কিডনি রোগের লক্ষণ

কিডনি রোগের লক্ষণ, কারন, পরীক্ষা, প্রতিকার ও প্রতিরোধ

কিডনি মানবদেহের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। সাধারণভাবেই কিডনির ব্যবহার ছাড়া একজন মানুষের জন্য বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব। বর্তমান পৃথিবীতে প্রতি ১০০ জনে প্রায় ২৩ জন মানুষই কিডনি সমস্যায় ভুগছেন। বাংলাদেশে গড়ে ১০০ জনে ৮-১০ জন কিডনির বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। কিন্তু কিডনি রোগের লক্ষণ, কারন ও প্রতিকার সম্পর্কে জানেন না অনেকেই।

আমাদের শরীরের সকল দূষিত বর্জ্যের ৯৫ ভাগের বেশি প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয় কিডনি। একটি কিডনি প্রতিদিন ১২০-১৫০ লিটার রক্ত পরিশোধিত করে। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গটি রোগাক্রান্ত হলে ক্যান্সার, হার্ট অ্যাটাক সহ অন্যান্য বিভিন্ন জটিলতায় মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই প্রাণঘাতি এই স্বাস্থ্য সমস্যাটি শরীরে বাসা বাঁধার পূর্বেই, কিডনির বিভিন্ন রোগ, কিডনি রোগের লক্ষণ, কারন পরীক্ষা, প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা সকলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।

কিডনির বিভিন্ন রোগ

কিডনিতে বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। কিডনির মূল কাজ হলো পুরো শরীরের রক্ত পরিশোধিত করা এবং দূষিত বর্জ্যগুলো বের করা দেওয়া। মানবদেহের প্রস্রাবের থলি, প্রস্রাবের নালী, প্রস্রাবের রাস্তা ও বৃক্কের যাবতীয় অংশসমূহ কে নিয়ে কিডনি কাজ করে। তাই কিডনির সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য অঙ্গ-গুলোর যেকোনো একটিতে রোগ হলেই, সেগুলোকে কিডনি রোগ বলা হয়। 

কিডনি আমাদের দেহের স্বাভাবিক জৈবিক ভারসাম্য বজায় রাখে। দেহের জন্য এরিথ্রোপোয়েটিন নামক অতি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন তৈরি করে এই অঙ্গটি। শরীরের রক্ত তৈরি করা এরিথ্রোপোয়েটিন হরমোনের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ আসে কিডনি থেকে। আমাদের কিডনি যখন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়, তখন এই হরমোন উৎপাদন কমে যায়। হলে সামগ্রিকভাবে দেহে রক্তশূন্যতা তৈরি হয়, ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়, হার্ট ফেইলিউর হয়, উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যায় ও  শরীর ফুলে যায়, শরীরের বর্জ্যগুলো মস্তিষ্কে, হার্টে, হাড়ে জমে যায় ইত্যাদি।

কিডনিতে বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। যেমন:

  • কিডনি ফেইলর বা কিডনি বিকল।
  • ডায়াবেটিসজনিত কিডনি রোগ।
  • পাথরজনিত কিডনি রোগ।
  • উচ্চ রক্তচাপজনিত কিডনি রোগ।
  • ধীরগতির কিডনি বিকল।
  • কিডনিতে ইনফেকশন বা প্রস্রাবের ইনফেকশন।
  • কিডনিতে সিস্ট বা Polycystic kidney disease।
  • কিডনির উপর শরীরের ইমিউন সিস্টেমের প্রভাব বা Lupus nephritis।
  • কিডনির টক্সিন ফিল্টার করার ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া বা Interstitial nephritis।
  • নেফ্রোটিক সিনড্রোম।
  • প্রস্টেটের রোগ।
  • ফিউনির ক্যান্সার।
  • প্রস্রাবে বাধাজনিত কারণে কিডনি রোগ ইত্যাদি।

