কাজী নজরুল ইসলাম এর সেরা কিছু বাণী বা উক্তি ও কবিতা

আজ আমরা হাজির হলাম কাজী নজরুল ইসলাম এর সেরা কিছু বাণী বা উক্তি ও কবিতা নিয়ে। বিদ্রোহী কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জন্য রেখে গেছেন অসংখ্য কিছু বাণী বা উক্তি ও কবিতা সমূহ। আজ আমরা আপনাদের সাথে তাই শেয়ার করবো। চলুন শুরু করা যাক।

কাজী নজরুল ইসলাম

১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বাংলা, ২৪ শে মে ১৮৯৯ ইংরেজি বাঙালির হৃদয়ে চিরমুখর বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহন করেন বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে।

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, নাটককার, সংগীতজ্ঞ এবং প্রগতিশীল চিন্তার অধিকারী। দুই বাংলাতেই তিনি সমানভাবে জনপ্রিয়। তাঁর লেখার মধ্যে একদিকে যেমন আছে বিদ্রোহী উন্মাদনা তেমনি অন্যদিকে আছে প্রেমের স্নিগ্ধতা। একদিকে তীব্র প্রতিবাদ অন্যদিকে মানবতার জয়গান। কবি নিজেই তাঁর বিদ্রোহী কবিতায় বলেছিলেন- মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী/ আরেক হাতে রণতূর্য । এখানেই তিনি নিজেকে স্পষ্ট করে দেন যে তিনি গভীর মানব প্রেমিক কিন্তু কোনো রকম অন্যায়, অবিচার, শোষণ এবং ভণ্ডামিকে মেনে নেবেন না। সেটা আমৃত্যু বজায় রেখেছিলেন। পরাধীন দেশে তাঁর তীক্ষ্ণ তরবারির চেয়েও ধারালো কলম ব্রিটিশ শাসকের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। অকুতোভয় এই বীর কবি শাসকের চোখ রাঙানিতে কখনো আপোস করেননি।

সমাজে যে কোনো ধরনের অত্যাচারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল তার লেখনী। তিনি কবি হিসেবে অমরত্ব চান নি, তিনি আগে মানুষ তারপর কবি। তাই তো মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে সকল অনাচার, শোষণের সমাপ্তি চেয়েছিলেন। একই সঙ্গে গভীরভাবে আঁকড়ে ধরেছিলেন প্রেম, ভালোবাসা ও তীব্র প্রতিবাদ। মানুষ ও তার সমাজ, নারী, প্রেম, ধর্ম, রাজনীতি, বিদ্রোহ ও উৎসাহ উদ্দীপনায় ভরা কাজী নজরুল ইসলামের অমর বাণীগুলি কবিতায়, গানে, নাটকে বিধৃত হয়ে আছে। সেই বাণীগুলি আপামর বাঙালিকে প্রতিটি মুহূর্তে প্রাণিত করতে পারে। তাই কাজী নজরুল ইসলামের মূল্যবান কিছু উক্তি এখানে একত্র পরিবেশিত হল।

কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৭৬ সালের ২৯ শে আগস্ট পিক্স ডিজিজে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাংগন এ সমাহিহিত করা হয়।

কাজী নজরুল ইসলাম এর বাণী বা উক্তি

কাজী নজরুল ইসলাম এর সেরা কিছু বাণী

কবি এবং সাহিত্যিকরা অনেক মূল্যবান কিছু বাণী বা উক্তি আমাদের জন্য রেখে গেছেন। আজ আমরা আপনাদের জন্য কাজী নজরুল ইসলাম এর কিছু সেরা উক্তি তুলে ধরবো। তাহলে চলুন এবার শুরু করা যাক।

যাকে সত্যিকার ভালবাসা যায়, সে অতি অপমান, আঘাত করলে, হাজার ব্যথা দিলেও তাকে ভুলা যায়না।

যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে!

