রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উক্তি, বাণী, কবিতার ক্যাপশন ও কবিতা মানুষকে আলোর পথ দেখায়, হৃদয়ে অনুপ্রেরণা জোগায়। প্রতিটি মানুষই জীবনের কোনো না কোনো সময় হতাশায় ডুবে যায়, সেই মুহুর্তে একজন মানুষের লাগে বড় ধরনের অনুপ্রেরণা। সবার আশেপাশে সবসময় ভালো মানুষ পাওয়া যায় না যে তাকে সঠিক পরামর্শ দেবে। তাই এমন সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা উক্তি বা বাণী, কবিতার ক্যাপশন ও কবিতা তার চোখ খুলে দিতে পারে, দেখাতে পারে নতুন পথ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ই মে (২৫সে বৈশাখ) কলকাতার জোড়া সাঁকোতে ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর মাতা সারদা সুন্দরী দেবী অন্তিম সন্তান ছিলেন। তিনি স্কুল এর পরিবেশ খুব একটা পছন্দ করতেন না তাই তার প্রাথমিক জীবনের শিক্ষা বাড়ি থেকেই শুরু হয়।
কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি ব্যারিস্টার হওয়ার লক্ষ্যে ১৮৭৮ সালে ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরে যান। কিন্তু সেখানে তিনি তার আইন বিয়ষয়ে পড়াশোনা বাদ দিয়ে সেখান থেকে তিনি ইংরেজি, এবং স্কটিশ সাহিত্য প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে ১৮৮০ সালে আইন ডিগ্রি ছাড়াই বাংলায় ফিরে আসেন ও বিভিন্ন গল্প ও কবিতা লেখার কাজ শুরু করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই সমস্ত বিভিন্ন কবিতা ও গল্প অধ্যায়ন করতে আমার প্রকৃতি, প্রেম ভালোবাসা সম্পর্কে তার চিন্তা ভাবনা সম্পর্কে জানতে পারি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বংলা সাহিতোর সর্বশ্রেষ্ঠ কবি। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, প্রবন্ধকার, শিক্ষাবিদ, ভাষাবিদ, নাট্যকার, গীতিকার, সুরকার, ছিলেন।
তিনি ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট (২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বাংলা) মৃত্যুবরণ করেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উক্তি
তিনি আমাদের জন্য মূল্যবান কিছু উক্তি করে গেছে। সেগুলো আজও আমাদের মধ্যে বেঁচে আছে এবং থাকবে। আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো সেই সব মূল্যবান সেরা উক্তি গুলো। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
সোহাগের সঙ্গে রাগ না মিশিলে ভালবাসার স্বাদ থাকেনা তরকারীতে লঙ্কামরিচের মত।
সাধারণত স্ত্রীজাতি কাঁচা আম, ঝাল লঙ্কা এবং কড়া স্বামীই ভালোবাসে। যে দুর্ভাগ্য পুরুষ নিজের স্ত্রীর ভালোবাসা হইতে বঞ্চিত সে যে কুশ্রী অথবা নির্ধন তাহা নহে, সে নিতান্ত নিরীহ।
ভালোবাসা কথাটা বিবাহ কথার, চেয়ে আরো বেশি জ্যান্ত।
সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম , সে কখনো করে না বঞ্চনা।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দূরত্ব কোনটি জানো? নাহ, জীবন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত, উত্তরটা সঠিক নয়। সবচেয়ে বড়দূরত্ব হলো যখন আমি তোমার সামনে থাকি, কিন্তু তুমি জানো না যে আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি।
হঠাৎ একদিন পূর্ণিমার রাত্রে জীবনে যখন জোয়ার আসে, তখন যে একটা বৃহৎ প্রতিজ্ঞা করিয়া বসেজীবনের সুদীর্ঘ ভাটার সময় সে প্রতিজ্ঞা রক্ষা করিতে তাহার সমস্ত প্রাণে টান পড়ে।
বিয়ে করলে মানুষকে মেনে নিতে হয়, তখন আর গড়ে নেবার ফাঁক পাওয়া যায় না।
