পদার্থ

পদার্থ কাকে বলে? পদার্থের গঠন, বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ এবং সকল প্রকার পদার্থের সংজ্ঞা

পৃথিবীর প্রতিটা অংশই কোন না কোন পদার্থ দিয়ে গঠিত। আমাদের চারপাশে থাকা সকল দৃশ্যমান এবং দৃশ্যমান বস্তু, যেমন: মাটি, পানি, বায়ু, লোহা, তামা, সোনা, পাথর, চেয়ার ইত্যাদি সকল কিছুই পদার্থ দিয়ে তৈরি। তাই পদার্থ কি এবং পদার্থ কাকে বলে, সে সম্পর্কে সকলেরই মৌলিক ধারনা থাকা উচিত।

পদার্থের রয়েছে নির্দিষ্ট গঠন পদ্ধতি, অবস্থার উপর ভিত্তি করে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য এবং নানান প্রকারভেদ। বর্তমানে মানবসভ্যতার উন্নয়নের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে বিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা পদার্থবিজ্ঞানের, যা আমাদের পাঠ্যক্রমেরও অংশ। পদার্থ কি, পদার্থ কাকে বলে, পদার্থবিজ্ঞান কাকে বলে, পদার্থের গঠন, বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ এবং সকল প্রকার পদার্থের সংজ্ঞা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো জানতে পারবেন এই লেখা থেকে।

পদার্থ কাকে বলে?

যার ভর ও আয়তন আছে, একটি নির্দিষ্ট স্থান দখল করে এবং চাপ প্রয়োগে বাধা প্রদান করে, তাকে পদার্থ বলে। যেমন: পানি, মাটি, বায়ু ইত্যাদি।

পদার্থ কাকে বলে
পদার্থ কাকে বলে

পদার্থ কঠিন, তরল কিংবা বায়বীয়, যা-ই হোক না কেন, এর নিজস্ব ভর ও আয়তন থাকবে। প্রতিটি পদার্থ এই একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখলে তার আয়তন অনুসারে জায়গা দখল করে। পদার্থের উপর চাপ প্রয়োগ করলে, তার কঠিন, তরল ও বায়বীয় অবস্থার উপর ভিত্তি করে কম-বেশি বাধা প্রদান করবে।

পদার্থ কি?

আমাদের চারপাশে থাকা সকল দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান বস্তুগুলোই একেকটি পদার্থ। যে সকল বস্তুর ভর আছে, আয়তন আছে এবং নির্দিষ্ট স্থান দখল করে তা-ই পদার্থ। 

আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক কে?

বিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য একটি অংশ হচ্ছে পদার্থবিজ্ঞান (Physics)। পদার্থবিজ্ঞান হলো বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা, যেখানে পদার্থ এবং শক্তির মিথস্ক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হয়। 

ঐতিহাসিক তথ্য মতে, পদার্থবিজ্ঞানের জনক ছিলেন স্যার আইজ্যাক নিউটন। তিনি সর্বপ্রথম মহাকাশে বলার ধারণা প্রদান করেছিলেন। অন্যদিকে, গ্রীক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস সর্বপ্রথম পদার্থকে ক্ষুদ্র এককে ভেঙে এর নাম অ্যাটম রেখে পদার্থের ধারণা দিয়েছিলেন। অন্যদিকে, অনেকেই বিজ্ঞানী গ্যালিলিও কে পদার্থবিজ্ঞানের জনক বলে থাকে।

স্যার আইজ্যাক নিউটন পদার্থবিজ্ঞানের জনক হলেও আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক বলা হয় আলবার্ট আইনস্টাইন কে। আলবার্ট আইনস্টাইন আপেক্ষিকতার তত্ত্ব এবং বিশেষত ভর-শক্তি সমতুল্যতার সূত্র আবিষ্কার করেছিলেন।

পদার্থ বিজ্ঞান কাকে বলে?

