কিবোর্ড কী? কিভাবে কাজ করে, কিবোর্ডের অংশবলী ও প্রকারভেদ 

কিবোর্ড কি, কিবোর্ড কাকে বলে, কিবোর্ড কিভাবে কাজ করে, কিবোর্ডে কি কি অংশ থাকে এবং কোন ধরনের Key গুলো কিভাবে কাজে লাগে, কিবোর্ডের প্রকারভেদ ইত্যাদি সামগ্রিক বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই জানা নেই। তাই এসকল কৌতুহলপূর্ণ প্রশ্নের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো এই লেখাতে। একটি কম্পিউটারে যে সকল ইনপুট ডিভাইস ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এবং গুরুত্বপূর্ণ হলো কিবোর্ড। বিগত দশক গুলোতে ব্যবহৃত টাইপরাইটার বিবর্তিত হয়েই মূলত বর্তমানে ব্যবহৃত কিবোর্ড তৈরি হয়েছে। এটি একটি কম্পিউটারের অবিচ্ছেদ্য এবং অপরিহার্য অংশ। সামগ্রিকভাবে বলা যায় একটি কিবোর্ড ছাড়া একটি কম্পিউটারকে কখনোই চাহিদা অনুযায়ী পরিচালনা করা সম্ভব নয়।

কিবোর্ড কী?

কম্পিউটারের প্রধান একটি ইনপুট ডিভাইস হলো কিবোর্ড। এটি কন্ট্রোল বোর্ড নামেও পরিচিত। এই ইনপুট ডিভাইসের মধ্যে বিভিন্ন বর্ণ, সংখ্যা এবং বিশেষ চিহ্নের বিভিন্ন কি সারিবদ্ধভাবে সাজানো থাকে। এগুলো কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইসে কোনো কিছু ইনপুট দিতে সাহায্য করে। সাধারণত একটি কিবোর্ড USB ক্যাবল কিংবা ব্লুটুথ অ্যাডাপ্টারের সাহায্যে কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকে। 

বর্তমান সময় পর্যন্ত এটি কম্পিউটারের সবচেয়ে বেশি ব্যাবহারযোগ্য এবং ব্যবহৃত ইনপুট ডিভাইস। এই ডিভাইসের ভিন্ন ভিন্ন Key এর মাধ্যমে, কম্পিউটারের প্রায় সকল প্রকার ইনপুট দেওয়া যায়। মূলত এর ভিতরে একটি ছোট প্রসেসরযুক্ত সার্কিট এবং কতগুলো সহায়ক আইসি (Integrated Circuit) থাকে। এতে থাকা প্রতিটি ‘কি’ এক ধরণের সুইচ, যা সারি এবং কলামের সমন্বয়ে সাজানো থাকে।

কিবোর্ড কাকে বলে?

যে ডিভাইসের মাধ্যমে কোনো কম্পিউটারকে টেক্সট বা কমান্ড লিখে কোনো ইনপুট দেওয়া হয়, তাকে কিবোর্ড বলে। ভিন্নভাবে বলতে গেলে, যে প্রধান ইনপুট ডিভাইসের মাধ্যমে কম্পিউটারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়, তাকে কিবোর্ড বলে।

কিবোর্ড কাকে বলে?
কিবোর্ড কাকে বলে?

কিবোর্ড কীভাবে কাজ করে? 

কম্পিউটার এবং তথ্য প্রযুক্তির বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে আমাদের আগ্রহের শেষ নেই। কম্পিউটারের ইনপুট ডিভাইসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ইনপুট ডিভাইসটি হলো কিবোর্ড। দৈনন্দিন ব্যবহার করলেও এই কিবোর্ডটি কিভাবে একটি কম্পিউটারে ইনপুট সংকেত পাঠায় তা জানারও গুরুত্ব রয়েছে।

মূলত একটি কিবোর্ডের মধ্যে কম্পিউটারে ইনপুট সংকেত পাঠানোর জন্য বিভিন্ন রকমের Key ছাড়াও নিজস্ব প্রসেসর, রম ও সার্কিট বোর্ড থাকে। কিবোর্ডের সার্কিট বোর্ডটির বড় একটি অংশ কিবোর্ডের কিপ্যাড অংশের নিচে ছড়িয়ে থাকে। এটিকে কি ম্যাট্রিক্স বলা হয়। সেই সার্কিট বোর্ডটির প্রতিটি কি ক্যাপ-এর নিচে একটি করে সুইচ থাকে। কম্পিউটারে কোন কিছু ইনপুট দেওয়ার জন্য আমরা যখনই একটি ‘কি’ চাপ দেওয়া হয় তখনই সেই সুইচটিতে চাপ পড়ে। এতে করে সার্কিটের ঐ অংশের ভেতর দিয়ে স্বল্প পরিমাণে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। 