মিথ্যা শুনিনি ভাই, এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির কাবা নাই।

মৃত্যুর যন্ত্রণার চেয়ে বিরহের যন্ত্রণা যে কতো কঠিন,
কতো ভয়ানক তা একমাত্র ভুক্তভোগীই অনুভব করতে পারে।

হয়তো তোমার পাব দেখা
যেখানে ঐ নত আকাশ চুমছে বনের সবুজ রেখা।

ভগবান! তুমি চাহিতে পার কি ঐ দুটি নারীর পানে?
জানি না, তোমায় বাঁচাবে কে যদি ওরা অভিশাপ হানে!

কান্না হাসির খেলার মোহে অনেক আমার কাটল বেলা
কখন তুমি ডাক দেবে মা, কখন আমি ভাঙব খেলা?

ভালবাসার কোন অর্থ বা পরিমাণ নেই।

প্রেম হল ধীর প্রশান্ত ও চিরন্তন।

তোমারে যে চাহিয়াছে ভুলে একদিন, সে জানে তোমারে ভোলা কি কঠিন।

তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়, সে কি মোর অপরাধ? চাঁদেরে হেরিয়া কাঁদে চকোরিণী বলে না তো কিছু চাঁদ।

ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসা না পেলে তার জীবন দুঃখের ও জড়তার।

ভালোবাসাকে যে জীবনে অপমান করে সে জীবনে আর ভালোবাসা পায় না।

কামনা আর প্রেম দুটি হচ্ছে সম্পুর্ণ আলাদা। কামনা একটা প্রবল সাময়িক উত্তেজনা মাত্র আর প্রেম হচ্ছে ধীর প্রশান্ত ও চিরন্তন।

আমি বেদুইন, আমি চেঙ্গিস, আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কূর্ণিশ।

ভগবান! তুমি চাহিতে পার কি ঐ দুটি নারীর পানে?
জানি না, তোমায় বাঁচাবে কে যদি ওরা অভিশাপ হানে!

খেলে চঞ্চলা বরষা-বালিকা
মেঘের এলোকেশে ওড়ে পুবালি বায়
দোলে গলায় বলাকার মালিকা।

যার ভিত্তি পচে গেছে, তাকে একদম উপড়ে ফেলে নতুন করে ভিত্তি না গাঁথলে তার ওপর ইমারত যতবার খাঁড়া করা যাবে, ততবার তা পড়ে যাবে।

তিনিই আর্টিস্ট, যিনি আর্ট ফুটাইয়া তুলিতে পারেন। আর্টের অর্থ সত্য প্রকাশ এবং সত্য মানেই সুন্দর। সত্য চিরমঙ্গলময়।

শাস্ত্র না ঘেটে ডুব দাও সখা সত্য সিন্ধু জলে।

যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুঁছবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।

আমাদের শত ব্যথিত হৃদয়ে
জাগিয়া রহিবে তুমি ব্যথা হ’য়ে,
হ’লে পরিজন চির-পরিচয়ে-
পুনঃ পাব তব দরশন,
এ নহে পথের আলাপন।

স্বপনে কি যে কয়েছি তাই গিয়াছে চলে
জাগিয়া কেঁদে ডাকি দেবতায়
প্রিয়তম প্রিয়তম প্রিয়তম।।

আমি নিজেই নিজের ব্যথা করি সৃজন
শেষে সেই আমারে কাঁদায়, যারে করি আপনারি জন।

ফোটে যে ফুল আঁধার রাতে ঝরে ধুলায় ভোর বেলাতে আমায় তারা ডাকে সাথী আয়রে আয় সজল করুণ নয়ন তোলো দাও বিদায়।

বসন্ত মুখর আজি দক্ষিণ সমীরণে মর্মর গুঞ্জনেবনে বনে বিহ্বল বাণী ওঠে বাজি।

কপালে সুখ লেখা না থাকলে সে কপাল পাথরে ঠুকেও লাভ নেই। এতে কপাল যথেষ্টই ফোলে, কিন্তু ভাগ্য একটুও ফোলে না।

এই নীরব নিশীথ রাতে
শুধু জল আসে আঁখিপাতে!