লোকে ভুলে যায় দাম্পত্যটা একটা আর্ট, প্রতিদিন ওকে নতুন করে সৃষ্টি করা চাই।
বিবেচনা করবার বয়েস ভালোবাসার বয়েসের উলটো পিঠে।
নারীর প্রেম পুরুষকে পূর্ণশক্তিতে জাগ্রত করতে পারে। কিন্তু সে-প্রেম যদি শুক্লপক্ষের না হয়ে কৃষ্ণপক্ষের হয় তবেতার মালিন্যের আর তুলনা নেই।
প্রেমের দুই বিরুদ্ধ পার আছে। এক পারে চোরাবালি, আর এক পারে ফসলের খেত। এক পারে ভালোলাগার দৌরাত্ম, অন্য পারে ভালোবাসার আমন্ত্রণ।
ভালোবাসার ট্রাজেডি ঘটে সেইখানেই যেখানে পরস্পরকে স্বতন্ত্র জেনে মানুষ সন্তুষ্ট থাকতে পারে নি, নিজের ইচ্ছেকেঅন্যের ইচ্ছে করবার জন্যে যেখানে জুলুম, যেখানে মনে করি আপন মনের মতো করে বদলিয়ে অন্যকে সৃষ্টি করব।
স্বামীরা প্রেমিক হতে অবশ্যই রাজি, তবে সেটা নিজের স্ত্রীর সাথে নয়। নিজের স্ত্রীর প্রেমিক হবার বিষয়টাকেন যেন তারা ভাবতেই চায় না।
আমার তৃষ্ণা তোমার সুধা তোমার তৃপ্তি আমার সুধা।
মন দিয়ে মন বোঝা যায়, গভীর বিশ্বাস শুধু নীরব প্রাণের কথা টেনে নিয়ে আসে।
পৃথিবীতে বালিকার প্রথম প্রেমেরমত সর্বগ্রাসী প্রেম আর কিছুই নাই। প্রথমযৌবনে বালিকা যাকেভালোবাসে তাহার মত সৌভাগ্যবানও আর কেহই নাই। যদিও সে প্রেম অধিকাংশ সময় অপ্রকাশিত থেকেযায়, কিন্তু সে প্রেমের আগুন সব বালিকাকে সারাজীবন পোড়ায়।
এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মেলে না, শুধু সুখ চলে যায়।
প্রেমের মধ্যে ভয় না থাকলে রস নিবিড় হয় না।
ক্ষমাই যদি করতে না পারো, তবে তাকে ভালোবাসো কেন।
বিচ্ছেদের দুঃখে প্রেমের বেগ বাড়িয়া ওঠে।
নারীর প্রেমে মিলনের গান বাজে, পুরুষের প্রেমে বিচ্ছেদের বেদনা।
স্বামীরা প্রেমিক হতে অবশ্যই রাজি, তবে সেটা নিজের স্ত্রীর সাথে নয় | নিজের স্ত্রীর প্রেমিক হওয়ার বিষয়টা কেন জানি তারা ভাবতেই চায়না।
আনন্দকে ভাগ করলে দুটি জিনিস পাওয়া যায়; একটি হচ্ছে জ্ঞান এবং অপরটি হচ্ছে প্রেম।
পৃথিবীতে বালিকার প্রথম প্রেমেরমত সর্বগ্রাসী প্রেম আর কিছুই নাই। প্রথমযৌবনে বালিকা যাকে ভালোবাসে তাহার মত সৌভাগ্যবানও আর কেহই নাই। যদিও সে প্রেম অধিকাংশ সময় অপ্রকাশিত থেকে যায়, কিন্তু সে প্রেমের আগুন সব বালিকাকে সারাজীবন পোড়ায়।
প্রেমের আনন্দ থাকে স্বল্পক্ষণ কিন্তু বেদনা থাকে সারাটি জীবন।
আমি তোমাকে অসংখ্য ভাবে ভালবেসেছি, অসংখ্যবার ভালবেসেছি, এক জীবনের পর অন্য জীবনেও ভালবেসেছি, বছরের পর বছর, সর্বদা, সবসময়।
আমাদের আরও পোষ্ট পড়তে:
কাজী নজরুল ইসলাম এর সেরা কিছু বাণী বা উক্তি ও কবিতা
সুন্দর ফেসবুক স্ট্যাটাস, উক্তি, ক্যাপশন, কবিতা, কিছু কথা ও ছন্দ
রবি মিনিট চেক করার নিয়ম ২০২৪ | রবি মিনিট চেক কোড
অবাক করা ফেসবুক স্ট্যাটাস, উক্তি, ক্যাপশন, কবিতা ও কিছু কথা
সিঙ্গেল ফানি স্ট্যাটাস, ক্যাপশন, কবিতা ও কিছু কথা
বসন্তের রোমান্টিক স্ট্যাটাস, ক্যাপশন, উক্তি, ছন্দ ও কবিতা
সাদামাটা জীবন নিয়ে উক্তি, স্ট্যাটাস, ক্যাপশন, কবিতা ও কিছু কথা
মায়া নিয়ে উক্তি, স্ট্যাটাস, ক্যাপশন, কিছু কথা ও কবিতা
দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে উক্তি, স্ট্যাটাস, ক্যাপশন, কবিতা ও কিছু কথা
ভ্রমন নিয়ে স্ট্যাটাস, উক্তি, ক্যাপশন ও কিছু কথা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাণী
রবী ঠাকুর আমাদের জন্য সেরা কিছু বাণী করে গেছেন। আজ আমরা আপনাদের জন্য সেই সব মূল্যবান বাণী নিয়ে হাজির হলাম। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। পড়ে নেয়া যাক সেই সব সেরা বাণী গুলো।