এই সময় বিদ্যুৎ প্রবাহের সাথে সাথেই কিবোর্ডের প্রসেসর সেই তড়িৎ সিগন্যালটি ধরে ফেলে এবং রমে সংরক্ষিত ডাটার সাথে তা মিলিয়ে দেখে। রম -এর মেমোরি অনুযায়ী নির্দিষ্ট চিহ্ন সম্বলিত ‘কি’ প্রেস করা হলে, সে অনুযায়ী কম্পিউটারে ইনপুট দেওয়া হয়। তবে একই সাথে দুইটি কি বা বাটন প্রেস করা হলে, দুটির মধ্যে রম -এর মেমোরি অনুযায়ী কি সম্পৃক্ততা আছে, তা যাচাই করে কম্পিউটারে ইনপুট দেওয়া হয়। যেমন: Ctrl এবং c একসাথে চাপলে, সিলেক্ট করা নির্দিষ্ট লেখাটি কপি‌ হয়ে যায়। আবার Ctrl এবং P একসাথে চাপলে, কপি করা লেখাটি পেস্ট করা যায়।

কিবোর্ডের বিভিন্ন অংশ 

একটি কিবোর্ড কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন অংশের সমন্বয়ে গঠিত হয়। মূলত কিবোর্ডে বিভিন্ন প্রকার কি বা কি ক্যাপ থাকে। আমাদের কম্পিউটার গুলোতে আমরা যে ধরনের কিবোর্ড ব্যবহার করে থাকি, সেগুলোতে ১০৪ থেকে ১০৬ টি পর্যন্ত কি ক্যাপ থাকে। কিবোর্ডের এসকল কি-ক্যাপ গুলোকে প্রধানত ৪টি ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো: 

  1. ক্যারেক্টার কি (Character Key) বা অ্যালফাবেটিক কি (Alphabetic Key)
  2. কন্ট্রোল কি (Control Key)
  3. ফাংশন কি (Function Key) 
  4. নিউমেরিক কিপ্যাড (Numeric Keypad)
  5. বিশেষ কি বা স্পেশাল কি (Special Key)

নিচে কিবোর্ডের এসকল অংশ গুলোর সাধারন পরিচিতি তুলে ধরা হলো:

(১) ক্যারেক্টার কি (Character Key) বা অ্যালফাবেটিক কি (Alphabetic Key)

আমরা যেসব ‘কি’ ব্যবহার করে সাধারণত বিভিন্ন অক্ষর/ বর্ণ/ Letter লিখে থাকি, মূলত সেগুলোকেই টাইপিং কি বলা হয়। একটি কিবোর্ডে সবচেয়ে বেশি থাকে টাইপিং কি। প্রায় সবধরনের কিবোর্ডে টাইপিং কি’ গুলো ৩টি সারিতে ভাগ করা থাকে। এই  টাইপিং কি’ -গুলোর অবস্থানের ভিত্তিতেই কিবোর্ডের ধরন নির্ধারন করা হয়। টাইপিং কি -এর সারিগুলো হলো:

  • ১ম সারি বা টপ রো (Top Row) 
  • ২য় সারি বা হোম রো (Home Row)
  • ৩য় সারি বা বটম রো (Bottom Row) 

(২) কন্ট্রোল কি 

‘কন্ট্রোল কি’ – বলতে মূলত কিবোর্ডের সাহায্যে কম্পিউটারের কিছু নির্দেশনা মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য ব্যবহৃত ‘কি’ গুলোকে বুঝানো হয়। ভিন্নভাবে বলতে গেলে, এগুলো হলো কিবোর্ডের শর্টকাট ইন্ডিকেটর। কন্ট্রোল কি -এর সবচেয়ে বেশি পরিচিত চারটি ‘কি’ হলো ৪টি অ্যারো কি। কম্পিউটারে কাজ করার সময় আমরা এই কি গুলো ব্যবহার করে লেখার যেকোনো দিকে কার্সর নেওয়া যায় এক ক্লিকেই। এছাড়াও আরো কিছু ‘কন্ট্রোল কি’ হলো:

  • হোম (Home),
  • ডিলিট (Delete), 
  • ইনসার্ট (Insert),
  • এন্ড (End), 
  • পেজ আপ (Page UP),
  • পেজ ডাউন (Page Down)।

এগুলো ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি কন্ট্রোল কি রয়েছে, যেগুলো আমরা কম্পিউটারে কাজ করার সময় ইনপুট দিতে ব্যবহার করে থাকি।  

(৩) ফাংশন কি 

আমাদের ব্যবহৃত কিবোর্ড গুলোর একদম উপরের সারিতে F1 থেকে F12 লেবেলযুক্ত বারোটি ‘কি’ -হলো ‘ফাংশন কি’। কম্পিউটারে কাজের ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ এই ‘ফাংশন কি’ গুলোকে ‘সফট কি’- ও বলা হয়ে থাকে।

১৯৮৬ সালে IBM তাদের কিবোর্ড গুলোতে কম্পিউটারে ইনপুট দেওয়ার জন্য ফাংশন এবং কন্ট্রোল ‘কি’ যুক্ত করে। মূলত প্রিন্টিং বা ফাইল সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে শর্টকাট কি হিসেবে এই ‘ফাংশন কি’ গুলো বেশি ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও প্রতিটি ‘ফাংশন কি’ কম্পিউটারে কোনো না কোনো বিশেষ কাজের ইনপুট দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা যায়। কম্পিউটারের বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম ও সফটওয়্যার ভেদে এসকল ফাংশন কি গুলো আলাদাভাবে কাজ করে থাকে।

(৪) নিউমেরিক কি

কিবোর্ডের ডানদিকে থাকা সংখ্যাবাচক সারি গুলোই হলো নিউমেরিক কি। এসব কি বা বাটন প্রেস করে কম্পিউটারে বিভিন্ন সংখ্যাজনিত ইনপুট দেয়া হয়। কম্পিউটারে ব্যবহৃত সাধারন কিবোর্ড গুলোর ডানদিকে থাকা ০ থেকে ৯ পর্যন্ত ১০টি সংখ্যা এবং গানিতিক চিহ্ন, যেমন- যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ, দশমিক ইত্যাদি চিহ্ন সম্বলিত কি গুলোই হলো নিউমেরিক কি। কিবোর্ডের এই অংশটি চালু করার জন্য আলাদাভাবে নাম লক (Num Lock) -নামের একটি ‘কি’ পাওয়া যায়। এই কি প্রেস করেই নিউমেরিক কিপ্যাডটি চালু অথবা বন্ধ করতে হয়।

সাধারণত আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহৃত কিবোর্ড গুলোতে এই চারটি অংশই থাকে। তবে প্রকারভেদ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার কিবোর্ডে ভিন্ন ভিন্ন অংশ থাকতে পারে। যেমন: গেমিংয়ের জন্য যে সকল কিবোর্ড ব্যবহার করা হয় সেগুলোতে থাকা অংশগুলো কম্পিউটারের সাধারণ কিবোর্ড থেকে ভিন্ন।

(৫) বিশেষ কি বা স্পেশাল কি

উপরোক্ত Key গুলো ছাড়াও কিবোর্ডে আরো বহু Key রয়েছে, যা প্রেস করে সরাসরি বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। এই বাড়তি Key গুলোর প্রতিটিই কোনো না কোনো বিশেষ কার্য সম্পাদন করে বলে এ সকল Key গুলোকে স্পেশাল কি বলা হয়ে থাকে। আমাদের ব্যবহৃত কিবোর্ড গুলোতে থাকা বিশেষ Key, এবং সেই Key গুলোর ব্যবহার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো:

Shift: একই ওয়ার্ডের মধ্যে বা শুরুতে বড় ও ছোট অক্ষর টাইপ করার জন্য এই Key ব্যবহার করা হয়। যেমন: Bangla, English -এই দু’টি শব্দ লিখতে প্রথম অক্ষরে শিফ্ট Key চেপে ধরে এবং পরের অক্ষরগুলো শিফ্ট Key ছেড়ে দিয়ে লিখতে হবে। শিফ্ট Key এর সাথে ফাংশন Key চেপেও কম্পিউটারকে বিভিন্ন কমান্ড দেওয়া হয়। এছাড়াও বাংলা বর্ণমালা লেখার ক্ষেত্রে অক্ষর বিন্যাস্ত Key এর উপরের ও নিচের লেখা টাইপের জন্য এই Shift Key ব্যবহার করা হয়। 

