জরায়ু ক্যান্সার, জরায়ু টিউমার ইত্যাদি প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত রোগ গুলো নারীদের জীবনের ত্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী এখন জরায়ু ক্যান্সারের বিস্তার হচ্ছে প্রতিনিয়তই। একবার এই ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে তা থেকে রেহাই পাওয়া কঠিন। এর প্রতিকার থেকে প্রতিরোধেই সুস্বাস্থ্যের সম্ভাবনা বেশি। তাই জরায়ু ক্যান্সারের সামগ্রিক তথ্য এবং জরায়ুর বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলী জেনে নিন এই লেখা থেকে।
জরায়ু কি?
জরায়ু হলো মানুষসহ বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জননতন্ত্রের একটি প্রধান হরমোন-প্রতিক্রিয়াশীল স্ত্রী গৌণ-জননাঙ্গ।
জরায়ু ক্যান্সার
জরায়ুর ক্যান্সার এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার নামেও পরিচিত। সাধারণত এন্ডোমেট্রিয়ামে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি থেকে উদ্ভূত হয় জরায়ু ক্যান্সার। ২০ বছরের কম বয়সীদের সাধারণত এ রোগ হয় না। অধিকাংশ আক্রান্তরাই সাধারণত ৩৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সী হয়ে থাকেন। এমনকি ৬০ বছরের পরও এ রোগ হতে পারে। উপযুক্ত চিকিৎসায় এই রোগ থেকে শতভাগ আরোগ্য সম্ভব। সাধারণত এই রোগের কোনো উপসর্গ থাকে না বা শারীরিক পরীক্ষায় কোনো চিহ্ন বা ক্ষত পাওয়া যায় না।
প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অস্ত্রোপচার বা ঔষধ সেবনের মধ্যে দিয়ে অধিকাংশ ধরনের গর্ভাশয় ক্যান্সার নিরাময় করা সম্ভব। কিন্তু ক্যান্সার যদি জরায়ু কলা অতিক্রম করে ছড়িয়ে পরে, তখন কেমোথেরাপি, বিকিরণ থেরাপির সমন্বয়ে, অথবা অস্ত্রোপচারের মত আরও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী এই ক্যান্সারে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বহু নারী প্রতিদিন মৃত্যুবরণ করছে।
জরায়ুর বিভিন্ন প্রকার রোগ
নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের সাথে সম্পর্কিত জরায়ু -তে বিভিন্ন প্রকার স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। জরায়ুজনিত রোগগুলো একজন নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যকে উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রভাবিত করে। সময়মত রোগ নির্ণয় এবং উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন প্রকার রোগ সম্পর্কে পূর্ব ধারনা রাখা সকলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণভাবে জরায়ুতে যে ধরনের স্বাস্থ্যসমস্যা গুলো সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সেগুলো হলো
(১) জরায়ু ক্যান্সার: সাধারণত জরায়ুতে নারীদের যে সকল স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়, তার মধ্যে জরায়ুর ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি নারীদেহে সংক্রমণ করতে পারে। এটা জরায়ুর বিভিন্ন অংশকে প্রভাবিত করে। জরায়ুর ক্যান্সারের ধরনগুলোর মধ্যে এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার সবচেয়ে সাধারণ। এই ধরনের ক্যান্সারের ফলে অস্বাভাবিক রক্তপাত, ব্যথা, অনিচ্ছাকৃত ওজন হ্রাস ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। এর থেকে মুক্তি পেতে এবং সফল চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো প্রাথমিক শনাক্তকরণ। ক্যান্সার সংক্রমণের সময়কাল যত বাড়বে, ক্ষতির সম্ভাবনা ততই বৃদ্ধি পাবে।
(২) এন্ডোমেট্রিওসিস: এন্ডোমেট্রিওসিস একটি অত্যন্ত ক্ষতিকারক স্বাস্থ্য সমস্যা। মূলত এই সংক্রমনের ফলে জরায়ুর আস্তরণের অনুরূপ টিস্যু জরায়ুর বাইরে বৃদ্ধি পায়। এর ফলে জরায়ুর আস্তরণের ও বাইরের টিস্যু গুলো হরমোনের পরিবর্তনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া করে। ফলে নারীদের দেহে জ্বালাতন, ব্যথা ও প্রজনন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