শিক্ষা কোনো দেশেই সম্পূর্ণত ইস্কুল হইতে হয় না এবং আমাদের দেশেও হইতেছে না। পরিপাকশক্তি ময়রার দোকানে তৈরি হয় না, খাদ্যেই তৈরি হয়।
অত্যাবশ্যক শিক্ষার সহিত স্বাধীন পাঠ না মিশাইলে ছেলে ভালো করিয়া মানুষ হইতে পারে না বয়ঃপ্রাপ্ত হইলেও বুদ্ধিবৃত্তি সম্বন্ধে সে অনেকটা পরিমাণে বালক থাকিয়াই যায়।
শিক্ষার অবস্থায় উপকরণের কিছু বিরলতা, আয়োজনের কিছু অভাব থাকাই ভালো; অভ্যস্ত হওয়া চাই স্বল্পতায়। অনায়াসে প্রয়োজন জোগানোর দ্বারা ছেলেদের মনটাকে আদুরে করে তোলা তাদের নষ্ট করা।
ডাক্তার বলে, প্রতিদিন একই অভ্যস্ত খাওয়া পরিপাকের পক্ষে অনুকূল নয়। ভোজ্য সম্বন্ধে রসনার বিস্ময় না থাকলে দেহ তাকে গ্রহণ করতে আলস্য করে। শিশু ছাত্রদের একই ক্লাসে একই সময়ে একই বিষয় শিক্ষার পুনরাবৃত্তি করানোতেই তাদের শিক্ষার আগ্রহ ঘুচিয়ে দেওয়া হয়।
তুচ্ছ বিষয়টুকুর জন্যও বই নহিলে মন আশ্রয় পায় না। বইয়ের ভিতর দিয়া জানাকেই আমরা পাণ্ডিত্য বলিয়া গর্ব করি। জগৎকে আমরা মন দিয়া ছুঁই না বই দিয়া ছুঁই।
আমাদের জীবনযাত্রা গরিবের অথচ আমাদের শিক্ষার বাগাড়ম্বরটা যদি ধনীর চালে হয় তবে টাকা ফুঁকিয়া দিয়া টাকার থলি তৈরি করার মতো হইবে।
পৃথিবীর উপকার করার ইচ্ছা থাকলেও কৃতকার্য হওয়া যায় না, কিন্তু তার বদলে যেটা করতে পারি সেইটে করে ফেললে অনেক সময় আপনি পৃথিবীর উপকার হয়, নিদেন একটা কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়।
কেউ কেউ যেমন প্রথম শ্রেণীতে পাস করে, কেউ কেউ তেমনি প্রথম শ্রেণীতে ফেল করে। কিন্তু যারা পাস করে তাদেরই ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণী নির্দিষ্ট হয়, যারা ফেল করে তাদের মধ্যে শ্রেণীনির্দেশ করা কেউ আবশ্যক মনে করে না।
কৃতকার্য হবার মতো শিক্ষা যাদের নেই, যারা কেবলমাত্র দৈবক্রমেই কৃতকার্য হয়ে ওঠে, তাদের সেই কৃতকার্যতাটা একটা বিষম বালাই।
সুশিক্ষার লক্ষণ এই যে, তাহা মানুষকে অভিভূত করে না, তাহা মানুষকে মুক্তিদান করে।
আমাদের শিক্ষার মধ্যে এমন একটি সম্পদ থাকা চাই যা কেবল আমাদের তথ্য দেয় না, সত্য দেয়। যা কেবল ইন্ধন দেয় না, অগ্নি দেয়।
মুখস্থ করিয়া পাস করাই তো চৌর্যবৃত্তি! যে ছেলে পরীক্ষাশালায় গোপনে বই লইয়া যায় তাকে খেদাইয়া দেওয়া হয়। আর যে ছেলে তার চেয়েও লুকাইয়া লয়, অর্থাৎ চাদরের মধ্যে না লইয়া মগজের মধ্যে লইয়া যায়, সেই-বা কম কী করিল?
হাল ছাড়ব না, কিন্তু কোন দিক বাগে হাল চালাতে হবে সেটা যদি না ভাবি ও বুদ্ধিসংগত তার একটা জবাব না দিই তবে, মুখে যতই আস্ফালন করি, ভাষান্তরে তাকেই বলে হাল ছেড়ে দেওয়া।
শিশুবয়সে নির্জীব শিক্ষার মতো ভয়ংকর ভার আর কিছুই নাই। তাহা মনকে যতটা দেয় তাহার চেয়ে পিষিয়া বাহির করে অনেক বেশি।
তিক্ত বড়িকে মিষ্টি আকারে গেলানো রাজনীতির নৈপুণ্য।
যার সঙ্গে মানুষের লোভের সম্বন্ধ তার কাছ থেকে মানুষ প্রয়োজন উদ্ধার করে, কিন্তু কখনো তাকে সম্মান করে না।
স্বার্থ জিনিসটা যে কেবল নিজে ক্ষুদ্র তা নয়, যার প্রতি সে হস্তক্ষেপ করে তাকেও ক্ষুদ্র করে তোলে।
ছেলে যদি মানুষ করিতে চাই, তবে ছেলেবেলা হইতেই তাহাকে মানুষ করিতে আরম্ভ করিতে হইবে, নতুবা সে ছেলেই থাকিবে, মানুষ হইবে না। শিশুকাল হইতেই কেবল স্মরণশক্তির উপর সমস্ত ভর না দিয়া সঙ্গে সঙ্গে যথা পরিমাণে চিন্তাশক্তি ও কল্পনাশক্তির স্বাধীন পরিচালনার অবসর দিতে হইবে।
শিখিবার কালে, বাড়িয়া উঠিবার সময়ে, প্রকৃতির সহায়তা নিতান্তই চাই। গাছপালা, স্বচ্ছ আকাশ, মুক্ত বায়ু, নির্মল জলাশয়, উদার দৃশ্য ইহারা বেঞ্চি এবং বোর্ড, পুঁথি এবং পরীক্ষার চেয়ে কম আবশ্যক নয়।