নুড়ি হাজার বছর ঝরণায় ডুবে থেকেও রস পায় না।

হাসি দিয়ে যদি লুকালে তোমার সারা জীবনের বেদনা
আজো তবে শুধু হেসে যাও, আজ বিদায়ের দিনে কেঁদোনা।

ব্যর্থ না হওয়ার সব চাইতে নিশ্চিন্ত পথ হলো সাফল্য অর্জনে দৃঢ় সঙ্কল্প হওয়া।

অন্ধের মতো কিছু না বুঝিয়া, না শুনিয়া, ভেড়ার মতো পেছন ধরিয়া চলিও না। নিজের বুদ্ধি, নিজের কার্যশক্তিকে জাগাইয়া তোলে।

বহু যুবককে দেখিয়াছি যাহাদের যৌবনের উর্দির নিচে বার্ধকের কঙ্গাল মূর্তি।

আসবে ঝড়, নাচবে তুফান, টুটবে সকল বন্ধন,
কাঁপবে কুটীর সেদিন ত্রাসে, জাগবে বুকে ক্রন্দন-
টুটবে যবে বন্ধন!
পড়বে মনে, নেই সে সাথে
বাঁধবে বুকে দুঃখ-রাতে-
আপনি গালে যাচবে চুমা,
চাইবে আদর, মাগবে ছোঁওয়া,
আপনি যেচে চুমবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে।

আমরা রচি ভালোবাসার
আশার ভবিষ্যৎ
মোদের স্বর্গ-পথের আভাস দেখায়
আকাশ-ছায়াপথ!
মোদের চোখে বিশ্ববাসীর
স্বপ্ন দেখা হোক সফল।
আমরা ছাত্রদল।

সত্য যদি লক্ষ্য হয়, সুন্দর ও মঙ্গলের সৃষ্টি সাধনা ব্রত হয়, তবে তাহার লেখা সম্মান লাভ করিবেই করিবে।

রক্ত ঝরাতে পারি না তো একা, তাই
লিখে যাই এ রক্ত লেখা।

আজি হ’তে শত বর্ষে আগে, কে কবি,
স্মরণ তুমি করেছিলে আমাদের শত অনুরাগে।

যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুঁছবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।

আসবে আবার আশিন-হাওয়া, শিশির-ছেঁচা রাত্রি,
থাকবে সবাই – থাকবে না এই মরণ-পথের যাত্রী!
আসবে শিশির-রাত্রি!
থাকবে পাশে বন্ধু স্বজন,
থাকবে রাতে বাহুর বাঁধন,
বঁধুর বুকের পরশনে
আমার পরশ আনবে মনে-
বিষিয়ে ও-বুক উঠবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!

স্বপন ভেঙ্গে নিশুত রাতে, জাগবে হঠাৎ চমকে
কাহার যেন চেনা ছোয়ায় উঠবে ও-বুক ছমকে-
জাগবে হঠাৎ ছমকে,
ভাববে বুঝি আমিই এসে
বসনু বুকের কোলটি ঘেষে
ধরতে গিয়ে দেখবে যখন
শূন্য শয্যা মিথ্যা স্বপন
বেদনাতে চোখ বুজবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে ।

কপালে সুখ লেখা না থাকলে সে কপাল পাথরে ঠুকেও লাভ নেই। এতে কপাল যথেষ্টই ফোলে, কিন্তু ভাগ্য একটুও ফোলে না।

এই নীরব নিশীথ রাতে
শুধু জল আসে আঁখিপাতে!

হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে ক’রেছ মহান!
তুমি মরে দানিয়াছ খ্রিষ্টের সম্মান।

আমাদের শত ব্যথিত হৃদয়ে
জাগিয়া রহিবে তুমি ব্যথা হ’য়ে,
হ’লে পরিজন চির-পরিচয়ে-
পুনঃ পাব তব দরশন,
এ নহে পথের আলাপন।

হাসি দিয়ে যদি লুকালে তোমার সারা জীবনের বেদনা
আজো তবে শুধু হেসে যাও, আজ বিদায়ের দিনে কেঁদোনা।

মৃত্যুর যন্ত্রণার চেয়ে বিরহের যন্ত্রণা যে কতো কঠিন,
কতো ভয়ানক তা একমাত্র ভুক্তভুগিই অনুভব করতে পারে।