কিডনি রোগের কারণ

পরিসংখ্যান অনুযায়ী পৃথিবীর প্রায় ৮০ভাগ কিডনি রোগের কারণ স্পষ্টভাবে জানা যায় না। তবে বাকি যে সকল রোগীদের কিডনি রোগের কারণ নিরীক্ষণ করা গেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হলো ডায়াবেটিস। দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ হলো হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ। এছাড়া গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস নামক কিডনির প্রদাহ জনিত কারণে নানা রোগ হয়। সাধারণত এই তিনটি কারণেই ক্রনিক কিডনি রোগ হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের মানুষের কিডনি রোগের প্রধান কারণ হলো নেফ্রাটাইসিস। দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ হলো ডায়াবেটিস এবং তৃতীয় বৃহত্তম কারণ উচ্চ রক্তচাপ। তাছাড়া বহু কিডনি রোগীদের পাথর হয়ে প্রস্রাবের নালী বন্ধ হয়ে যায়। কিছু কিছু মানুষের বংশগত কিডনি রোগও হতে পারে।

বিশ্বব্যাপী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কিডনি রোগের বড় একটি কারণ হলো ইচ্ছামত ঔষধ সেবন করা। আমাদের শরীরে যখন কোন সাধারণ রোগ দেখা দেয় কিংবা শরীরের কোন অঙ্গে ব্যথা হয়, আমরা তখনই পরামর্শ ছাড়াই ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে সেবন করি। দেশের অধিকাংশ ফার্মাসিস্টই স্বাস্থ্য জটিলতা সম্পর্কে অবগত নন। পরে তাদের দেওয়া ওষুধ খেয়ে দেহে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়। এর ফলে কিডনির রোগসহ মস্তিষ্ক বিকল ও অন্যান্য রোগ হতে পারে। বিশেষ করে এন্টিবায়েটিকের কারণে কিডনি বিকল হতে পারে। 

পানি শূন্যতার কারণে তাৎক্ষণিকভাবেই কিডনি অকেজো হয়ে পড়ে। নেশা জাতীয় দ্রব্যের কারণেও কিডনি বিকল হয়। এছাড়াও ডায়রিয়া হলে, রক্তক্ষরণ হলে, বমি করলে, ইনফেকশন হলে, সন্তান প্রস্রব পরবর্তী জটিলতায় অতিরিক্ত রক্ষক্ষরণ হলে কিডনিতে প্রভাব পড়ে। হেপাটাইটিস বি, সি ও স্ট্রেপ্টোকক্কাস এর সংক্রমণ, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা কিংবা হঠাৎ ভয় পেলেও কিডনির কার্যক্ষমতা হারাতে পারে।

কিডনি রোগের লক্ষণ | কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণ

সাধারণত ৭০ থেকে ৮০ ভাগ কিডনির রোগের ক্ষেত্রেই প্রাথমিকভাবে কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। কিডনি যখন উচ্চামায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় তখনই তার প্রভাব আমাদের শরীরে স্পষ্ট হয়। সাধারণভাবে কিডনির রোগের যে ধরনের লক্ষণগুলো দেখা দেয়, সেগুলো হলো:

  • স্বাভাবিক প্রসাবের পরিমাণের পরিবর্তন।
  • ক্লান্তি এবং শারীরিক দুর্বলতা।
  • বমি বমি ভাব কিংবা বমি হওয়া।
  • মানসিক তীক্ষ্ণতা হ্রাস বা মনোযোগের ঘাটতি।
  • পেশী জটিলতা বা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাথা অনুভূত হওয়া।
  • শরীরের বিভিন্ন স্থানে চুলকানি হওয়া এবং চর্মরোগ দেখা দেওয়া।
  • শরীরের নিম্নাঙ্গে পানি নেমে যাওয়া। এক্ষেত্রে পা ও গোড়ালি ফুলে যায়।
  • উচ্চ রক্তচাপ।
  • ঘুমের সমস্যা।
  • ক্ষুধামন্দা।
  • কিডনির সমস্যার কারণে হৃদপিণ্ডের আস্তরণের চারপাশে পানি জমা হলে, বুকে ব্যথা হয়।
  • ফুসফুসে পানি জমলে শ্বাসকষ্ট হয়।

এছাড়া কিডনিতে কিছু শারীরবৃত্তীয় পদ্ধতির তারতম্যের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং কিডিনির ছাকনি নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে শরীর থেকে প্রস্রাবের সাথে প্রোটিন বেরিয়ে আসে। মূলত আমাদের কিডনিতে ছোট ছোট মেমরেইন থাকে। এই মেমরেইন দিয়ে শুধুমাত্র দূষিত পানি ও বর্জ্র বের হয়ে যায়, প্রোটিন বের হতে পারে না। কিন্তু মেমরেইন নষ্ট হয়ে গেলে শরীর থেকে প্রোটিনও বেরিয়ে যায়। এর ফলে রক্তনালী থেকে রক্ত, রক্তের পানি, প্লাজমা ইত্যাদি শরীরের বাইরে চলে আসে। বিপরীতে শরীরে পানি এবং পানিতে থাকা লবণ জমে যায় ও উচ্চ রক্তচাপের সৃষ্টি করে।

দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের লক্ষণ | কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ

সাধারণত কিডনির রোগ গুলো হয় নীরব ঘাতক। তাই এটি বেশ কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে কিডনির কার্যকারিতার ধীরগতিসম্পন্ন করে ফেলে। এ ধরনের রোগের ফলে একসময় কিডনি ড্যামেজ হয়ে যায়। এ ধরনের দীর্ঘস্থায়ী কিডনির রোগ ক্রনিক রেনাল ফেইলিওর, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ নামেও পরিচিত। এটি যখন একবার শুরু হয়, তখন সেটি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং কিডনির ক্ষতি হতেই থাকে।

দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগগুলো মানুষের ধারণার চেয়েও বেশি ক্ষতিকর। কারণ কিডনিকে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার আগে এটি সনাক্ত করা যায় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমন হয় যে কিডনির কার্যকারিতা শতকরা ২৫-১৫ ভাগে নেমে আসার আগে পর্যন্ত এটি নিরবে ক্ষতি করে। এর ফলে শরীরের যাবতীয় বর্জ্যগুলো দেহে বিভিন্ন স্থানে জমা হয়ে ক্যান্সার ও অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টি করে।

এক্ষেত্রে উপরোক্ত স্বাভাবিক কিডনি রোগের লক্ষণগুলো ছাড়াও হঠাৎ করে তীব্র ব্যথা, ত্বকে ঘা হওয়া ও পানি জমা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়।  

কিডনি ভালো রাখার উপায়

মূলত কিডনি প্রায় ৭০-৮০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর প্রকাশ পায়। তাই দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের সম্পূর্ণ নিরাময় করার উপযুক্ত চিকিৎসা বর্তমানে নেই। তবে কিছু স্বাস্থ্য সচেতনতা, থেরাপি এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা এসকল রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। যেমন: 

ফসফেট ভারসাম্য বজায় রাখা: কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা শরীর থেকে অতিরিক্ত ফসফেট নির্মূল করতে সক্ষম নাও হতে পারে। তাই শরীরে ফসফেট জমে কিডনি সম্পূর্ণ ড্যামেজ কিংবা অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দেয়। তাই রোগীদের ফসফেট গ্রহণ, যেমন- লাল মাংস, মাছ, ডিমের পাশাপাশি দুগ্ধজাত দ্রব্য খাওয়া কমাতে পরামর্শ দেওয়া হয়। 

অ্যান্টি-সিকনেস মেডিকেশন: কিডনি কার্যক্ষমতা কমে গেলে শরীরে টক্সিন তৈরি হয় এবং রোগী আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই এক্ষেত্রে ডাক্তাররা অ্যান্টি-সিকনেস জাতীয় ঔষধ দিয়ে জটিলতা কমাতে সহায়তা করে।

দেহে রক্তের ভারসাম্য বজায় রাখা: কিডনির রোগের ফলে দেহে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। তাই কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীর প্রতিদিনের ফেরাস সালফেট ট্যাবলেট বা ইনজেকশন আকারে আয়রন সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন হতে পারে।

এছাড়াও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

কিডনি ভালো রাখার ঘরোয়া উপায়

অধিকাংশ কিডনি রোগের মূল কারণ আমাদের অনিয়ন্ত্রিত জীবন ব্যবস্থা। স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন পদ্ধতি অনুসরণ করার মাধ্যমে সুস্থ থাকা সম্ভব। কিডনি ভালো রাখতে সর্বদা নিচের ঘরোয়া উপায় গুলো অনুসরণ করুন:

(১) প্রচুর পানি পান করুন

তিনি প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে আমাদের শরীরের পানি পরিশোধন ও প্রক্রিয়াকরণ। তাই কি দেখে ভালো রাখার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো নিয়মিত পরিমাণ মতো পানি পান করা। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের হয়ে যায়। পাশাপাশি অন্যান্য যাবতীয় রোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।