ঘুরিয়া ফিরিয়া যেমন করিয়াই চলি না কেন শেষকালে এই অলঙ্ঘ্য সত্যে আসিয়া ঠেকিতেই হয় যে, শিক্ষকের দ্বারাই শিক্ষাবিধান হয়, প্রণালীর দ্বারা হয় না।
শর ভাবে, ছুটে চলি, আমি তো স্বাধীন,
ধনুকটা একঠাঁই বদ্ধ চিরদিন।
ধনু হেসে বলে, শর, জান না সে কথা
আমারি অধীন জেনো তব স্বাধীনতা ।
অতীতকাল যত বড় কালই হোক নিজের সম্বন্ধে বর্তমান কালের একটা স্পর্ধা থাকা উচিত। মনে থাকা উচিত তার মধ্যে জয় করবার শক্তি আছে।
মনুষ্যত্বের শিক্ষাটাই চরম শিক্ষা আর সমস্তই তার অধীন।
মানুষের বিশ্বজয়ের এই একটা পালা বস্তুজগতে; ভাবের জগতে তার আছে আর একটা পালা। ব্যাবহারিক বিজ্ঞানে একদিকে তার জয়স্তম্ভ, আর-একদিকে শিল্পে সাহিত্যে।
পৃথিবীতে সকলের চেয়ে বড়ো জিনিস আমরা যাহা কিছু পাই তাহা বিনামূল্যেই পাইয়া থাকি, তাহার জন্য দরদস্তুর করিতে হয় না। মূল্য চুকাইতে হয় না বলিয়াই জিনিসটা যে কত বড়ো তাহা আমরা সম্পূর্ণ বুঝিতেই পারি না।
আমার এই আমির মধ্যে যদি ব্যর্থতা থাকে তবে অন্য কোনো আমিত্ব লাভ করিয়া তাহা হইতে নিষ্কৃতি পাইব না।
যাহাদের স্বাভাবিক ভদ্রতা নাই তাহারা ভদ্র হইতে ইচ্ছা করিলে আনুষ্ঠানিক ভদ্রতার কিছু বাড়াবাড়ি করিয়া থাকে।
বাঙালির বুদ্ধি সহজেই অত্যন্ত সূক্ষ্ম। তাহার দ্বারা চুল চেরা যায়, কিন্তু বড়ো বড়ো গ্রন্থে ছেদন করা যায় না। তাহা সুনিপুণ, কিন্তু সবল নহে। আমাদের বুদ্ধি ঘোড়দৌড়ের ঘোড়ার মতো অতিসূক্ষ্ম তর্কের বাহাদুরিতে ছোটে ভালো, কিন্তু কর্মের পথে গাড়ি লইয়া চলে না।
ভুল করিবার অধিকার যাহার নাই, সত্যকে আবিষ্কার করিবার অধিকারও সে পায় নাই। পরের শত শত ভুল জড়ভাবে মুখস্থ করিয়া রাখার চেয়ে সচেষ্টভাবে নিজে ভুল করা অনেক ভালো। কারণ, যে চেষ্টা ভুল করায় সেই চেষ্টাই ভুলকে লঙ্ঘন করাইয়া লইয়া যায়।
লোকের যখন ধর্মজ্ঞান সহসা বিশেষ প্রবল হইয়া উঠে, তখন কোনো যুক্তিই তাহার কাছে খাটে না।
মানুষ এক দিকে মৃত্যুর অধিকারে, আর এক দিকে অমৃতে। এক দিকে সে ব্যক্তিগত সীমায়, আর এক দিকে বিশ্বগত বিরাটে। এই দুয়ের কোনোটাকেই উপেক্ষা করা চলে না।
অন্য ক্ষমতা যখন কম থাকে তখন খোঁচা দিবার ক্ষমতাটা খুব তীক্ষ্ম হইয়া উঠে।
নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস, ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস। নদীর ওপার বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। কহে, যাহা কিছু সুখ সকলি ওপারে।
পরের অস্ত্র কাড়িয়া লইলে নিজের অস্ত্র নির্ভয়ে উচ্ছৃঙ্খল হইয়া উঠে এইখানেই মানুষের পতন।
যে ছেলে চাবামাত্রই পায়, চাবার পূর্বেই যার অভাব মোচন হতে থাকে। সে নিতান্ত দুর্ভাগা। ইচ্ছা দমন করতে না শিখে কেউ কোনকালে সুখী হতে পারেনা।
নিজের গুণহীনতার বিষয়ে অনভিজ্ঞ এমন নির্গুণ শতকরা নিরেনব্বই জন, কিন্তু নিজের গুণ একেবারে জানে না এমন গুণী কোথায়?
যাহারা নিজে বিশ্বাস নষ্ট করে না তাহারাই অন্যকে বিশ্বাস করে।
যায় যদি লুপ্ত হয়ে থাকে শুধু থাক এক বিন্দু নয়নের জল কালের কপোল তলে শুভ্র সমুজ্জ্বল এ তাজমহল।
অতীতকাল যত বড় কালই হোক নিজের সম্বন্ধে বর্তমান কালের একটা স্পর্ধা থাকা উচিত। মনে থাকা উচিত তার মধ্যে জয় করবার শক্তি আছে।
ছেঁড়া পাপড়ির মধ্যে আপনি ফুলের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন না।
নিজের দুর্বলতার জন্যে অন্যের শক্তিকে হীন করো না।
কলস যত বড়ই হউক না, সামান্য ফুটা হইলেই তাহার দ্বারা আর কোনো কাজ পাওয়া যায় না। তখন যাহা তোমাকে ভাসাইয়া রাখে তাহাই তোমাকে ডুবায়।