(৩) জরায়ু ফাইব্রয়েড: জরায়ু ফাইব্রয়েড একজন নারীর সন্তান ধারণকালীন সময়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই ফাইব্রয়েড জনিত কোষগুলো আকার এবং সংখ্যায় পরিবর্তিত হতে পারে। এটি জরায়ুতে ক্যান্সারের কোন পূর্ব লক্ষণ ছাড়াই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। এক সময় জরায়ুর অংশে ব্যথা, ভারী মাসিক রক্তপাত এবং কিছু ক্ষেত্রে পরবর্তী গর্ভধারণকালীন সময়ে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা ও ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দেয়।
(৪) অ্যাডেনোমায়োসিস: অ্যাডেনোমায়োসিস সমস্যার ক্ষেত্রে, জরায়ুর আস্তরণের টিস্যু পেশী দেয়ালে অনুপ্রবেশ করে। এর সাথে এন্ডোমেট্রিওসিসের অনেকাংশেই মিল রয়েছে। এটি জরায়ুর বর্ধিত অংশ সৃষ্টি, গুরুতর মাসিক ক্র্যাম্প, ভারী মাসিক রক্তপাত এবং কিছু ক্ষেত্রে গর্ভধারণকালীন ও গর্ভধারণ জনিত সমস্যার সৃষ্টি করে।
(৫) পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম: মূলত প্রাথমিকভাবে এটি ডিম্বাশয়ের একটি রোগ। তবে এটি জরায়ুকে ক্ষতিকরভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে অনিয়মিত পিরিয়ড, ডিম্বাশয়ে সিস্ট এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। বিভিন্ন বিপাকীয় সমস্যা এবং নারীদের গর্ভধারণের ক্ষমতা হ্রাসের ক্ষেত্রেও এই রোগটি অবদান রাখতে পারে।
(৬) পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ: পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ হলো এমন একটি সংক্রমণ, যা জরায়ুসহ অন্যান্য প্রজনন অঙ্গকে প্রভাবিত করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যৌন সংক্রামিত সংক্রমণের কারণে, পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজের চিকিৎসা না করা হলে, জ্বালাতন, দাগ এবং দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা হতে পারে। এছাড়াও যখন পেলভিক ফ্লোরের পেশী দুর্বল হয়ে যায়, তখন জরায়ু যোনি দিকে নেমে আসে। এই অবস্থার ফলে অস্বস্তি, প্রস্রাবের অসংযম এবং মলত্যাগে অসুবিধা হতে পারে।
(৭) আশারম্যানস সিনড্রোম: এই ধরনের সিনড্রোমের ফলে জরায়ুর ভিতরে দাগ টিস্যু গঠিত হয়। মূলত এটি পূর্ববর্তী জরায়ু অস্ত্রোপচার বা সংক্রমণের কারনে হয়ে থাকে। এই দাগের কারনে অনিয়মিত মাসিক, বারবার গর্ভধারণ হ্রাস এবং গর্ভধারণের জন্য উর্বরতা কমতে থাকে।
যেহেতু জরায়ু প্রজনন স্বাস্থ্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তাই প্রতিটি নারীরই নিয়মিত গাইনোকোলজিকাল চেক-আপ, রোগের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সাথে স্বাস্থ্য সম্পর্কে কথা বলা জরুরী। জরায়ু রোগের কার্যকর ব্যবস্থাপনার জন্য রোগের প্রাথমিক সনাক্তকরন অপরিহার্য। এই সচেতনতার মাধ্যমে মহিলাদের সামগ্রিক প্রজনন সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব।
জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ
- পেটে অতিরিক্ত ব্যথা কিংবা পেট ফুলে থাকা।
- শ্রোণিদেশে ব্যথা এবং যৌনমিলনের সময় ব্যথা পাওয়া।
- নিম্নাঙ্গের চারপাশে চাপ লাগা কিংবা ঘনঘন মূত্রত্যাগ করা।
- পা ফুলে যেতে থাকা।
- কিডনি ফেইলিউর।
- নারীদের মেনোপজ হওয়ার পরও ব্লিডিং হওয়া।
- হাড়ে ব্যথা হওয়া।
- ওজন কমতে থাকা এবং ক্ষুধামন্দা।
- দুর্বলতা অনুভব করা এবং বমি বমি ভাব কিংবা বারবার বমি হওয়া।
- গ্যাস, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং হালকা খাবারের পর পেট ভর্তি লাগা, পেটে অস্বস্তি লাগা ইত্যাদি।
সামগ্রিকভাবে, পেটের কোনো সমস্যা খুব বেশি হলে তা জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
জরায়ু ক্যান্সার শনাক্তকরণের উপায়
জরায়ু ক্যান্সার শনাক্তকরণের একটি সহজ পরীক্ষা হলো পেপস স্মেয়ার টেস্ট (প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট)। এটি একটি ব্যথামুক্ত ও সাশ্রয়ী পরীক্ষা পদ্ধতি, তাই সকল বয়সীদের জন্যই উপযুক্ত। সাধারণত বিবাহিত নারীদের ২১ বছর বয়সের পর থেকে এই পরীক্ষাটি নিয়মিত করা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যেহেতু জরায়ু ক্যান্সারের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে তেমন কোন পূর্ব পাওয়া যায় না। তাই ২১ বছরের পর থেকে প্রতি ২ বছরে একবার এই পরীক্ষা করানোই হবে সচেতনতা মূলক কাজ।