আমার যাবার সময় হল দাও বিদায় মোছ আঁখি দুয়ার খোল দাও বিদায়।

আমি নিজেই নিজের ব্যথা করি সৃজন
শেষে সেই আমারে কাঁদায়, যারে করি আপনারি জন।

গাইতে গিয়ে কন্ঠ ছিড়ে আসবে যখন কান্না
বলবে সবাই- সেই যে পথিক তার শোনানো গান না?-
আসবে ভেঙ্গে কান্না,
পড়বে মন আমার সোহাগ
কন্ঠে তোমার কাদবে বেহাগ
পড়বে মনে আমার ফাকি
অশ্রুহারা কঠিন আখি
ঘন ঘন মুছবে,
বুঝবে সেদিন বুঝবে।

স্বপনে কি যে কয়েছি তাই গিয়াছে চলে
জাগিয়া কেঁদে ডাকি দেবতায়
প্রিয়তম প্রিয়তম প্রিয়তম।

ফোটে যে ফুল আঁধার রাতে ঝরে ধুলায় ভোর বেলাতে আমায় তারা ডাকে সাথী আয়রে আয় সজল করুণ নয়ন তোলো দাও বিদায়।

বসন্ত মুখর আজি দক্ষিণ সমীরণে মর্মর গুঞ্জনেবনে বনে বিহ্বল বাণী ওঠে বাজি।

বসন্ত এলো এলো এলোরে
পঞ্চম স্বরে কোকিল কুহুরে
মুহু মুহু কুহু কুহু তানে
মাধবী নিকুঞ্জে পুঞ্জে পুঞ্জে
ভ্রমর গুঞ্জে গুঞ্জে গুনগুন গানে।

আসে বসন্ত ফুল বনে সাজে বনভূমি সুন্দরী।
চরণে পায়েলা রুমুঝুমু মধুপ উঠিছে গুঞ্জরি।

অভাবের দিনে প্রিয় অতিথি আসার মতো পীড়াদায়ক বুঝি আর কিছু নেই। শুধু হৃদয় দিয়ে দেবতার পূজা হয়তো করা যায়, কিন্তু শুধু হাতে অতিথিকে বরণ করা চলে না।

আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই। বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।

কপালে সুখ লেখা না থাকলে সে কপাল পাথরে ঠুকেও লাভ নেই। এতে কপাল যথেষ্টই ফোলে, কিন্তু ভাগ্য একটুও খোলে না।

আমরা সবাই পাপী, আপন পাপের বাটখারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপি।

হিন্দু না ওরা মুসলিম এই জিজ্ঞাসে কোন জন হে, কাণ্ডারি বল ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার।” – কাজী নজরুলইসলাম “পশুর মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে আমাদের লাভ কী, যদি আমাদের গৌরব করার মতো কিছু নাই থাকে।

যুগের ধর্ম এই- পীড়ন করিলে সে পীড়ন এসে পীড়া দেবে তোমাকেই।

বাহিরের স্বাধীনতা গিয়াছে বলিয়া অন্তরের স্বাধীনতাকেও আমরা যেন বিসর্জন না দিই।

মিথ্যা শুনিনি ভাই এই হৃদয়ের চেয়ে বড়ো কোনও মন্দির-কাবা নাই।

আমার যাবার সময় হল। দাও বিদায়, মোছ আঁখি দুয়ার খোল দাও বিদায়।” – কাজী নজরুল ইসলাম

মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই, যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।

হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছ মহান।তুমি মোরে দিয়াছো খ্রিস্টের সম্মান।

মানিক কি কখনো লুকানো যায় রে আহাম্মক! খোশবুকে কি রুমাল চাপা রাখা যায়?