উপার্জনে আমাদের সুযোগ কম বলেই আসক্তি সঞ্ছয়ে ভিতু আমরা
পরের দোষত্রুটি লইয়া কেবলই আলোচনা করিতে থাকিলে মন ছোটো হইয়া যায়, স্বভাব সন্দিগ্ধ হইয়া উঠে, হৃদয়ের সরসতা থাকে না।
আমরা যখন মিথ্যাপথে চলি, তখন আমরা দুর্বল হইয়া পড়ি এইজন্য। তখন আমরা আত্মহত্যা করি। তখন আমরা একেবারে আমাদের মূলে আঘাত করি। আমরা যাহার উপরে দাঁড়াইয়া আছি তাহাকেই সন্দেহ করিয়া বসি।
সংসারে সেরা লোকেরাই কুড়ে এবং বেকার লোকেরাই ধন্য। উভয়রে সম্মিলন হলেই মণি কাঞ্চন যোগ। এই কুঁড়ে বেকারে মিলনের জন্যইতো সন্ধ্যেবেলাটার সৃষ্টি হয়েছে। যোগীদরে জন্য সকালবেলা রোগীদের জন্য রাত্রি কাজের লোকদের জন্য দশটা চারটে।
অতিদূর পরপারে গাঢ় নীল রেখার মতো বিদেশের আভাস দেখা যায় সেখান হইতে রাগ দ্বেষের দ্বন্দ্বকোলাহল সমুদ্র পার হইয়া আসিতে পারে না।
নির্দয় হবে না, কিন্তু কর্তব্যের বেলায় নির্মম হতে হবে।
শিক্ষা যারা আরম্ভ করেছে গোড়া থেকেই বিজ্ঞানের ভাণ্ডারে না হোক, বিজ্ঞানের আঙিনায় তাদের প্রবেশ করা অত্যাবশক, এই জায়গায় বিজ্ঞানের সেই প্রথম পরিচয় ঘটিয়ে দেবার কাজে সাহিত্যর সহায়টা স্বীকার করলে তাতে অগৌরব নেই।
আলো বলে, অন্ধকার তুই বড় কালো।
অন্ধকার বলে, ভাই তাই তুমি আলো।
কেরোসিন শিখা বলে মাটির প্রদীপে
ভাই বলে ডাক যদি দেব গলা টিপে।
হেনকালে গগনেতে উঠিলেন চাঁদ,
কোরোসিন শিখা বলে, এসো মোর দাদা।
কেবলমাত্র সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে বা জলের দিকে তাকিয়ে থাকলে সমুদ্র পার হওয়া সম্ভব নয়।
তোমারে প্রণমি আমি, হে ভীষণ, সুস্নিগ্ধ শ্যামল, অক্লান্ত অম্লান’।
সদ্যোজাত মহাবীর, কী এনেছ করিয়া বহন
কিছু নাহি জান।
উড়েছে তোমার ধ্বজা মেঘরন্ধ্রচ্যুত তপনের
জলদর্চিরেখা
করজোড়ে চেয়ে আছি উর্ধ্বমুখে, পড়িতে জানি না কী তাহাতে লেখা।
জ্ঞানের চর্চায় যার মনটা নিরেট হয়ে ওঠে সেখানে উড়ো ভাবনার গ্যাস নীচ থেকে ঠেলে উঠবার মতো সমস্ত ফাটল মরে যায়, সে মানুষের পক্ষে বিয়ে করবার দরকার হয় না।
মানুষের বিশ্বজয়ের একটা পালা বস্তুজগতে। ভাবের জগতে তার আছে আর একটা পালা। ব্যবহারিক বিজ্ঞানে একদিকে তার জয়স্তম্ভ, আর একদিকে শিল্পে সাহিত্যে।
যে রত্নকে সস্তায় পাওয়া গেলো তারও আসল মুল্য যে বোঝে সেই জানবো জহুরি।
যে মরিতে জানে সুখের অধিকার তাহারই। যে জয় করে, ভোগ করা তাহাকেই সাজে। যে লোক জীবনের সঙ্গে সুখকে, বিলাসকে দুই হাতে আঁকড়িয়া থাকে, সুখ তাহার সেই ঘৃণিত, ক্রীতদাসের কাছে নিজের সমস্ত ভাণ্ডার খুলিয়া দেয় না, তাহাকে উচ্ছিষ্টমাত্র দিয়া দ্বারে ফেলিয়া রাখে।
যে লোক পরের দুঃখকে কিছুই মনে করে না তাহার সুখের জন্য ভগবান ঘরের মধ্যে এত স্নেহের আয়োজন কেন রাখিবেন।
যারে তুমি নীচে ফেল সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে। পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমার পশ্চাতে টানিছে। অজ্ঞানের অন্ধকারে আড়ালে ঢাকিছ যারে তোমার মঙ্গল ঢাকি গড়িছে সে ঘোর ব্যবধান। অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।
সমাজ সংসার মিছে সব,
মিছে এ জীবনের কলরব।
কেবলই আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে
হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব
আঁধারে মিশে গেছে আর সব।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার ক্যাপশন