Ctrl: কিবোর্ডের এই কি -এর সাথে অন্য কোন কি বা বিশেষ কোন কি একসাথে চেপে ধরে কম্পিউটারকে ভিন্ন ভিন্ন কমান্ড দেওয়া যায়। কিবোর্ড ব্যবহারকারীরদের সুবিধার জন্য ডানে ও বামে মোট ২টি Ctrl Key থাকে।

Alt: বিভিন্ন প্রোগ্রামে বিভিন্ন নির্দেশ দেওয়ার জন্য এই Key ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ব্যবহৃত হয় এবং কম্পিউটারকে ভিন্ন ভিন্ন কমান্ড করা যায়।

Enter: কম্পিউটারকে কোন নির্দেশ দিয়ে তা কার্যকর করতে Enter Key ব্যবহার করা হয়। লেখালেখির জন্য নতুন প্যারা তৈরী করতে কিংবা নতুন লাইনে যেতেও এই Key ব্যবহার করা হয়।

Esc: এই Key এর সাহায্যে কোনো নির্দেশ বাতিল করা যায়।

Tab: পর্দায় প্যারাগ্রাফ, কলাম, নম্বর, অনুচ্ছেদ শুরুর স্থান ইত্যাদি প্রয়োজন অনুযায়ী প্রস্তুতের জন্য এই কী ব্যবহার করা হয়।

Caps Lock: এই Key ব্যবহার করে ইংরেজি ছোট হাতের ও বড় হাতের লেখা টাইপ করা হয়।

Pause Break: কম্পিউটারে কোন লেখা যদি দ্রুত গতির জন্য পড়তে অসুবিধা হয় তা হলে এই Key চেপে তা পড়া যায়।

Print Screen: কম্পিউটারের স্ক্রিনে যা কিছু থাকে তা প্রিন্ট করতে চাইলে এই Key ব্যবহার করতে হয়।

Backspace: কোন লেখার পিছনের অংশ মুছে ফেলতে এই Key ব্যবহার করা হয়।

Space Bar: কোন বাক্য লেখার সময় শব্দ গুলোর মাঝে স্পেস দেওয়ার জন্য এই Key ব্যবহার করা হয়। কিবোর্ডের কিগুলোর মধ্যে এই কি টি সবচেয়ে লম্বা হয়

এছাড়া মাল্টিমিডিয়া কীবোর্ডে আরও ৪ টি Key বেশি থাকে। এগুলো হলো:

Start Menu key: এই Key চেপে ষ্টার্ট মেনু ওপেন করা যায় এবং প্রয়োজনীয় কমান্ড করা যায়।

Stand by Mood: এই কি চেপে রাখলে কম্পিউটার চালু থাকবে কিন্তু মনিটর বন্ধ হয়ে যাবে।

Mail key: এই কি চাপলে আউটলুক এক্সপ্রেস চালু হয় এবং তা দিয়ে মেইল পাঠানো যায়। তবে তার জন্য অবশ্যই ইন্টারনেট কানেকশন চালু থাকতে হবে।

Web key: এই কি ব্যবহার করে সরাসরি ওয়েব ব্রাউজার ওপেন করা যায় এবং ইন্টারনেট ব্রাউজ করা যায়।

উপরোক্ত কি গুলো সাধারণত শর্টকাট কি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এগুলো ছাড়াও কম্পিউটারে আরও বহু শর্টকাট ইনপুট দেওয়া যায় একটি কিবোর্ড এর মাধ্যমে। এমনকি প্রায় প্রতিটি Alphabetic Key এর সাথে বিশেষ কি, যেমন: কন্ট্রোল, শিফ্ট, আল্টার ইত্যাদি চেপে আলাদা আলাদা কমান্ড দেওয়া যায়।

কিবোর্ডের প্রকারভেদ

কিবোর্ড বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। সাধারণত নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বর্তমানে বাজারে পাওয়া কিবোর্ড গুলোকে প্রধানত ৩টি প্রকারে ভাগ করা যায়। যথা:

  1. সংযোগ মাধ্যমের উপর ভিত্তি করে কিবোর্ড।
  2. ‘কি’ এর ধরনের উপর ভিত্তি করে কিবোর্ড।
  3. লেআউট এর উপর ভিত্তি করে কিবোর্ড।

(১) সংযোগ মাধ্যমের উপর ভিত্তি করে কিবোর্ডকে মূলত ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: 

  • তারযুক্ত কিবোর্ড 
  • তারবিহীন কিবোর্ড

(২) ‘কি’ এর ধরনের উপর ভিত্তি করে কিবোর্ডকে মূলত ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

  • মেমব্রেন কিবোর্ড (Membrane Keyboard) 
  • মেকানিকাল কিবোর্ড (Mechanical Keyboard)

(৩) লেআউট এর উপর ভিত্তি করে কিবোর্ডকে মূলত ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

  • কুয়েরটি  কিবোর্ড (QWERTY Keyboard)
  • কুয়েরটজ কিবোর্ড (QWERTZ Keyboard) 
  • অ্যাজেরটি কিবোর্ড (AZERTY Keyboard)

নিচে এই সকল কিবোর্ড গুলো সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়বাচক তথ্য গুলো তুলে ধরা হলো:

(১) তারযুক্ত কিবোর্ড (Wired keyboard)

সাধারণত একটি কিবোর্ড একটি তারের মাধ্যমেই কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকে। যেসকল কিবোর্ড ক্যাবলের মাধ্যমে কোন কম্পিউটার বা অন্যান্য ডিভাইসের সাথে যুক্ত থাকে, সেগুলোকে তারযুক্ত কিবোর্ড বলা হয়। পূর্বে DIN কানেক্টর ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে সকলেই USB কিবোর্ড ব্যবহার করে থাকে। এই তারযুক্ত ডিভাইসগুলো তূলনামূলক ভাবে অধিক সুবিধা বহন করে থাকে।

(২) তারবিহীন কিবোর্ড (Wireless keyboard)

যেসকল কিবোর্ড গুলো সরাসরি কোন তারের সাহায্যে কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকে না, সেগুলোই তারবিহীন কিবোর্ড। বর্তমানে অধিকাংশ কম্পিউটার ব্যবহারকারীরাই তার যুক্ত কিবোর্ড ব্যবহার করে থাকলেও, ধীরে ধীরে তারবিহীন কিবোর্ড এর প্রচলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারবিহীন কিবোর্ড গুলোকে সাধারণত ব্লুটুথ-এর মাধ্যমে কম্পিউটারের সাথে যুক্ত করা হয়। ব্লুটুথ কানেকশনের মধ্যে একাধিক ভার্সন থাকে। 

(৩) মেমব্রেন কিবোর্ড (Membrane Keyboard) 

কিবোর্ডের ‘কি’ এর ধরনের উপর ভিত্তি করে এই চিহ্নিত করা হয়। কম্পিউটার ব্যবহারকারী বাংলাদেশীদের অধিকাংশই এই মেমব্রেন কিবোর্ড ব্যবহার করে থাকে। এধরনের কিবোর্ডে মেমব্রেনের সাহায্যে ইনপুট দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করা হয়। মেমব্রেন কিবোর্ডে থাকা Key ক্যাপগুলোর নিচে মেমব্রেন নামক প্লাস্টিকের আবরণ থাকে। Keyboard -এর সার্কিট ম্যাট্রিক্স এবং কি ক্যাপের মাঝখানেই এই মেমব্রেন ব্যবহার করা হয়। 

যখন এ সকল কিবোর্ডের কোন একটি Key চাপা হয়, তখন তা মেমব্রেনে চাপ প্রয়োগ করে। এতে মেমব্রেন স্তরের নিচে অবস্থিত সার্কিটে চাপ লাগে, এবং বিদ্যুৎ প্রবাহ সম্পন্ন হলে ডিভাইসে ইনপুট কমান্ড যায়।

(৪) মেকানিক্যাল কিবোর্ড (Mechanical Keyboard) 