পদার্থবিজ্ঞান (Physics) শব্দটি এসেছে মূলত গ্রিক শব্দ ফুসিকে (Fusiky) থেকে। এর অর্থ- প্রকৃতি সম্পর্কিত জ্ঞান। বিজ্ঞানের যে শাখায় পদার্থ এবং শক্তির মিথস্ক্রিয়া, ধর্ম ও প্রকৃতি, পারস্পারিক সম্পর্ক ও রুপান্তর ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা করা হয়, তাকে পদার্থবিজ্ঞান বলে। 

বিশুদ্ধ পদার্থবিদ্যা হল মৌলিক বিজ্ঞানের একটি শাখা। পদার্থবিদ্যাকে ‘মৌলিক বিজ্ঞান’ও বলা হয়ে থাকে। কারণ জ্যোতির্বিদ্যা, ভূতত্ত্ব, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞানের মতো প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের সকল শাখা পদার্থবিজ্ঞানের আইন দ্বারা সীমাবদ্ধ। 

পদার্থের গঠন

প্রতিটি পদার্থ গঠিত হয় কয়েকটি মূল কণিকার মাধ্যমে। এ সকল মৌলিক কণিকা গুলো হলো: 

  • ইলেকট্রন (Electron);
  • প্রোটন (Proton);
  • নিউট্রন (Neutron)। 

প্রতিটি উপাদানের এই আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য এবং গঠন প্রক্রিয়া রয়েছে। এবার সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:

ইলেকট্রন (Electron): পরমাণুতে থাকা নিউক্লিয়াসের চারদিকে সর্বদা পরিভ্রমণ করতে থাকা ঋণাত্মক চার্জ বিশিষ্ট মৌলিক কণিকা হলো ইলেকট্রন।

প্রোটন (Proton): পরমাণুর নিউক্লিয়াসে থাকা ধনাত্মক চার্জ যুক্ত এবং নিউক্লিয়াসের সাথে যুক্ত মৌলিক কণিকা হলো প্রোটন।

নিউট্রন (Neutron): পরমাণু নিউক্লিয়াসের প্রোটনের সাথে যুক্ত চার্জবিহীন যে মৌলিক কণিকা থাকে তা-ই নিউট্রন।

এসকল উপাদানের সমন্বয়ে একটি পদার্থ গঠিত হয়ে থাকে। তবে প্রতিটি মৌলিক পদার্থ গঠনের পিছনে নিজস্ব বৈশিষ্ট্যসমূহ বিদ্যমান থাকে।

পদার্থের বৈশিষ্ট্য

প্রতিটি পদার্থের গঠন এবং অবস্থার উপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য থাকে। তবে সকল পদার্থের কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেগুলো হলো:

  • পদার্থ কঠিন, তরল, বায়বীয় অবস্থায় পরিবেশে বিদ্যমান থাকে।
  • পদার্থের ভর ও আয়তন আছে, একটি নির্দিষ্ট স্থান দখল করে।
  • প্রতিটি পদার্থকে ভাঙলে তার মৌলিক গঠন কিংবা যৌগিক গঠন সম্পর্ক দেখতে পাওয়া যায়।
  • পদার্থের গঠনে রয়েছে অ্যাটম নামক ক্ষুদ্র কণা।
  • পদার্থকে ভেঙে এবং প্রয়োজন অনুসারে পরিবর্তন করার মাধ্যমে ব্যবহারের উপযোগী করে তৈরি করা যায়।
  • পদার্থ পরিবেশের উন্নতিসাধন এবং ক্ষতিসাধন উভয় কার্যক্রম করতে পারে।
  • পদার্থকে তার গঠনের উপর ভিত্তি করে প্রাকৃতিকভাবে ও কৃত্রিমভাবে আবিষ্কার করা সম্ভব।

পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার ইতিহাস

প্রাচীনকাল থেকেই সভ্যতার উন্নয়নের ধারাবাহিকতার পাশাপাশি পদার্থ নিয়ে নানান ব্যবহারিক গবেষণা করেছিলেন বহু পন্ডিতগণ। বর্তমানে পদার্থবিজ্ঞান বলতে আমরা যা বুঝে থাকি, প্রাচীনকালে তা জ্যোতির্বিদ্যা,আলােকবিজ্ঞান, গতিবিদ্যা এবং গণিতের গুরুত্বপূর্ণ শাখা জ্যামিতির সমন্বয়ে শুরু হয়েছিল। শুরুর দিকে মানুষ হাতিয়ার এবং আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন পদার্থের উপকরণ আবিষ্কার করেছিল, যেমন: পাথর, কাঠ এবং পশুর হাড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে সরঞ্জাম তৈরি। ব্রঞ্জ যুগে তামা এবং টিনের মতো ধাতুর আবিষ্কার হয়েছিল, যা সেরা মানবসভ্যতা বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