আমাদের কারই না ভালো লাগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার ক্যাপশন পড়তে। তাইতো আজ আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম রবী ঠাকুরের কবিতার ক্যাপশন আকারের। চলুন পড়ে নিই।
সেদিন স্বামী বাগানে আমাকে অনায়াসে বললেন, তোমাকে ছুটি দিলুম। ছুটি কি একটা জিনিস? ছুটি যে ফাঁকা। মাছের মতো আমি যে চিরদিন আদরের জলে সাঁতার দিয়েছি, হঠাৎ আকাশে তুলে ধরে যখন বললে “এই তোমার ছুটি” তখন দেখি চলতেও পারি নে, বাঁচতেও পারি নে।
আমার মন্দির যে শূন্য থাকবার জন্যেই তৈরি, ওর যে দরজা বন্ধ। আমার যে দেবতা ছিল, সে মন্দিরের বাইরেই বসে ছিল, এতকাল তা বুঝতে পারিনি। মনে করেছিলুম অর্ঘ্য সে নিয়েছে, বরও সে দিয়েছে- কিন্তু শূন্য মন্দির মোর, শূন্য মন্দির মোর।
শাঙনগগনে ঘোর ঘনঘটা, নিশীথযামিনী রে।
কুঞ্জপথে, সখি, কৈসে যাওব অবলা কামিনী রে।
উন্মদ পবনে যমুনা তর্জিত, ঘন ঘন গর্জিত মেহ।
দমকত বিদ্যুত, পথতরু লুন্ঠিত, থরহর কম্পিত দেহ
ঘন ঘন রিম্ ঝিম্ রিম্ ঝিম্ রিম্ ঝিম্ বরখত নীরদপুঞ্জ।
শাল-পিয়ালে তাল-তমালে নিবিড়তিমিরময় কুঞ্জ।
কহ রে সজনী, এ দুরুযোগে কুঞ্জে নিরদয় কান
দারুণ বাঁশী কাহ বজায়ত সকরুণ রাধা নাম।
মোতিম হারে বেশ বনা দে, সীঁথি লগা দে ভালে।
উরহি বিলুন্ঠিত লোল চিকুর মম বাঁধহ চম্পকমালে।
গহন রয়নমে ন যাও, বালা, নওলকিশোরক পাশ।
গরজে ঘন ঘন, বহু ডর পাওব, কহে ভানু তব দাস।
এখনকার কালের বয়স সকল দিকেই তখনকার থেকে হঠাৎ অনেক বেড়ে গিয়েছে । তখন বড়ো-ছোটো সবাই ছিলো ছেলেমানুষ।
শিক্ষা জিনিসটা যথাসম্ভব আহার-ব্যাপারের মতো হওয়া উচিত। খাদ্যদ্রব্যে প্রথম কামড়টা দিবামাত্রেই তাহার স্বাদের সুখ আরম্ভ হয়, পেট ভরিবার পূর্ব হইতেই পেটটি খুশি হইয়া জাগিয়া উঠে- তাহাতে তাহার জারক রসগুলির আলস্য দূর হইয়া যায়।
গোধূলিগগনে মেঘে ঢেকেছিল তারা
আমার যা কথা ছিল, হয়ে গেল সারা।
হয়তো সে তুমি শোনো নাই
সহজে বিদায় দিলে তাই,
আকাশ মুখর ছিল যে তখন, ঝরোঝরো বারিধারা।
আর কি কখনো কবে
এমন সন্ধ্যা হবে?
জনমের মতো হায় হয়ে গেল হারা।
এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।
এমন দিনে মন খোলা যায়
এমন মেঘস্বরে, বাদল ঝরোঝরে
তপনহীন ঘন তমসায়।
দু কথা বলি যদি কাছে তার
তাহাতে আসে যাবে কিবা কার?
ব্যাকুল বেগে আজি বহে যায়,
বিজুলি থেকে থেকে চমকায়।
যে কথা এ জীবনে, রহিয়া গেল মনে
সে কথা আজি যেন বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।
বাইরে থেকে জীবনে যখন বাধা আসে তখন লড়াই করবার জোর পাওয়া যায়, তখন স্বয়ং দেবতাই হন সহায়। হঠাৎ সেই বাইরের বিরুদ্ধতা একেবারে নিরস্ত হলে যুদ্ধ থামে কিন্তু সন্ধি হতে চায় না। তখন বেরিয়ে পড়ে নিজের ভিতরের প্রতিকূলতা।
বিদ্যা যতই বাড়ে ততই জানা যায় যে, কিছুই জানিনা, টাকারও সেই দশা। টাকা যতই বাড়ে ততই মনে হয় টাকা নাই বলিলেই হয়।
আমি জানি
পুরাতন এই বইখানি।
অপঠিত, তবু মোর ঘরে
আছে সমাদরে।
এর ছিন্ন পাতে পাতে তার
বাষ্পাকুল করুণার
স্পর্শ যেন রয়েছে বিলীন।
সে যে আজ হল কতদিন।
সরল দুখানি আঁখি ঢলোঢলো,
বেদনার আভাসেই করে ছলোছলো।
কালোপাড় শাড়িখানি মাথার উপর দিয়ে ফেরা,
দুটি হাত কঙ্কণে ও সান্ত্বনায় ঘেরা।
জনহীন দ্বিপ্রহরে
এলোচুল মেলে দিয়ে বালিশের পরে,
এই বই তুলে নিয়ে বুকে
একমনে স্নিগ্ধমুখে
বিচ্ছেদকাহিনী যায় পড়ে।
ভালোবাসার মধ্যে অদ্ভুত
এক মায়া আছে কষ্ট পেলেও
ছাড়া যায় না আবার মন ভেঙে
গেলেও ঘৃনা করা যায় না।
জোর করে কাউকে ধরে রাখার
প্রয়োজন নেই যে থাকার সে
থাকবেই আর যে চলে
যাওয়ার সে চলে যাবেই।
প্রেমে পড়লে তুমি সাহিত্য