মেকানিক্যাল কিবোর্ড মেমব্রেন কীবোর্ড থেকে অনেকটাই ভিন্ন। সাধারণত বিভিন্ন গেমাররা এ ধরনের কিবোর্ড ব্যবহার করে থাকে। তবে কম্পিউটার ভিত্তিক অন্যান্য নানা ক্ষেত্রেও এই কীবোর্ড ব্যবহার করা যায়। মেকানিকাল কিবোর্ডের প্রতিটি Key -এর জন্য আলাদা আলাদা সুইচ থাকে। অর্থাৎ মেকানিক্যাল কিবোর্ডের প্রতিটি Key ক্যাপই এক একটি আলাদা ইউনিট।

মেকানিক্যাল কিবোর্ডে যখন কোন Key চাপা হয়, তখন কিবোর্ডের প্রতিটি কি’র নিচে থাকা আলাদা সুইচ আলাদা আলাদাভাবে বিদ্যুৎ প্রবাহ তৈরি করে এবং ডিভাইসে ইনপুট দিতে সহায়তা করে।

(৫) কুয়েরটি  কিবোর্ড (QWERTY Keyboard) 

কিবোর্ডের লেআউট এর উপর ভিত্তি করে একটি কিবোর্ড কুয়েরটি কিবোর্ড কি-না তা চিহ্নিত করা যায়। এধরনের কিবোর্ডের টাইপিং কি গুলোর প্রথম পাঁচটি বর্ণ হলো যথাক্রমে Q, W, E, R, T, Y। মূলত এই পাঁচটি বর্ণের সমীকরণেই এই লেআউট এবং কিবোর্ডের ধরনটির নামকরণ করা হয়েছে।

বর্তমানে কুয়েরটি কিবোর্ড হলো সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কিবোর্ড। ১৮৬৭ সালে আধুনিক টাইপরাইটারে প্রথম এই ধরনের কিবোর্ডের লেআউট ব্যবহার করা হয়েছিল। বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব জুড়েই এই কিবোর্ডের ব্যবহৃত হয়ে থাকে।  

(৬) কুয়েরটজ কিবোর্ড (QWERTZ Keyboard) 

সাধারণত কুয়েরটি কিবোর্ডের সাথে কুয়েরটজ কিবোর্ডের তেমন কোনো লক্ষনীয় পার্থক্য নেই। শুধুমাত্র এই কিবোর্ডের Key লেআউটে ইংরেজি Y এর জায়গায় Z বাটন থাকে। এই কুয়েরটজ কিবোর্ডটি মূলত ইউরোপের দেশগুলোতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন: অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি ইত্যাদি দেশগুলোতে এই ধরনের কিবোর্ড বেশি ব্যবহৃত হয়।  

(৭) অ্যাজেরটি কিবোর্ড (AZERTY Keyboard) 

অ্যাজেরটি কিবোর্ড মূলত কিবোর্ডের কি লেআউটের ভিত্তিতে এক ধরনের কিবোর্ডের প্রকারভেদ। কুয়েরটি কিবোর্ডের সাথে অ্যাজেরটি কিবোর্ডের লেআউটের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। যেমন: 

  • A এর স্থলে Q থাকে।
  • Z এর স্থলে W থাকে।
  • কিবোর্ডের M বর্ণটি কুয়েরটি কিবোর্ডের তৃতীয় সারিতে থাকলেও অ্যাজেরটি কিবোর্ডে তা দ্বিতীয় শাড়িতে থাকে। 
  • Caps Lock এর বদলে Shift Lock থাকে। 

বাংলাদেশের এই ধরনের কিবোর্ড এর প্রচলন নেই বললেই চলে। এ সকল কিবোর্ড গুলো বিশেষভাবে ফ্রান্স, বেলজিয়াম এবং কিছু আফ্রিকান দেশে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

কম্পিউটারে ব্যবহৃত অন্যান্য কিবোর্ড

কিবোর্ড টাইপিং

উপরোক্ত কিবোর্ড এর প্রকারভেদ হিসেবে দেওয়া ৭ ধরনের কিবোর্ড ছাড়াও, আরো বহু প্রকারের কিবোর্ড বর্তমানে বাজারে পাওয়া যায়। এ সকল কিবোর্ড গুলোর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এগুলোকে অন্যান্য কিবোর্ড থেকে কিছুটা আলাদা মাত্রা এনে দিয়েছে। এমন কয়েক প্রকার কিবোর্ড হলো:

  1. ব্যাকলিট কিবোর্ড (Backlit Keyboard),
  2. প্রজেকশন কিবোর্ড (Projection Keyboard),
  3. ভার্চুয়াল কিবোর্ড (Virtual Keyboard),
  4. ফ্লেক্সিবল কিবোর্ড (Flexible Keyboard), 
  5. এর্গোনোমিক কিবোর্ড (Ergonomic Keyboard) ইত্যাদি।

এ সকল কিবোর্ড গুলোর সাধারণ তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো:

ব্যাকলিট কিবোর্ড (Backlit Keyboard)

যেসকল কিবোর্ডের কি ক্যাপ-এর নিচে আলো জ্বলতে থাকে, সেগুলোকেই ব্যাকলিট কিবোর্ড বলা হয়। মূলত রাতের বেলা কিবোর্ডের নিজস্ব আলোর সাহায্যে কাজ করতে মেমব্রেন অথবা মেকানিকাল যেকোনো ধরনের কিবোর্ডেই বিশেষ আলোর সুবিধা যুক্ত করেই ব্যাকলিট কিবোর্ড তৈরি করা হয়।

প্রজেকশন কিবোর্ড (Projection Keyboard) 

প্রজেকশন কিবোর্ড হলো, কোনো নির্দিষ্ট সমতলে প্রজেক্টর দিয়ে তৈরি কিবোর্ডের ভার্চুয়াল ছায়ার মতো। একটি সমতলের উপর কিবোর্ডের প্রতিচ্ছবি তৈরি করে এই প্রজেকশন কিবোর্ড ব্যবহার করা যায়। সেই প্রতিচ্ছবি স্পর্শ করার মাধ্যমেই এই কিবোর্ডটি ব্যবহার করা যায়।

ভার্চুয়াল কিবোর্ড (Virtual Keyboard) 

ভার্চুয়াল কিবোর্ডটি মূলত কম্পিউটারের অন-স্ক্রিন কিবোর্ড (On-Screen Keyboard)। ভার্চুয়াল কিবোর্ড হলো এমন একধরনের কিবোর্ড সফটওয়্যার, যার সাহায্যে মাউস ব্যবহার করেই লেখা যায়। প্রায় প্রতিটি কম্পিউটারেই এ ধরনের সফটওয়্যার থাকে। 

ফ্লেক্সিবল কিবোর্ড (Flexible Keyboard) 

যেসকল কিবোর্ড সহজেই বাঁকানো যায়, ভাজ করে বা গুটিয়েও ফেলা যায়, সেগুলোই হলো ফ্লেক্সিবল কিবোর্ড। যেকোনো একটি নির্দিষ্ট সমতলে রেখে এই কিবোর্ড ব্যবহার করা যায়। এ ধরনের কিবোর্ড সহজে ভেঙে যায় না।

এর্গোনোমিক কিবোর্ড (Ergonomic Keyboard) 

এই ধরনের কিবোর্ডগুলো সাধারণ কিবোর্ডের মতো আয়তাকৃতির হয় না। বরং এর Alphabetic Key গুলো দুই ভাগে বিভক্ত এবং একটি অপরটির সাথে কিছুটা কোনাকোনি অবস্থানে থাকে। এর ফলে এই কিবোর্ডে দিয়ে দীর্ঘক্ষণ কাজ করা যায় স্বাচ্ছন্দ্যে। 

আরও পড়ুন: অপটিক্যাল ফাইবার কাকে বলে?

যারা নিয়মিত কম্পিউটার টাইপিং করে, দেখা গেছে অতিরিক্ত চাপার কারণে অনেকে হাতের কব্জির সমস্যায় ভুগেন। তাদের কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্যই এ ধরণের কিবোর্ড গুলো বানানো হয়েছে।

শেষকথা 

বর্তমানে আধুনিক যুগে কম্পিউটারের ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। আর সেখানে কীবোর্ড সম্পর্কিত উপর তথ্য গুলো জানা নিতান্তই বাঞ্ছনীয় বিষয় হয়ে উঠেছে। আপনার কিবোর্ডটি আসলে কি ধরনের এবং এর বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে জানতে উপরোক্ত- “কিবোর্ড কী? কিভাবে কাজ করে, কিবোর্ডের অংশবলী ও প্রকারভেদ” -আলোচনাটি বিশেষভাবে প্রভাব ফেলবে।

Scroll to Top