মধ্যযুগে, বিভিন্ন কারিগর ও পন্ডিতরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বস্তুগত জ্ঞানকে প্রসারিত করে সংকর ধাতুর আবিষ্কার এবং ধাতুবিদ্যার কৌশলগুলোর উদ্ভাবন করেছিল। রেনেসাঁ যুগে উল্লেখযোগ্য হারে ধাতুবিদ্যার অগ্রগতি হয়। এ সময় পণ্ডিতরা বিভিন্ন পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলো বিশ্লেষণ করতে শুরু করে এবং নানান ঐতিহ্যগত কারুশিল্প তৈরি হতে থাকে। আনুমানিক ৫৮৫ খিস্টপূর্বাব্দে গ্রিক দার্শনিক মিলেতুসের থালেস তরল পানি, কঠিন বরফ ও বায়বীয় জলীয় বাষ্প পর্যবেক্ষণ করে বলেন, সমস্ত পদার্থ পানি দিয়ে গঠিত। কিছুকাল পরে ‘আনাক্সিমেনেস’ মত প্রকাশ করেন যে, বাতাসই সমস্ত পদার্থের মূল উপাদান।

আনুমানিক ৪৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিক প্রাকৃতিক দার্শনিক এম্পেদোক্লেস মত প্রকাশ করেন যে, সমস্ত বস্তু বা পদার্থ ৪টি মৌলিক উপাদান দিয়ে গঠিত। যথা: মাটি, পানি, বাতাস ও আগুন। তিনি বলেন, এগুলো একত্রিত হয়ে তাপ, শৈত্য, শুষ্কতা, আর্দ্রতা ইত্যাদি ধর্মের সৃষ্টি করে এবং সেখান থেকেই সকল পদার্থের উৎপত্তি হয়। পরবর্তীতে, ১৬শ-১৭শ শতকে বৈজ্ঞানিক বিপ্লব হওয়ার পর এই ধারণা পরিত্যক্ত হয়। ১৭ শতকের শেষের দিকে, আরেক গ্রিক প্রাকৃতিক দার্শনিক আবদেরার দেমোক্রিতুস প্রস্তাব করেন যে, সকল পদার্থ অত্যন্ত ক্ষুদ্র কণাসদৃশ পরমাণু নামক অবিভাজ্য একক দিয়ে গঠিত।

আধুনিক যুগে পদার্থবিজ্ঞান

১৮ শতকের শেষের দিকে, ১৭৬০ থেকে ১৮৪০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে শিল্প বিপ্লব শুরু হয়েছিল। এ সময় ধাতুবিদ্যার বা পদার্থবিদ্যা অন্যতম গবেষণার উপকরণ হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছিল। তখন চাহিদা বেড়েছিল নতুন উপকরণ ও উন্নত উৎপাদন কৌশলের। এই যুগের প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে সবচেয়ে বিশেষ ও কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছিল লোহা এবং ইস্পাত সম্পর্কিত ধাতুবিদ্যা। ইস্পাত গবেষণার অগ্রগতির ফলেই তৈরি হয়েছিল রেলপথ।

ধাতুবিদ্যা এবং পদার্থবিদ্যার গবেষণাগুলো পদার্থবিজ্ঞানে পরিণত হয় ২০ শতকের শেষের অংশে এসে। এই সময় আবিষ্কৃত হয় ন্যানোটেকনোলজি, বায়োমেটেরিয়ালস, এবং অন্যান্য পদার্থ নির্ভর উপকরণ। এগুলো পারমাণবিক এবং আণবিক স্তরে পদার্থের সুনির্দিষ্ট কর্মকাণ্ড সম্পাদন করার উপযুক্ত প্রযুক্তি ছিল। এছাড়াও পদার্থবিজ্ঞানের অন্যান্য আবিষ্কার ও উন্নয়নের ফলে ইলেকট্রনিক্স, ওষুধ, শক্তি এবং আরও অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতির সাথে নানান উদ্ভাবন হয়।

আরো পড়ুন: জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কি? এর প্রকারভেদ, কার্যপদ্ধতি

