষকথা

গর্ভাবস্থা একটি রূপান্তরমূলক যাত্রা, যা একজন মা এবং ক্রমবর্ধমান শিশুর জন্য ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে। তাই এই গর্ভাবস্থায় মায়ের যত্ন ও নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য করনীয় বিষয়গুলো অনুসরণ করতে হবে।

Scroll to Top