পরবর্তীতে, ৩০ থেকে ৬৪ বছর বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে, যাদের ফলাফল ৩ বার স্বাভাবিক এসেছে, তারাও ৩ বছর পর পর এই পরীক্ষা করানো উচিত। মূলত এই পদ্ধতিতে নারীদের জরায়ুমুখ থেকে রস নিয়ে অণুবীক্ষণযন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে ক্যান্সার, ক্যান্সার হওয়ার পূর্বাবস্থা ও জরায়ুমুখের অন্যান্য রোগ শনাক্ত করা হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে রুটিনমাফিক এই চেকআপ করালে জরায়ু ক্যান্সার শনাক্ত করা সহজ হবে।
জরায়ু ক্যান্সারের চিকিৎসা
জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের অতি দ্রুত চিকিৎসা করা গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই ধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে ক্যান্সারের পর্যায়, ক্যান্সারের ধরন এবং রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর। বর্তমানে জরায়ু ক্যান্সারের জন্য নারীদের সাধারণ এবং কার্যকর চিকিৎসা ব্যবস্থা গুলো হলো:
(১) সার্জারি করা
জরায়ু ক্যান্সারের জন্য সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসাগুলোর মধ্যে সার্জারি অন্যতম। এই অস্ত্রোপচার পদ্ধতির মধ্যে জরায়ু অপসারণ করাও জড়িত। এটিকে হিস্টেরেক্টমি বলা হয়ে থাকে। জরায়ু অপসারণের পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে ফ্যালোপিয়ান টিউব এবং ডিম্বাশয় অপসারণ করেও এই ধরনের ক্যান্সারের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। এছাড়াও ক্যান্সারের বিস্তার পরীক্ষা করার জন্য, অস্ত্রোপচারের সময় লিম্ফ নোড ডিসেকশন পদ্ধতি ব্যবহার করে জরায়ুর লিম্ফ নোডগুলো সরিয়ে ফেলা যায়।
(২) রেডিয়েশন থেরাপি
উচ্চ-শক্তির বাহ্যিক রশ্মি শরীরের বাইরে থেকে ক্যান্সার কোষগুলোতে নির্দেশিত হয়। রেডিয়েশন থেরাপির ফলে জরায়ুতে থাকা ক্যান্সারের কোষগুলো ধীরে ধীরে নিশ্বেষ হতে থাকে। এছাড়াও ব্র্যাকিথেরাপির মাধ্যমে তেজস্ক্রিয় পদার্থ সরাসরি জরায়ুর টিউমারের মধ্যে বা কাছাকাছি স্থাপন করে চিকিৎসা করা হয়।
(৩) কেমোথেরাপি
কেমোথেরাপি সকল ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের জন্যই অত্যন্ত কার্যকর একটি চিকিৎসা ব্যবস্থা। মূলত এই পদ্ধতিতে ক্যান্সারের কোষগুলোকে মেরে ফেলার জন্য বা তাদের বৃদ্ধি ধীর করার জন্য ক্যান্সার বিরোধী ওষুধ মৌখিকভাবে বা শিরায় দেওয়া হয়। ক্যান্সার যখন জরায়ুর বাইরে ছড়িয়ে পড়ে, তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কেমোথেরাপি ব্যবহার করা হয়।
(৪) হরমোন থেরাপি
নির্দিষ্ট কোন ধরণের জরায়ু ক্যান্সারের জন্য, হরমোন থেরাপি প্রয়োগ করা হয় ক্যান্সার উৎপাদনকারী বা বৃদ্ধিকার হরমোন গুলোকে ব্লক করার জন্য। এর ফলে ক্যান্সারের কোষগুলো বৃদ্ধি হ্রাস পায় এবং দীর্ঘ সময় ধরে অন্যান্য চিকিৎসার ব্যবস্থা প্রয়োগ করার সুযোগ পাওয়া যায়।
(৫) ইমিউনোথেরাপি
ইমিউনোথেরাপি হলো একটি আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। তবে এটি প্রাচীনকাল থেকেই মানবদেহে রোগ থেকে মুক্তি পেতে প্রকৃতিগতভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ইমিউনোথেরাপি শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে ক্যান্সার কোষ চিনতে এবং আক্রমণ করতে সাহায্য করে। বর্তমানে এটি জরায়ু ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য গবেষণার একটি ক্রমবর্ধমান ক্ষেত্র।
(৬) অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি
জরায়ু ক্যান্সারের জন্য বিভিন্ন লক্ষ্যযুক্ত ওষুধ আবিষ্কার করা হয়েছে, যা শুধুমাত্র সেই ক্যান্সারের কোষগুলোকেই ক্ষতিগ্রস্ত করব। এটি ক্যান্সারের বৃদ্ধিতে কাজ করা অনুগুলোকে ধ্বংসপ্রাপ্ত করে নতুন রূপে গঠন করতে সহায়তা করে। বিভিন্ন প্রকার ঔষধের মাধ্যমে এই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতিকে এক ধরনের থেরাপির সংমিশ্রণও বলা যায়।