লিখতে শিখবে,বিচ্ছেদ হলে
তুমি সাহিত্য বুঝতে শিখবে।
আমরা সকলেই পৃথিবীতে কাহাকেও
না কাহাকেও ভালোবাসি কিন্তু
ভালোবাসিলেও বন্ধু হইবার
শক্তি আমাদের সকলের নাই।
তুমি যতোটা দেবে ঠিক ততোটাই
ফেরৎ পাবে সেটা ভালোবাসা হোক
বা কষ্ট হয়তো অন্য কোন নামে অন্য
কোন খামে কিন্তু ফেরৎ তুমি পারেই।
এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম,
প্রেম মেলে না,
শুধু সুখ চলে যায়।
নারীর প্রেমে মিলনের গান বাজে,
পুরুষের প্রেমে বিচ্ছেদের বেদনা।
স্বামীরা প্রেমিক হতে অবশ্যই রাজি,
তবে সেটা নিজের স্ত্রীর সাথে নয়।
নিজের স্ত্রীর প্রেমিক হওয়ার বিষয়টা
কেন জানি তারা ভাবতেই চায়না।
আমি তোমাকে অসংখ্য ভাবে ভালবেসেছি,
অসংখ্যবার ভালবেসেছি,
এক জীবনের পর অন্য জীবনেও ভালবেসেছি,
বছরের পর বছর, সর্বদা, সবসময়।
এমন প্রেম করো না সকালে আছে
বিকালে নেই, এমন বন্ধুত্ব করো না
সময়ের সাথে সাথে দূরে সরে যায়,
এমন ভালোবাসা শুধু অভিনয়
ছাড়া আর কিছু না
তোমার অভিমানের কারণে কেউ
যদি দুঃখ পাই তাহলে ভেবে নিও সে
তোমাকে সবথেকে বেশি ভালোবাসে।
এত ভালোবাসি এত যারে চাই,
মনে হয় না তো সে যে,
কাছে নাই যেন এ বাসনা ব্যাকুল
আবেগে তাহারে আনিব ডাকি
প্রেমের মধ্যে ভয় না
থাকলে রস নিবিড় হয় না।
নারীর প্রেম যে পুরুষকে চায়
তাকে প্রত্যক্ষ চায় তাকে নিরন্তর
নানা আকারে বেষ্টন করবার
জন্যে সে ব্যাকুল মাঝখানে
ব্যবধানের শূন্যতাকে সে সইতে পারে না।
ভালোবাসা যেখানে গভীর,
নত হওয়া সেখানে গৌরবের।
একজন নারীকে জীবনকে
প্রেম পরিবর্তন করতে পারে
আর একজন পুরুষকে উচ্চাকাঙ্ক্ষা।
তুমি যদি কাউকে ভালোবাসো
তবে তাকে ছেড়ে দাও।
যদি সে তোমার কাছে ফিরে
আসে তবে সে তোমারই ছিল।
আর যদি ফিরে না আসে তবে
সে কখনই তোমার ছিল না।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা
রবী ঠাকুরের কিছু কবিতা আপনাদের জন্য এখানে দিলাম। আশা করি পড়লে অনেক ভালো লাগবে। তাই চলুন কবিতা গুলো পড়ে নেয়া যাক।
অনন্ত প্রেম
তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি
শত রূপে শত বার
জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।
চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয়
গাঁথিয়াছে গীতহার,
কত রূপ ধরে পরেছ গলায়,
নিয়েছ সে উপহার
জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।
যত শুনি সেই অতীত কাহিনী,
প্রাচীন প্রেমের ব্যথা,
অতি পুরাতন বিরহমিলনকথা,
অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে
দেখা দেয় অবশেষে
কালের তিমিররজনী ভেদিয়া
তোমারি মুরতি এসে,
চিরস্মৃতিময়ী ধ্রুবতারকার বেশে।
আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি
যুগল প্রেমের স্রোতে
অনাদিকালের হৃদয়-উৎস হতে।
আমরা দুজনে করিয়াছি খেলা
কোটি প্রেমিকের মাঝে
বিরহবিধুর নয়নসলিলে,
মিলনমধুর লাজে
পুরাতন প্রেম নিত্যনূতন সাজে।
আজি সেই চিরদিবসের প্রেম
অবসান লভিয়াছে
রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে।
নিখিলের সুখ, নিখিলের দুখ,
নিখিল প্রাণের প্রীতি,
একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে
সকল প্রেমের স্মৃতি
সকল কালের সকল কবির গীতি।
অভিমান
কারে দিব দোষ বন্ধু, কারে দিব দোষ!
বৃথা কর আস্ফালন, বৃথা কর রোষ।
যারা শুধু মরে কিন্তু নাহি দেয় প্রাণ,
কেহ কভু তাহাদের করে নি সম্মান।
যতই কাগজে কাঁদি, যত দিই গালি,
কালামুখে পড়ে তত কলঙ্কের কালি।
যে তোমারে অপমান করে অহর্নিশ
তারি কাছে তারি ‘পরে তোমার নালিশ!