অসীমের সীমা খোঁজায়ম নিরুদ্দেশের চেষ্টায় যে দীর্ঘ অতৃপ্তির আশা আনন্দ, সেই ত আমার উগ্র আকাঙ্ক্ষার রোখ চড়িয়ে দিচ্ছে।

আজ হতে আমি মানব-পরিত্যাক্ত নিখিল-লজ্জিত নর-নারীর দলে।

বাহিরের ঐর্শ্বর্য্যই তাহার অন্তরের ঐশ্বর্য্য কে আড়াল করিয়া রাখিয়াছে।

আমি চাই এ বন্ধনের পরে নিঃসীম মুক্তি। মাথায় অনাবৃত আকাশ, চোখের সামনে কূলহারা তটহারা জলধী, মনের সামনে নিরবচ্ছিন্ন অনন্ত একা, একা আমি।

খোদা, হৃদয়ে বল দাও। বাহুতে শক্তি দাও। আর কর্ত্তব্য-বুদ্ধি উদ্বুদ্ধ করো প্রাণের শিরায় শিরায়।

নিজের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রেখে যেখানে অন্যায় দেখবো, সেইখানেই আমাদের বজ্রমুষ্ঠির ভীর তরবারীর আঘাত পড়বে।

আমায় পেতে হলে তোমাকে এই তারারই একটি হতে হবে। আমি নেমে আসতে পারিনে, তোমার আমার পথেই উঠে আসতে হবে।

পাখির কন্ঠের বিভাস সুর আমার কানে যেনো পূরবীর মত করুণ হয়ে বাজে।

পাথর কুড়াতে গিয়ে আমি পেয়ে গেছি পরশ মানিক। তাঁর ছোঁয়ায় আমার সকল কাম হয়ে গেছে সোনা।

ছোট্ট দুটি কথা। ‘সুন্দর’ ও ‘বেদনা’। এই দুটি কথাতে আমি সমস্ত বিশ্বকে উপলব্ধি করতে পারি।

আমার জন্য যদি আসনই দাও তোমরা, তবে তা যেন বুকের আসন হয় বন্ধু। সভার কোলাহলের নির্ব্বাসন আমি চাই না।

আমি সাধ করে পথের ভিখারী সেজেছি বলে লোকের পদাঘাত সইবার মতো ‘ক্ষুদ্র-আত্মা’ অমানুষ হয়ে যাইনি।

আমার বাণী শিল্পীর বাণী নয়, আমার বাণী বেদনাতুরের কান্না।

আর সুরলক্ষী স্বর্গের উর্বশী নয়, মর্ত্ত্যের শকুন্তলা-বিরহ-শীর্ণা অশ্রুমূখী পরিত্যাক্তা শকুন্তলা, উৎপীড়িতা লাইলী।

এককালে ধূমকেতুর মতো ঘুরে বেড়িয়েছি বলেই আজ ধ্যান-শান্ত হবার সাধনা করছি- একান্ত নিরালায় সরে গিয়ে।

আমি আজো মানুষের প্রতি আস্থা হারাইনি। তাদের হাতের আঘাত যত বড়, যত বেশিই পাই।

সকল ব্যথিতের ব্যাথায়, সকল অসহায়ের অশ্রুজলে আমি আমাকে অনুভব করি।

ব্যথিতের অশ্রুজলের মুকুরে যেনো আমি আমাকে দেখতে পাই। কিছু করতে যদি নাই পারি, ওদের সাথে প্রাণ ভরে যেনো কাঁদতে পারি।

আমি আমার পথের দাবীকে ছাড়বো কেনো? ওদের রাজপথে যদি চলতে নাই দেয়, কাঁটার পথেই চলবো সমস্ত মারকে সহ্য করে।

কেবলি মনে হচ্ছে, কোন নবলোকের আহবান আমি শুনতে পেয়েছি। পৃথিবীর সুখ বিস্বাদ ঠেকছে যেন।

সুন্দরের অবহেলা আমি সইতে পারিনে বন্ধু, তাই এত জ্বালা।

আমার চোখের জলে সকলের চোখের জল এসে মিশেছে। আমার বেদনালোক তীর্থলোকে পরিণত হয়েছে।

আমার বাঁশী বিরহ-যমুনার তীরে ফেলে চলে যাব- শুষ্ক যমুনার বালুচর থেকে সেই বেণু কুড়িয়ে যদি অন্য কেউ বাজাতে পারেন, আমার ফেলে যাওয়া বাঁশী ধন্য হবে।

যিনি আমাকে বুঝতেই পারেনি, তার পথে বোঝা হয়ে থেকে কোনো লাভ নেই।

সুন্দর ও বেদনা- এ দুটি পাতার মাঝখানে একটি ফুল – বিকশিত বিশ্ব। একটি মক্ষী রাণী, তাকে ঘিরেই বিশ্বের মধু-চক্র।

আমি বিশ্বাস করি, যে আমায় এমন করে চোখের জলে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে, সে আমার আজকের নয়, সে আমার জন্ম-জন্মান্তরের, লোক-লোকান্তরের দুঃখ জাগানিয়া।

আমার রক্তে রক্তে শেলীকে, কীটসকে এতো করে অনুভব করছি কেনো বলতে পারো?