(২) স্বাস্থ্যকর খাবার খান

নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে কিডনিসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলো ভালো থাকে। অতিরিক্ত মসলাদার, ঝাঁঝালো ও তেল যুক্ত খাবার কিডনিসহ সমগ্র দেহের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার, লবণ, চিনি কিডনির ক্ষতি করে। তাই এগুলো পরিহার করতে হবে। এর বিপরীতে পটাশিয়ামযুক্ত কলা, কমলালেবু, পালংশাক, ফলমূল ও সবুজ শাকসবজি খেতে হবে।

(৩) রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন

কিডনির রোগের সবচেয়ে বড় কারণ ডায়াবেটিস বা রক্তে উচ্চমাত্রায় শর্করা থাকা। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ আমাদের কিডনি এবং সমগ্র শরীরের ক্ষতি করে। তাই নিয়মিত রক্তচাপ এবং শরীরের শর্করার পরিমাণ চেক করান এবং তা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।

(৪) ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন

যেকোন প্রকার নেশা জাতীয় দ্রব্যই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপান করলে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যায়। তাই সামগ্রিকভাবে এগুলো ত্যাগ করতে হবে।

(৫) ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যথার ওষুধ কম খান

আমরা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই শরীর ব্যথা হলে ফার্মেসি থেকে ওষুধ খেয়ে থাকি। এগুলো সরাসরি আমাদের কিডনির ক্ষতি করে। তাই কিডনির ড্যামেজ রোধ করতে বিভিন্ন ব্যথার ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিক যথাসম্ভব কম খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

(৬) নিয়মিত ব্যায়াম করুন

ব্যায়াম আমাদের শরীরকে যাবতীয় রোগব্যাধি থেকে মুক্ত রাখতে সহায়তা করে। তাই সুস্থ সবল দেহের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন: জন্ডিস (Jaundice): কারণ, লক্ষন, প্রকারভেদ

কিডনি টেস্ট নাম লিস্ট

একজন রোগী যখন কিডনির সমস্যায় ভোগে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন, তখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কিছু টেস্ট করতে দেয়। রোগীর অবস্থা অনুযায়ী কোন টেস্টটি করাতে হবে, তা নির্ভর করে। এর মধ্যে, উল্লেখযোগ্য টেস্টগুলো হলো:

  • ক্রিয়েটিনিন টেস্ট
  • প্রস্রাবের অ্যালবুমিন পরীক্ষা
  • ইজিএফআর
  • ইউরিন রুটিন অ্যান্ড মাইক্রোস্কোপি টেস্ট (আর/এমই)
  • কিডনি আল্ট্রাসাউন্ড (ইউএসজি)

এছাড়াও সিবিসি, ইলেক্ট্রোলাইটস, ক্যালসিয়াম, ফসফেট, পিটিএইচ, ভিটামিন ডি, রক্তে চিনির মাত্রা, রক্তচাপ, হিমোগ্লোবিন ইত্যাদি চেকআপ করাতে হয়।

কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়

একজন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ নিয়মিত শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চেকআপ করা। আপনাকে নিয়ে ভালো আছে কিনা, তা বোঝার জন্য নিম্নোক্ত ২টি চেকআপ করাতে পারেন:

(১) Albumin-to-creatinine ratio (ACR)

ACR মূলত একটি মূত্র পরীক্ষা পদ্ধতি। এর মাধ্যমে একজন মানুষের ইউরিনে অ্যালবুমিন ও ক্রিয়েটিনিনের অনুপাত নির্ণয় করা হয়। আমাদের দেহের জন্য প্রোটিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই রক্তে প্রোটিন থাকে। কিন্তু যখন ACR পরীক্ষা করে ইউরিনে প্রোটিন পাওয়া যায়, তখন কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার লক্ষণ প্রকাশ করে। ACR টেস্ট করানোর পর প্রোটিন পজিটিভ হলে NFR টেস্ট করাতে হবে। এভাবে তিন মাস বা তার বেশি সময় ধরে ACR টেস্ট এর ফলাফল প্রোটিন পজিটিভ হলে বুঝতে হবে কিডনি ভালো নেই।

(২) Glomerular filtration rate (GFR)

একটি সুস্থ সবল কিডনি রক্ত থেকে ক্রিয়েটিনিন বা বর্জ্য পদার্থ ঠিকমতো বের করে দেয়। ক্রিয়েটিনিন টেস্ট করার পর তার মাত্রা ঠিক না থাকলে, GFR টেস্ট করাতে হবে। তারপর বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে সেই টেস্টের রিপোর্ট দেখানো হলেই আপনার কিডনি ভালো আছে কিনা বুঝতে পারবে।

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো?