২০০০ সালের পর থেকে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিবেশগত উদ্বেগের কারণে টেকসই এবং পরিবেশ-বান্ধব নানান পদার্থের দেখা মিলেছে। রিসাইক্লিং, পুনর্নবীকরণযোগ্য উপকরণ এবং বায়োডিগ্রেডেবিলিটি হলো সমসাময়িক পদার্থ গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু।

পদার্থ কত প্রকার ও কি কি? সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য সহ

পদার্থকে প্রধানত ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: 

  1. কঠিন পদার্থ (Solid Material)
  2. তরল পদার্থ (Liquid Material)
  3. বায়বীয় বা গ্যাসীয় পদার্থ (Airy or gaseous Material)

তবে এই প্রকারভেদটি শুধুমাত্র পদার্থের অবস্থা বা তাপমাত্রা ভেদে বিবেচনা করে গঠন করা হয়। এছাড়াও পদার্থকে গঠনগত ও বস্তুগত ভিত্তিতে নানা ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:

বস্তুগত দিক থেকে পদার্থকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: (১) বিশুদ্ধ পদার্থ; (২) অবিশুদ্ধ পদার্থ বা মিশ্র পদার্থ। আবার, গঠনগত দিক থেকে বিশুদ্ধ পদার্থকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: (১) মৌলিক পদার্থ; (২) যৌগিক পদার্থ।

নিচে সকল প্রকার পদার্থের সংজ্ঞা গঠন এবং বৈশিষ্ট্য সমূহ তুলে ধরা হলো:

কঠিন পদার্থ কাকে বলে?

যে সকল পদার্থের নির্দিষ্ট ভর, আয়তন ও আকার রয়েছে এবং পদার্থের অভ্যন্তরীণ কণাগুলোর আন্তঃকনা আকর্ষণ বল সবচেয়ে বেশি থাকে, সেগুলোকে কঠিন পদার্থ বলে। যেমন: বরফ, ইট, কাঠ ইত্যাদি।

কঠিন পদার্থের বৈশিষ্ট্য

  • একটি কঠিন পদার্থকে তার কাঠামোগত অনমনীয়তা বল দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। 
  • কঠিন পদার্থের সকল অণুগুলো একে অপরের সাথে খুব দৃঢ়ভাবে যুক্ত থাকে।
  • কঠিন পদার্থের সকল অণুগুলোর মধ্যে গতিশক্তি খুব কম থাকে।
  • কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন আছে।
  • কঠিন পদার্থ পাত্রে ধারণ করলে তরল পদার্থের মতো প্রবাহিত হয় না এবং গ্যাসীয় পদার্থের মতো পাত্র পূরণ করতে প্রসারিত হতে পারেনা।
  • কঠিন পদার্থকে সামান্য চাপ দিলে সংকুচিত হয় না। 
  • কঠিন পদার্থের আকৃতিকে সহজে বিকৃত করা যায় না বরং এর জন্য প্রয়োজন হয় পর্যাপ্ত শক্তির।

তরল পদার্থ কাকে বলে?

যে সকল পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন আছে ওজন আছে এবং জায়গা দখল করে, কিন্তু নির্দিষ্ট কোন আকার বা আকৃতি নেই, তাদেরকে তরল পদার্থ বলে। যেমন: পানি, তেল, দুধ ইত্যাদি।

তরল পদার্থের বৈশিষ্ট্য

  • তরল পদার্থের অনুগুলো একে অপরের থেকে কিছুটা দূরে দূরে অবস্থান করে।
  • তরল পদার্থের অনুগুলোর মধ্যে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল কঠিন পদার্থের চেয়ে তুলনামূলক কম থাকে।
  • তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে তরল পদার্থের আয়তন বৃদ্ধি পায়।
  • তরল পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন আছে।
  • তরল পদার্থের নির্দিষ্ট কোন আকার নেই।
  • তরল পদার্থের অনুগুলোর কম্পন, আবর্তন ও স্থানান্তর গতি কঠিন পদার্থ থেকে তুলনামূলকভাবে বেশি হয়, কিন্তু গ্যাসীয় পদার্থ থেকে কম হয়।
  • তরল পদার্থকে চাপ দিলে সামান্য সংকুচিত হয়।

গ্যাসীয়/ বায়বীয় পদার্থ কাকে বলে?