যদি পারো চুপটি করে বসে আমার অলিখিত জীবনের কোন একটি কথা স্বরণ কোরো।

আকাশের সবচেয়ে দূরের যে তারাটির দীপ্তি চোখের জলকণার মতো ঝিলমিল করবে, মনে করো সেই তারাটি আমি। আমার নামে তাঁর নামকরণ করো।

মৃতুকে এতো করে মনে করি জানো? ওকে আজ আমার সবচেয়ে সুন্দর মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে জীবনে যে আমায় ফিরিয়ে দিলে, মরণে সে আমায় আপন করে নেবে।

আমার সুন্দর পৃথিবী- আমার চোখে মলিন হয়ে উঠেছে। আমার চোখের নদী সমুদ্রে গিয়ে পড়েছে।

আজ আর আমার মনে কোনো গ্লানি নেই। মৃত্যু লোকের পথ রুদ্ধ হয়েছে, কিন্তু আমি অমৃত-লোকের পথের দিশা পেয়েছি।

আমার বাঁধন-হারা জীবন-নাট্যের একটা অঙ্ক অভিনীত হয়ে গেলো। এরপর কি আছে তা আমার জীবনের পাগলা নটরাজই জানে।

আমায় লোকে ঘৃণা করছে! আহা! আমি ঐ তো চাই। তবে একটা দিন আসবে যে দিন লোকে আমার সঠিক খবর জানতে পেরে দু’ফোঁটা সমবেদনার অশ্রু ফেলবেই ফেলবে।

আমি চাই প্রেমের অঞ্জন আমার এই মনের কালিমা মুছিয়ে দিক।

তুমি আমার বুকে মাধবী রাতে পূর্ণ চাঁদের রূপে উদয় হওনি কোনোদিন। কিন্তু চোখে বাদল রাতের বর্ষা ধারা হয়ে নেমেছ।

আমাকে যেতেই হবে। তোমার এই বুকভরা ভালোবাসার পরিপূর্ণ গৌরব নিয়ে আমায় বিদায় নিতে দাও।

বন্ধু আমি পেয়েছি- যার সংখ্যা আমি নিজেই করতে পারবো না। এরা সবাই আমার হাসির বন্ধু, গানের বন্ধু। ফুলের সওদার খরিদদার এরা। এরা অনেকেই আমার আত্মীয় হয়ে উঠেছে, প্রিয় হয়ে উঠেনি কেউ। আমার চোখের জলের বাদলা রাতে এরা কেউ এসে আমার হাত ধরেনি।

আর এ পথে আমাদের দেখা হবে না প্রিয়। এবার নতুন করে নতুন পথে নতুন পরিচয় নিয়ে আমরা আমাদের পূর্ণ করে চিনবো।

আমি জানি, আমারও দিন শেষ হয়ে এলো । আমিও বেলা শেষের পূরবীর কান্না শুনেছি।

যদি আর বাঁশি না বাজে, আমি কবি বলে বলছিনে, আমি আপনাদের ভালবাসা পেয়েছিলাম সেই অধিকারে বলছি, আমায় ক্ষমা করবেন, আমায় ভুলে যাবেন।

আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম পেতে এসেছিলাম। সে প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নিরস পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম।

কাজী নজরুল ইসলাম এর কবিতা

এখন আমরা আপনাদের জন্য কাজী নজরুল ইসলাম এর সবচেয়ে ভালো লাগা তিনটি কবিতা তুলে ধরবো। আশা করি আপনাদের অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন কবিতা গুলো পড়ে নেয়া যাক।