কিডনির পয়েন্ট বলতে আমরা সাধারণত কিডনিতে ক্রিয়েটিনিনের মাত্র কি নির্দেশ করে থাকে। মানবদেহে ক্রিয়েটিনিন একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় বজায় থাকলে তা সুস্থতা নির্দেশ করে। বিভিন্ন বয়সী নারী পুরুষের জন্য এই ক্রিয়েট নিন বা কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো তা নিচে তুলে ধরা হলো:

  • পুরুষের শরীরে ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা ০.৭ থেকে ১.৪ এমজি ডি এল।
  • নারীদের শরীরে ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা ০.৬ থেকে ১.২ এমজি ডি এল।
  • যাদের ১টি কিডনি নেই, তাদের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ১.৮ মিলিগ্রাম।
  • কিশোরদের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা ০.৫ থেকে ১.০ মিলিগ্রাম।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ০.৩ থেকে ০.৭ মিলিগ্রাম ডিএল।

উপরোক্ত ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা অতিক্রম করলে কিডনির জন্য ক্ষতিকর। তাই এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। রক্তের ক্রিয়েটিনিনের পয়েন্ট বা কিডনির পয়েন্ট নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিচের নির্দেশনা গুলো অনুসরণ করতে পারেন:

  • ক্রিয়েটিনযুক্ত পরিপূরকগুলি এড়িয়ে চলুন।
  • প্রোটিন গ্রহণ কমান।
  • বেশি করে ফাইবারযুক্ত খাবার খান।
  • দেহ হাইড্রেটেড রাখুন।
  • লবণ কম খান।
  • ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।
  • স্ট্রেন সৃষ্টিকারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন।
  • ক্যামোমাইল চা পান করুন।
  • সম্ভব হলে নিয়মিত করলা খান।

কিডনির রোগ প্রতিরোধে করণীয়

যেসকল কিডনি রোগীদের কিডনির ড্যামেজ দেখা দিয়েছে, তাদের জন্য পরিপূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে ওঠা কঠিন। কিডনি রোগের প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। সাধারণ ও নিয়মমাফিক জীবন ব্যবস্থা অনুসরণের মাধ্যমেই কিডনির ক্ষতি থেকে বাঁচা সম্ভব। তাই কিডনির রোগ প্রতিরোধে করণীয় গুলো জেনে আজ থেকেই সঠিক জীবন পদ্ধতি অনুসরণ করুন:

  • নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে। বছরে অন্তত দুবার কিডনির পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো।
  • চেকআপে কোন সমস্যা দেখা দিলে, অল্প থাকতেই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • নেফ্রাইটিস থাকলে চিকিৎসা করতে হবে।
  • ডায়রিয়া ও বমি হলে পানিশূন্যতা দূর করতে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।
  • প্রোস্টেট ব্লক থাকলে চিকিৎসা করতে হবে।
  • প্রস্রাব কমে গেলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। প্রস্রাবের ইনফেকশন যখন রক্তে ছড়ায় তখন এটি কিডনিকে খারাপ করে দেয়। এজন্য ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

এছাড়াও উপরোক্ত আলোচনায় উল্লেখিত কিডনি ভালো রাখার উপায়গুলো মেনে চলতে হবে।

শেষকথা

কিডনি আমাদের হার্টের ও রক্তের কার্যক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে, দেহের বর্জ্য পরিশোধন করে এবং মানুষকে বেঁচে থাকার নতুন চালিকাশক্তি দেয়। আমাদের স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার পেছনে কিডনির কার্যক্ষমতা ব্যাপক। তাই কিডনি রোগের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জেনে সঠিকভাবে জীবনযাপন করতে হবে।

About Durud Ahmed

সম্মানিত ভিজিটর আমি দুরুদ আহমেদ,পেশায় আমি একজন ব্লগ লেখক। প্রযুক্তি ও শিক্ষা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, লাইফস্টাইল এবং ইসলামিক লেখাই আমার প্রিয়। এই ব্লগের মাধ্যমে আমি সঠিক তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ভিজিটরদের সহযোগিতা করাই মূল লক্ষ্য।