যে সকল পদার্থের নির্দিষ্ট ভর আছে, কিন্তু নির্দিষ্ট কোন আকার ও আয়তন নেই, তাদেরকে বায়বীয় পদার্থ বলে। যেমন: অক্সিজেন, কার্বনডাই-অক্সাইড, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন ইত্যাদি।

গ্যাসীয়/ বায়বীয় পদার্থের বৈশিষ্ট্য

  • গ্যাসীয়/ বায়বীয় পদার্থের নির্দিষ্ট ভর বা ওজন আছে।
  • বায়বীয় পদার্থের নির্দিষ্ট কোন আকার বা আয়তন নেই।
  • বায়বীয় পদার্থ জায়গা দখল করে।
  • ছোট পাত্রে বায়বীয় কোন পদার্থ থাকলে এর আয়তন কম হয়, কিন্তু বড় পাত্রে রাখলে পাত্রের আয়তন অনুসারে বায়বীয় পদার্থের আয়তন বৃদ্ধি পেতে থাকে।
  • কোন গ্যাসীয় পদার্থের তাপমাত্রা অতি ঠান্ডা করলে তা তরল পদার্থে পরিণত হয়।

বিশুদ্ধ পদার্থ কাকে বলে?

যে সকল পদার্থগুলোর একটিমাত্র বস্তু নিয়ে গঠিত হয় এবং একাধিক পদার্থ মিশে থাকে না, তাদেরকে বিশুদ্ধ পদার্থ বলে । যেমন: অক্সিজেন, টিন, সালফার, হীরা, জল, বিশুদ্ধ চিনি (সুক্রোজ), টেবিল লবণ (সোডিয়াম ক্লোরাইড) এবং বেকিং সোডা (সোডিয়াম বাইকার্বোনেট) ইত্যাদি।

অবিশুদ্ধ পদার্থ কাকে বলে?

যে সকল পদার্থ বিভিন্ন ধরনের পরমাণু বা অণুর সমন্বয়ে তৈরি হয়, সেগুলোকে অবিশুদ্ধ পদার্থ বলে। সাধারণভাবে বলতে গেলে, একাধিক বিশুদ্ধ পদার্থের মিশ্রণকে অবিশুদ্ধ পদার্থ বলে। এটি সমসত্ত্ব বা অসমসত্ত্ব দুই-ই হতে পারে। যেমন: পানি, মাটি, বায়ু ইত্যাদি।

মৌলিক পদার্থ কাকে বলে?

যে সকল পদার্থকে রাসায়নিক পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করলে দুই বা ততোধিক ভিন্নধর্মী পদার্থে বিভক্ত করা যায় না, তাদেরকে মৌল বা মৌলিক পদার্থ বলে। যেমন: অক্সিজেন (O), হাইড্রোজেন (H), আয়রণ (Fe), কপার (Cu) ইত্যাদি। 

মৌলিক পদার্থের বৈশিষ্ট্য

  • মৌলিক পদার্থকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করলেও একটি নির্দিষ্ট পদার্থ ছাড়া অন্য কোন পদার্থ পাওয়া যায়না।
  • মৌলিক পদার্থ ৩টি মূল কণিকা এবং ১টি নিউক্লিয়াস দ্বারা গঠিত হয়।
  • প্রতিটি মৌলিক পদার্থ বিদ্যুৎ পরিবাহী হয় না, তবে শুধুমাত্র ধাতব মৌলসমূহ বিদ্যুৎ পরিবাহী হয়।
  • মৌলিক পদার্থগুলো ধাতু, অপধাতু, অধাতু কিংবা অর্ধধাতুও হতে পারে।
  • মৌলিক পদার্থ সম্পূর্ণরূপে একক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হয়। তাই এটি একই প্রজাতির মৌলের বৈশিষ্ট্য বহন করে।
  • মৌলিক পদার্থের প্রতিটি মৌলের পরমাণুতে প্রোটন সংখ্যা নির্দিষ্ট। 

মৌলিক পদার্থ কয়টি

বর্তমান সময় পর্যন্ত সর্বমোট ১১৮ টি মৌল বা মৌলিক পদার্থ আবিষ্কার করা হয়েছে। তন্মধ্যে, ৯৪টি প্রকৃতিতে বিভিন্ন অবস্থায় পাওয়া যায় এবং ২৪ টি মৌলিক পদার্থ কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা হয়েছে।