বিদায় স্মরণে

কাজী নজরুল ইসলাম

পথের দেখা এ নহে গো বন্ধু
এ নহে পথের আলাপন।
এ নহে সহসা পথ-চলা শেষে
শুধু হাতে হাতে পরশন।

নিমেষে নিমেষে নব পরিচয়ে
হ’লে পরিচিত মোদের হৃদয়ে,
আসনি বিজয়ী-এলে সখা হ’য়ে,
হেসে হ’রে নিলে প্রাণ-মন।

রাজাসনে বসি’ হওনি ক’ রাজা,
রাজা হ’লে বসি, হৃদয়ে,
তাই আমাদের চেয়ে তুমি বেশী
ব্যথা পেলে তব বিদায়ে।

আমাদের শত ব্যথিত হৃদয়ে
জাগিয়া রহিবে তুমি ব্যথা হ’য়ে,
হ’লে পরিজন চির-পরিচয়ে-
পুনঃ পাব তার দরশন,
এ নহে পথের আলাপন।

মুনাজাত

কাজী নজরুল ইসলাম

আমারে সকল ক্ষুদ্রতা হতে
বাঁচাও প্রভু উদার।
হে প্রভু! শেখাও – নীচতার চেয়ে
নীচ পাপ নাহি আর।

যদি শতেক জন্ম পাপে হই পাপী,
যুগ-যুগান্ত নরকেও যাপি,
জানি জানি প্রভু, তারও আছে ক্ষমা-
ক্ষমা নাহি নীচতার।

ক্ষুদ্র করো না হে প্রভু আমার
হৃদয়ের পরিসর,
যেন সম ঠাঁই পায়
শত্রু-মিত্র-পর।

নিন্দা না করি ঈর্ষায় কারো
অন্যের সুখে সুখ পাই আরো,
কাঁদি তারি তরে অশেষ দুঃখী
ক্ষুদ্র আত্মা তার।

আশা

কাজী নজরুল ইসলাম

হয়ত তোমার পাব’ দেখা,
যেখানে ঐ নত আকাশ চুমছে বনের সবুজ রেখা।

ঐ সুদূরের গাঁয়ের মাঠে,
আ’লের পথে বিজন ঘাটে।
হয়ত এসে মুচকি হেসে
ধ’রবে আমার হাতটি একা।

ঐ নীলের ঐ গহন-পারে ঘোম্টা-হারা তোমার চাওয়া,
আনলে খবর গোপন দূতী দিক্পারের ঐ দখিনা হাওয়া।
বনের ফাঁকে দুষ্টু তুমি
আসে- যাবে নয়্না চুমি’
সেই সে কথা লিখছে হেতা
দিগ্বলয়ের অরুণ-লেখা।

আমাদের আরও পোষ্ট পড়তে:

সুন্দর ফেসবুক স্ট্যাটাস, উক্তি, ক্যাপশন, কবিতা, কিছু কথা ও ছন্দ

অবাক করা ফেসবুক স্ট্যাটাস, উক্তি, ক্যাপশন, কবিতা ও কিছু কথা

সিঙ্গেল ফানি স্ট্যাটাস, ক্যাপশন, কবিতা ও কিছু কথা

বসন্তের রোমান্টিক স্ট্যাটাস, ক্যাপশন, উক্তি, ছন্দ ও কবিতা

সাদামাটা জীবন নিয়ে উক্তি, স্ট্যাটাস, ক্যাপশন, কবিতা ও কিছু কথা

মায়া নিয়ে উক্তি, স্ট্যাটাস, ক্যাপশন, কিছু কথা ও কবিতা

দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে উক্তি, স্ট্যাটাস, ক্যাপশন, কবিতা ও কিছু কথা

শেষ কথা

আমরা সব সময় চেষ্টা করি আপনাদের সুন্দর সুন্দর কিছু পোষ্ট উপহার দিতে। আশা করি আজকের কাজী নজরুল ইসলাম এর বাণী বা উক্তি নিয়ে পোষ্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আপনাদের ভালো লাগলেই আমাদের লেখা স্বার্থকতা পায়।
ধন্যবাদ।।

Scroll to Top