নিজের বিচার যদি নাই নিজহাতে,
পদাঘাত খেয়ে যদি না পার ফিরাতে
তবে ঘরে নতশিরে চুপ করে থাক্,
সাপ্তাহিকে দিগ্বিদিকে বাজাস নে ঢাক।
একদিকে অসি আর অবজ্ঞা অটল,
অন্য দিকে মসী আর শুধু অশ্রুজল।
লজ্জা
আমার হৃদয় প্রাণ
সকলই করেছি দান,
কেবল শরমখানি রেখেছি।
চাহিয়া নিজের পানে
নিশিদিন সাবধানে
সযতনে আপনারে ঢেকেছি।
হে বঁধু, এ স্বচ্ছ বাস
করে মোরে পরিহাস,
সতত রাখিতে নারি ধরিয়া
চাহিয়া আঁখির কোণে
তুমি হাস মনে মনে,
আমি তাই লাজে যাই মরিয়া।
দক্ষিণপবনভরে
অঞ্চল উড়িয়া পড়ে
কখন্ যে নাহি পারি লখিতে।
পুলকব্যাকুল হিয়া
অঙ্গে উঠে বিকশিয়া,
আবার চেতনা হয় চকিতে।
বদ্ধ গৃহে করি বাস
রুদ্ধ যবে হয় শ্বাস
আধেক বসনবন্ধ খুলিয়া
বসি গিয়া বাতায়নে,
সুখসন্ধ্যাসমীরণে
ক্ষণতরে আপনারে ভুলিয়া।
পূর্ণচন্দ্রকররাশি
মূর্ছাতুর পড়ে আসি
এই নবযৌবনের মুকুলে,
অঙ্গ মোর ভালোবেসে
ঢেকে দেয় মৃদু হেসে
আপনার লাবণ্যের দুকূলে
মুখে বক্ষে কেশপাশে
ফিরে বায়ু খেলা আশে,
কুসুমের গন্ধ ভাসে গগনে
হেনকালে তুমি এলে
মনে হয় স্বপ্ন ব’লে,
কিছু আর নাহি থাকে স্মরণে।
থাক্ বঁধু, দাও ছেড়ে,
ওটুকু নিয়ো না কেড়ে,
এ শরম দাও মোরে রাখিতে
সকলের অবশেষ
এইটুকু লাজলেশ
আপনারে আধখানি ঢাকিতে।
ছলছল-দু’নয়ান
করিয়ো না অভিমান,
আমিও যে কত নিশি কেঁদেছি;
বুঝাতে পারি নে যেন
সব দিয়ে তবু কেন
সবটুকু লাজ দিয়ে বেঁধেছি
কেন যে তোমার কাছে
একটু গোপন আছে,
একটু রয়েছি মুখ হেলায়ে।
এ নহে গো অবিশ্বাস
নহে সখা, পরিহাস,
নহে নহে ছলনার খেলা এ।
বসন্তনিশীথে বঁধু,
লহ গন্ধ, লহ মধু,
সোহাগে মুখের পানে তাকিয়ো।
দিয়ো দোল আশে-পাশে,
কোয়ো কথা মৃদু ভাষে
শুধু এর বৃন্তটুকু রাখিয়ো।
সেটুকুতে ভর করি
এমন মাধুরী ধরি
তোমাপানে আছি আমি ফুটিয়া,
এমন মোহনভঙ্গে
আমার সকল অঙ্গে
নবীন লাবণ্য যায় লুটিয়া
এমন সকল বেলা
পবনে চঞ্চল খেলা,
বসন্তকুসুম-মেলা দুধারি।
শুন বঁধু, শুন তবে,
সকলই তোমার হবে,
কেবল শরম থাক্ আমারি।
আমার এ প্রেম নয়তো ভীরু
আমার এ প্রেম নয় তো ভীরু,
নয় তো হীনবল
শুধু কি এ ব্যাকুল হয়ে
ফেলবে অশ্রুজল।
মন্দমধুর সুখে শোভায়
প্রেম কে কেন ঘুমে ডোবায়।
তোমার সাথে জাগতে সে চায়
আনন্দে পাগল।
নাচ’ যখন ভীষণ সাজে
তীব্র তালের আঘাত বাজে,
পালায় ত্রাসে পালায় লাজে
সন্দেহ বিহবল।
সেই প্রচন্ড মনোহরে
প্রেম যেন মোর বরণ করে,
ক্ষুদ্র আশার স্বর্গ তাহার
দিক সে রসাতল।
মানষী
শুধু বিধাতার সৃষ্টি নহ তুমি নারী
পুরুষ গড়েছে তোরে সৌন্দর্য সঞ্চারি
আপন অন্তর হতে। বসি কবিগণ
সোনার উপমাসূত্রে বুনিছে বসন।
সঁপিয়া তোমার ‘পরে নূতন মহিমা
অমর করিছে শিল্পী তোমার প্রতিমা।
কত বর্ণ কত গন্ধ ভূষণ কত-না,
সিন্ধু হতে মুক্তা আসে খনি হতে সোনা,
বসন্তের বন হতে আসে পুষ্পভার,
চরণ রাঙাতে কীট দেয় প্রাণ তার।
লজ্জা দিয়ে, সজ্জা দিয়ে, দিয়ে আবরণ,
তোমারে দুর্লভ করি করেছে গোপন।
পড়েছে তোমার ‘পরে প্রদীপ্ত বাসনা
অর্ধেক মানবী তুমি অর্ধেক কল্পনা।
আমাদের আরও পোষ্ট পড়তে:
নীরবতা নিয়ে স্ট্যাটাস, উক্তি ও ক্যাপশন
সফলতা নিয়ে উক্তি, স্ট্যাটাস, ক্যাপশন ও গল্প
মানসিক চাপ নিয়ে উক্তি, স্ট্যাটাস, ক্যাপশন, কবিতা ও কিছু কথা
সমালোচনা নিয়ে উক্তি, স্ট্যাটাস, কবিতা, ক্যাপশন ও কিছু কথা
মুখোশধারী মানুষ নিয়ে উক্তি, স্ট্যাটাস, ক্যাপশন ও কবিতা
হতাশা নিয়ে উক্তি, ইসলামিক উক্তি, স্ট্যাটাস, ক্যাপশন ও কবিতা
শেষ কথা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উক্তি, বাণী, কবিতার ক্যাপশন ও কবিতা নামে আজকের এ পোষ্টটি আপনাদের কেমন লেগেছে? আশা করি অনেক ভালো লেগেছে আপনাদের। যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলেই আমাদের লেখা স্বার্থকতা পাবে।
কষ্ঠ করে পোষ্টটি পড়ার জন্য আপনাকে আমার মনের মনিকোঠা থেকে জানাই ধন্যবাদ।