এর মধ্যে ৯৪টি প্রকৃতিতে পাওয়া যায়, বাকী ২৪টি কৃত্রিম উপায়ে তৈরী করা হয়েছে।

প্রকৃতিতে পাওয়া মৌলিক পদার্থ গুলোর মধ্যে ৩২ টি মুক্তভাবে এবং খনিজরূপে প্রকৃতিতে বিদ্যমান থাকে। এগুলো হলো: রূপা, সোনা, তামা, কার্বন ইত্যাদি। অন্যান্য প্রাকৃতিক মৌলিক পদার্থ গুলো বিভিন্ন যৌগ গঠন করে অর্থাৎ যৌগিক খনিজ রূপে প্রকৃতিতে বিদ্যমান থাকে।

যৌগিক পদার্থ কাকে বলে?

যে সকল পদার্থকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করলে একাধিক পদার্থ পাওয়া যায়, তাদেরকে যৌগিক পদার্থ বলে। যেমন: সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl), পানি (H2O)। এখানে পানিকে ভাঙলে দুইটি হাইড্রোজেন পরমাণু এবং একটি অক্সিজেন পরমাণু পাওয়া যাবে।

যৌগিক পদার্থের বৈশিষ্ট্য

  • যৌগিক পদার্থ কমপক্ষে দুটি মৌলিক পদার্থ দ্বারা সৃষ্টি হয়।
  • এর রাসায়নিক বন্ধন বেশ জটিল থাকে।
  • যৌগিক পদার্থ সৃষ্টির মাধ্যমে একটি যৌগ আবিষ্কৃত হয়।
  • যৌগিক পদার্থ গুলো ভাঙলে মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায়।
  • যৌগিক পদার্থের থাকা মৌলসমূহের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে সেগুলোকে অনুপাতে বিভক্ত করা যায়।
  • সকল প্রকার যৌগিক পদার্থ প্রিজমভাবে তৈরি করা যায়।

বিভিন্ন প্রকার পদার্থের সংজ্ঞা

উদ্বায়ী পদার্থ কাকে বলে?

যে সকল পদার্থকে তাপ দিলে কঠিন অবস্থা থেকে সরাসরি বায়বীয় পদার্থের অবস্থায় চলে যায় এবং ঠান্ডা করলে পুনরায় বায়বীয় পদার্থ থেকে কঠিন পদার্থের পরিণত হয়, তাদেরকে উদ্বায়ী পদার্থ বলে।

জৈব পদার্থ কাকে বলে?

যে সকল পদার্থ কোনো জীবের দেহ থেকে তৈরি হয়নি বরং পৃথিবীতে জীবের উদ্ভবের পূর্ব থেকেই ছিল, সেগুলোকে জৈব পদার্থ বলে।

অজৈব পদার্থ কাকে বলে?

অজৈব যৌগ হল সেই রাসায়নিক পদার্থ যা প্রকৃতিতে জৈব অবস্থায় থাকে না। মূলত এই পদার্থগুলো হলো একদল রাসায়নিক পদার্থ, যাতে কার্বন থাকে না। যেমন: হাইড্রোজেন সালফাইড, অ্যামোনিয়া, সকল প্রকার ধাতু ইত্যাদি।

তেজস্ক্রিয় পদার্থ কাকে বলে?

যেসব মৌল নিজে নিজেই অন্য মৌলে রূপান্তরিত হয় মূলত সেগুলোই তেজস্ক্রিয় মৌল। 

মূলত যে সকল মৌলের নিউটন ও প্রোটন এর অনুপাত ১.৫ এর বেশি সেই সকল মৌলের নিউক্লিয়াস অ-স্থীর হয় এবং সেই মৌলগুলোর নিউক্লিয়াস থেকে এক প্রকার অদৃশ্য রশ্মি নির্গত হয়। এই রশ্মি গ্যাসকে আয়নিত করতে পারে, তড়িৎ ও চৌম্বক বল দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং পাতলা ধাতব পাত কে ভেদ করতে পারে। সেই অদৃশ্য রশ্মিকেই তেজস্ক্রিয় পদার্থ বলা হয়। 

দাহ্য পদার্থ কাকে বলে?

যে সকল পদার্থ গুলোতে সহজেই আগুন ধরে যায় এবং প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়, তাদেরকে দাহ্য পদার্থ বলে।

জারক পদার্থ কাকে বলে?