চিকিৎসা গ্রহণের সময় ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে থাকা অবস্থায় পরীক্ষামূলক চিকিৎসা বা বিদ্যমান থেরাপির নতুন সংমিশ্রণে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে এই ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে, পুনরাবৃত্তির কোনও লক্ষণের জন্য নিরীক্ষণ এবং চিকিৎসার সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত ফলো-আপ চিকিৎসা ব্যবস্থা অনুসরণ করতে হবে।
জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য তাদের নির্দিষ্ট পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে কোন চিকিৎসা পরিকল্পনাকে উপযুক্ত হবে, তা নির্ধারণ করতে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ। সামগ্রিকভাবে একটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান জরায়ু ক্যান্সার আক্রান্তদের প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা প্রধানের পাশাপাশি তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সহায়তা করে।
কারা জরায়ুর ক্যান্সারের ঝুঁকিতে আছেন
- যাদের ১৬ বছর বয়সের আগেই যৌনসংগমের অভিজ্ঞতা আছে কিংবা পিরিয়ড শুরুর ১ বছরের মধ্যেই যৌন সঙ্গম শুরু করেছিল।
- শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি থাকলে।
- অনেকজন যৌনসঙ্গী থাকলে। স্বামী বা যৌন সঙ্গীর শরীরে পূর্বেই এই ভাইরাসটি থাকলে।
- জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য ৫ বছরের বেশি সময় ধরে ট্যাবলেট বা পিল সেবন করে থাকলে।
- ধূমপানকারী হলে।
- এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া ইত্যাদি রোগ থাকলে।
- ধূমপানের অভ্যাস আছে যাদের।
জরায়ু ক্যান্সারের প্রতিরোধের উপায়
যেকোন প্রকার ক্যান্সারের প্রতিকার থেকে প্রতিরোধই উত্তম। বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী এ ক্যান্সারে আক্রান্ত সংখ্যা বিপুল স্যারের বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এর সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডও বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণত ১০ বছর বয়সের পর থেকেই জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধক টিকা নেওয়া যায়। আক্রান্ত হয়ে ক্যান্সার সংঘটনের পর এই টিকা আর কোনো কাজে আসে না। তাই আক্রান্ত হওয়ার আগেই এই টিকা গ্রহণ করা উচিত।
আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের নিয়মানুযায়ী ৯-২৫ বছর বয়সে এ টিকা কার্যকর হয়। তবে গর্ভাবস্থায় এ টিকা প্রদানের অনুমোদন নেই। পাশাপাশি এইচপিভি-১৬, এইচপিভি-১৮, এইচপিভি-৬, এইচপিভি-১১-এর প্রতিরোধক টিকাও গ্রহন করা যায়। এছাড়াও জনসচেতনতামূলক ভাবে বাল্য বিবাহ রোধ, অধিক সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম নীতি মানতে হবে। অন্যদিকে, ধূমপান করা, পানের সাথে জর্দা, সাদা পাতা দাঁতের গোড়ায় গুল রাখা ইত্যাদি কারনে এই ক্যান্সারে আক্রান্তের সম্ভাবনা বাড়ে। তাই এগুলো পরিহার করতে হবে।
আরও পড়ুন: নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায়
তদুপরি, একজন নারীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, সুষম খাবার খাওয়া, স্বাস্থ্যসম্মত ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপন এবং সামাজিক অনুশাসন মান্য করতে হবে। নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমেও এর ঝুঁকি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে জরায়ু ক্যান্সার এর বিস্তার
সর্বশেষ ২০১০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রায় ১৩,০০০ নারী নতুন করে জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং বছরে প্রায় ৬,৬০০ নারী মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে এই সংখ্যা আরো বহু শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের জরায়ুমুখ ক্যান্সার আক্রান্ত নারীদের মধ্যে অধিকাংশেরই বয়স ছিল ৪০ থেকে ৪৯। তবে ২০-২৯ বছর বয়সী নারীও ছিল অনেক।
শেষকথা
উপরোক্ত স্বাস্থ্য সচেতনতা অবলম্বনের মাধ্যমেই এই ক্যান্সার এর ঝুঁকি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও জরায়ু টিউমারের লক্ষণ, জরায়ু বড় হওয়ার কারন কি, জরায়ু মুখ খোলার লক্ষণ, জরায়ু অপারেশন খরচ কত বাংলাদেশে ইত্যাদি বিষয়ে জানতে সরাসরি বিশেষজ্ঞদের সাথে যোগাযোগ করুন।