জারণ-বিজারণ বিক্রিয়াতে যে বিক্রিয়কটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে, তাকে জারক পদার্থ বলে। জারণ বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে যে সত্তা তাকে বিজারক ও যার দ্বারা জারণ সংঘটিত হয় তাকে জারক বলে।

প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থ কাকে বলে?

যে সকল পদার্থ গুলো প্রকৃতিতে শুষ্ক এবং বিশুদ্ধ অবস্থায় নির্দিষ্ট সংযুতিতে বিদ্যমান থাকে, রাসায়নিক নেতৃত্বে সরাসরি ওজন মাপা যায় এবং ওই পদার্থের দ্রবণকে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে রাখলেও দ্রবণের ঘনমাত্রার কোন পরিবর্তন হয় না, সেগুলোকে প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থ বলে। যেমন: সোডিয়াম কার্বনেট, পটাশিয়াম ডাইক্রোমেট ইত্যাদি।

সেকেন্ডারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থ কাকে বলে?

যে সকল পদার্থের মধ্যে প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থের ৪টি বৈশিষ্ট্যের কোন একটির অভাব হয়, তাদেরকে সেকেন্ডারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থ বলে। প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থের সেই বৈশিষ্ট্য গুলো হলো: 

  • বিশুদ্ধতা;
  • বাতাসে অপরিবর্তিত থাকা;
  • রাসায়নিক নিক্তির ক্ষয় না করা;
  • ঘন মাএার পরিবর্তন না ঘটা।

চৌম্বক পদার্থ কাকে বলে?

যে সকল পদার্থ চুম্বক দ্বারা আকর্ষিত হয় এবং যে পদার্থগুলোকে চুম্বকে পরিণত করা যায়, সেগুলোকে চৌম্বক পদার্থ বলে। যেমন: লোহা, কোবাল্ট ইত্যাদি।

অচৌম্বক পদার্থ কাকে বলে?

যে সকল পদার্থ চুম্বক দ্বারা আকর্ষিত হয় না এবং যে পদার্থগুলোকে চুম্বকে পরিণত করা যায় না, সেগুলোকে অচৌম্বক পদার্থ বলে। যেমন: সোনা, তামা, পিতল ইত্যাদি।

পরিবাহী পদার্থ কাকে বলে?

যে সকল পদার্থের ভেতর দিয়ে তড়িত সহজে চলাচল করতে পারে, সেগুলোকে পরিবাহী পদার্থ বলে। সাধারণত ধাতব পদার্থ গুলো তড়িৎ সুপরিবাহী হয়ে থাকে। যেমন: লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, তামা, রূপা ইত্যাদি।

অর্ধ পরিবাহী পদার্থ কাকে বলে?

যে সকল পদার্থের তড়িৎ পরিবহন ক্ষমতা সাধারণ তাপমাত্রায় পরিবাহী এবং অপরিবাহী উভয় অবস্থার মাঝামাঝি হয়, সেগুলোকে অর্ধ পরিবাহী পদার্থ বলে।

খনিজ পদার্থ কাকে বলে?

যখন কয়েকটি মৌলিক উপাদান প্রাকৃতিকভাবে মিলিত হয়ে একটি যৌগিক পদার্থ তৈরি করে, তখন তাকে খনিজ পদার্থ বলে। মূলত পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠে বা ভূগর্ভে শিলাস্তূপ থেকে প্রাপ্ত মুক্ত মৌল বা যৌগ গুলোই খনিজ পদার্থ।

শেষকথা 

প্রতিটি দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান বস্তুই এক প্রকার পদার্থের বৈশিষ্ট্য বহন করে। তবে উপরোক্ত পদার্থের বৈশিষ্ট্য গুলো থাকলেই একটি বস্তুকে পদার্থ বলা যাবে। বর্তমানে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পদার্থবিজ্ঞানের গুরুত্ব অনেক বেশি। পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করলে এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।

About Durud Ahmed

সম্মানিত ভিজিটর আমি দুরুদ আহমেদ,পেশায় আমি একজন ব্লগ লেখক। প্রযুক্তি ও শিক্ষা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, লাইফস্টাইল এবং ইসলামিক লেখাই আমার প্রিয়। এই ব্লগের মাধ্যমে আমি সঠিক তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ভিজিটরদের সহযোগিতা করাই মূল লক্ষ্য।